somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওবামার অভ্যুত্থান

২২ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওবামার অভ্যুত্থান

শান্তনু দে



‘যদি রাষ্ট্রপতি ম্যানুয়েল জেলায়াকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না করা যায়, তবে উঠবে অভ্যুত্থানের ঢেউ, যাতে ভেসে যাবে লাতিন আমেরিকার বহু সরকার, অথবা তাদের থাকতে হবে স্কুল অব আমেরিকাসের নিরাপত্তার তত্ত্বগত শিক্ষায় শিক্ষিত, অত্যাচার নিপীড়ন ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও সন্ত্রাসে সুদক্ষ অতি দক্ষিণপন্থী সেনাবাহিনীর দয়ার ওপর। দুর্বল হবে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় বহু অসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব। এবং তা খুব বেশি দিন নেই। বারাক ওবামার মতো রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে এটা খুবই খারাপ হতে পারে, যিনি ওই দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে চান।’

ফিদেল কাস্ত্রো


গণভোটের দিনেই সেনা অভ্যুত্থান

নতুন সংবিধান তৈরি নিয়ে যেদিন গণভোট, ঠিক সেই সকালেই সেনা অভ্যুত্থান।
১৯৮২তে, মার্কিন মদতপুষ্ট সেনাশাসিত সরকারের সময়ে তৈরি সংবিধানের পরিবর্তন চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ম্যানুয়েল জেলায়া। সেসময় হন্ডুরাস ছিল মধ্য আমেরিকায় পেন্টাগনের কুৎসিত যুদ্ধে ওয়াশিংটনের বিশ্বস্ত মিত্র। জন নেগরোপন্টে মার্কিন রাষ্ট্রদূত। যিনি ব্যস্ত ছিলেন এল সালভাদোর, নিকারাগুয়া, গুয়েতেমালার ‘ডেথ স্কোয়াড’ নিয়ে। এহেন সংবিধান বদলে নতুন সংবিধান তৈরি নিয়ে গণভোট চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি জেলায়া।
আগের রাতেই ফিদেলের গলায় আশঙ্কার সঙ্গে প্রত্যয়ের সুর, ‘আজ রাতে কিংবা আগামীকাল হন্ডুরাসে কী ঘটবে আমরা জানি না, কিন্তু জেলায়ার সাহসী আচরণ লেখা হয়ে থাকবে ইতিহাসে।’
এবং রাত পোহাতেই, ২৮জুনের কাকভোরে অভ্যুত্থান।
সাতসকালেই প্রথমে রাষ্ট্রপতি ভবন ঘেরাও করে ফেলে দু’শর ওপর সেনা। রাষ্ট্রপতি জেলায়ার দেহরক্ষীদের অস্ত্র কেড়ে নেয়। বন্দুকের মুখে বিছানা থেকে টেনে তোলে রাষ্ট্রপতিকে। জোর করে তুলে নিয়ে যায় বায়ু সেনার ঘাঁটিতে। তারপর সটান তুলে দেয় কোস্টারিকাগামী উড়ানে। জেলায়া পরে জানান, সেনা-বাহিনীর লোকরা তাঁকে অস্ত্রের মুখে প্রাসাদ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। টেলিসুর টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘ওরা ভোরের দিকে আমার ভবনে ঢুকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। বেয়নেট দিয়ে আমার ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফেলে, আমাকে গুলি করার হুমকি দিতে থাকে’।
নতুন সংবিধান নিয়ে জেলায়ার একটি প্রস্তাব ছিল, রাষ্ট্রপতি পরের চার-বছরের জন্য দ্বিতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, একজন শুধু একবারের মতোই চার-বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন। দক্ষিণপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বলতে শুরু করে, এজন্য গণভোট ডাকা অসাংবিধানিক। সাভেজ, মোরালেস, কোরিয়াকে যেসব অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছিল, সেই একই চিত্রনাট্যের মুখে পড়েন তিনি। জেলায় বারংবার বলেন, তিনি নিজে দ্বিতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। তবে চান, তাঁর উত্তরসূরীদের কাছে যেন এই সুযোগ থাকে। ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, ইকুয়েদরের রাষ্ট্রপতিরা এরমধ্যেই তাঁদের জনসাধারণের কাছ থেকে পেয়েছেন নতুন প্রগতিশীল সংবিধানের অনুমোদন।
নতুন সংবিধান তৈরি নিয়ে গণভোটের ব্যালট বিলি করতে সেনাবাহিনী যখন অস্বীকার করে, তখন থেকেই সঙ্কটের শুরু। ২৪জুন রাষ্ট্রপতি জেলায়া সেনাবাহিনীর প্রধান রোমিও ভাসকুয়েজকে ব্যালট বাক্স বিলি করার নির্দেশ দেন। ভাসকুয়েজ প্রত্যাখ্যান করেন। দাবি করেন এই নির্দেশ ‘বেআইনী’। জেলায়া তখন তাঁকে বরখাস্ত করেন। তিনি পদত্যাগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ভাসকুয়েজের প্রতি সংহতি জানিয়ে পদত্যাগ করেন হন্ডুরাসের সশস্ত্র বাহিনীর সব শাখার প্রধানরা। পরে কংগ্রেসের সমর্থন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁকে পুনর্বহাল করে। এবং যথারীতি ভাসকুয়েজের হাতেই থেকে যায় হন্ডুরাসের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রন।
ফিদেল লিখছেন, জেলায়া কিন্তু ‘আইনকে এতটুকু লঙ্ঘন করেননি। কখনও আইনকে নিজের হাতে তুলে নেননি। জেলায়া নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তিনি হন্ডুরাসের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল।’
নভেম্বর মাসে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গেই পৃথক ব্যালটে মানুষ গণপরিষদের নির্বাচন চান কি না, তা জানতেই ২৮জুন গণভোট চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি জেলায়া। যে গণপরিষদ তৈরি করবে নতুন সংবিধান। ধনী,অভিজাতরা বলতে শুরু করেন, জেলায়া পুনর্নির্বাচনে দাঁড়ানোর ফিকির খুঁজছেন। বস্তুত, রাষ্ট্রপতি তখনই দ্বিতীয়বারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, যখন তৈরি হবে নতুন সংবিধান। যা ২০১০এর জানুয়ারিতে, জেলায়ার বিদায় নেওয়ার আগে কোনওমতেই সম্ভব নয়। যদি গণপরিষদের নির্বাচন হতো, এবং তা মানুষের অনুমোদন পেত, তবুও জেলায়ার শাসনের মেয়াদ বাড়ার কোনও পথ ছিল না। এমনকি গণভোটের নির্বাচনে জিতলেও না। তাছাড়া ২৮জুনের ভোট, জনমত যাচাইয়ের ভোট ছাড়া তার বেশি কিছু ছিল না। যেখানে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া, তারা কি নভেম্বরে একটি বৈধ গণভোট চান। এবং একে যদি তাঁরা অনুমোদন করতেন, এবং সেই মতো নভেম্বরে গণভোট হতো, এবং তা পাসও হতো, তবুও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য পৃথক ব্যালটের ভোটে একজন নতুন রাষ্ট্রপতিই নির্বাচিত হতেন। আর জানুয়ারিতে বিদায় নিতেন জেলায়া।
তাই জেলায়া মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। এবং দেশের ধনী, অভিজাতরাও তা বিলক্ষণ জানতেন। আসলে তাঁরা নতুন সংবিধানের ভয় পেয়েছিলেন। যে সংবিধানের লক্ষ্য ছিল দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক রূপান্তর, যা করেছেন সাভেজ, মোরালেস, কোরিয়া।
জেলায়ার ‘কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রপতি সালভাদোর আলেন্দের ভাষণকে, ১৯৭৩সালের ১১সেপ্টেম্বর যুদ্ধ বিমান যখন রাষ্ট্রপতি ভবনের ওপর নির্বিচারে বোমা বর্ষন করে চলেছে, সেসময় নায়কোচিত মৃত্যুর আগে আলেন্দের সেই ভাষণকে।’ বলেছেন ফিদেল। ‘আর এবারে আমরা দেখলাম লাতিন আমেরিকার আরেকজন রাষ্ট্রপতিকে, যিনি তাঁর জনগণকে নিয়ে ঢুকছেন বায়ুসেনার ঘাঁটিতে, গণভোটের জন্য ব্যালটের দাবিতে। হন্ডুরাসের মানুষ তাঁর এই শিষ্টাচারকে কখনও ভুলবে না।’

