somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৈত্রিক জটিলতা

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- আপনি একজন সপ্রতিভ সুদর্শন বুদ্ধিমান যুবক। এ বিষয় সমূহে কারো কোন ভিন্নমত থাকতে পারে না। আমি কিছু খোলামেলা আলোচনা করতে চাই আপনার সাথে। আর ইউ গেম?
- নিশ্চয়ই। তবে আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই। আরো তিন জায়গায় যেতে হবে আমাকে।
- রাইট। আপনি ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। সরাসরি প্রশ্নে যাওয়া যাক। আপনার বায়োডেটায় পড়েছি আপনি ভারতের কোন কলেজ থেকে তিন বিষয়ে অনার্স করেছেন। আমার জানামতে দুটির বেশি অনার্স কোথাও করা সম্ভব নয়। য়ার এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে তো তিনটি বিষয়ে শুধু পাস কোর্সে পড়া সম্ভব। এ নিয়ে কিছু গুঞ্জন শোনা যায়।
- 'অনার্স' লিখেছে নাকি। আমি তিনটি বিষয় নিয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তবে পরে আমেরিকায় আই টি তে মেজর হয়েছি। হার্ভার্ড পাব্লিক স্কুল থেকেও মাস্টার্স করেছি।
- জ্বি, টেক্সাসের আরলিংটন ক্যাম্পাসে আপনি যথারীতি কম্পিউটারে ডিগ্রী পেয়েছেন। একই সাথে আপনার বায়োডেটায় এক সময় দেখেছি আপনি যখন ছাত্র তখন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগ আপনার নেতৃত্বে পরিচালিত হত। এটা অবশ্যই এক বিরল কৃতিত্ব। কোন ভুল নেই তো?
- আমি এক সেকশনের দায়িত্বে ছিলাম। অবশ্যই পুরো সেন্টার কোন ছাত্রের পরিচালনায় চলত না।
- আপনি কি মনে করেন আপনার জ্ঞান অভিজ্ঞতা প্রধান মন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ার জন্য যথেষ্ট?
- না হতে পারে, কিন্তু এব্যাপারে আমি হয়তো সবচেয়ে এফেক্টিভ রোল প্লে করতে পারি।
- ধন্যবাদ ব্যাপারটা পরিষ্কার করার জন্য। টি এ রা সবাই বিভিন্ন দায়িত্বে থাকে। অনর্থক কেউ আপনার অজান্তেই কিছু বাড়াবাড়ি করেছে আপনাকে বিব্রত করার জন্য। নিশ্চয়ই আপনাদের প্রতিপক্ষের দালাল। আচ্ছা, আপনার বাবা তো দেশের সেরা ছাত্রদের একজন ছিলেন । আপনার কি তাঁর মত একজন মেধাবী বিজ্ঞানী হয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছে হয় নি, প্রাথমিকভাবে? নিশ্চয়ই মন দিলে তা সম্ভব ছিল।
- না, আমি আগেই কাজে নেমে যেতে চেয়েছিলাম। জানেন তো বিল গেটস প্রথম ডিগ্রী পর্যন্ত শেষ না করে মাইক্রসফট কোম্পানী খুলে পৃথিবীর সব চেয়ে ধনী লোক হয়ে যান।
- মানে, আপনাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে তো প্রাথমিকভাবে অর্থের চেয়ে জনপ্রীতি বা খ্যাতির চাহিদাই বেশি ছিল, সেই অর্থে বলছিলাম।
- আমার দাদার খ্যাতির ওপরে কারো ওঠা সম্ভব নয়, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী।
- আপনি প্রায়ই ইদানীং দাদা ও নানার মধ্যে কনফিউজ করে ফেলছেন। কেউ কেউ বলে এটা এক ধরণের নিও-ঈদিপাস কমপ্লেক্স। মানে মায়ের দিকটাই আপনি প্রধান মনে করেন।
- নামে কি যায় আসে। নানা, দাদা বায়োলজিকালী সমান।
- ঠিক। তবে আপনার কাছে বাবার চেয়ে মায়ের ভূমিকাই সব সময় একটু বড় মনে হয়েছে। অনেক কারণেই সেটা হতে পারে, বৈষয়িক ছাড়াও। অনেকে বলে আপনার বাবা-মা শেষদিকে সুখী পরিবার ছিলেন না। আপনার বাবার এক সময় সন্দেহ হয় তাঁকে আপনার মায়ের পরিবার বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা করছে, এবং সেজন্য তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের বাড়িতে মাস দুয়েক আশ্রয় নিয়েছিলেন।
