somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীতের গন্ধ - ২

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখালেখির অল্প স্বল্প অভ্যাস এক সময় ছিল। 'এক সময়' শব্দটার মধ্যে কেমন একটা প্রাচীন, প্রাচীন গন্ধ, তাই না? প্রাচীন তো বটেই, ৪০ বছর, কম সময় তো নয়।

সময়ের সাথে, সাথে সব কিছু বদলে যায়। এক সময় একটা হারমোনিয়ামের অভাবে গান শিখতে পারিনি। যখন হারমোনিয়াম কেনার সামর্থ হল, তখন গান শেখার নেশাটা ছেড়ে চলে গেল আমায়।

সামহয়ার ইন ব্লগের সাথে যারা ২০০৬ এর কিছু আগে থেকে পরিচিত তাদের কাছে 'প্রাপ্তি' নামটা অনেক চেনা। কারণ সেই সময় প্রাপ্তি (আমার ভাতিজি) একটা অসাধারন কাজ করেছিলো। ব্লগের অনেকগুলো অচেনা মুখকে একসাথে করেছিল। তারা সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পরেছিল আমার ভাতিজি প্রাপ্তি কে সুস্থ্য করার সংকল্পে, মানবতার টানে। প্রমাণ করেছিল মানবতার শক্তি। 'প্রাপ্তি' ছিল এতগুলো মানুষের 'মানুষের জন্য মানুষ' এর উজ্বল দৃষ্টান্ত। জানা-আরিল ছিলো আমাদের উৎসাহ, উদ্দীপনার প্রাণকেন্দ্র। ছোট্ট মেয়ে প্রাপ্তি লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ছিল। অমি রহমনা পিয়াল আহবান করেছিল পাশে দাঁড়াতে। ছুটে এসেছিল সবাই। তাদের সেই চেষ্টা বৃথা যায়নি। প্রাপ্তি এখন সুস্থ, জয় হয়েছে আমাদের একটি যুদ্ধের।

সেই সময় কালপুরুষ দা'র ছাদের আড্ডা আমাদের অনেকের জন্য ছিল গাড়ির ট্যাংকিতে তেল ভরার মত। টুটুল, কৌশিক ভাই , শরৎ, আরিফ জেবতিক, পিয়াল, মেজবাহ য়াযাদ, রাগ ইমন (পিংকি), পথিক (মামুন ভাই), ঝড়ো হাওয়া (ইমরান), ভাস্কর দা, আবু-সালেহ, একরামুল হক শামীম, সাতিয়া মুনতাহা নিসা, আইরিন সুলতানা, সবার নামও মনে নেই এখন, হুটহাট হানা দিতাম কালপুরুষের বাড়িতে। ভাবি পরম ধৈর্য্য নিয়ে আমাদের অত্যাচার সহ্য করতেন। আড্ডার বাইরেও কিছু মানুষ ছিল আমাদের সাথেই, সাদিক, অরুপ-মাশিদ, গোপাল-ভাড় (তানভির), জানতে চাই (বন্যা), কাশফুল, গোধূলি , সন্ধ্যাবাতি, আস্ত-মেয়ে. শাহানা, অরুন, ত্রিভূজ, হাসান, শাওন, সুনীল সমুদ্র, নেমেসিস, মনজুর হক, মাহবুব মোর্শেদ, সুশান্ত দাস গুপ্ত, বিহংগ, মোস্তফা মনির সৌরভ, ক্যামেরাম্যান (রন্জু ভাই), রাত মজুর, ধানসিঁড়ি, সামি মিয়াদাদ, কনফুসিয়াস, আরাফাত, ফ্রুলিংস, মানবী আরো কত, কত নাম। সামহোয়ার ইন ব্লগে লেখা একটা নেশা হয়ে গিয়েছিল, তারপর টের-ই পেলাম না কখন সেটা চুপচাপ আমাকে ছেড়ে চলে গেল।