আলবা’র সদস্য হওয়া

সম্প্রতি আলবা’র সদস্য হয়েছে হন্ডুরাস। আলবা — গোলার্ধ জুড়ে বাজার দখলের মার্কিন পরিকল্পনার মুখে একটি বলিভারীয় বিকল্প। কিউবা, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, ইকুয়েদর, নিকারাগুয়াসহ নয়-সদস্যের একটি আঞ্চলিক ব্লক। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলির জন্য যারা চায় একটি স্বাধীন পথ। বলিভারিয়ান অল্টারনেটিভ ফর দি আমেরিকাস। কাস্ত্রো যার নাম রেখেছেন ‘আলবা’। স্পেনীয় ভাষায় যার অর্থ, নতুন ঊষার সূচনা।
রাষ্ট্রপতি জেলায়া যখন আলবায় সই করেন, তখন তিনি গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘এই প্রতিশ্রুতিপত্রে সই করার জন্য আমাদের কারো (পড়ুন ওয়াশিংটনের) অনুমতি নেওয়ার দরকার হয়নি। মধ্য-বাম একটি সরকার গঠনের লক্ষ্যে আজ আমরা একটি পদক্ষেপ নিচ্ছি মাত্র। এখন কেউ যদি একে অপছন্দ করেন, তবে ভালো কথা, তিনি বরং মুছে ফেলুন ‘মধ্য’ শব্দটিকে, রাখুন দ্বিতীয়টিকে।’
জেলায়া মার্কসবাদী নন। এমনকি বামপন্থীও নন। ছিলেনও না কোনও দিন। এই লাতিনই তাঁকে বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। ধনী অভিজাত জোতদার পরিবারের থেকে উঠে আসা জেলায়া একজন মধ্য-দক্ষিণ রাজনীতিবিদ হিসেবেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। যে লিবারেল পার্টির টিকিটে তিনি নির্বাচিত হন — সেই পার্টি, দেশের প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল পার্টির মতোই কতিপয় সংখ্যালঘু অভিজাত, বিত্তশালীদের প্রতিনিধিত্ব করে। এই অভিজাতরাই, ওয়াশিংটনের মদতে দীর্ঘদিন শাসন করে এসেছে হন্ডুরাসকে। ২০০৫এ, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পর্যন্তও নিজেকে তিনি তাঁর পূর্বসূরীর দক্ষিণপন্থী নীতি থেকে পৃথক করেননি। এমনকি শুরুতে ২০০৬এর জানুয়ারিতে, মার্কিন মুক্ত বানিজ্যের চুক্তি সেন্ট্রাল আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-কে পর্যন্ত সমর্থন করেছিলেন। জারি রেখেছিলেন নয়া উদার অর্থনীতি। সঙ্গে বেসরকারীকরণ।

