আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন কেউ আমাকে প্রশ্ন করে যে আপনি কোন বর্ণের । এখন পর্যন্ত আমাদের হিন্দু সমাজের বিষবৃক্ষরুপ বর্ণপ্রথা আমাদের হিন্দু সমাজকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । কিন্তু কি এই বর্ণপ্রথা ? হিন্দুদের সর্বশ্রেষ্ট গ্রন্থ গীতায় কি আছে এই বিষয়ে ? স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন “ চাতুবর্ণং ময়া সৃষ্টং গুনকর্মবিভাগতাঃ” অর্থাৎ গুন ও কর্ম অনুসারে আমি চারটি বর্ণ সৃষ্টি করেছি । কিন্তু এটাতো স্বাভাবিক । আমাদের সমাজেও তো সরকার স্বীকৃত চার প্রকার কর্মচারী আছে । তাহলে এটা মানুষের জন্মের সাথে কিভাবে বার্তায় ? যুগে যুগে স্বয়ং ভগবানও তো শূদ্রের সন্মান করেছেন । শ্রী রামের মিত্র ছিল গুহক চণ্ডাল । মহাভারতে মুচির ছেলে রুহিদাস ছিল সর্বশ্রেষ্ট বৈষ্ণব । কলিযুগে ব্রহ্ম হরিদাস যবনের ঘরে লালিত হয়েছিল । এ রকম হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে । শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু যিনি জাতি , ধর্ম, বর্ণের কোন ভেদ রাখেন , সাবাইকে হরিনাম সংকৃত্তনে উদ্ভুদ্ধ করেছেন । তবে আমরা কেন এটা ধরে আকড়ে আছি ? পৃথীবিতে প্রমাণিত সত্য যে , হিন্দুধর্ম সর্বোপেক্ষা প্রচীন ধর্ম । তাহলে কেন আমাদের এই অবস্থা ? এর সবচেয়ে যে বড় কারণ তা হচ্ছে বর্ণ প্রথা । ভারতের মত রাষ্টের সংবিধান রচিয়তা হিসাবে ধরা হয় ডা: বি. আর. অম্বেদকরকে যিনি অতি নিচু বর্ণের হিন্ধু ছিলেন । কেন তিনি মৃত্যুর আগে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ? শুধু এটার জন্যই যে তিনি অস্পর্শতা নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন কিন্তু এই অস্পর্শতা নিয়ে মৃত্যু বরণ করতে চান না । শুদ্রের ঘরে জন্ম নিয়াই কি আজন্ম পাপ ? সেদিন শুনলাম আমার এক জৈনেক বন্ধু ব্রাহ্মণের সন্তান (জন্মসূত্রে) তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর এক কায়স্ত পরিবারের মেয়েকে ভালবাসেন । কিন্তু এখন তিনি তাকে ভিন্ন বর্ণের কারণে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেন না । উল্লেখ্য যে, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন , যার এ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান আছে । আমার নিজের চোখে দেখা আছে এক কায়স্ত পরিবারের ছেলে এক জেলের মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল কিন্তু তার পরিবার মেনে নেয় নি । আমাদের সমাজ আজ কোখায় ? যদিও আজ আধুনিকতার ছোয়ায় একটু আধটু হচ্ছে এটাকে তো পরিবর্তন বলা যায় না । তাহলে আমাদের ঘরের ছেলে মেয়েরা লাভ জিহাদের শিকার কেন হবে না ? এই বর্ণ প্রথার কুসংস্কার কি কোন দিনও দূর হবে না ? তবে তো হিন্দু সমাজ একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে । এখনও অনেক শিক্ষিত মানুষের মাঝেও রক্ষণশীল চিন্তাভাবনা রয়েছে । হিন্দু ধর্ম সংস্কারপন্থী ধর্ম । যুগে যুগে অবতার হয়ে ভগবান ধর্মকে সংস্কার করেছেন । এখন আমাদের জেগে উঠার সময় হয়েছে । তাই আসুন এর নিবারন করে নিজের জাতিকে , ধর্মকে সঠিক পথে নিয়ে আসি । আর বলতে চাই ..................
ওকি চণ্ডাল !
ও কি ? চমকাও কেন ?
ঐ হতে পারে রাজা হরিশ্চন্দ্র , ঐ শশ্মানের শিব ।
বিঃ দ্রঃ : এটা আমার চার বছর আগের লেখা তখন আমি ব্লগে ছিলাম না । ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা চাই ।লেখাটি সংরক্ষনের জন্যে ব্লগে লিখছি । যেকোন আলোচনা মতামত গ্রহনযোগ্য ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৯