somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরমাণু গল্প :-- ক্যান্সারের সাথে বন্ধুত্ব

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল অনিদ্রাটা একটু বেশীই জেঁকে বসেছে আমার চোখে । এপাশ ওপাশ করতে করতেই রাতটা পার হয়ে যায় । তবে তার বিনিময়ে প্রতিনিয়ত একটা সুন্দর সকাল উপভোগ করতে পারি ।

আজ সকালটাতেও তেমনি ভাবে সূর্যোদয় হয়েছে আমার নির্ঘুম রাত কাটানোর পর.. সকালের বাইরের পরিবেশটা অদ্ভুত শান্ত। জানালার ফাঁক গলে এক টুকরা লালচে সোনালী রং ধারণ করা নীল আকাশটা উঁকি দেয়, যেন 'শুভ সকাল' জানায় আমাকে।


আগে ঘুম ভেঙেই এককাপ চা, দুটো টোস্ট বিস্কিট, পাউরুটি আর কলা খেয়ে কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতাম । এখন অবশ্য কলেজে যেতে পারি না । অনেকদিন নটরডেম ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাস দিয়ে হাঁটি না । তাই চুপ করে বিছানায় শুয়ে থেকেই পাখিদের চঞ্চল কিচিরমিচির শুনি।


এখনো ঘুম থেকে উঠেনি কেউ। ওই তো, পাশের বিছানাতেই মা ঘুমিয়ে আছে। জানো মা, সারারাত না ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে তোমার চোখে কাজলকালো দাগ পড়েছে। কিছুদিন পর তো একদম ঘুমাবে না, শুধু কাঁদবে। তাই এখনি তোমার ঘুমানো উচিত। থাক, তোমায় জাগাবো না। বরং আমি আমার ভাবনার ঝুলিটা খুলে বসি।


সেই ছোট্টবেলায় বাবা মায়ের একমাত্র আদরের পুতুল ছিলাম আমি। তাই আদরের কমতি ছিলো না আমার। এখন একটা ছোট বোনও আছে। তাও আদরের কমতি নেই আমার। বাবা, মা, বোন, বন্ধু বান্ধব সবাই ভীষণ ভালোবাসে আমায়। আর আমি কী স্বার্থপরের মতো সব ভালোবাসা ছেড়ে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করেছি!


' মা ', ও মা, যখন এটা সেটা খেতে আবদার করবো, তখন মুখে 'না' বলে, লুকিয়ে লুকিয়ে সেটা বানাবার আয়োজন করবেনা? খেতে ডাকলে একটু দেরী করলে তুমি আর কান ধরে নিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসাবে না ? যখন আমি চলে যাবো, তখন এভাবেই ভালোবাসবে তো?
একদম কাঁদবে না কিন্তু! জানো তো, কান্না সহ্য হয় না আমার।


বাবা, তুমি কিন্তু অভিনয় একদম পারো না। চোখের জলটা লুকিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করো, কিন্তু চশমার ফাঁকে তোমার ছলছল করে ওঠা চোখ দুটো আমি ঠিকই দেখি। বাবা, তুমি এত্তো ভুলোমনা কেন? সেই কবে বলেছিলাম আমাকে একটা গীটার কিনে দিতে, আর এখনো আনোনি? তাড়াতাড়ি না আনলে আমার যে আর গীটার বাজানো হবে না !


ছোট্র পিচ্চি বোনটা, তোর দুষ্টুমি কবে কমবে? দুষ্টুমি করে এখনো আমার মন ভালো রাখতে চাস, তোর এই চেষ্টায় আমার সত্যি হাসি পায়। আমি চলে গেলে কার সাথে এমন করবি রে? আর কার মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করবি ?? তুই টেনশন করিস না, আমি যেদিন চলে যাব সবাইকে ছেড়ে, সেদিন আমার জমানো টিউশনির টাকা গুলো মানিব্যাগে রেখে যাব.. তুই সেখান থেকে ইচ্ছেমতো নিয়ে নিস..


প্রিয় বন্ধুরা, রাফি, রিফাত, আবির, নীল, শাহরিয়ার, সাফী, অনি কেমন আছিস তোরা ?? শুনলাম তোরা নাকি আমার চিকিত্সার জন্য নাকি নটরডেম ক্যাম্পাস থেকে ফান্ড গড়ে তুলেছিস ? টিচার সুডেন্ট সবার কাছ থেকে নাকি টাকা তুলছিস ? মাঝে মাঝে নাকি ভিএনসি, হলিক্রস, আইডিয়াল এর ক্যাম্পাসে যাস ? সেইখানে কী টাকা তুলতে যাস নাকি সুন্দরী অষ্টাদশী তরুণীর দর্শন পেতে ?? তবে তোরা যাই কর না কেন, তোদের সাথে চায়ের টংয়ের আড্ডায় আর থাকব না রে.. চলে যাবার আগে একদিন অফিশিয়ালী তোদের সাথে আড়ি করে নেব.. জানিস আমি এখন ক্যান্সারের সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছি..


আর টিয়া পাখি, তোমার সাথে আমার অনেক রাগ। এমন করে কেউ কাঁদে? এত্ত এত্ত ভালোবাসো কেন আমায়? তোমার দেয়া নীল শার্টটা, সাদা রিজব্যান্ড আর কালো ঘড়িটা পরতে পারিনা । হাসপাতালে আমায় সবসময় সবুজ এপ্রন পরিয়ে রাখে। তোমার এতো ভালোবাসা হৃদয়ে আর ধরে রাখতে পারবো না । হৃদয় যে ছিদ্র হয়ে গেছে!

হাসছো? হাস! তোমার হাসিটা যে আমার ভীষণ প্রিয়।
বেঁচে থাকতে খুব ইচ্ছে হয়, জানো? ইচ্ছে হয়, আবার আগের মতো সবাইকে জ্বালাতে, তোমার সাথে পার্কে বসে আড্ডা দিতে,
ফুচকা খেতে, তোমার হাত ধরে
বৃষ্টিতে ভিজতে, রাত জেগে মুঠোফোনে তোমার মিষ্টি বকা শুনতে, কিন্তু কিছুই যে আর হবার নয়।


এই নিষ্ঠুর পৃথিবীটা আমাকে মায়ের স্নেহ, বাবার ভালোবাসা, বোনের আবদার, বন্ধুদের আড্ড়া, প্রিয়তমার মিষ্টি অভিমান, খুনসুটি সব থেকে বঞ্চিত করে তাড়িয়ে দিচ্ছে অনেক অনেক দূরের এক দেশে..

বিদায় নিষ্ঠুর পৃথিবী !! বিদায় !!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×