somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যু নিয়ে ভাবনা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোন নক্ষত্র নিভে গেলে ঐ মহাকাশ কি এসব মনে রাখে। নিভে যাওয়া নক্ষত্রের মত মরে যাওয়া মানুষ-গুলোকে আমরা কি মনে রাখি? যদি রাখিই তবে কতদিন ? মানুষ মরে যায় কাঁদে শুধু তাঁরাই, যারা নির্ভরশীল। জীবিত নির্ভরশীলদের জন্য মৃত্যুটা হয়তোবা মৃত ব্যক্তির চেয়েও বড় বেশী ভয়ংকর। আমার চাচাত ভাই আবু বকর এর জন্য এখন সময়টা বড় বেশী ভয়ঙ্কর। হ্যাঁ আমার একমাত্র বড় চাচা মোস্তফা কামাল সিভিয়ার স্ট্রোক করে গত পরশুদিন রাত ১০টায় মারা গিয়েছেন। তার মৃত্যু আমার জন্যও আতংকের, কারন বড় ভাইয়ের মৃত্যু আমার বাবাকেও অর্ধেক করে দিয়েছে, তিনি ভেউ ভেউ করে কাঁদছেন। এ ছিন্নতা যে চিরদিনের, এ হারানোতো জীবনের তরে। বাস্তবতা বড়ই নিঃষ্ঠুর, মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে নাকি প্রিয় আপন মানুষগুলোকে দেখতে ইচ্ছে হয়, কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। চাচার মৃত্যুর সময় শুধু তার একমাত্র অল্প বয়স্ক ছেলে আবু বকর কাছে ছিল, কিন্তু ছিলনা একমাত্র প্রিয় ছোট ভাই মোজাম্মেল। অসুস্থ থাকায় আমরাও তাকে ছাড়তে পারিনি জানাজায় শরীক হবার জন্য। শোকের সাথে সাথে ১২ ঘন্টার দীর্ঘ বাস জার্নি হয়তো তার সইত না।

........................ মৃত্যু কি ?? শাব্দিক ভাষায় মৃত্যু (Death) বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়।

মৃত্যু বিভিন্ন স্তরে ঘটে থাকে। সোমাটিক মৃত্যু হল সামগ্রিকভাবে কোন জীবের মৃত্যু। নির্দিষ্ট অঙ্গ, কোষ বা কোষাংশের মৃত্যুর আগেই এটি ঘটে। এতে হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, চলন, নড়াচড়া, প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সোমাটিক মৃত্যু ঠিক কখন ঘটে তা নির্ণয় করা দুরূহ, কেননা কোমা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং ঘোর বা ট্রান্সের মধ্যে থাকা ব্যক্তিও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে থাকেন। সোমাটিক মৃত্যুর পর অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটে যা থেকে মৃত্যুর সময় ও কারণ নির্ণয় করা যায়। মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়, যাকে বলে Algor mortis। মারা যাবার পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টা পরে কংকালের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে Rigor mortis, এবং এটি তিন-চার দিন পরে শেষ হয়ে যায়। রেখে দেয়া দেহের নীচের অংশে যে লাল-নীল রঙ দেখা যায়, তাকে বলে Livor mortis; রক্ত জমা হবার কারণে এমন হয়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়, তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া।

দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন হারে মারা যায়। সোমাটিক মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ডের কোষগুলি ১৫ মিনিট এবং বৃক্কেরগুলি প্রায় ৩০ মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদ্যমৃত দেহ থেকে সরিয়ে নিয়ে জীবিত ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব (সূত্রঃ উইকিপেডিয়া)।

মৃত্যু জগতটা আসলে কেমন ?? জীবিত কোন মানুষই কখনও জানতে পারবে না এই অনুভুতি, এ এমনই এক শ্বাশ্বত ব্যাপার। হুমায়ূন আহমেদ এর উদ্ধৃতি দিয়েই বলি ঃ “মৃত্যুকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমরা যে বে্ঁচে আছি এটাই একটা মিরাকল। অন্য ভুবনের দিকে যাত্রার আগে আগে সবাই প্রিয়জনদের দেখতে চায়। মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না, এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই।শেষ বিদা্য় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার।নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যা্য় না, যাওয়া উচিত নয়।এটা হৃদ্য়হীন ব্যাপার।”

