somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্যসেনের কথিত অসাম্প্রদায়িকতা, সত্য না মিথ্যা ? এবং তার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল সূর্যসেনকে অনেকেই অসাম্প্রদায়িক হিসেবে দাবি করতে চায়। বলে থাকে- সূর্যসেনের দলে তো মুসলমান ছিলো, তিনি যদি সাম্প্রদায়িক হতেন, তবে দলে কেনো মুসলিম সদস্য নিলেন ?
এর উত্তরে বলতে হয়, বর্তমান ভারতের ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপিতেও কিন্তু মুসলিম সদস্য আছে (নাজমা হেপতুল্লাহ, মুখতার আব্বাস নাকভি), এদের দ্বারা বিজেপি খুব সহজেই মুসলিম বিরোধী বক্তব্যগুলো দিয়ে থাকে। গোটা কিছু বিশ্বাসঘাতক মুসলিম সদস্যের উপস্থিতির কারণে এটা কখনই প্রমাণ হয় না যে, বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয়। বরং বিজেপির সার্বিক কার্যক্রম দ্বারা বিষয়টি নিরুপণ করতে হবে।
ঠিক একইভাবে সূর্যসেন সাম্প্রদায়িক বা মুসলিম বিরোধী ছিলো কি ছিলো না, এটি বোঝার জন্য বিচ্ছিন্ন কিছু রেফারেন্স কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং যে জিনিসগুলো দেখা দরকার-
১) সূর্যসেন কাদের আদর্শে আদর্শিত হয়েছিলো ? তার গুরু কারা ? তার গুরুরা কোন আদর্শে আদর্শিত ? তাদের গুরুদের সংগঠনের নাম কি ?
২) সূর্যসেনের কাজের মধ্যে কোন ধর্মের প্রাধান্য ছিলো ? কোন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সে তার অনুসারীদের পরিচালনা করতো ?
৩) সূর্যসেন কোন সংগঠনের পক্ষে কাজ করতো ? সেটার উদ্দেশ্য কাদের স্বার্থে ছিলো ? তার কোন মুসলিম বিরোধী স্বার্থ ছিলো কি ?
৪) সূূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী কাজের (বিশেষ করে চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠন) মূল উদ্দেশ্য কি ছিলো ? ঐ সময় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের পটভূমিটা আসলে কি ছিলো ?
৫) সূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী কাজ সম্পর্কে ঐ সময়কার মুসলিম ব্যক্তিত্বরা কি বলে ?
আসুন প্রশ্নের উত্তর গুলো দেখে নেই-
-------------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন- ১) সূর্যসেন কাদের আদর্শে আদর্শিত হয়েছিলো ? তার গুরু কারা ? তার গুরুরা কোন আদর্শে আদর্শিত ? তার গুরুদের সংগঠনের নাম কি ?
(১) নং প্রশ্নের উত্তর-
ক) সূর্যসেনকে কথিত বিপ্লবী পথে নিয়ে আসতে মূল কাজ করেছে সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী।
খ) সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী ‘যুগান্তর’ নামক একটি সংগঠনের সদস্য ছিলো।
গ) যুগান্তর, অনুশীলন সমিতি নামক একটি সংগঠনের উগ্র শাখা সংগঠন।
ঘ) ‘যুগান্তর ও অনুশীলন’ এর মূল আদর্শ নেতা হচ্ছে উগ্রহিন্দুত্ববাদের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এ সংগঠনগুলোর নীতিবাক্য- “মুসলিমদের তাড়িয়ে অখণ্ড হিন্দু-ভারত প্রতিষ্ঠা করা।’ (প্রয়োজনীয় লিঙ্ক: উইকি- https://goo.gl/b28A3T, https://goo.gl/h99H7u)
উল্লেখ্য বঙ্কিমচন্দ্র ছিলো কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী উগ্রহিন্দুত্ববাদের জনক, বঙ্কিমের লেখা ‘আনন্দমঠ’কে বলা হয় হিন্দুদের পলিটিক্যাল ডকট্রিন। আজকের ভারতে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদ, তার শেকড় নিহিত রয়েছে চরম মুসলিমবিদ্বেষী বঙ্কিমচন্দ্রের রচিত ‘আনন্দমঠে’। এ আনন্দমঠ বইয়ে লেখা হয়েছে-
“কেহ চিৎকার করিতে লাগিল, “মার, মার নেড়ে মার।” কেহ গাহিল, “হরে মুরারে মধুকৈটভারে!” কেহ গাহিল, “বন্দে মাতরম।” কেহ বলে, “ভাই, এমন দিন কি হইবে, মসজিদ ভাঙ্গিয়া রাধামাধবের মন্দির গড়িব?” (আনন্দমঠ, তৃতীয় খণ্ড, অষ্টম পরিচ্ছেদ)
----------------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন- ২) সূর্যসেনের কাজের মধ্যে কোন ধর্মের প্রাধান্য ছিলো ? কোন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সে তার অনুসারীদের পরিচালনা করতো ?
