
বাসায় তখন লম্বা সাইজের একটা টেপ ছিলো, আর দোকান থেকে ফিতার ক্যাসেটে বিভিন্ন গানের এলব্যাম পাওয়া যেতো। এখনকার মতো গুগলে সার্চ করে বা ইউটিউব থেকে অনলাইনে গান শোনার কোন ব্যবস্থা ছিলো না। আর স্মার্টফোনও তখন ছিলো না।
তখন বয়স অনেক কম, গানের মর্ম খুব কমই বুঝতাম, যখন যেই গানের মিউজিক আর কানে শুনতে উপভোগ্য ছিলো সেগুলাই শুনতাম। প্রথম মনের মধ্যে গেঁথে যাওয়া গান ছিলো
"এক আকাশের তারা তুই, একা গুনিস নে
গুনতে দিস তুই কিছু মোরে"
এছাড়াও,
"হাসতে দেখো গাইতে দেখো
অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো
শুধু দেখোনা কেউ, হাসি শেষে
নীরবতা"
এই গানগুলো যে কতবার গেয়েছি সেই ছোট বেলায়, তা হিসেবে করে বলা সম্ভব না। ছোট ছিলাম অনেক, কেউ দেখলেই বলতো একটা গান শুনা তো, ওইযে, এক আকাশে তারা গানটা। ব্যস ওমনি শুরু হয়ে যেতাম।
মূলত গানের প্রতি আকৃষ্ট করা, ভালো লাগা তৈরি করার মানুষটা তিনিই ছিলেন, এরপর আরো অনেক গান শুনা হয়েছে অনেক গায়কের, অনেক ভাষার। আমি বলতে পারি, এই দেশের মানুষকে মেটালিক গানের প্রতি ভালোবাসা তৈরির পেছনে উনি বিশাল অবদান রেখেছিলেন। ৯০ দশকের মানুষগুলো মূলত বলতে পারবে একজন "এবি" তাদের মনে কতটা জায়গা দখল করেছিলেন।
এরপর একে একে শুনলাম তার আরো অনেক গান, ফেরারি মন, সেই তুমি, রুপালি গিটার, নদীর বুকে চাঁদ সহ আরও কত এভারগ্রীন গান যে তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন তা বলে বোঝানো যাবে না। এই গানগুলো এখনো হাজার হাজার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। গানগুলো মানুষের মনের অন্তঃস্থে জায়গা করে নিয়েছে তা বলতে আর বাকি নেই। দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতেও মাতিয়েছেন বহু মানুষকে, এজন্যই হয়তো তাকে উপমহাদেশের অন্যতম সেরা গিটারিস্ট বলা হয়।
কনসার্ট করে বিভিন্ন সামাজিক কাজেও রেখেছেন অবদান। শীতার্তদের পোষাক অথবা বন্যার্তদের ত্রানের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ফ্রি কনসার্ট করেছেন। তবে এখন যখন প্লে লিস্টে ঘুরে ফিরে আসবে তার গানগুলো, তখন তিনি আমাদের থেকে অনেক দূরে। ভাবতেই অবাক লাগে যে এই মানুষটার কনসার্টে আর কোনদিন গলা ছেড়ে গাওয়া হবে না "সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে, সেই আমি কেনো তোমাকে দুঃখ দিলাম" অথবা "ফেরারি এই মনটাই আমার, বারেবার ভেঙে যায়" এর মতো মন মাতানো গানগুলো। তার গিটারের সুর আর বিমুগ্ধ হয়ে শোনা হবে না কোন কনসার্টে।
মানুষগুলোর মতো কনসার্টের স্টেজটাও যে তাকে মিস করবে, তার স্টেজ কাঁপানো পার্ফরমেন্স এর বড্ড অভাব অনুভব করবে এই স্টেজগুলো। রুপালি গিটারের মানুষটি ১৯৭৮ সালে শুরু করেছিলেন 'ফিলিংস' ব্যান্ডের মাধ্যমে আর ২০১৮ সালে যাত্রা শেষ করলেন লাভ রান্স ব্লাইন্ড বা এলআরবি ব্যান্ডের থেকে। ৪০ বছরে কয়েকশ গান এর মাধ্যমে ফিলিংসের সমুদ্রে ব্লাইন্ড লাভে ভাসিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, ওপারে যেনো ভালো থাকেন, তার সকল গুণাহ যেনো মাফ করে দেন তিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