বামপন্থার প্রতি ঝোঁক

কিন্তু তাঁর চার বছর মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে এসে পরিবর্তনের বাতাস বইতে থাকে দক্ষিণ থেকে। বিশেষ করে কিউবা, ভেনেজুয়েলা থেকে। ২০০৭এর শেষের দিকে কিউবায় যান জেলায়া। ৪৬-বছর পর, সমাজতান্ত্রিক কিউবায় এই প্রথম হন্ডুরাসের কোনও একজন রাষ্ট্রপতির সরকারী সফর। সেখানে তিনি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনার জন্য দেখা করেন রাউল কাস্ত্রো সঙ্গে। দেশে কোনও পেট্রেলিয়ামের ভান্ডার না থাকায়, সাভেজের ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সস্তার তেল আমদানি চুক্তি করেন জেলায়া। তেগুসিগালপায় এসে ৫০হাজার মানুষের সমাবেশে সাভেজ ঘোষণা করেন, ভেনেজুয়েলা হন্ডুরাসকে সস্তায় তেল দেবে ‘অন্তত ১০০বছরের জন্য’। সেইসঙ্গে সাভেজ হন্ডুরাসের ৩কোটি ডলার ঋণ মকুব করে দেন। হতদরিদ্র হন্ডুরাসবাসীকে চিকিৎসা করতে আসেন কিউবার চিকিৎসকেরা। জেলায়ার প্রগতিশীল সংস্কারে যথারীতি ক্ষেপে ওঠেন দেশের বৃহৎ ভূস্বামী, জোতদারেরা।
এবছরের গোড়াতেই জেলায়া শ্রমিকদের মাসিক মজুরি প্রায় দ্বিগুন বাড়িয়ে দেন। ১৫৭ডলার থেকে করেন ২৮৯ডলার। বাড়িয়ে দেন শিক্ষকদের বেতন। মালিকরা বিরাট সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাই করেন। ফলে বেকারীর হার বরাবরের মতোই থেকে যায় এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ।

কেন ওয়াশিংটনের রোষের মুখে

এটা বিশ্বাস করা খুবই শক্ত, ওয়াশিংটনের সবুজসঙ্কেত ছাড়াই সেনা অভ্যুত্থান করেছে হন্ডুরাস। কারণ, হন্ডুরাসের সেনাবাহিনী প্রায় পুরোপুরি মার্কিন আর্থিক সাহায্য ও প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। যেমন এবছরই ৫কোটি ডলার সাহায্য করেছে ওয়াশিংটন। আগামী বছর আরও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে ওবামা প্রশাসন।
সোতো ক্যানোতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির দূরত্ব রাজধানীর থেকে ১০০কিলোমিটারও নয়।
আলবা’র পূর্ণ সদস্য হওয়ার সিদ্ধান্ত, একইসঙ্গে মার্কিন মুক্ত বানিজ্যের চুক্তি সেন্ট্রাল আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (কাফতা)-র কড়া সমালোচনা করায় স্বাভাবিকভাবেই রোষের মুখে পড়েন জেলায়া।
গতবছর ৩১ মে জেলায়া ঘোষণা করেন, সোতো ক্যানোতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করা হবে ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল ফ্লাইটের জন্য। ব্যবহার করা হবে সাধারণের জন্য। সঙ্গে এও জানান, এর টার্মিনাল তৈরির জন্য অর্থ দেবে আলবা।
সেপ্টেম্বরে, বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসের প্রতি সংহতি জানিয়ে জেলায়া নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগের স্বীকৃতি ঝুলিয়ে রাখেন। মুখেও বলেন সেকথা, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙছি না, আমরা শুধুই (একাজ করছি) মোরালেসের প্রতি সংহতি জানিয়ে, যিনি বলিভিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।’ শুধু তাই নয়, অসম্ভব প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেন, ছোট দেশগুলিকে একজোট হতে হবে। ‘বিশ্ব শক্তির এদেরকে সম্মান দেখানো উচিত।’
নভেম্বর মাসে ওবামা নির্বাচিত হলে জেলায়া তাঁকে ‘বিশ্বের জন্য নতুন আশা’ বলে প্রথমে বর্ণনা করলেও, দু’মাস বাদেই মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে লেখা এক ব্যক্তিগত চিঠিতে মার্কিন ‘হস্তক্ষেপে’র কড়া সমালোচনা করেন। সেইসঙ্গেই নতুন প্রশাসনের কাছে ‘অন্যদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে শ্রদ্ধা দেখানো উচিত’ বলে আশা প্রকাশ করেন। আরও বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে বৈধ লড়াইকে কখনোই অন্যদেশে হস্তক্ষেপের অজুহাত হিসেবে খাড়া করা উচিত নয়।’
এরপরেই মাত্র তিন মাস আগে, নিকারাগুয়ার রাষ্ট্রপতি দানিয়েল ওর্তেগার সঙ্গে সেন্ট্রাল আমেরিকান ইন্টিগ্রেশন (স্পেনীয় ভাষায় ‘সিকা’ নামে পরিচিত)-এর বৈঠক বয়কট করেন, যে বৈঠকে আসার কথা ছিল মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জো বিদেনের।

