somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

একজন নীলমেঘ
মানুষ পাহাড় ডিঙায়, পর্বত ডিঙায়, আমি সময়কে ডিঙাতে পারি না। আমি এক জায়গায় জড় হয়ে বসে থাকা মানুষ, ঘূর্ণনশীল পৃথিবী ঘুরবে, আর আমি তার গতিতেই এগিয়ে যাবো। মানুষের ভালো ব্যবহারগুলো সব মরিচীকা, কোথাও সুখ নেই, চারিদিকে অহেতুক সৌন্দর্য।

জার্নি অফ ফাইন্ডিং "হোয়াই"

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটি বাচ্চাই কিছু স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখে সে বড় হয়ে কি করবে। কিন্তু দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর এই স্বপ্নগুলো পূরণ হয়না মূলত।
আর খুব ভাগ্যবান কিছু শিশুই পারে বড় হওয়ার পর তাদের সেই স্বপ্নটাকে সত্যি করতে।
প্রতিটি মানুষের জীবনে দুটি অসাধারণ দিন থাকে। একটি হচ্ছে যেদিন সে জন্ম নেয়, অপরটি হচ্ছে যেদিন সে তার জন্মের কারণটি খুঁজে পায়। আজকে এই জন্ম নেয়ার কারণটি খুঁজে পাওয়ার গল্পটিই বলবো।
আমি যদিও খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না কখনো, তবুও প্রতিটি পরিবারেরই কিছু এক্সপেক্টেশন থাকে, আমার পরিবারও সেই নিয়মের বিপরীতে নয়। তাদের ইচ্ছে ছিলো ব্যাংকে জব করানোর, কারন এটা অনেক ভালো টাকা পে করে। কিন্তু আমার পছন্দ ছিলো বিজ্ঞান, তাই আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করি, ভর্তি হই ইঞ্জিনিয়ারিং এ। যদিও ইচ্ছা ছিলো থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স নিয়ে বা এস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়ার। কিন্তু এই সাবজেক্টে দেশে ভালো কোনো চাকরি নেই, ক্যারিয়ার নেই, টাকা কম, আর পরিবারের এক্সপেক্টেশন এর থেকে বেশি
তাই বাধ্য হয়ে ভর্তি হতে হয়।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষকে এই সত্যির সম্মুখীন হতেই হয় যে, ছোট থেকে আমরা যে স্বপ্ন দেখি, যে পেশাটা আমরা ভালোবাসি বা যে কাজটা আমাদের করতে ভালো লাগে তা আমরা কখনোই করতে পারি না।

জীবন একটা বিশাল উপহার, কেননা আমাদের জন্ম নেয়ার সুযোগ ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ মাত্র। তাই জন্ম নেয়ার সময়েই আমরা সবচেয়ে বড় বাজিটা জিতে আসি শুক্রাণুর দৌড় প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। তাই আমি এই হারটা মেনে নিতে পারি না। খুঁজতে থাকি আমার পছন্দের পেশা আর ভালো লাগার কাজকে।

কলেজ লাইফ থেকেই বিভিন্ন ভলান্টিয়ারি কাজ করা আমার একটা স্বভাব ছিলো। আর পড়াশোনার থেকে কোন কিছু শেখা প্রতি আমার মূল্যায়ন বেশি ছিলো। সবসময় নতুন কিছু করার আর শেখার জন্য হন্য হয়ে ঘুরতাম। আর আমার একটা ভালো দিক ছিলো আমি খুব আর্লি লার্নার। যেকোন জিনিস খুব দ্রুত শিখে ফেলতাম। আর আমি কখনোই কোন কাজকে কঠিন ভেবে পিছিয়ে পরতাম না। যে কাজ না জানি, যদি তা দরকার হয় তবে সেটাও চেষ্টা করতাম করার জন্য, তাই সবাই খুব পছন্দও করতো। বিভিন্ন বিজ্ঞান অর্গানাইজেশন, সোশ্যাল এক্টিভিটিতে অনেকটা একটিভ ছিলাম আমি। সেজন্য ভালো কিছু মানুষের সাথে পরিচয়ও হয়।

কলেজ লাইফ শেষে ভার্সিটিতে ভর্তি হই। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভর্তি হই ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রোনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ এবং সেখান থেকে ফিরে আসি ২ মাস পর। ভার্সিটি টু মেস, মেস টু ভার্সিটি এই একঘেয়ে জীবনে মানিয়ে নিতে কষ্ট হওয়াতে। ঢাকা এসে ফ্যামিলি প্রেশারে ১ বছর পর ভর্তি হই একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে সেই একই সাবজেক্টে। কিন্তু যান্ত্রিক এই জীবনে মানিয়ে নেয়া কঠিন হচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম না আমি কেনো করতেসি এই পড়াশোনা, এই পড়াশোনা শেষে আমি কি করবো? প্রতিদিন নিয়ম মাফিক অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস করে কি আমি এই জীবন কাটাতে চাই? এভাবে ২ বছর কাটিয়ে হাঁপিয়ে উঠি, পড়াশোনা ভালো লাগেনা, বন্ধুদের সঙ্গ ভালো লাগেনা, নিজে কি করতে চাই খুঁজে পাই না।

আমার মতে দেশের ৬০-৭০ ভাগ তরুণ-তরুণী আমার এই সমস্যাতে ভুগে কিন্তু তারা তাদেরকে এই জীবনের সাথেই জোর করে মানিয়ে নেয়। তারা নেমে পরে বাকি সবার সাথে জীবনের দৌড় প্রতিযোগীতায়। কিন্তু আমি যা পছন্দ করিনা, যা আমার দ্বারা হচ্ছে না তার সাথে জোর করে মানিয়ে নিতে রাজি ছিলাম না। ২ বছর পর ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
এর মাঝেই কাজ শুরু করি প্রাথমিক শিক্ষার পড়াশোনাকে মজাদার করার জন্য একটি অর্গানাইজেশনের সাথে। যেহেতু বিজ্ঞান আর গল্পের বই দুইটাই আমার প্রিয় ছিলো তাই এই ২টা ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দেই।