(২) নং প্রশ্নের উত্তর-------------------
ক) সূর্যসেনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো উগ্র হিন্দুত্ববাদ অনুসারে এবং তার কথিত বিপ্লবী দলের মূল অংশে কখনই কোন কোন মুসলমানকে নেয়া হতো না।
এ সম্পর্কে ইতিহাস বলে-
......সূর্যসেনদের এই ‘গান্ধীরাজ’ আর পণ্ডিত মদন মোহন মালব্যদের ‘রামরাজ্য ছিল সমার্থক। সূর্যসেনের সাথীরা ছিল গান্ধীর ‘সত্যাগ্রহী সেনা’, আনন্দমঠের ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রে উজ্জীবিত ও হিন্দু ভারতের স্বপ্ন-তাড়িত ‘সন্তান-সেনা’। যারা অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে অংশ নিয়েছিল, যারা জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে সূর্যসেনের সাথী ছিল, তাদের মধ্যে একজনও মুসলমান ছিল না। (সূত্র: বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪৩-১২৪৪; পূর্ণেন্দু দস্তিদার, স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, ১৪)....
খ) সূর্যসেনের দলের সদস্যদের উগ্রহিন্দুত্ববাদ দ্বারা আকৃষ্ট করা হতো।
.....এ সম্পর্কে সূর্যসেনের দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব শ্রী পূর্ণেন্দু দস্তিদার তার “স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম” গ্রন্থে লিখেছে: “তখন ধর্মভাব বিশেষ প্রবল ছিল। স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের মধ্যে প্রধানত হিন্দু মধ্যবিত্তশ্রেণীর ছাত্রদেরই তখন দলে আনা হত। ছাত্র ও যুবকদের নৈতিক চরিত্রের উন্নতির জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, গীতা পাঠ, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের বই ও বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দ মঠ’ ইত্যাদি পড়ার ব্যবস্থা করা হত। (সূত্র পূর্ণেন্দু দস্তিদার, স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, পৃ ১৮)...
........সূর্যসেনের দলের নারী সদস্য কুন্দপ্রভাব সেনগুপ্তার (প্রীতিলতাও একজন নারী সদস্য) স্মৃতি চারণ থেকে জানা যায়, সূর্যসেনের দলের সদস্যদেরকে হিন্দু দেবী কালীর মূর্তির সামনে বুকের রক্ত দিয়ে পূজা করতে হতো। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে কুন্দপ্রভা সেনগুপ্তা লিখেছেন:
“কিছুদূর গিয়ে এক মন্দিরের কাছে দু’জনে পৌঁছলাম। দরজা খোলাই ছিল। মাস্টারদা ও আমি ভেতরে ঢুকলাম। তারপর তিনি টর্চ জ্বালালেন। দেখলাম ভীষণাননা এক কালী মূর্তি। মাস্টারদা একহাত লম্বা একখানা ডেগার বার করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, মায়ের সামনে বুকের রক্ত দিয়ে পূজো কর। ওখানে বেলপাতা আছে। আমি বুকের মাঝখানের চামড়া টেনে ধরে একটুখানি কাটার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হলো। তা বেলপাতায় করে মাস্টারদার কাছে নিয়ে গেলাম, তিনি বেশ স্পষ্ট করে বললেন--মায়ের চরণে দিয়ে বল জীবনে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমি অসংকোচে মায়ের চরণে রক্ত আর মাথা রেখে এ প্রতিজ্ঞা করলাম।” (সূত্র:কুন্দপ্রভা সেনগুপ্তা: কারাস্মৃতি-১৯৭৪) ...
........অস্ত্রাগার লুঠের পর ধরা পড়ার পর সূর্যসেন সম্পর্কে বলা হয়----
জেলখানায়ও সূর্যসেন ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান দিতো। ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারী সূর্যসেনের ফাঁসি কার্যকরী হয়। ফাঁসিতে মৃত্যুবরণের আগে তার শেষ উচ্চারণ ছিল ‘বন্দে মাতরম’। (মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৭৮-২৭৯)..............///////////////////
উপরের বিষয়টি দ্বারা স্পষ্ট, কথিত অসাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং বঙ্কিমের উগ্রহিন্দুত্ববাদ অনুসরণেই সূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী টিমের কাজ পরিচালিত হতো।
------------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন- ৩) সূর্যসেন কোন সংগঠনের পক্ষে কাজ করতো ? সেটার উদ্দেশ্য কী ছিলো ? তার কোন মুসলিম বিরোধী স্বার্থ ছিলো কি ?