হতদরিদ্র দেশ

মধ্য আমেরিকার একরত্তি দেশ হন্ডুরাস। পশ্চিমে সীমান্ত বরাবর গুয়েতেমালা। দক্ষিণপশ্চিমে এল সালভাদোর। আর দক্ষিণপূর্বে নিকারাগুয়া। মাত্র ৭৩লক্ষ মানুষের দেশ হন্ডুরাস। হতদরিদ্র। লাতিন আমেরিকায় একমাত্র হাইতিই হন্ডুরাসের চেয়ে গরিব। অথচ, মধ্য আমেরিকার বাকি দেশগুলির মতোই প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হন্ডুরাস। রয়েছে উর্বর জমি, মাটির নিচে বিপুল খনিজ সম্পদের ভান্ডার, ওপরে মহার্ঘ কাঠ। হন্ডুরাসের বৃহৎ ভূস্বামী ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে শতাব্দী ধরে যা লুট করে আসছে মার্কিন সংস্থাগুলি। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাঙ্ক এরই মধ্যে দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। দেশের ধনীশ্রেষ্ঠ ১০শতাংশের আয় যখন জাতীয় আয়ের ৪৩.৭শতাংশ, সেখানে হতস্য গরিব ৩০শতাংশের আয় সাকুল্যে ৭.৪শতাংশ। ভূমি সংস্কার হয়নি। পড়ে আছে সেই আদিম যুগে। রয়েছে পুরোদস্তুর সামন্তপ্রথা। সাধারণ কৃষকের হাতে জমি নেই। অন্যদিকে, একেকজন জোতদারের হাতে মাইলের পর মাইল জমি। সেই জমিতে সাধারণ কৃষকরা মজুরের কাজ করেন। রপ্তানি আয়ের ৪৫ভাগই যায় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মাত্র ১০ভাগ ধনীর পকেটে। এঁরা হলেন বড় ভূস্বামী, শিল্পপতি ও সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের তথ্য বলছে, ৭০শতাংশ মানুষই রয়েছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। ৪০শতাংশের দৈনিক রোজগার ২ডলারেরও কম। চল্লিশ পেরনোর আগেই মারা যায় জনসংখ্যার ১২শতাংশ। ১৬শতাংশ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের ১৭শতাংশেরই ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
ইউনিসেফের তথ্য জানাচ্ছে, তিন লক্ষের ওপর শিশু শ্রমিক। দিনে কাজ করতে হয় ১২-১৩ঘন্টা। মজুরি ঘন্টায় মেরেকেটে ৪০সেন্ট। প্রতি ৫জনে একজন নিরক্ষর। বেকারীর হার ৩০শতাংশ। দেশে শ্রম আইনের কোনও বালাই নেই। গড়পরতা শ্রমদিবস ১৪ঘন্টা। হন্ডুরাসে মহিলা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন একটি সংগঠনের নেত্রী ফ্লোরেন্সিয়া কাসেদা জানিয়েছেন, ‘এখানে মহিলা শ্রমিকদের নিয়োগ করা হয় ১৮বছর বয়েসে। আর ছাঁটাই করা হয় তিরিশে। কারণ, দেখতে সুন্দর, বয়েস কম এমন মহিলাদেরই ভূস্বামীরা কাজে নিয়োগ দেন। মালিকরা চায় কমবয়েসী মেয়ে, যে দিনরাত খাটতে পারবে। তাদের শ্রমঘন্টারও কোনও বালাই নেই। গড়ে ১৪ঘন্টারও বেশি কাজ করতে হয়। বেতন মেলে সামান্য।’

অভ্যুত্থান ও স্কুল অব আমেরিকাস

ভাসকুয়েজসহ অন্যান্য সেনাকর্তারা সকলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল অব আমেরিকাসের (এস ও এ) গ্র্যাজুয়েট।
আর লাতিন আমেরিকা এই স্কুলকে (এখন নাম বদলে হয়েছে হুইনসেক) চেনে সাম্রাজ্যবাদের চাষ ও অন্ধ কমিউনিস্ট বিরোধিতার ল্যাবরেটরি হিসেবে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কমিউনিজমের বিস্তারকে প্রতিহত করতে ১৯৪৬সালে এটি তৈরি করে আমেরিকা। ৫৮বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল অব আমেরিকাস প্রশিক্ষণ দিয়েছে ৬০হাজারের বেশি লাতিন আমেরিকার সেনাকে। শিখিয়েছে বিদ্রোহ দমনের আধুনিক কৌশল, বহুদূর থেকে লুকিয়ে কোনও ব্যক্তিকে গুলি করার দক্ষতা, কমান্ডো ও মনস্তত্ত্বিক যুদ্ধ, সামরিক গোয়েন্দাগিরি থেকে জেরা করার কৌশল। এটি এমনই একটি স্কুল, যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য যেকোনও স্কুলের চেয়ে বেশি স্বৈরশাসক তৈরি করেছে (বস্তুত, এই স্কুল থেকেই পাস করে বেরিয়েছে লাতিন আমেরিকার অন্তত ১১জন স্বৈরশাসক)। ‘কৃতীদের’ মধ্যে রয়েছে পানামার ম্যানুয়েল নোরিয়েগা, ওমর তোম্বিজোস, আর্জেন্টিনার লিওপোল্ডা গ্যালতিয়েরি, রবার্তো ভিয়েলা, ইকুয়েদরের গুইলরামো রডরিগেজ, পেরুর জুম্যান ভেলাস্কো, বলিভিয়ার বানজারা সুয়ারেজের মতো স্বৈরশাসকরা।
১৯৭৫এ, এই স্কুল থেকেই গ্র্যাজুয়েট হওয়া জেনারেল জুয়ান মেলগার কাস্ত্রোই হয়ে উঠেছিলেন হন্ডুরাসের সামরিক স্বৈরশাসক। ১৯৮০-’৮২, হন্ডুরাসের সামরিক জমানার নেতৃত্বে ছিলেন স্কুল অব আমেরিকাসের আরেক গ্র্যাজুয়েট পোলিকার্পো পাজ গার্সিয়া। যিনি ব্যাপক দমনপীড়ণ, বেপরোয়া খতম অভিযান চালিয়েছিলেন ব্যাটেলিয়ান ৩-১৬কে দিয়ে। যা ছিল লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে ভয়াবহ ডেথ স্কোয়াড (স্কুল অব আমেরিকাসের আর্জেন্টেনিয় গ্র্যাজুয়েটদের সাহায্য নিয়ে যা তৈরি করেছিলেন হন্ডুরাসের গ্র্যাজুয়েটরা)। হন্ডুরাসের জেনারেল হামবার্তো রেগাল্ডো হার্নানদেজও ছিলেন স্কুল অব আমেরিকাসের ছাত্র। সেনা প্রধান থাকাকালীন যিনি ব্যাটেলিয়ান ৩-১৬ ডেথ স্কোয়াডে জড়িত সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।
এহেন স্কুল অব আমেরিকাসে অন্তত দু’বার পড়তে গিয়েছিলেন রোমিও ভাসকুয়েজ। প্রথমে ১৯৭৬এ। পরে ১৯৮৪তে। বায়ুসেনার প্রধান জেনারেল লুই জেভিয়ার সুয়াজও স্কুল অব আমেরিকাসের ছাত্র। পড়েছেন ১৯৯৬এ। হন্ডুরাসের সঙ্কটের মূল হোতা এই বায়ুসেনা। সামরিক বাহিনী যখন ব্যালট বাক্স বিলি করতে অস্বীকার করে, তখন তা রাখা হয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে, যতক্ষন না সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জেলায়া তা উদ্ধার করেন। অপহরনের পর জেলায়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতেই।
হন্ডুরাসের সেনাবাহিনীর আইনজীবী হার্বার্থ বেয়ার্দো ইনস্ত্রোজা স্বীকার করেছেন, রাষ্ট্রপতি জেলায়কে অপহরণ করে সেনাবাহিনী আইন ভেঙেছে। কিন্তু এছাড়া অন্য কোনও পথ ছিল না জানিয়ে মিয়ামি হের্যা ল্ড পত্রিকাকে তিনি অকপটে জানিয়েছেন, ‘আসলে প্রশিক্ষণসহ আমাদের জন্য খুবই কঠিন হতো বামপন্থী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। এবং এটি একেবারেই অসম্ভব।’