আমাদের দেশে প্রায় ৩০,০০০ প্রাইমারি স্কুল আছে যেখানে আধুনিক সুবিধা পৌঁছায়নি। আর সব মিলিয়ে ১,০০০০০ প্রাইমারি স্কুল রয়েছে দেশ জুড়ে। এর মাঝে হাতে গোনা কিছু স্কুলে বাচ্চাদের বয়স উপযোগী "গল্পের বই" দিয়ে লাইব্রেরি রয়েছে এবং বিজ্ঞানটাকে মজাদার করে হাতে কলমে শেখানো হয়। আমার কাজ ছিলো এই প্রাইমারি স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের বয়স উপযোগী গল্পের বই নিয়ে গিয়ে লাইব্রেরি করে দিয়ে আসা। বিভিন্ন স্কুলে অল্প কিছু জিনিস দিয়ে তাদের বিজ্ঞান বইয়ের প্রাকটিক্যালগুলো করা যায় এমন বিজ্ঞানাগার করে দেয়া। এসব করতে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের বেশ কিছু জায়গা ঘোরা হয়েছে, নানান মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, বাচ্চাদের হাসিমুখ দেখেছি। এসব দেখতে দেখতেই হঠাৎ মনে হলো!!!!!!!!
তাহলে আমি কি এতোদিন এটার খোঁজেই ছিলাম? সত্যি, আমি এই কাজটাকে ভালোবাসি, পছন্দ করি এবং সারাজীবন করে যেতে চাই। তাহলে এটাই আমার জন্ম নেয়ার উদ্দেশ্য, মানুষের জন্য কাজ করা, তাদের জীবনে খুশি এনে দেওয়া। হয়তো এখানে ফ্যামিলির এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী টাকা পাবো না, তবে যে আনন্দ আর সুখ পাবো তা সারাজীবন ইঞ্জিনিয়ারিং করে আয় করা টাকা দিয়েও কেনা যাবেনা।

আর তখনি আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ডিসিশনটা নিয়ে ফেললাম, ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বিদায় নিয়ে এই কাজটাতে নিজের সকল ভালোবাসা আর চাওয়া পাওয়া দিয়ে আঁকড়ে ধরলাম।
বড় এই গল্পটার ছোট উপসংহার, বাচ্চাদের পড়াশোনার মান উন্নয়নের জন্য দিনরাত একটা টিম কাজ করে যাচ্ছে, আমাদের কতগুলো মানুষের জীবনের কারণটাকে ঘিরে অনেকগুলো মানুষের কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে, আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তর ঘুরে বেড়াচ্ছি, নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করছি বাচ্চাদের জন্য আর হ্যাঁ, নিজের এই কাজের জন্য যা দরকার তা অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কোর্স করে শিখে নিচ্ছি।

আমরা এখন বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ পেশাটাকে সিকিউর করার জন্য তাদের বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর আমাদের অর্গানাইজেশন থেকে এডুকেশন কোম্পানিটা এখন দেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট এডুকেশনাল কন্টেন্ট নির্ভর কোম্পানি।

এখন যখন আমি পেছনে ফিরে দেখি, সেখানে আমার সবচেয়ে ভালো ডিসিশনটা ছিলো ৪ বছর আগে পাবলিক ভার্সিটি ছেড়ে আসাটা, যার ফলে হাজার হাজার শিশুর জীবন বদলিয়ে দিতে পারছি। আর একটা মাত্রই রিগ্রেট আছে এখন, সেটা হচ্ছে কেনো ভার্সিটির পড়াশোনাটা আরো দুই বছর আগে ছেড়ে দিলাম না।

উদ্যোক্তা হচ্ছে একটা একাকীত্বের সফর। এখানে প্রতিটি বাঁকে বাঁকে রয়েছে অজানা ভয় এবং সফলতার আনন্দ। এটা একটি সফর যেখানে অবশ্যই রিস্ক নিতে হবে এবং জীবন চালিয়ে যেতে হবে। এটাকে রেসের মতো ভেবে এগিয়ে গিয়ে জার্নি শেষ করার মতো ভাবলে চলবে না।

যখন জীবনের শেষ সময় চলে আসবে, তখন জীবনের অসাধারণ মুহূর্তগুলো না কাটানোর জন্য নিজের মধ্যে কষ্ট অনুভব করবে যা তুমি চাইলেই করতে পারতে, কিন্তু করোনি। আমি সেই দলটিতে পড়তে চাই না।

আমি আমার জীবনের অনেকটা সময় ধরে ভেবেছি এবং খুঁজেছি আমার জীবনের কারণ। ভাগ্যবশত আমি তাড়াতাড়িই হয়তো পেয়ে গিয়েছি সে কারণ। তুমি যদি তোমার জীবনের এই কারণটি খুঁজে না পেয়ে থাকো এখনো, তবে খুঁজতে থাকো। সবশেষে বলতেই হয়ঃ
If you’ve not found your WHY, keep searching. Don’t settle. Life is a journey, not a race.

[আমি এখনো তেমন বড় কেউ হয়ে যাইনি যার জীবনের অসাধারণ গল্প থাকবে, তবে আমি আমার জীবনের গল্প নিয়েই সুখী, সবার উচিৎ তার জীবনের গল্প বানানো। যেনো সে তার আশেপাশের মানুষকে অন্তত সেই গল্প শোনাতে পারে।]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×