- এটা ঠিক আমার বাবার মধ্যে অনেক জটিলতা ছিল। মেধাবী মানুষদের মধ্যে জটিলতা একটা কমন ব্যাপার।
- আপনার বাবার ব্যাচে বাংলাদেশের সেরা ছাত্র ছিলেন মুনিবুর রহমান চৌধুরী, প্রথমে আপনার বাবার মতই ফিজিক্স পড়তেন, কিন্তু তিনি জার্মেনীতে স্কলারশিপ পেয়ে চলে যান, সেকেন্ড ইয়ারের পরে। যাওয়ার আগে পাশ কোর্সে ডিগ্রী শেষ করে দিয়ে যান। সব বিষয়ে ডিস্টিংশন পেয়েছিলেন, বলা বাহুল্য। আপনার ভারতীয় তিন অনার্সের গল্পে আমাদের তাঁর কথাই মনে পড়ে যায়। তবে আপনার বাবা অনার্সে প্রথম হয়েছিলেন, মুনিব সাহেবের অবর্তমানে। খুবই মেধাবী ছিলেন।
- আমার দাদা আমার বাবার মেধা দেখেই তো মায়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য তিনি তখন জেলে ছিলেন, ভালো করে খোঁজখবর নিতে পারেন নি।
- ঠিক, নিলে জানতেন তাঁর চরিত্রের ভীষণ জটিল দিকগুলি। ডারহামে যখন তিনি পি এইচ ডি করছিলেন তখনই অনেকে খেয়াল করেছিল। বেশ বদনাম হয়ে গিয়েছিল। অনেক পরে এ ই সির কর্মকর্তা হিসেবেও কিছু ঝামেলায় একটু জড়াবার খায়েশ হয়েছিল। বনানীতে এ ই সি র কোয়ার্টারেও অনেকে অনেক ব্যাপার খেয়াল করেছিল যখন আপনার মা সফরে বাইরে থাকতেন। সব চেয়ে মর্মান্তিক ছিল নিজের লেখা ফিজিক্সের বই যখন তিনি সেই অন্য মহিলাকে উপহার দিতে গিয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে আসেন। উনি তো ম্যাট্রিকও পাস করেন নি, ফিজিক্সের বই দেখেই ভয় পেয়ে যান।

- হ্যাঁ মাথা খালি, দেমাকে মহারাণী। বাবা ভুল করেছিলেন, আসলে তিনি একটা সৌহার্দের সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। দাদা যেমন সবার সব অপরাধ মাফ করে দিতেন, বাবাও ভাবতেন স্থায়ী শত্রুতায় কিছু অর্জিত হয় না।
- কিন্তু আপনার মা কাউকে ক্ষমা করেন না। করলেও অনেক শাস্তির পরে। তোফায়েল, নাসিম, সুরঞ্জিৎ বাবু সবাই তা জানেন। তিনি সেই মহিলাকে সারাজীবনেও ক্ষমা করবেন না, যদিও তাঁর স্বামীর পাগলামীর পেছনে এঁর কোন দোষ নেই। তিনি প্রধান মন্ত্রী হয়ে এমন আচরণ শুরু করলেন যে আপনার বাবাও ভয়ে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলেন - তাঁকে নাকি বিষ দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করছে শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা। পরে ফিরে এলেন অনেক বোঝানোর পরে, কিন্তু ঠাঁই হলো সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে। স্বাস্থ ভেঙে গেল । নাম মাত্র চিকিৎসার পরে মারা গেলেন অকালে। আমার চোখে এখনো স্কোয়ার হাস্পাতালে সেই শেষের এক দিনের ফটোসেশন চোখে ভাসছে। আপনার বাবাকে অনেক যন্ত্রের মধ্যে দেখাই যাচ্ছে না। আপনার মা ঘরের বাইরে থেকে মুখটা যত সম্ভব করুণ করে দেখাচ্ছেন ফটোগ্রাফারদের জন্য। হয় তো প্রথম জীবনে এক সময় ভালোবাসা ছিল, আপনার মা তো বেশ সুশ্রী ছিলেন, শ্যামলা হলেও। আপনিও তো বাবাকে কবর দেওয়ার পরে দেশে ফিরলেন।
- আমি এসব জটিল বিষয় আলোচনা করব না। আপনার কিছু কথা হয়তো ঠিক, কিন্তু আরো কথা আছে।
- আচ্ছা , আপনার নামের প্রথম শব্দটা কি ঠিক?
- মানে?
- আপনাদের পরিবার পাক বাহিনীর নিরপত্তা বলয়ের মধ্যে ছিল ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। আপনার বাবা প্রতিদিন অফিসে গিয়েছেন। মৌলবী সাহেব আকীকার সময় এসে বাংলা শব্দের নাম রাখতে কি সাহস পেয়েছিল সেই সময়ে? নাকি এটা স্বাধীনতার পরে আপনার দাদার দেয়া?
- আপনার কি নামটা পছন্দ না?
- না, না, খুবই পছন্দ। আর জীব মাত্রই তো সজীব।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×