somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে ---- আল মাহমুদ

১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে
আল মাহমুদ

আষাঢ় শুরু হয় সৃজনশীল কবির মনে একাকী সিক্ত হোয়ার বেদনা সৃষ্টি করে। এই মাসে বৃষ্টির শব্দ ছাড়া প্রাণিকুরের গলা থেকে যেন 'রা' বেরোতো চায় না। কবির জন্য বন্ধুত্বের পিপাসা শত জলধরের মধ্যেো বিহ্বলের মতো একাকী কল্পনার বালিশে মাথা গুজে কিসের যেন মিল খুজে বেড়ান।

এই জল এই ঝড়
এই জলতরঙ্গের খেলা
মনে হয় শেষ নেই
আমার তো ফুরিয়েছে বেলা।

ঝরে গেছে সব পাতা
তুলে নিয়ে খোলা ছাতা
কে যায় কোথায়
আমি শুধু বসে থাকি
আকাশের আনন্দ মাখি
ডাকি আয় আয় আয়।

এই ডাক বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশতে থাকে। কারো ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনাই কবির মনে আশা জাগিয়ে তোলে না। এ ধরণের কোনো বেদনা থেকেই সম্ভবত: কালিদাসৱশ মেঘদূত রচনার অনুপ্রেরণা খুজে পেয়েছিলেন। সব যেন কেমন একটু ভেজা ভেজা নরম। রাজি হওয়া নারীর মতন। আষাঢ় বাংলাদেশে বর্ষাঋতুর মহিমাকে আনন্দঘন না করলেও বিরগের যাতনা আকাষ উল্টো করে ঢেলে দিয়েছে। কবির মনে যে অস্বস্থি জমা হয়, না-লিখতে পারার এক ধরণের খিচুনীতে সারা শরীরে সেই যাতনা ছড়িয়ে পড়ে। অথচ, আষাঢ় হলো প্রকৃতিকে মিল ও সহজ করার মাস। সবকিছুতেই অসম্মত প্রকৃতিও আষাঢ়ে তার রাজিনামা লিখে দেয়। সবই নরম, সম্মত, সহজ কিন্তু তৃপ্তি নেই কেবল কবির। সিক্ত শাড়ী কে যেন পাশের বাড়ীর বারান্দায় মেলে দিয়েছে। সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে দিকে তাকিয়ে কবি তার নৈসঙ্গ নিয়ে উদাসীন হয়ে থাকেন। আষাঢ় শহর ও গ্রামকে একাকার করে দেয়। অপরিতৃপ্তির বেদনা যেন জলের শব্দ হয়ে মাটিতে নিংড়ে মিশ্রিত হয়। প্রাণিকুলের মধ্যে শব্দ না করার একটা প্রকৃতি জাগিয়ে তোলে। শুধু দেয়ালের গলা খনখনিয়ে শিস দিয়ে এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে যায়। আর সবই নীরব নিস্তব্ধ। পানি পড়ার শব্দ।

"কে যে কবে লিখেছিল
'জল পড়ে পাতা নড়ে' এই মহাশ্লোক।
সেই ছন্দে আমি কাপি
শূন্য ঝোলা শূন্য ঝাপি
হৃদপদ্মে ভোরের আলোক।"

কবিতা তো থেকে থাকে না। সে প্রতিটি ঋতুতে পরমান্নের জন্য ক্ষুধার্থ থঅকে। কেয়ার কাটার ফাকে মাদকতাময় তীব্র গন্ধময়ী কেয়া পুস্প সব পোকা-মাকড়কে আকর্ষণ করে। উন্মাদ উৎসারণের মিলনের যুক্ত হোয়ার বাসনা জাগিয়ে উন্মাদ করে রাখে।

প্রকৃতিতে এই প্ররোচনা খুবই সন্তর্পনে সংক্রমিত হয়। অথচ চক্ষুষ্মানরা অন্তর্চক্ষু না থাকলে চর্মচক্ষে কিছুই দেখতে পায় না। আমরা যাকে বলি অবরোকন তা হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকানো চোখের পাপড়ি মেলে দিয়ে কেয়া বনে কামের কুসুম ফুটেছে, তা দেখে খুব ধীরে নি:শ্বাস ফেলতে থাকে।

আষাঢ় ছাড়া প্রকৃতিকে নরম করার আর কোনো মন্ত্র ঋতুরাজ বসন্ত দিতে পারে না। এই মাসেই কবির মনে এই প্রশ্ন জাগায় কবিতা না হলে বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে সংযোগের লিপ্ত হোয়ার পৌরহিত্য করবে কে?

আষাঢ় কবিতাকেও ভিজিয়ে দেয়। শব্দের ওপর একটা চকচকে ভাব এসে গাঢ়তা সৃষ্টি করে দেয়। আষাঢ় হলো দুই বিপরীতের মধ্যে মিলনের পুরুহিত মাস। সেতু।

'সেই শ্লোক তখনও বাজে
হৃদয়ে মেঘেরা সাজে
ঝরে পড়ে অমৃতের ধারা,
সব দিয়ে আমি খালি
মুছে চোখ অন্ধ কালি
রিক্ত আমি সিক্ত সর্বহারা।'

এসব দিয়ে শূন্য হয়ে যাওয়ার বেদনা আষাঢ় ছাড়া আর কোনো মাস পূর্ণভাবে প্রয়োজন মেটাতে পারে না। যদিও এর পরই শ্রাবণ এসে আষাঢ়ের অপূর্ণ কাজ নিজের মধ্যে দায়িত্ব হিসেবে এক ধরণের সজল পূর্ণতা দিতে বৃষ্টির বিবরণ ব্যাখ্যা করতে থাকে। তবে শ্রাবণে না পৌছা পর্যন্ত আষাঢ়ের কাজ হলো অসম্মতকে সম্মত করানো এবঙ দৃঢ়তাকে নম্য বা নরম করে তোলার প্রয়াসী পুরোহিত মাস মাত্র।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×