ঢাকার মোহাম্মদপুর। এখন বহু বিভক্ত হয়ে ধানমন্ডি, আদাবর ইত্যাদি থানারও জন্ম দিয়েছে। ভারতে, বিশেষত ভারত নিয়ন্ত্রিত বাংলায় যেসব মুসলিম নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসতেন তাদেরকে মুহাজির (হিজরতকারী) মর্যাদা দিয়ে পাকিস্তান সরকার বসবাস করার জন্য মোহাম্মদপুর এলাকাটি বরাদ্দ দেয়। এলাকার নামকরণ করা হয় ইসলামের সর্বশেষ প্রোফেট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামানুসারে। দেশ ছেড়ে আসা উদ্বাস্তুদের সাথে আমাদের বন্ধন ছিল ইসলামের, সঙ্গতভাবেই এলাকার নামকরনও হওয়া উচিত ইসলামেরই তাতপর্যবাহী কিছুর নামানুসারে। সামরিক জান্তা আইয়ুব খান মোহাম্মাদপুরে ঢোকার মূল প্রবেশদ্বারের নামকরণ করেন নিজের নামে, আইয়ুব গেট। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কায়েম হলে আইয়ুব গেটের নাম পালটিয়ে '৬৯ গন আন্দোলনে আত্মোতসর্গকারী আসাদের নাম প্রতিস্থাপিত করে আসাদ গেট করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের আশপাশজুড়ে যখনই মুসলিমরা নির্যাতিত হয়েছে, হিন্দুদের আগ্রাসনের মুখে পড়েছে, জমিজমা দখল করা হয়েছে, সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে কিংবা গোহত্যার দায়ে পরিবারশুদ্ধো লোপাট করে দেয়ার মত আশঙ্কা তৈরী হয়েছে তখন নির্যাতিত মানুষ মাশরেকী পাকিস্তানে এসে আশ্রয় নিত। মুহাজিরদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা-সংগঠন তৈরী হয়। ধর্মীয় সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রে সেক্যুলারি ভূত চেপে বসলেও পাবলিক সেন্টিমেটকে মারাত্মকভাবে আহত করবে বিবেচনায় তারাও মুহাজিরদের লোক দেখানো খিদমতে শামিল হত অন্তত।
১৯৭১ সালে, যে আমরা, আমাদের পূর্বপুরুষরা, বিজাতীয় ষড়যন্ত্রে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার সাথে আঁতাত করে ইসলামের নামে কায়েম হওয়া পাকিস্তান ভেঙে দিলাম, অসহায়, নির্যাতিত-নিপিড়িত মুসলিমদের আশ্রয়ের দ্বার রুদ্ধ করে দিলাম, ভারতনিবাসী মুসলিমদের বলতে শিখলাম- 'আজ থেকে তোমরা আর আমাদের ভাই নও, আমরা মুসলিম নই, আমরা বাঙালি' আমরা কিভাবে আশা করতে পারি যে তাঁরা আমাদের সমর্থন করবে? এই অসহায় মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল পাকিস্তানকে ভেঙে দিয়েছি আমরা, কি ঠেকে পড়েছে ওদের যে পাকিস্তানের মোকাবিলায় আমাদের সমর্থন করবে? হয়ক সেটা ক্রিকেট মাঠে কিংবা রাজনীতির ময়দানে? এখনও কোলকাতার মুসলিম মহল্লাগুলোতে ১৪ই আগস্টে চান-তারার পতাকা ঝোলে কিসের টানে সেটা উপলব্ধি করার হৃদয় আমরা বিসর্জন দিয়েছি। আমরা নিজের হাতে ঐশ্বরিক বন্ধন ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছি। ইডেন কোনোদিন মিরপুর হবে না। কোলকাতার মুসলিমরা আমাদের ক্ষমা করে নাই। আজও মুজাফফরবাদের শহীদের রক্ত আমাদের হাতে লেগে আছে। আমরা নিপিড়িত মুসলিমদের সহায় হওয়ার গৌরব থেকে নিজেদের বঞ্ছিত করেছি। হিন্দুরা কোনোদিন আমাদের বন্ধু ছিল না, যে মুসলিমরা আমাদের কৃতজ্ঞ নয়নে দেখত, তারাও আজ ঘৃণায় থুথু দেয়। এই ঘৃণা অর্জন করেছি আমরা নিজেরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩০