অনেক দিনের পুরানো দোস্ত রাশেদুলের সাথে দেখা । সেই ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় ও লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ছিল । বাদাম বিক্রি, মৌচাক কাটা, পুরান হাড়িপাতি, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র কেনা , কত ব্যবসাই না করেছে । মাঝে কিছুদিন শুনেছিলাম ঘোড়া কিনেছে । স্কুলের বন্ধু কারো সাথে ওর যোগাযোগ নেই শুধু আমি ছাড়া , বলে ওরা সব অহংকারী কিন্তু আমাকে নাকি ওর খুব ভাল লাগে । সেদিন দেখা হতেই হাটের মধ্য থেকে ঝুপড়ির মধ্য নিয়ে গেল । পকেট থেকে বিড়ি বের করে আমার হাতে দিল । আমার ধুমপানে অভ্যেস নেই তবুও নিলাম । একটা দেশলাইয়ের কাঠি খরচ করে দুজনে বিড়িটা ধরালাম । আমার আনকারা টান দেয়া দেখে বলল, এখনও বিড়ি টানাই শিখিস নি , বলে একটু হাসল । দেখলাম ও কাশছে । কাশি আস্তে আস্তে নিচু শব্দ থেকে উচ্ছ শব্দে রুপ নিল । আমি বললাম, "কিরে তুই এরকম কাশছিস তা এসব খাস ক্যাঁ ?" বলল কি করব রে দোস , এ ওপরই তো বেচে আছি । জানিস বাচতে ইচ্ছা করে না ।" আমি বললাম কেনরে দোস , এমন কথা বলিস কেন ? বল তোঁ কি হয়েছে ? তাঁরপর যা বলল তা হল ওর পাশের বাড়ির জামিল মিয়ার মেয়ে পান্নাকে ভালবাসত । এটা ওদের বাড়ির সকলেই জানে । তাই ওকে হবু জামাই বানিয়ে বাড়ির কত কাজ করিয়ে নিছে তাঁর হিসাব করলে আজ বিড়ির বদলে সিগারেট টানতে পারত । তাঁরপর সৌদি প্রবাসী এক ছেলের সাথে গোপনে পান্নার বিয়ে দিয়ে দেয় ওর মা বাবা । ভেবেছিলাম পান্না বুঝি আমাকে ভালবাসে ওর মা বাবা ওকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছে । কিন্তু পান্নার সাথে দেখা হলে শুনিয়ে দিল, "তোমার কি আছে ? কত পয়সা আয় কর তুমি ? রাস্তার ফকির হয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাও । দেখ আমার বর আমাকে এই নেকলেসটা দিয়েছে ।"
বলতে বলতে গলাটা ভারী হয়ে আসল ।
পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে । অনেক কাজ বাকি । আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে । বললাম উঠি ভাল থাকিস ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৩