মার্কিন মদতপুষ্ট প্রতিবিপ্লবীদের আঁখড়া

একবার, দু’বার নয়, এই হন্ডুরাসে একাধিকবার আক্রমণ চালিয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী — ১৯০৭, ১৯১১, ১৯১২, ১৯১৯, ১৯২৪, ১৯২৫ এবং ১৯৩১এ। এবং প্রতিটি আক্রমণেরই নেপথ্যে ছিল মার্কিন কর্পোরেটের স্বার্থ ও ওয়াশিংটনের পুতুল জমানাকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্য।
১৮৯৯, ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানিসহ তিনটি ডাকসাইটে মার্কিন কলা রপ্তানিকারক সংস্থার হাত ধরে হন্ডুরাসে তৈরি হয় ‘ব্যানানা এম্পায়ার’, কলা সাম্রাজ্য। শুরু হয় ‘রাষ্ট্রের মধ্যেই রাষ্ট্র’ তৈরির চেষ্টা। মার্কিন এই সংস্থাগুলির হাতে তখন একচেটিয়া ক্ষমতা, কর্তৃত্ব। দেশের পূর্বাঞ্চলে উর্বর জমির অধিকাংশই এদের নিয়ন্ত্রনে। মার্কিন মুলুকে এই কলা নিয়ে যাওয়ার জন্য এরাই পাতে রেললাইন। ১৯১০এ, রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দাভিলার কাছ থেকে বাধা আসলে, ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি দাভিলাকে হটাতে অভ্যুত্থান করায়।
‘ব্যানানা রিপাবলিক’ — ১৯০৪এ, হন্ডুরাসে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির বর্বর শোষণকে বোঝাতে প্রথম এই পরিশব্দটি ব্যবহার করেছিলেন বিশিষ্ট হাস্যরসিক ও’ হেনরি। ইউনাইটেড ফ্রুটের কর্নধার ‘দ্য ব্যানানা ম্যান’ জেমুরারে একসময় ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘এই হন্ডুরাসে একটা খচ্চরের দামও একজন সাংসদের চেয়ে বেশি।’ কোম্পানির হাতে তখন ৬লক্ষ ৫০হাজার একরের ওপর জমি, দেশের মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় তিনভাগের একভাগ।
হন্ডুরাস বরাবরই মার্কিন মদতপুষ্ট প্রতিবিপ্লবীদের আঁখড়া। ১৯৫৪তে, মার্কিন মদতে অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গুয়েতেমালার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জ্যাকব আরবেঞ্জকে হটানোর সময়, গুয়েতেমালার দক্ষিণ সীমান্তে সি আই এ’র ‘ফ্যাসিস্ত বাহিনীর’ প্রশিক্ষণ শিবির ও নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছিল এই হন্ডুরাস। মদত দিয়েছিল ইউনাইটেড ফ্রুট। গুয়েতেমালায় এই মার্কিন হস্তক্ষেপ শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল কমিউনিস্ট খতম যজ্ঞের ‘ডেথ স্কোয়াডে’, রক্তাক্ত সন্ত্রাসে। যা প্ররোচিত করেছিল একের পর এক গৃহযুদ্ধকে। চলেছিল চল্লিশ বছরের ওপর। যার শিকার ২লক্ষের ওপর মানুষ।
’৬১তে কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোকে হটাতে বে অব পিগ আগ্রাসনের সময় এই হন্ডুরাসকেই ব্যবহার করা হয়েছিল আদর্শ প্রশিক্ষণ শিবির ও ‘লঞ্চিং প্যাড’ হিসেবে। নিজের দু’টি জাহাজ ধার দিয়েছিল ইউনাইটেড ফ্রুট। সি আই এ’র ভাড়াটে খুনীরা ব্যবহার করেছিল এই জাহাজই। ভিয়েতনাম যুদ্ধের আগে মার্কিন প্রশাসন সবচেয়ে ধিক্কৃত হয়েছিল বোধহয় সেইসময়েই। ওয়াশিংটনে তখন কেনেডি।
পরে ১৯৭৯এ, প্রতিবেশী নিকারাগুয়ায় কমিউনিস্ট-বিরোধী ‘কন্ট্রা’ বিদ্রোহে ওয়াশিংটনের নিরাপদ ঘাঁটি ছিল এই হন্ডুরাস। যা চলেছিল ১৯৮৭ পর্যন্ত। কেড়ে নিয়েছিল ৩০হাজার মানুষের জীবন। বরাবরের মতো নিখোঁজ আড়াই লক্ষ মানুষ।
এল সালভাদোরে বামপন্থী গেরিলা সংগঠন ফারাবুন্দো মার্তি ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এফ এম এল এন) বিরুদ্ধে পালটা অভ্যুত্থানের ‘আউটপোস্ট’ ছিল এই হন্ডুরাস।
আটের দশকের গোড়ায় মার্কিন সামরিক সহায়তার প্লাবন শুরু হয় হন্ডুরাসে। ১৯৮০তে হন্ডুরাসে মার্কিন সামরিক সহায়তার পরিমাণ যেখানে ছিল সাকুল্যে ৩৩লক্ষ ডলার, মাত্র দু’বছরে ১৯৮৩তে তা দশগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩কোটি ১৩লক্ষ ডলারে। ১৯৮৪তে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭কোটি ৭৪লক্ষ ডলারে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫, হন্ডুরাসে মার্কিন মার্কিন সামরিক সহায়তার পরিমাণ চিল ১৬কোটি ৯০লক্ষ ডলার। মার্কিন লাইব্রেরি অব কংগ্রেস কান্ট্রিস স্টাডিসের তথ্য জানাচ্ছে, ‘হন্ডুরাসের সামরিক বাজেটে মার্কিন সহায়তার (প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ) পরিমাণ যেখানে ছিল ৭শতাংশ, ১৯৮৫তে তা একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬শতাংশ।’

