পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কেরামত আলী হলের দিকে কোনরকম ধুমধাম হয় না । পীরতলা বাজারের ওপারে আছে শের-ই-বাংলা হল , পহেলা বৈশাখের উৎসব হয় সেখানে । এই দিনে হলের সামনের মাঠে প্রকান্ড মেলা বসে । রিক্সায়, মটরসাইকেল, ইজিবাইকে দল বাঁধিয়া আসিয়া মানুষ মেলায় ভিড় বাড়ায় । ভিড় বেশি হয় সকালে এবং বিকালে মাঝখানে দুপুরে মেলা একটু ঝিমাইয়া যায় ।
হলবাসি ছাত্রছাত্রীর প্রয়োজনীয় ও শখের পন্য সমস্ত মেলায় আমদানি হয় । চিত্র প্রদর্শনী, জলখাবারের দোকান, ফ্যাকাল্টির দোকান, উদিচী, আলোর তরী সংঘটনের দোকান , মাটির খেলনার দোকান, দোকান যে কত রকমের বসে তার সংখ্যা নাই । জুনিয়রা সাধ মেটায় সিনিয়রদের পকেট খালি করে দেয় । কয়েকটি স্থানে ভিসি স্যার হইতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত গান-বাজনার অনুষ্ঠান চলে । মেলার এটা প্রধান অঙ্গ ।
এবারের পহেলা বৈশাখের দিনে কুবেরের ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হইয়া গেল । আগের দিন এস্যাইনমেন্ট আর প্রাকটিক্যাল লেখার চাপে দেরি করে ঘুমুতে হইয়াছে । উঠে জানালার ধারে নতুন সূর্যাদয় দেখিতে ভালই লাগছিল ।তারপর একটু ফেজবুক ওপেন করিয়া দেখিল, কপিলা তাহার বন্ধুবান্ধবীদের লইয়া সেলফি আপলোড দিয়াছে । ছবিটা দেখিয়াই বুকের মধ্যে ধক করিয়া উঠে । কুবের যে কপিলাকে পছন্দ করে ইহা হয়ত কপিলা জানে, তবে জেনেও না জানার ভান করে । মনে মনে সকলেই যাহা জানে মুখ ফুটিয়া তাহা বলিবার অধিকার তাহার নাই । বড়লোকের বাড়ির পোষা কুকুরের মত উদাস চোখে সেফলিগুলো সে চাহিয়া দেখে, স্নেহ-মমতার এই সব খাপছাড়া কান্ডকারখানা ।দেখিতে সে হাই তোলে, বড়লোকের পোষা কুকুরের মতই বিছানায় একটা গড়ান দিয়া উঠিয়া বসে, মুখখানা করিয়া রাখে গম্ভীর ।
মনে পড়িল পরদিন তার মিডটার্ম পরীক্ষা ।চেষ্টা করিল বই খুলে একটু পড়ার । কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসাইতে পারিল না । নানা রকমের আকাশ-কুসুম কল্পনা করিতে লাগিল । সেলফিতে দেখা যাইতেছে কপিলার বন্ধু যোগাইলা কত কাছে গা ঘেষিয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে । প্রায়ই কপিলা তাহার সহিত হাসিয়া হাসিয়া কথা বলে । কপিলা কি সত্যিই যুগ্যাইলার সাথে প্রেম করে , ইত্যাদি ভাবতে ভাবতেই বুকটা তাহার হাহাকার করিয়া উঠে ।
বিকেলবেলা গণশা আসিয়া কুবেরকে সাধিল মেলায় যাওয়ার জন্যে । কিন্তু কুবেরের সায় নাই । অনেক সাধাসাধি করিয়া কুবেরকে রাজি করাইলো । মেলায় পৌছায়ইয়া দাড়াইয়া আছে । এমন সময় একখানা হাত তাহার কাধের ওপর পড়িল । পেছন ফিরে তাকাইয়া দেখিল কপিলা মৃদু মৃদু হাসছে । চিরদিনের বোকা, শান্ত, নিরীহ কুবের তাহার হাসির অর্থ বুঝিল না । কপিলা ধপ করিয়া তাহার সামনের বেদিতে বসিয়া পড়িল , চোখে চোখ রেখে হাসিতে হাসিতে বলিল, ”আরে পুরুষ !”
তাহার নির্বিবাদে সম্মুখে বসা , শয়তানি হাসি আর খোঁচা দেওয়ার পরিহাস সব বড় রহস্যময় ও দুর্বোধ্য ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৪১