somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক মানুষের সহজাত প্রতিক্রিয়া ও ইসলামী বিচারব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা

২৭ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগের ঘটনা। যখন ইভটিজিং-এর প্রতিবাদ করায় নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমানের হত্যাকারী দুর্বৃত্ত রাজনের কি ধরনের শাস্তি হওয়া দরকার এ নিয়ে সামু ব্লগারদের যে সব মন্তব্য উঠে এসেছিল তার নমুনা এমন- ‘না মরা পর্যন্ত গণধোলাই’...‘সব অঙ্গ এক এক করে কেটে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে’...‘সবার সামনে গুলি করে মারা কিংবা একবারে কতল’...‘ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মারা উচিৎ এবং সেটি সকল টেলিভিশনে বাধ্যতামূলক লাইভ টেলিকাস্ট করা হোক। আমি প্রশাসনে থাকলে সেটাই করতাম’....‘জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। তার আগে মুক্ত গণধোলাই’....‘মিজানকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে সেভাবে হত্যা করা হোক’...‘ডগ স্কোয়াডে দিতে হবে এবং কামড় খাওয়াতে হবে না মরা পর্যন্ত’... ‘যতদ্রুত সম্ভব মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করতে হবে’... ‘ট্রাকের পিছনে দড়ি বেঁধে সারাদেশে ঘুরাতে হবে যাতে তার বীভৎস চেহারা দেখে কেউ এমন কাজ করার আর চিন্তাও না করে। আমার ক্ষমতা থাকলে খোদার কসম আমি তাই করতাম ঐ ঘৃণ্য নরপশুদের’...‘প্রকাশ্য জনসম্মুখে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা উচিৎ যাতে ভবিষ্যতে আর কোন নরপশুর জন্ম না হয়’...। আরো যে সব মন্তব্য রয়েছে তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।
উপরোক্ত মন্তব্যগুলো পড়লে স্পষ্টতঃই বোঝা যায় এ মর্মান্তিক ঘটনা মানুষের মনে কিরূপ তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এমন কোন উচ্চতম শাস্তির কথা অবশিষ্ট নেই যা মন্তব্যদাতারা উল্লেখ করতে কসুর করেছেন। অথচ তাদের কেউই কিন্তু নিহত মিজানের আত্মীয় বা পাড়া-প্রতিবেশী নন। নিতান্তই অপরিচিত এসব লোকজন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব মন্তব্য করেছেন। একবার চিন্তা করুন, যে পরিস্থিতিতে একজন অনাত্মীয়-অপরিচিত ব্যক্তির অন্তরে নিহত ব্যক্তির জন্য এতটা প্রতিক্রিয়া জন্ম নেয় সেখানে নিহত ব্যক্তির যারা একান্ত পরিবার-পরিজন তাদের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে? কত তীব্র হতে পারে তাদের প্রতিক্রিয়া? অবশ্যই অবশ্যই বহুগুণ বেশি। নিশ্চয়ই তারা কামনা করবেন তাদের কল্পনায় ভাসা সর্বোচ্চ শাস্তিটাই।
প্রিয় পাঠক, এবার চিন্তা করুন ইসলামী বিচারব্যবস্থার যৌক্তিকতা। সুস্পষ্টই এটা প্রতিভাত হবে যে, মানবপ্রবৃত্তির যে স্বাভাবিক দাবী তার মাঝেই ইসলামী বিচারব্যবস্থার আপাত কঠোর শাস্তি নীতির প্রাসঙ্গিকতা নিহিত। এখানে লক্ষ্যণীয় যে মন্তব্যদাতারা প্রত্যেকেই শিক্ষিত ও আধুনিক সুশীল সমাজের তথাকথিত মানবতাবাদী প্রতিনিধি এবং অধিকাংশই দাবী করেছেন যে, হত্যাকারীর শাস্তি প্রকাশ্য জনসম্মুখে কার্যকর করা হোক।
তাদের শাস্তির দাবীর পিছনে যে কঠোরতম এবং স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে, তা-ই আমার এ লেখার প্রেক্ষাপট। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চরম উন্নতির যুগে তুমুল উৎসাহের সাথে হরহামেশাই প্রচারিত হচ্ছে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা যে কি রকম বর্বর তার প্রকাশ্য কিংবা আকার-ইঙ্গিতের বিবরণ। যারা কিছুটা সংযমী তারাও আল্লাহ্র আইনকে কেবল মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থার জন্য উপযোগী ছিল বলে পান্ডিত্যপূর্ণ মন্তব্য করে নিজেদেরকে আধুনিক জাহির করেন। অথচ কেতাদুরস্ত বিতর্কের বাইরে বাস্তবে এসে উপরোক্ত ঘটনায় এই তাদেরই স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহের ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কৃত্রিম খোলস ঠেলে ক্ষণিকের জন্য হলেও তারা বাস্তবতার আলোয় একাকার হয়েছেন। একই সাথে ইসলামী আইন ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকেও অবচেতনভাবে উচ্চকিত করেছেন।
মূলত ইসলামী জীবন ব্যবস্থা মানুষের জন্য যে সকল নীতিমালা আবশ্যকীয় করে দিয়েছে তা মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর ও তাদের স্বাভাবিক চাহিদার অনুকূল। এ ব্যবস্থা সর্বকালের সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য ও মানব সমাজের শৃংখলাবিধানের সর্বাধিক উপযোগী বিধান। আপাত দৃষ্টিতে তা যত কঠোরই মনে হোক না কেন, তার অভ্যন্তরে মানবহৃদয়ের স্বাভাবিক দাবী এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির যে সুসমন্বয় ঘটেছে তার কোন বিকল্প নেই। সমাজে প্রকৃত অর্থে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাইলে এবং রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনাযন্ত্র পরিশীলিত, ন্যায়বিচারপূর্ণ কাঠামোয় উত্তীর্ণ করতে চাইলে এই বিচার ব্যবস্থাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে সমাজের পাদপীঠে। আল্লাহ আমাদের সুমতি দান করুন। আমীন!!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×