এই মুহূর্তে মধ্য আমেরিকা

এই মুহূর্তে মধ্য আমেরিকা মানে, মার্কসবাদী সান্দিনিস্তার নেতা দানিয়েল ওর্তেগার নিকারাগুয়া। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভাষায়, ‘কুড়ি বছর আগের মতোই, নিকারাগুয়া এখন আবার সেই সংঘর্ষের উত্তাপে সেঁকে নিচ্ছে নিজেকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে মার্কসবাদী বিদ্রোহী নেতা, দানিয়েল ওর্তেগাকে।’
এল সালভাদোরের রঙও এখন লাল। এই সেদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতেছেন বামপন্থী ‘এল ফ্রেন্তে’র প্রার্থী মৌরিসিও ফুনেস। এই এল সালভাদোর মানে, কমিউনিস্ট ও বামপন্থী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিহাস। গত শতকের তিনের দশকে এখানে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফারাবুন্দো মার্তি। পাঁচের দশক থেকে সাতের দশক — সশস্ত্র সংগ্রামকে বিরোধিতা করে প্রধানত নির্বাচন ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখে কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু ’৫৯-এ কিউবা বিপ্লব লাতিন আমেরিকার বাকি দেশগুলির মতো সালভাদোরের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পার্টির মধ্যে অনেকেই মার্কিন মদতপুষ্ট সামরিক স্বৈরাচারের অবসানে সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে সওয়াল শুরু করেন। পরে সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই বেরিয়ে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। সাতের দশকে বামপন্থীদের মধ্যে এঁরাই ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী। শেষে পাঁচটি বামপন্থী গেরিলা সংগঠনের নেতৃত্ব মিলে ১৯৮০-র ১০ই অক্টোবর গঠন করেন ফারাবুন্দো মার্তি ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এরআগে এই পাঁচটি সংগঠন প্রত্যেকে নিজেদেরকে বিপ্লবী ও সমাজতান্ত্রিক বলে দাবি করলেও, মতাদর্শ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছিল গুরুতর মতপার্থক্য। শেষে ১৯৭৯-র ডিসেম্বরে হাভানায় ফিদেল কাস্ত্রোর উপস্থিতিতে ওই পাঁচ সংগঠনের বোঝাপড়া হয়। পারস্পরিক মতপার্থক্য সরিয়ে ‘এল ফ্রেন্তে’ গড়তে রাজি হন গেরিলা নেতৃত্ব। এরপর রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ। বহু জীবনের বিনিময়ে অবশেষে ’৯২-এ শান্তি চুক্তি। আর এই মার্চে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এহেন ‘এল ফ্রেন্তে’র প্রার্থী এখন এল সালভাদোরের রাষ্ট্রপতি।
দু’বছর আগে গুয়েতেমালা নির্বাচিত করেছে বামপন্থা ঘেঁষা রাষ্ট্রপতিকে। ১৯৫৪-তে সি আই এ’র মদতে নির্বাচিত সরকার অপসারনের ৫৫ বছর পর এই প্রথম।
অতএব, যেমন বলেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার, ‘কোনও দেশের মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য আমরা সেই দেশকে তুলে দিতে পারি না কোনও মার্কসবাদীর হাতে।’
যেমন বলেছেন নোবেল জয়ী আর্জেন্টিনার স্থপতি ও ভাস্কর অ্যাদোলফো পেরেজ এসকুইভেল ‘এটি আদৌ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মহাদেশ জুড়ে আধিপত্যের রাজনীতি ও অর্থনীতির স্বার্থকে সুরক্ষিত করার রাজনীতিই এতে প্রতিফলিত।’

