#থ্রিলার
.
.
বড়াইবাড়ি,রৌমারি...বিডিআর ক্যাম্পে বসে আনমনে ভাবছেন ল্যান্স নায়েক রেজাউল করিম.....বিএসএফ ক্যাম্প থেকে খবর এসেছে, ওরা নাকি কিসের ফ্লাগ মিটিং করতে চায়..কেন ? হঠাৎ ফ্লাগ মিটিং কেন ? সীমান্তে তো বাংলাদেশী মারা যায় নি বা কোন কিছু বিনিময় ও হবে না !! তবে হঠাৎ এ ফ্লাগ মিটিং ?? রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে !!
.
এমনিতেই ইদানীং বিডিআর-বিএসএফ সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না...পরশু পাদুয়ায় বিডিআর গিয়ে দখল নিয়েছে,৭০+ বিএসএফ সারেন্ডার করেছে..কিন্তু কোন রক্তপাত হয়নি, শান্তি আলোচনা চলছে,ঝামেলা প্রায় শেষ...কিন্তু,এরপরও সতর্ক থাকতে হবে...ফজলুর রহমান স্যার , বিডিআরের ডিজি সাহেব এই অর্ডারই দিয়েছেন...
.
যাইহোক,আপাতত সে ফ্লাগ মিটিং ক্যান্সেল
করেছে...কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ দিকে যাচ্ছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না..পত্রবাহক লুৎফর সাহেব নাকি বাঙ্কারে ইন্ডিয়ান আর্মি দেখে এসেছেন...তবে সে নিয়ে অত ভাবছে না...পাদুয়া নিয়ে না হয় ঝামেলা আছে,কিন্তু রৌমারি তো বাংলাদেশের জন্ম থেকেই অংশ,তাহলে এই অংশে ভারতের ঝামেলা করার কথা না !!
.
কিন্তু ওদিকে ভারতীয় ক্যাম্পে বিএসএফ জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে...পাদুয়ায় বিএসএফ হেরে
গেছে,প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে তারা...যেকরেই হোক কোনও না কোন জায়গায়
বিডিআরকে হারাতে হবে...প্রতিশোধ নিতে
হবে !! সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা !! মর্টার
রেডি,ব্লাক ক্যাট কমান্ডো রেডি, ৬০০ + সৈন্য আনা হয়েছে অপারেশনের জন্য, বিডিআর ক্যাম্পটিতে ৩০ জনের বেশি সৈন্য হবে না , খুব সহজে বিডিআর গুলোকে মেরে বা প্রয়োজনে বন্দী করে প্রতিশোধ নিতে হবে...তাই তারা ফ্লাগ মিটিং এর নামে বিডিআরকে আহবান জানিয়েছে তারা, বিডিআর ঢুকলেই তাদের আটকে রেখে আক্রমন করবে তারা,দোষ দিবে যে বিডিআর আগে আক্রমন করেছে,ব্যস !!
.
কিন্তু বিডিআর এর থেকে বলেছে তারা নাকি এই
মুহুর্তে ফ্লাগ মিটিংয়ে আসবে না !! ধুর !! বিএসএফ সুবেদার সকলকে ঘোষনা দিল, " দেরী করা উচিত হবে না, য দ্রুত সম্ভব আক্রমন করতে হবে, নাহলে ওরা সতর্ক হয়ে যাবে !! প্রতিশোধ নিব আমরা !! বিডিআর শালাগুলোকে মেরে !! "
.
