somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক দেশে ম্যানহাটন, ইন্ডিয়া আর ভারত

১৬ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক দেশে ম্যানহাটন, ইন্ডিয়া আর ভারত


শান্তনু দে


এখানে বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
জিরো পলিউশান। বর্জ ও জলের সম্পূর্ণ রিসাইক্লিংয়ে সর্বাধুনিক ব্যবস্থা। স্বনিয়ন্ত্রিত। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য স্মার্ট গ্রিড। চব্বিশ ঘন্টা ইলেকট্রিসিটি। দিনভর জল। এনার্জির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিট্যাল ব্যবস্থা। স্মার্ট মিটার। চওড়া মসৃন রাস্তা। আধুনিক গণপরিবহন। বাইসাইকেল ও পথচারীদের জন্য আলাদা লেন। অবধারিত অনুষঙ্গ ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর।
অসম্ভব পরিবেশ বান্ধব।
এই ভারতে ঘিঞ্জি বস্তি আর বহুতলের সহবস্থানে বেড়ে ওঠা এক ‘নিও লিবারেল হেভেন’।
অতি-আধুনিক, ঝকঝকে স্মার্ট-সিটি — বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নগর।
বিশ্ব-মানের এই কেতাদুরস্ত ফিটফাট নগর গড়ে তুলতে চাইছে খোদ সরকার। এরমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পাইলট প্রকল্প তৈরির কাজ। দেড় বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে দিল্লি মনে করছে। নকশা তৈরি থেকে নির্মাণের দায়িত্বে থাকবে হিতাচি, মিৎসুবিশি, তোশিবার মতো জাপানি সংস্থা।
শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা জাঁক করে জানিয়েছেন, ‘চন্ডীগড়ের পর, আধুনিক নগর নির্মাণে এটাই প্রথম আন্তরিক পদক্ষেপ।’
কেন্দ্রের পরীক্ষাতেই যখন ডাহা ফেল দেশের অধিকাংশ শহর, মল-শপিং কমপ্লেক্সের ভিড়ে বিবর্ণ রঙচটা বুনিয়াদী পরিকাঠামো, একশ’য় ৯০তুলতে পারেনি কেউ, তখন ঝকঝকে ‘স্মার্ট সিটি’র বাহারি প্রজেক্ট।
শর্মা না জানলেও, অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং বিলক্ষণ জানেন, এই ভারতেই রয়েছে একটি সাব-সাহারান আফ্রিকা। আমাদের গ্রামীণ জনসংখ্যার অর্ধেক, সংখ্যায় ৩৫কোটির বেশি মানুষের দৈনিক খাদ্যগ্রহনের পরিমাণ সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলির চেয়েও কম।
এবং এটাই দস্তুর।
মার্কিন ‘টাইম’, ব্রিটিশ ‘ইকনমিস্ট’ পত্রিকায় ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’। পত্রিকার পাতায়-পাতায় প্রাচুর্য্য আর বৈভবের কভার স্টোরি। বাড়ছে ‘বিজনেস ক্লাস’ অর্থনীতি। শহর ছাপিয়ে মফঃস্বলে শপিংমলের ব্যাপ্তি। বিগ বাজারে উড়ছে মধ্যবিত্তের টাকা। দিল্লিতে সংস্কারের খাঁটি টিম। প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের ঘোরে বুঁদ।
এখানে কর্পোরেট দুনিয়া পায় ভরতুকি। তিন কিস্তিতে পায় সাড়ে ৩লক্ষ কোটি টাকা ত্রাণ। অন্যদিকে, সারের ওপর থেকে ভরতুকি ছাঁটাই করে সরকার।
বাড়ছে কৃষকের আত্মহত্যা। প্রতি বত্রিশ মিনিটে একজন কৃষকের আত্মহত্যা — এতদিন এই ছিল। ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত। এখন প্রতি তিরিশ মিনিটে একজন।
আগে ছিল শুধু মহারাষ্ট্র। এখন মহারাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ছত্তিশগড়, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্নাটকে। আগে ছিল শুধু তুলো চাষীদের মধ্যে। এখন তাতে যুক্ত হয়েছেন তাঁত ও বস্ত্র শিল্পের শ্রমিক।
এ এক আত্মমরণের অর্থনীতি।
অন্যদিকে, এক বছরে, ২০০৯-’১০এ বিলিওনেয়ারের সংখ্যা বাড়ে দ্বিগুন। ফর্বসের ‘ধনীদের মধ্যে ধনীশ্রেষ্ঠ’র তালিকায় ভারত থেকে বিলিওনেয়ারের সংখ্যা ৪৯, যেখানে গত বছর ছিল ২৪। শুধু ধনী নয়, এই সময়ে উচ্চ মধ্যবিত্তরা কিনছেন অতিরিক্ত ২৫শতাংশ গাড়ি। গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১৫,২৬,৭৮৭।
বি পি এল, এ পি এলে না নিও লিবারেল মিডিয়া ব্যস্ত আই পি এলে।
বলা হয়েছিল বছরে ১কোটি ২০লক্ষের কর্মসংস্থান। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০০৯এ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গিয়েছে মাত্র দেড় লক্ষ। মাত্রই দেড় লক্ষ। মন্দায় খালি সৃষ্টি হয়নি কর্মসংস্থান। অথচ, মন্দায় কর্পোরেটের মুনাফা বেড়েছে। বিলিওনেয়ারের সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুন।
দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার। শপথ গ্রহনের মুহূর্তে ইকনমিস্টের মতো পত্রিকাও দিল্লিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে একটি রূঢ় সত্য, ‘প্রায় ২কোটি ৭০লক্ষ ভারতীয়ের জন্ম হবে এবছর। পরিস্থিতির উন্নতি নাহলে, এদের মধ্যে প্রায় ২০লক্ষই মারা যাবে পরের ভোটের আগে। আর যারা বেঁচে যাবে, অপুষ্টির কারণে তাদের ৪০শতাংশই হবে শারীরিকভাবে বাড় বন্ধ হওয়ার শিকার। অধিকাংশই হয়তো স্কুলে ভর্তি হবে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। স্কুলে মাস্টার পাবে না। পাঁচ বছর পর, এদের ৬০শতাংশেরও কম ছোট গল্প পড়তে পারবে, ৬০শতাংশেরও বেশি সরল পাটিগনিত করতে গিয়ে হোঁচট খাবে।’
দিল্লি নির্বিকার। স্মার্ট-সিটির উন্নয়ন মডেলে বুঁদ।
সংস্কারের দেড় দশক অতিক্রান্ত। বাড়ছে অসম বিকাশ। বাড়ছে রাজ্যগুলির মধ্যে। বাড়ছে গ্রাম-শহরের মধ্যে। বাড়ছে বৈষম্য। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে। পুরুষ-মহিলার মধ্যে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দেড় দশকে বৈষম্য বেড়েছে, শেষ ৫০ বছরের তুলনায়ও দ্রুতহারে।
গ্রাম-শহরের বিভাজন আজ এতটাই প্রকট যে আমজনতার লেন্সে একই দেশে যেন দুই-রাষ্ট্র — ইন্ডিয়া এবং ভারত।
এবারে ‘স্মার্ট-সিটি’র নামে জন্ম নিতে চলেছে আরেকটি — ম্যানহাটন।
এবারে একই দেশে যেন তিন রাষ্ট্র — ম্যানহাটন, ইন্ডিয়া এবং ভারত।





৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×