ইউনাইটেড ফ্রুট থেকে চিকুইতা

ইউনাইটেড ফ্রুট এখন ইউনাইটেড ব্র্যান্ডস হয়ে চিকুইতা নামে পরিচিত। নাম বদলালেও এতটুকু বদলায়নি চরিত্র। বয়ে চলেছে বিশ শতকের বর্বরতার একই উত্তরাধিকার। লাতিন আমেরিকার কলাবাগিচা শ্রমিকদের সমন্বয়কারী মঞ্চ কোলসিবা চিকুইতা’র বাগিচায় শ্রমিকদের শোষণ-দুর্দাশাকে তুলনা করেছে ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’র সঙ্গে। নিকারাগুয়া, গুয়েতেমালাসহ মধ্য আমেরিকায় চিকুইতা’র বাগিচায় মহিলা শ্রমিকরা কাজ শুরু করেন সকাল সাড়ে ৬টায়। রাত ৭টাতেও শেষ হয় না তাঁদের কাজ।
অভ্যুত্থান যেদিন হটিয়ে দিয়েছিল জেলায়াকে, সেদিন নিশ্চিতভাবেই স্বস্তির মোলায়েম বাতাস বয়েছিল মার্কিন মুলুকের ওহিও’তে চিকুইতা’র বোর্ড রুমে। বছরের গোড়ায় শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সরব হয়েছিল এই চিকুইতা। জেলায়া সরকারের বিরুদ্ধে সংস্থার অভিযোগ ছিল, নতুন এই বিধি-নিষেধে কমবে তাদের মুনাফা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে কোস্টা রিকার চেয়েও বেশি — অতিরিক্ত ২০সেন্ট খরচ হবে এক ক্রেট আনারসের জন্য, বাড়তি ১০সেন্ট খরচ হবে এক ক্রেট কলার জন্য। সবমিলিয়ে তারা হারাবে কোটি-কোটি ডলার, যেখানে বছরে তারা উৎপাদন করে ৮০লক্ষ ক্রেট আনারস, ২কোটি ২০লক্ষ ক্রেট কলা। শেষে মজুরি বৃদ্ধির ডিক্রি জারি হলে চিকুইতা চায় হন্ডুরাসের শীর্ষ বনিকসভা কোহেপের সাহায্য। জেলায়ার মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে তারাও ছিল চিকুইতার মতো সমান ক্ষুব্ধ। কোহেপ মানে, হন্ডুরাসের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্বকারী ৬০টি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, বনিকসভার দাপুটে মঞ্চ। এহেন কোহেপই এখন অভ্যুত্থানের জমানার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করা উচিত নয় বলে দাবি তুলেছে।

