somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্প ও আমাদের অসচেতনতা ও করণীয়ঃ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেলো রাত ভোরে ৬দশমিক৭ মাত্রার ভূমিকম্প আমাদের ভয় দেখিয়ে গেলো। শিক্ষাও দিয়ে গেলো অনেক সাবধানতা বাণীর মতো।
নিজে কতোটা ভয় পেয়েছি তার চেয়ে দেখা ও শোনা কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিঃ
রুমমেটের, 'এই উঠ, উঠ' শব্দে উঠি; যদিও নাড়াচাড়ায় আমি সৃষ্টিকর্তার নাম জপাতেই ব্যস্ত ছিলাম। কারণ, দৌড়ে লাভ নাই। স্ব-স্থানেই নিজেকে নিড়াপদ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে বলে শুনেছি। বের হয়ে দেখি এক গর্ভবতি মহিলাকে নিয়ে দুজন মেয়ে নামছেন। পাঁচ তলা থেকে নাম ও উঠা দুই'ই দেখলাম। আরোও শোনলাম-বিছানা নাড়ানোর অভিযোগে কিছু ছাত্রের মারামারি।
একজন স্বামী এখন পর্যন্ত নাকী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাচ্ছেন। হয়তো সকালের পত্রিকায় খবর থাকার কথা ছিলো তার মতে।

এখন একজন অধ্যাপকের পরামর্শ নিচে হুবুহু দিলাম। আশা করি কাজে লাগবেঃ

ভূমিকম্প শুরু হলে সবার চলাফেরা যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলা দরকার। ঘরের মধ্যে থাকলে ভারি ও শক্ত টেবিলের নিচে ঢুকে যেতে হবে। ভারি ও শক্ত টেবিল না থাকলে মোটা বিমের নিচে দাঁড়ানো দরকার। দুটো বিমের সংযোগস্থলটি অধিকতর নিরাপদ। মাথা এবং মুখমণ্ডল হাত বা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা আবশ্যক। বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মুখ এবং মাথা ঢেকে রাখতে হবে। এর ফলে মাথা বা মুখের ক্ষতি কম হতে পারে। গ্লাস, জানালা, দরজা, আলমিরা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। মাথার উপরে থাকা ভারি লাইট, ঝাড়বাতি, ফ্যান ইত্যাদির সরাসরি নিচে অপেক্ষা করা যাবে না। বিছানায় শোয়া অবস্থায় থাকলে সেখানে থাকাটাই ভালো। কম্পন না থামা পর্যন্ত ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অধিক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভবন থেকে বের হওয়ার সময় ওয়াল বা ভারি কিছু ওপর থেকে পড়ার কারণে। কম্পন চলাকালে ভবনের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। কম্পন থামার পর আস্তে আস্তে নিরাপদে বাইরে যেতে হবে। নামার সময় লিফট ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। বিদ্যুত্ চলে যেতে পারে, ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট হতে পারে। গ্যাস লাইন লিক হয়ে গ্যাস নির্গত হতে পারে। অনর্থক চিৎকার না করে আল্লাহকে স্মরণ করা শ্রেয়।
ভবনের বাইরে থাকলে সেখানেই থাকা উচিত। উঁচু ভবন, ল্যাম্পপোস্ট ইত্যাদি থেকে নিরাপদ দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচে দাঁড়ানো যাবে না। বড় কোনো দালানের পাশে দাঁড়ানো যাবে না। ফ্লাইওভার, ফুটওভারব্রিজ, বহুতল ব্রিজ ইত্যাদির নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। চলন্ত গাড়িতে থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ি থামাতে হবে। গাছের নিচে পার্কিং করা যাবে না। ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরেছে এমন রাস্তা দিয়ে চলা ঠিক নয়।
একবার ভূকম্পনের পর আবার ভূকম্পন হতে পারে। তাই ভবনের বাইরে থাকলে প্রথম কম্পনের পর যথেষ্ট সময় নিয়ে ভবনে প্রবেশ করতে হবে। যেসব ভবনের দেয়ালে বা পার্টিশনে বা বহিরাবরণে গ্লাস জাতীয় কিছু লাগানো থাকে, তীব্র ভূমিকম্পের সময় তা খুলে ছুটে আসতে পারে। জানালার কাচ উড়ে একটু দূরেও চলে যেতে পারে। সবকিছুকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
ঘরের মধ্যে শেলফের উপরের দিকে কোনো ভারি জিনিস না রেখে তা শেলফের নিচের দিকে রাখা বাঞ্ছনীয়। শেলফ বা আলমিরা ইত্যাদিকে শক্তভাবে বেঁধে রাখা বা দেয়ালের সঙ্গে শক্তভাবে থাকার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ভূকম্পন বন্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে দিয়াশলাইয়ে বা চুলায় আগুন জ্বালানো যাবে না। কোনো কারণে গ্যাস লাইন থেকে গ্যাস নির্গত হলে দিয়াশলাইয়ের আগুন থেকে সব ঘরে আগুন লেগে যেতে পারে।
অন্ধকারে থাকলে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সবকিছু ঠিক থাকলে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করতে হবে।
বাড়ি পুরাতন হয়ে থাকলে প্রকৌশলীদের দেখিয়ে তাকে ঠিক রেখে শক্ত করা যেতে পারে। প্রয়োজনে তা ভেঙে বিল্ডিং কোড মেনে সঠিকভাবে বাড়ি প্রস্তুত করা একান্ত জরুরি। আপাতত কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে নিজের ও নিজের পরিবারের সদস্যদেরসহ অন্য অনেকের জীবনকে বিপন্ন করার কোনো অর্থ হয় না। সঠিকভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করা না হলে সবসময়েই বাসিন্দাদের চরম আতঙ্কের মাঝে বসবাস করতে হবে।
সব কিছুর পরও দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আবশ্যক। মাঝে মধ্যে সেইফটি ড্রিল পালন করা দরকার। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ করা দরকার। সরকারকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে। প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং ডিন (ভারপ্রাপ্ত)
স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
[email protected]
সবাই নিরাপদ থাকুন এই কামনাই করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×