আজকের আমি কিছু মানুষ আর কিছু সংগঠনের কাছে চির কৃতজ্ঞ : ছোট বেলার 'আবহমান' আর বড় বেলার 'বাংলাদেশ স্কাউটস'। নিজের গন্ডির বাইরের জগৎটাকে চিনেছি এঁদের হাত ধরেই। ছবি ভাই, যার আত্না পরে থাকতো 'আবহমান' কে ঘিরে। শাহরিয়ার ভাই, মুন্না ভাই, কাজল ভাই, মনসুর ভাই, তাইমুর ভাইয়ের মত কিছু পাগলাটে যুবক তখন আমাদের মত ছোট, ছোট শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য নিজেদের নাওয়া-খাওয়া সব ভুলে দিনরাত পার করতো। শাহরিয়ার ভাইয়ের বিয়ের বরযাত্রা হয়ে গিয়েছিলাম আমরা সব 'আবহমান' এর বিচ্ছু বাহিনী। লুনা, ছন্দা, রানা ভাই, বাবলু, মানিক, বিটুল, শুভ, সারিয়া গং (আমি আর আমার সব বোনেরা ), আমাদের সবার জীবনে 'আবহমান' এর বিশাল অবদান। আবহমান নিযে লিখলে একটা আস্ত বই লিখে ফেলা যায়। হারিয়ে গেছে 'আবহমান' অনেক আগেই, ছেড়ে চলে গেছে 'ছবি ভাই' ও।

প্রায় ১৫ বছর পাগলের মত স্কাউটিং করেছি। হারিয়েছি অনেক, পেয়েছিও অনেক। বাংলাদেশ স্কাউটস্ এর হয়ে দেশে-বিদেশে চষে বেড়িয়েছি। পেয়েছি রফিক স্যার, রিপন ভাই, হাবিবুল আলম স্যার, ফজলুর রহমান স্যার, মরহুম মনযুরুল করিম স্যার সহ আরো অনেক, অনেক মানুষের সান্নিধ্য আমার জীবনের উজ্বল এক অধ্যায়। স্কাউটিং নিঃশন্দেহে আমার 'প্রেম'। ব্যক্তি ও কর্ম জীবনে যতটুকু সফলতা অর্জন করেছি, যতটুকু বিবেক এখনও আমায় ভালো কে ভালো, মন্দ কে মন্দ বলায় , তার জন্য স্কাউটিং এর অবদান অনেক বেশি। স্কুলের বাইরে, আমার বন্ধু জগতটা মোটামোটি পুরোটাই স্কাউটিং এর বন্ধু। বাংলাদেশ স্কাউটস্ এর সাথে সেই সূতোটাও এখন অনেক দূর্বল। কিছু মানুষের টানে সেটা আটকে আছে কোথাও। কিন্তু মূল সূতোটা আমায় ছেড়ে চলে গেছে অনেকই আগেই।

স্কুলের বান্ধবিদের মনে পরে খুব। ওদের নিয়ে এক সময় ডায়েরি লিখতাম। হারিয়ে গেছে ডায়েরিটাও।
কলেজের বন্ধুরা এখনও আছে, টানটা গভীর, শুধু সময়টা নিঃষ্ঠুর।

ভালো থাকার জন্য কিংবা ভালো রাখার জন্য দেশের ক্যারিয়ার, পরিবার, চেনা শহর, চেনা গন্ধ সব ছেড়ে এই প্রবাস জীবন। সারাদিন গাধার খাটুনি, বিনোদনের মধ্যে অল্প কিছু কাছের মানুষ যারা এই দেশে আামদের আত্নীয়-বন্ধু, তাদের সাথে সময় মিলিয়ে আড্ডা , গল্প, খাওয়া-দাওয়া, স্মৃতি উগড়ে দেয়া। সেদিন এক আড্ডায় আমাকে বললো পছন্দের একটা গান বলেন আপু। কেমন ধাক্কা লাগলো বুকে। হঠাৎ মাথাটা শূণ্য লাগলো, কোন পছন্দের গান মনে আসলো না। তবে কি গানেরা অভিমান করে আমাকে ছেড়ে চলে গেল?

অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু উপায় নেই। জীবনের অনেকটা সময় অনেক অবহেলায় হারিয়ে এখন শুধু 'সময়'টাই বড্ড অল্প, কাজ অনেক বাকি। কোন কিছুরই অভাব নেই, তবুও কী যেন নেই, কী যেন নেই। খুব খা, খা করা বুকের ভীতর, শুধুই হারিয়ে যাওয়া অতীতের গন্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×