(৩) নং প্রশ্নের উত্তর-----------------------
সূর্যসেন ‘কংগ্রেস’ দলের সদস্য ছিলো। সে ছিলো চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ঐ সময় (১৯২৮ সাল থেকে) কংগ্রেসের উগ্রহিন্দুত্ববাদী মুখোশ উন্মোচন হয় এবং মুসলমানদের সাথে তাদের বিরোধিতা চরম ভাবে প্রকাশ পায়। বিশেষ করে ১৯২৮ সালের নেহেরু রিপোর্টকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের সকল প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যায়। কংগ্রেস অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য জোর প্রচেষ্টা করতে থাকে, যেখানে মুসলমানদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। ঐ সময় মুসলিম নেতারা কংগ্রেসের অবস্থাকে মুসলিম বিরোধী বলে ঘোষণা করেন, ব্রিটিশ খপ্পর থেকে হিন্দু খপ্পরে পড়ার কথা উল্লেখ করেন।
....১৯৩০ সালে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলনে মাওলানা মুহম্মদ আলী মুসলমানদেরকে কংগ্রেস হতে দূরে থাকার আহবান জানান। তিনি কংগ্রেসের আন্দোলন সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন- “গান্ধী উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিন্দু মহাসভার পক্ষে কাজ করছে। তার যাবতীয় কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো হিন্দু রাজত্ব স্থাপন এবং মুসলমানদের পদানত করে রাখা।” (সূত্র: বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪১) ....
উপরের দলিল দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় ঐ সময় মুসলমদের চরম বিরোধিতায় লিপ্ত ছিলো কংগ্রেস, যারা মুসলমানদের একঘরে করতে চাইছিলো। আর সেই কংগ্রেসের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছে সূর্যসেন। এখন সূর্যসেন কাদের পক্ষে কাজ করবে সেটা না বুঝার কোন কারণ নেই।
------------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন- ৪) সূূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী কাজের (বিশেষ করে চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠন) মূল উদ্দেশ্য কি ছিলো ? ঐ হিন্দু-মুসলিম পটভূমিটা আসলে কি ছিলো ?
(৪) নং প্রশ্নের উত্তর-----------------------
সূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধানটি বলতে হয় চট্টগ্রামের অস্ত্রগার লুণ্ঠন। এই অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করার জন্য বেছে নেওয়া হয় ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল তারিখটিকে।এই ১৮ই এপ্রিল তারিখে অস্ত্রগার লুট করাই প্রমাণ করে সূর্যসেন ছিলো চরম মুসলিম বিরোধী চক্রান্তবাজ। তার কথিত বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল মুসলিমমুক্ত অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করা।
কারণ ঐ দিন (১৮ই এপ্রিল, ১৯৩০) চট্টগ্রামে মুসলিম লীগ, জমিয়তুল ওলামা, মুসলিম যুব সমিতি ও মুসলিম শিক্ষা সমিতির এক যৌথ সম্মেলন শুরু হয়। সূর্যসেনের সাথে অস্ত্রগার লুট করার সময় যে ৬শ’ সন্ত্রাসী কাজ করে, যাদের প্রত্যেককে পরিধান করানো হয়, ঐ মুসলিম সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মত পোষাক, তুর্কী টুপি। উদ্দেশ্য ছিলো অস্ত্রাগার লুটের পর সব দোষ পড়বে মুসলিমদের ঘাড়ে, এতে ব্রিটিশ বেঙ্গলে নিষিদ্ধ হবে মুসলিম রাজনীতি। উল্লেখ্য ঐ সময় কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদী কার্যক্রমকে প্রতিরোধ করতে বেশি সক্রিয় ছিলো পূর্ববঙ্গের মুসলিম নেতারা। মূলতঃ তাঁদেরকে ফাঁসানোর জন্যই পরিচালিত হয়েছিলো মুসলিম পোষাকে সূর্যসেনের অস্ত্রাগার লুট। (সূত্র: খন্দকার হাসনাত করিম : সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ও ষড়যন্ত্রের শতবর্ষপূর্তি, দৈনিক ইনকিলাব, ২৩শে মার্চ ১৯৯৪; বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪৬-২৪৬)
মুসলমানদের ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হলেও, শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় উগ্রহিন্দুরা, বেচে যায় নিরীহ মুসলমানরা।
--------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন- ৪) সূর্যসেনের কথিত বিপ্লবী কাজ সম্পর্কে ঐ সময়কার মুসলিম ব্যক্তিত্বরা কি বলে ?
