somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আমরা কি তবে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাব": রামুতে সহিংসতা

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক দিন ধরে আমি পেপার, ব্লগ কিংবা ফেসবুকে চোখ রাখতে পারছিনা, যেখানেই তাকাচ্ছি সেখানেই মনে হচ্ছে পোড়া পা, শরী র নিয়ে মহামতি বুদ্ধ আমার দিকে হতভম্বের মত চেয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নত করছি। কি ঘটে গেল রামুতে ! আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা, যে দেশকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, গর্ব করি আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে, সেখানে কি নিকৃষ্ট ব্যাপার হয়ে গেল তার ব্যাখ্যা কি কেউ দিতে পারবে।

আমার সব সময়ই মনে হয়েছে সত্যিকার অর্থেই কি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিরাপদ ? ৯০ এর দশকে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে প্রচুর হিন্দুকে ঘর ছাড়া হতে বাধ্য করা হয়েছে, এরপর বিএনপি জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০১ এ এক তান্ডব লীলা চালায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে। খুন, ধর্ষণ কোনটাই বাদ যায়নি। গণ ধর্ষণের শিকার হওয়া এক মেয়ের মাকে বলতে হয়েছে “বাবারা, একজন একজন করে যাও, আমার মেয়ে ছোট”। এছাড়াও নাটোরের লালপুরে জলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত আখের রস ঢেলে দেওয়া হয়েছে ৩৫ হিন্দু পরিবারের উপর, যার ক্ষত এখনও শুকায়নি। আসলে আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা শুধু দাম পায় ভোটের সময়। আওয়ামীলীগ এদের নিয়ে ফায়দা লোটে আর বিএনপি জামায়াত এদের নিয়ে খেলে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর এদের নেতারা সমস্ত বাংলাদেশের জমিকে এদের বাপ দাদার জমি বলে মনে করে। আর সং খ্যালঘুদের মেয়ে, জমিতো এদের ভোগেই নিবেদিত।

রামুর ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে এদের সাথে প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে ছিলেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি থেকে শুরু করে সমস্ত দলের স্হা্নীয় নেত্রীবৃন্দ। আর প্রশাসন নিশ্চুপ হয়ে দেখছিলেন এই ধ্বংসযজ্ঞ। কিছুই কি তাদের করার ছিলনা? প্রশাসন এখন ঘটনাকে অন্য খাতে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বানোয়াট তত্ত্ব আওড়াচ্ছে । যেখানে হাজার হাজার মানুষ সশস্ত্র হয়ে গান পাউডার নিয়ে কেরোসিন নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাপী এই জঘন্যতম কাজ ঘটাল আর তখন আমাদের সরকার এর পোষা চাকর গুলো রাতের আঁধারে জ্বলন্ত বুদ্ধকে দেখে বোধিসত্ত লাভ করছিলেন। আর আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহল টেলিভিশনে বক্তৃতা দিলেন, ডাক দিলেন সাম্যের। কি হল তাতে? কিছুই না । কারণ যত দিন মানুষের ধর্মান্ধতা দূ্র না হবে কোনদিনই এই সমস্যার সমাধান হবেনা। আর আদৌ কি এই সব সংখ্যালঘু মানুষদের প্রয়োজন আছে বাংলাদেশে, আমার তো মনে হয় নেই।আর তাই কোথাকার কে ফেসবুকে কি ছবি দিল সেটা না দেখে, না বিচার করে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ল কিছু নিরীহ মানুষের উপর। কি সুন্দর না দেখা গেল। পুড়ছে মন্দির, দেবালয়, বাড়ী, মানুষ… মানুষের ই দেওয়া আগুনে। এই ভাবে একজন মানুষকে পুড়িয়ে সত্যিই কি ধর্মের অবমাননার প্রতিশোধ নেওয়া যায় ? কার কতদিন এভাবে চলবে।

গৌতম বুদ্ধের নীতির একটা মূল কথা অহিংসা , শুধু বুদ্ধ নয় সমস্ত ধর্মের মূল কথা অহিংসা। যেভাবে আমাদের প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে এগোয়নি আমাদের নৈতিকতার চর্চা। আজও ধর্মান্ধতার কাদায় ডুবে আছি। আমরা মুখে যতই সেকুলার বলিনা কেন আমরা আমরা বাঙ্গালী এই পরিচয় দেওয়ার চেয়ে আমরা মুসলিম, আমরা হিন্দু এই পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করি। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী যেমন নন মুসলিম পেলেই আরো বেশি আগ্রহ আরো বেশি কাম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আজ ৪২ বছর পরে আমরা যে পাক বাহিনী এবং রাজাকারদের চেয়ে ভাল এই প্রমাণ করার সুযোগ হারালাম রামুতে নিরীহ বৌদ্ধদের উপর কাপুরোষোচিত ভাবে হামলা করে। আমাদের এই ধর্মীয় গোঁড়ামি না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নেই ।তাই তো আমাদের সংখ্যালঘুদের এবং তার সন্তানদের বারবার শুনতে হবে “মালাওনের বাচ্চা, ধুতির বাচ্চা কিংবা হেদুর বাচ্চা”।এই ধরণের অসংখ্য নিগ্রহ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে সংখ্যালঘুদের। আজ পাহাড়ী বাঙ্গালীরা আতংকিত, আতংকিত পুরো দেশের সংখ্যালঘু মানুষ। কারণ ধর্ম এতই শক্ত যে তার ভয়ে কেউ হাতে হাত দিয়ে বলেনা আমরা বৌদ্ধ মন্দির ভাঙ্গার, মানুষ হত্যার বিচার চাই।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে আমার লেখা শুধুই অরণ্য রোদন, কেউ দাঁড়াবেনা ঐসব মানুষদের পাশে যারা নিজ ভূমে পরবাসী, যারা নিজ মায়ের কোলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। এই সব নিয়ে কথা বলতে আমার কলিগ যিনি বৌদ্ধ এবং থাকেন কক্সবাজারে তিনি বললেন এত কিছু করার তো প্রয়োজন ছিলনা সরকার আমাদের বলত তোমরা দেশ ছেড়ে চলে যাও , বাংলাদেশ শুধু মাত্র সংখ্যাগরিষ্টদের যাদের পেশিশক্তি আছে, আছে প্রশাসন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:১০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×