যখন তারা (ভারতীয় বাহিনী) ঢোকে চারটার দিকে (ভোর রাত) এরমধ্যে ভারতের আর্মি ছিল, ব্ল্যাক ক্যাট ছিল, বিএসএফ ছিল- ঢুকে তারা দেখে যে ঐ এলাকার (বরাইবাড়ী এলাকার) গ্রামের এক
ছেলে (আবদুল মালেক) ভোরে জমিতে পানি
দিতে গেছে। প্রথমে সে বুঝতে পারেনি অন্ধকারের মধ্যে। তারপর যখন সে দেখলো যে ভারতীয় বাহিনী ভেতরে ঢুকেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করেছে বরাইবাড়ী ক্যাম্পটা কোথায়। সে বুদ্ধি করে ক্যাম্পের উল্টোদিকের জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে
তাদেরকে। যাইহোক ওরা তখন গোলকধাঁধাঁর
মধ্যে পড়ে গেছে। আর্মিতে একটা টারমোলজি আছে ‘রিকোনসেন্স’। তো ওদের রিকোনসেন্স ছিল না বলে এই জিনিসটা হয়েছে। তারা খুজে পাচ্ছিল না...
.
এর মধ্যে বিডিআর ক্যাম্পে খবর পৌছে
গেছে....রেজাউল করিম স্যার সবাইকে প্রস্তুত
হতে বললেন.."ওরা বিশ্বাসঘাতকা করেছে !!
জওয়ানরা রেডি থাকো, ওদেরকে কোনভাবেই
দেশের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না !! মৃত্যুর
আগ পর্যন্ত লড়াই করে যাবে !! কাল দুপুর নাগাদ
সাহায্য এসে পৌছাবে, ততক্ষন আমাদের আটকে
রাখতে হবে !! "....
.
সামনে নিশ্চিত মৃত্যু, অথচ বিডিআর জওয়ানদের মধ্যে মৃত্যুভয়ের ছিটেফোঁটাও নেই...সবাই যেন এটারই অপেক্ষা করছিল, দেশমাতৃকার জন্য জীবন দেওয়ার এক মহা সুযোগ এসেছে...হেডকোয়ার্টারে খবর পাঠাল রেজাউল....সে নিশ্চিত,বিডিআরের সাহায্য আসবে,ডিজি ফজলুর রহমান স্যারের নিজ বাহিনীর প্রতি টান আছে, তিনি অবশ্যই দেশের স্বার্থে লড়াই করতে পিছপা হবে না...
.
বিএসএফরা বিডিআর ক্যাম্প খুজে পেয়েছে ও
পজিশন নিয়ে গুলি করছে, আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল
দেখাচ্ছে তাদের মুখ,এত দিন পর বিডিআরকে
কচুকাটা করার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে..
.
রেজাউল করিম অর্ডার দিলেন,"হোল্ড ইউর ফায়ার !! ডোন্ট শূট !! ", বিডিআর সৈন্যরা বুঝতে পারল না, ঘটনাটা কি ? আমরা গুলি চালাব না মানে ? এত সহজে হেরে যাবো ? কিন্তু তাদের নেতার প্রতি তাদের আস্থা আছে, নিশ্চয়ই কোন ফন্দি আছে তার মনে...অর্ডার পালন করল তারা .
এদিকে বিএসএফ সৈন্যরা টানা দশ মিনিট ধরে গুলি চালাচ্ছে, কোন রিপ্লাই আসছে না...হাসি ফুটে উঠল বিএসএফ কমাণ্ডারের মুখে " ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে শালারা !! হা হা , ভীতুর দল, নিজেদের আবার সীমান্তের বাঘ বলে এরা !! এগিয়ে চল,ক্যাম্পের দখল নেই !! বিজয় উদযাপন করি চলো !! "
.
বিরাট বোকামী করে ফেলল তারা....পজিশন
ছেড়ে উঠে আসতেই একসাথে গর্জে উঠল
বিডিআর এর চারটি মেশিনগান,এগুলো মিনিটে সাতশ গুলি ছুড়তে পারে...পাখির মতো মারা যেতে লাগল বিএসএফ সেনারা...পিছু হটল তারা,আবার পজিশন নিল...
.
এবার বাঙ্কার থেকে গুলি ছুড়ছে দুই পক্ষ...কিন্তু
৬০০ জনের সামনে কি আর ৩০ জন টিকে ? কিন্তু বিডিআর সেনারা সেদিন বাঘের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে.....রেজাউল স্যারের কভার ফায়ার প্রয়োজন,এমন সময় কভার ফায়ার দিতে গিয়ে মারা গেল এক অকুতোভয় বিডিআর সেনা......