(৪) নং প্রশ্নের উত্তর--------------------------
ক) মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ লিখেছেন: “কি কারণে বলা যায় না, অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের জন্য বিপ্লবীরা ১৮ এপ্রিল দিনটি বাছিয়া লইয়াছিল। (সম্মেলন শুরু হযেছে ১৮ তারিখ) পরবর্তী দুইদিন চট্টগ্রামে মুসলমানদের কয়েকটি সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ছিল। তন্মধ্যে প্রাদেশিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হইয়াছিলেন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. স্যার শাফায়াত আহমদ খান। জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন মুসলিম ছাত্র সম্মেলনের নির্বাচিত সভাপতি। মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। এদিকে উপেন্দ্র ভট্টাচার্যের দল ধূম স্টেশনের নিকট রেল লাইনের ফিসপ্লেট অপসারিত করিয়া একখানি মালগাড়ী লাইনচ্যুত করে। কিন্তু ইহাতে ট্রেনখানির বিশেষ কোন ক্ষতি হয় না। ড. শাফায়াৎ আহমদ, জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও সম্মেলনে যোগদানেচ্ছু বহুসংখ্যক প্রতিনিধি ও দর্শক লইয়া কলিকাতা হইতে আগত মেল ট্রেনখানি কয়েকঘণ্টা দেরীতে পরদিবস চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছে। নিরাপত্তার জন্য জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও ড. শাফায়াৎ আহমদকে কমিশনের বাংলোতে রাখা হইয়াছিল।” (মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৫৭,২৬০, সন্দ্বীপের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ সম্পর্কে জানতে সরকারি ওয়েব পোর্টালের লিঙ্ক: http://goo.gl/RIOSBc)
খ) সূর্যসেনদের ‘বিপ্লব’ আর গান্ধীর অসহযোগ, স্বরাজ, আইন অমান্য আন্দোলন প্রভৃতি সবই ছিল এই হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এই কারণেই শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গান্ধী ও সূর্যসেনদের এই আন্দোলন তৎপরতাকে ‘গন্ডগোল’ বলে অভিহিত করেন। সূর্যসেনদের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ১৭ দিন পর গান্ধী গ্রেফতার হলে এই বিষয়ের ওপর এক আলোচনায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বলেন:
“ভারতের ৭ কোটি মুসলমানের ৭০ জনও কংগ্রেসের সমর্থক নয়। মি গান্ধী যে রকম গন্ডগোল সৃষ্টি করেছেন তাতে তাকে গ্রেফতার করে রাখার জন্য আমি ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। (বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, পৃষ্ঠা: ২৪৬; ভারত কি করে ভাগ হলো, বিমলানন্দ শাসমল, পৃষ্ঠা ১০৯)
---------------------------------------------------------------------------
উপরের বিশাল আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়-
১) সূর্যসেন ও তার সঙ্গীরা কখনই অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো না, বরং মুসলিম বিরোধী উগ্রহিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো।
২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সূর্যসেনের সম্পর্কটা আসলে উল্টো। মানে সূর্যসেন হচ্ছে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) স্বাধীনতার সম্পূর্ণ বিরোধী।
৩) সূর্যসেনকে কমিউনিস্টরা নেতা হিসেবে মনে করে, এটা সম্পূর্ণ ভূল। কারণ সূর্যসেন কমিউনিস্ট ছিলো না, তবে তার অনুসারী উগ্রহিন্দুরা পরবর্তীতে এ অঞ্চলে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো। তার অনুসারীই তাকে কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে প্রচার করে, যা এখনকার কমিউনিস্টরা বুঝতে পারে না।
৪) বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক স্থাপনার নাম সূর্যসেন/প্রীতিলতা নামে হয়। এটা একটা হাস্যকর বিষয়। ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তাদের নামে স্থাপনা তৈরী করলে যেমন বোকামি হবে, ঠিক তেমনি সূর্যসেন/প্রীতিলতা’র নামে স্থাপনা নির্মাণ করলেও ঠিক তেমন বোকামি ও হাস্যকর হবে। তাই সূর্যসেন/প্রীতিলতা’র নামে সকল স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×