বিভিন্ন তথ্য থেকে বের করলাম আজকের একটি রিপোর্ট যা না লিখে পারলাম না। দেলোয়ার হোসেন সাইদি উরফে দেইল্লা রাজাকরের ফাশিতে চারিদিকে যেমন আনন্দ চলছে ঠিক তেমনি চলতে বোমাবাজি। আমার বাসার সামনেই আজ ৩ বার ককটেল মেরেছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে আছি। কখন যে কি হয় আল্লাহ যানে।
আসুন আজ আমরা দেইল্লা রাজাকারের হিস্টোরি জানব।
দেইল্লা রাজাকার থেকে আল্লামা সাঈদী!
একাত্তরের আগে ছিলেন মুদি দোকানদার ও তাবিজ বিক্রেতা। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে গেলেন প্রথমে শান্তি কমিটির সদস্য ও পরে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার। নিজেজড়িত থেকে, নেতৃত্ব বা সহযোগিতা দিয়েপাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী নিয়ে সংঘটিত করলেন হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণসহ জঘণ্যতম মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ। আগের ‘দেইল্লা’ নামের সঙ্গে তাই রাজাকার যুক্ত হয়ে তাই কুখ্যাত হলেন ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে।
মুক্তিযুদ্ধের পরে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর আবির্ভুত হলেন ‘আল্লামা মাওলানা’ পরিচয়ে। ওয়াজ করে বেড়ালেন দেশে-বিদেশে। কালক্রমে হলেন যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের নায়েবে আমির। এভাবেই বাবা-মায়ের দেওয়া দেলোয়ার হোসেন শিকদার ওরফে ‘দেইল্লা’ বা ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামক ব্যক্তিটি হয়ে গেলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
তবে একাত্তরের অপরাধ ঢেকে নতুন পরিচিতি পেতে তিনি দাখিল পাসের সনদপত্র জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত উপ-কমিটি। তদন্তকালে ওই উপ-কমিটি খুঁজে পেয়েছেন আরও কয়েক ধাপে নাম পাল্টানোর আরও ঘটনাও। কেননা, মাত্র ১০ বছরে পাস করা কথিত দাখিল পাসের সনদপত্রে তার নাম দেখানো হয় মোস্তফা দেলাওয়ার হোসাইন। আলিমের সনদপত্রেই সেটা হয়ে যায় আবু নাঈম মো. দেলাওয়ার হোসাইন।
আর জালিয়াতি করে জন্ম তারিখের পাশাপাশি এসব নামকেও পাল্টে করা হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
তাবিজ বিক্রেতা থেকে রাজাকার কমান্ডার
বর্তমানে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার তৎকালীন ইন্দুরকানীর (বর্তমানে জিয়ানগর উপজেলা) সাউথখালীগ্রামে ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ইউসুফ আলী শিকদার।
তার প্রকৃত নাম দেলোয়ার হোসেন শিকদার। তাকে ‘দেইল্লা’ নামে সকলে চিনতেন।
জামায়াতের ছাত্র রাজনীতি করার কারণে সাঈদী শর্ষিনা মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে বারইপাড়া মাদ্রাসাথেকে তৃতীয় বিভাগে আলিম পাস করেন। এরপর উচ্চতর ডিগ্রি না নিলেও নামের সঙ্গে আল্লামা টাইটেল ব্যবহার করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের আগে শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন সাঈদী। সংসার চালানোর জন্য পারেরহাটে তার একটি ছোট মুদি দোকান থাকলেও তিনি মূলত তাবিজ বিক্রি করতেন।
অভিযোগ করা হয়েছে, সাঈদী ছিলেন আরবি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী এবং বাকপটু। এটাকে ব্যবহার করে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তিনি সখ্য এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেন। এ কারণে তিনি রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হতে সক্ষমহন। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পরই তিনি ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্যও। তার নেতৃত্বে এবং তার সহযোগিতায় পিরোজপুরের পারেরহাট বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে।
এই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীই একাত্তরের রাজাকার ছিলেন। বিষয়টি সফলভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন প্রসিকিউশনের সদস্যরা।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় ঘোষণার প্রথম অংশে এ কথা জানানো হয়েছে। প্রথমাংশের রায় পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের সদস্য আনোয়ার হক।
সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের ১, ২, ৩, ৪ ও ১৩ নং অভিযোগের প্রমাণ সাপেক্ষে এ কথা জানানো হয়।
তবে তার বিরুদ্ধে আনা ৫, ৯ ও ১২ নং অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
প্রমাণিত প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৪ মে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের খবর দিয়ে পিরোজপুর সদর এলাকার মধ্য মাসিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে পরিকল্পিতভাবে আগে থেকে জড়ো করা ২০ জন নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করেহত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ৪ মে সাঈদী ওতার দল পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে মাসিমপুর হিন্দুপাড়ায় যান। সেখানে হিন্দু বাড়িগুলোতে লুট করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। মানুষ পালাতে শুরু করলে সাঈদী ও তার দলের সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ১৩ জন শহীদ হন।
অভিযোগ-৩ এ বলা হয়, ৪ মে সাঈদী পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে মাসিমপুর হিন্দুপাড়ায় মনীন্দ্রনাথ মিস্ত্রী ও সুরেশ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি লুট এবং আগুন ধরিয়ে দেন। সাঈদী নিজে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশের অসংখ্য বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
অভিযোগ-৪ এ বলা হয়, ৪ মে সাঈদী তার রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে ধোপাবাড়ির সামনে এবং পিরোজপুর সদর পুলিশ স্টেশনের এলজিইডি ভবনের পেছনের হিন্দুপাড়া ঘিরে ফেলেন। এ সময় গুলি চালানো হলে দেবেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, পুলিন বিহারী ও মুকুন্দ বালা মারা যান।
অভিযোগ-১৩ এ বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই-তিন মাস পর সাঈদীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা নলবুনিয়া গ্রামের আজহার আলীর বাড়িতেযায়। সেখানে আজহার আলী ও তার ছেলে সাহেব আলীকে ধরে নির্যাতন করা হয়। সাহেব আলীকে পিরোজপুরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এজলাসকক্ষে উপস্থিত সকলে ‘রাজাকার, রাজাকার, চুপ কর’ বলে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। রায় ঘোষণার পরে সাঈদী কিছু কথা বলতে গেলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ তাকে সরিয়ে নেওয়ায় সাঈদী তার কথা শেষক রতে পারেননি।ট্রাইব্যুনাল তার রায় শেষ করে এজলাস ছেড়ে যাওয়ার সময় সাঈদী হঠাৎ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চেচিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে রায় দেননি। আপনারা শাহবাগের কিছু সংখ্যক নাস্তিক ও ব্লগারদের...’’
এ পর্যন্ত বলার পর পরই এজলাসে উপস্থিত সকলে সম্মিলিতভাবে ‘রাজাকার,রাজাকার, চুপ কর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় পুলিশ সাঈদীকে এজলাস কক্ষ থেকে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
দেশের কলংক রাজাকার সাইদির ফাসির রায়ে জনমনে কিছুটা শিান্তি এসেছে ।