.
এদিকে বিডিআর প্রথম আঘাতেই বিএসএফকে
ব্যাপকভাবে ঘায়েল করে দিয়েছে...একটি
মেশিনগান ট্রান্সফার করে পশ্চিমে নিয়ে যাওয়া হল, ফলে বিএসএফ. সৈন্যেরা ধারণা করল, পশ্চিম দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে তাদের...ফলে তাদের একাংশ পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হল, ফলে অন্যান্য বিডিআর এর জন্য টার্গেট কিছুটা ছোট হয়ে গেল..
.
এদিকে তুমুল যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে গ্রামবাসী
দেশের টানে এগিয়ে এসেছে, সীমান্তে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে তারা, সীমান্ত অরক্ষিত নেই...
.
এদিকে ডিজি ফজলুর রহমানের কাছে খবর পৌছে গেছে...তিনি কিছুতেই এ বিশ্বাসঘাতকতা ও কাপুরুষের মত আক্রমণকে মেনে নিতে
পারছেন না...নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ হতে প্রায়
৫০০ ফোর্স পাঠালেন তিনি...সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ পৌছাল তারা .....
.
এদিকে বিএসএফ এর হাল বেহাল হয়ে গেছে,তারা ভেবেছিল দিনের আলো ফোটার আগেই
বিডিআরের খেল খতম, অথচ এখনো কিছুই সুবিধা করে উঠতে পারেনি তারা...
.
এদিকে অন্য বিডিআর সৈন্য এসে পৌছে
গেছে.....হাপ ছেড়ে বাচলেন রেজাউল,এবার
বিএসএফ শেষ..তীব্র আক্রমন শুরু হল বিডিআরের তরফ থেকে...
.
বিএসএফ বিপদ আচ করতে পারল, বাইরে থেকে বিডিআর এর পক্ষে সৈন্য এসেছে...৬০০ জন নিয়ে ৩০ জনকেই কাত করতে পারল না,এখন তো আবার দলে ভারী হয়েছে..
.
তীব্র আক্রমনে পিছু হটতে শুরু করল তারা...ফেলে গেল তাদের ব্যবহার করা যাবতীয় অস্ত্র
.
১৬ জন বিএসএফ সৈন্য বিডিআর এর হাতে বন্দি হল...তারা সব লাশ নিয়ে যেতে পারলেও ১৮ টা লাশ নিয়ে যেতে পারল না.....এদিকে আরেকবার পরাজয় বরন করল বিএসএফ...
.
কতজনের লাশ বিএসএফ নিয়ে মেতে
পেরেছে জানা যায় নি ....সীমান্তের ওপারেও
কত মারা গেছে তাও জানা যায় নি...কিন্তু গ্রামবাসীর মতে, বিএসএফ সেনারা তিন ট্রাক ভরে লাশ নিয়ে গেছে...
.
এদিকে বাংলাদেশের পক্ষে ৩ জন বিডিআর নিহত হয়, আর সিভিলিয়ান সহ এ সংখ্যা ৭ জন...তবে বিএসএফ. এর ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি, ১৫০+....যদিও পরবর্তীতে দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট রাখার জন্য ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কম দেখানো
হয়....উইকিপিডিয়াতে তো মাত্র ১৬ জনের
উল্লেখ রয়েছে, অথচ ১৬ জন শুধু বন্দীই
হয়েছিল, মারা গেছে নিঃসন্দেহে আরও বেশি...
.
বি.দ্র : ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য.( কভার ফায়ার এর টা ছাড়া )...তবে চরিত্রগুলি কাল্পনিক.....
.
বিজয় আমাদেরই হয়েছে, যেই পাদুয়া নিয়ে এত
কাহিনি, সেই পাদুয়া এখন বাংলাদেশের অংশ
.
লেখক : Mahim Pervez
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৮