ওবামা বনাম হন্ডুরাস

হন্ডুরাসে কী ঘটতে চলেছে, বিশেষ করে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে অপহরণ, জোর করে নির্বাসনে পাঠানো থেকে সেনা অভ্যুত্থান — ওবামা কি কিছুই জানতেন না?
ওবামা অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছেন, সেইসঙ্গে গণতন্ত্রের শাসনের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেছেন। কিন্তু এর পরেও থেকে যায় কিছু প্রশ্ন।
প্রথমত, ২০০৮এর ডিসেম্বরে, ওবামা শপথ নেওয়ার আগেই তেগুসিগালপায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আগ্রাসী ও হস্তক্ষেপবাদী আচরনের অবসান চেয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন হন্ডুরাসের রাষ্ট্রপতি জেলায়া। তার ঠিক আট মাস আগেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত উগো লরেন্স জেলায়া সরকারের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন। এক সাংবাদিক বৈঠকে লরেন্স বলেছিলেন, ‘নতুন সংবিধান তৈরি করে কেউই (বর্তমান) সংবিধানকে লঙ্ঘন করতে পারেন না, কারণ আপনাদের যদি একটি সলয়িধান নাই থাকে, তবে তা হবে জঙ্গলরাজ।’
ওবামা যদি সত্যিই ওয়াশিংটনের নৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন, তবে তিনি নিশ্চিতভাবেই বুশের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়া লরেন্সকে সরিয়ে দিতে পারতেন। ঘটনা হলো, ওবামা তা করেননি।
দ্বিতীয়ত, হন্ডুরাসের সেনাবহিনীর যেসব সিনিয়র অফিসার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই পেন্টাগনের তৈরি স্কুল অব আমেরিকাসের (খুনীদের স্কুল নামে পরিচিত) গ্র্যাজুয়েট। হন্ডুরাসের সেনাবাহিনী বরাবর পরামর্শ, আর্থিক সহায়তা থেকে সমরাস্ত্র পেয়ে এসেছে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে। হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, সি আই এ’র সম্মতি ছাড়া জেনারেলরা নড়েন না এক পা’ও।
তৃতীয়ত, যদি ওবামা সরাসরি এতে যুক্ত নাও থাকেন, তবু এঘটনায় যেসব মার্কিন এজেন্ট জড়িত, তাদের নিয়ন্ত্রনে কড়া অবস্থান না নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচিত হবেন। মার্কিন কূটনীতিকরা খুব ঘনিষ্ঠভাবেই কাজ করেছেন জেলায়ার বিরোধীদের সঙ্গে। পেন্টাগনের কাছে বিষয়টি অজানা ছিল না। সেইসূত্রে হোয়াইট হাউসেরও সবকিছু জানার কথা।
এবং খোদ মার্কিন বিদেশ দপ্তরই তা স্বীকার করেছে। অভ্যুত্থানের তিন দিন বাদে, ওয়াশিংটনে মার্কিন বিদেশ দপ্তরে দুই সিনিয়র অফিসার — অফিসিয়াল ওয়ান ও অফিসিয়াল টু স্পষ্ট জানান, অভ্যুত্থানের খবর তাঁদের কাছে আগেই ছিল। এবং সেইমতো ‘বিকল্প’ চেয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। সেইসঙ্গে তাঁরা এও কবুল করেন, এজন্য মার্কিন বিদেশ দপ্তরের দু’জন সিনিয়র অফিসার — পশ্চিম গোলার্ধের জন্য মার্কিন সহকারী বিদেশ সচিব থমাস শ্যানন এবং সহকারী বিদেশ সচিব জেমস স্টেইনবার্গ অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক আগে ছিলেন হন্ডুরাসে। সেসময় তাঁরা অসামরিক ও সামরিক গ্রুপগুলির সঙ্গে কথা বলেন।
তাছাড়া, নিউ ইয়র্ক টাইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাসখানেক আগেই, ‘২জুন, ওবামা প্রশাসন পেয়েছিল রাজনৈতিক যুদ্ধের উত্তাপ নিয়ে প্রাথমিক তথ্য, যখন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন হন্ডুরাসে। সেসময় ক্লিন্টন দেখা করেন জেলায়ার সঙ্গে, এবং জেলায়া দৃশ্যতই অস্বস্তিতেই পড়েন, বিরক্ত হন যখন মার্কিন বিদেশ সচিব তাঁকে শেষ রাতে তাঁর প্রাইভেট রুমে দেখা করতে বলেন।’
শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওবামা প্রশাসনের একজন ডাকসাইটে কর্তা টাইমসকে জানিয়েছেন, অভ্যুত্থানের দিনকয়েক আগেই পশ্চিম গোলার্ধের জন্য মার্কিন সহকারী বিদেশ সচিব থমাস শ্যানন এবং হন্ডুরাসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত উগো লোরেন্স কথা বলেছিলেন সেদেশের ‘সামরিক কর্তা এ বিরোধী দলের নেতাদের’ সঙ্গে। ‘কীভাবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারন করা যায়, কীভাবেই বা তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়, কার নেতৃত্বে একাজ তাঁরা করবেন, তা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়’ বলে তিনি টাইমসকে জানিয়েছেন। এই থমাস শ্যাননই ছিলেন রাষ্ট্রপতি বুশের বিশেষ উপদেষ্টা, ২০০৩-’০৫এ। সেইসঙ্গেই ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে পশ্চিম গোলার্ধের অধিকর্তা। ২০০১-’০২, শ্যানন ছিলেন মার্কিন বিদেশ দপ্তরের আন্দিজ বিষয়ক (যার আওতায় রয়েছে ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, পেরু এবং ইকুয়েদর) অধিকর্তা। আর ২০০২-’০৩এ, লোরেন্স ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে আন্দিজ বিষয়ক অধিকর্তা। ঠিক যেসময় বুশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে ভেনেজুয়েলায় সেনা অভ্যুত্থান অপসারিত করেছিল উগো সাভেজকে।
অভ্যুত্থানের পর হিলারিকে সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করেন, ‘সাংবিধানিক শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ বলতে তিনি কি ‘জেলায়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ বোঝাতে চাইছেন, জবাবে মার্কিন বিদেশ সচিব কিন্তু সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলেননি।
চতুর্থত, এই মুহূর্তে সোতো ক্যানোতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির দায়িত্বে রয়েছেন কর্নেল রিচার্ড জুয়েরজেনস, যিনি ২০০৪এ ফেব্রুয়ারিতে হাইতির রাষ্ট্রপতি জ্যাঁ বাট্র্যান্ড আ্যারিস্টাইডের অপসারনের ঘটনায় ছিলেন স্পেশাল অপারেশনের কমান্ডের অধিকর্তা।
পঞ্চমত, অভ্যুত্থানের পরই ঘোষাণা করা হয় ওবামা হিংসার পথকে বিরোধিতা করেছেন। এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে বসে মীমাংসা করে নিতে বলেছেন। ওয়াশিংটনের এই প্রতিক্রিয়া অভ্যুত্থানের হোতাদের আরও উসকে দেয়। পরে এককাট্টা আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ওবামা অভ্যুত্থানের নিন্দা করেন। কিন্তু খুবই সচেতন শব্দ প্রয়োগে। জেলায়ার অপসারণকে তিনি সচেতনভাবেই ‘সাঙ্ঘাতিক নজির’ (অভ্যুত্থান নয়) বলে বর্ণনা করেন, অন্যদিকে হিলারি একে ‘অভ্যুত্থান’ বলতেই সরাসরি অস্বীকার করেছেন। বিদেশ দপ্তর এখনও একে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করতে নারাজ। শুরুর দিন থেকেই ওয়াশিংটন বলে এসেছে এতে ‘দু’পক্ষ’ জড়িত, সাংবিধানিক শাসন ফিরিয়ে আনতে ‘আলাপ-আলোচনা’ জরুরী। আর এভাবেই বৈধতা দিয়েছে অভ্যুত্থানকে। শেষে এসে অভ্যুত্থানের সঙ্গে ‘বোঝাপড়াকে’ চাপিয়ে দিয়েছে। যেন অভ্যুত্থানের জন্য জেলায়া দায়ী।
ষষ্ঠত, অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতিকে অপহরণ, মারধর, প্রতিবাদীদের ওপর তুমুল দমনপীড়ন, ইন্টারনেট পরিষেবাকে বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে হন্ডুরাসের সেনাবাহিনী ও পুলিসের বিরুদ্ধেএকটি শব্দ
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×