মৃত্যুর পূর্বে ফরাসি লেখক কবি ও নাট্যকার ভিকটর হুগো নাকি মৃত্যু কি তা দেখে গেছেন। তিনি সেটিকে কালো রঙ্গের আলো বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাহিত্যিক ও হেনরি (উইলিয়াম সিডনি পোর্টার) মৃত্যুকে বাড়ি ফেরার সাথে তুলনা করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে তার চরম আকুতি ছিল , “আলোগুলো জ্বালিয়ে দাও। অন্ধকারে আমি বাড়ি ফিরতে চাই না।”

স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু নিয়ে আছে সকলেরই ভয়। যারা পরকাল বা বেহেশত- দোজখ বিশ্বাস করেন না তাদেরও আছে মৃত্যুভীতি। যদিও নতুন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলছে মৃত্যুই জীবনের চূড়ান্তরূপ নয়।
কোয়ন্টাম পদার্থবিদ্যা বলছে, কোনো ঘটনার সবদিক একবারে হিসাব করা যায় না। বরং কয়েকটি ভিন্ন সম্ভবনায় ভাগ করে একটাকে অনির্দিষ্ট ধরে আরেকটা সম্ভাবনা যাচাই করতে হয়। কিছু মানুষ অবশ্য মৃত্যুকে ভয় পাননি, মেনে নিয়েছেন হাসি মুখে। মৃত্যু মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেজিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসন আপনজনদের বলেছেন, “আহা, কান্না করো না। ভালো মানুষ হও, দেখা হবে স্বর্গে।” বিবর্তনবাদের প্রবর্তক ডারউইন তার মৃত্যুর পূর্বে ঘোষণা দিয়ে গেলেন যে তিনি মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছেন না। কিংবদন্তী বিপ্লবী চে গুয়েভারা মৃত্যুর পূর্বে জানিয়ে গেলেন যে, মৃত্যু কেবল মানুষকে শেষ করে, বিপ্লবকে নয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “মৃত্যু পরে” কবিতায় বলে গেছেন মৃত্যু মানেই সব কিছুর শেষ, সব কিছুরঃ

“আজিকে হয়েছে শান্তি, জীবনের ভুলভ্রান্তি, সব গেছে চুকে।
রাত্রিদিন ধুক ধুক, তরঙ্গিত দুঃখসুখ, থামিয়াছে বুকে।
যত কিছু ভালোমন্দ, যত কিছু দ্বিধা দ্বন্দ্ব, কিছু আর নাই।
বলো শান্তি, বলো শান্তি, দেহ সাথে সব ক্লান্তি, হয়ে যাক ছাই।”,

হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা মৃত্যুকে সৃষ্টি করে ৭০হাজার জিঞ্জীর দ্বারা আবদ্ধ করে ৭০হাজার পর্দার আড়ালে রেখে দিয়েছিলেন।সেই জিঞ্জীর এত বড় ছিল যে একটা তেজী ঘোড়া সহস্র বছর পাড়ি দিলেওতার একটি প্রান্ত অতিক্রম করতে পারবেনা ।ফেরেশতাগন কেউই জিঞ্জীরের শব্দে ভয়েমৃত্যু কাছে যেতো না ।সুতরাং মৃত্যু যে কি জিনিস তারা সেটা জানতো না ।একদিন আল্লাহ তাআলা সকল ফেরেশতাদের ডেকে মৃত্যুকে পর্দার আড়াল থেকে উন্মোচন করলেন ।কিন্তু ফেরশতাগন মৃত্যুর ভয়ানক আকৃতি দেখে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অঞ্জান হয়ে পড়ে থাকলেন ।তার পরমহান আল্লাহ হাজার বছরপর ফেরশতাদের ঞ্জান ফিরিয়ে দিলেন । ফেরেশতাগন জিঞ্জেস করলো, হে আল্লাহ এর থেকে বড় কিছু কি আপনি সৃষ্টি করেছেন ? তখন মহান আল্লাহ তাআলা বললেনঃ আমি মৃত্যুকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি এর চেয়েও বড়।"

সুতরাং, সৃষ্টির শ্বাশ্বত এই সত্যকে মেনে নিয়েই সত্য ও সুন্দর জীবন যাপন করাই হোক আমাদের সকল প্রত্যয়। সকল মৃত মানুষের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। তাদের পর কালের জীবনটা সুন্দর ও আনন্দময় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×