somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন সেন্ট মার্টিন ডি নারিকেল জিঞ্জিরা ... বাংলার স্বর্গ ... দ্বিতীয় পর্ব

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দিনের শেষ আলোকে বিদায় জানাতে পারিনি তাই বলে তো আর সেন্ট মার্টিনের প্রথম সুর্যোদয়টাকে মিস করতে পারি না, তাই না?? ভোরে উঠতে পারবো কিনা এই ভয়ে সারা রাত সিটিবির সাদে ঘুটঘুটে অন্ধকারে মোবাইলের আলোয় ছোট ভাই সাগরের ও সমুদ্রের গান শুনে কাটিয়ে দিলাম। ভোরের শীতল বাতাস লাগলো আমাদের গায়ে, পায়ের নিচে তখন রাশিরাশি ভেজা বালু, ছোট ছোট ঢেও গুলো তখন আমাদের পায়ে লাগে থাকা বালুকনা ধুয়ে দিচ্ছে বারবার, নিজেকে তখন মনে হলো বড়ই পবিত্র ... THE HOLY MAN

যা হোক, সেন্ট মার্টিনে আজ আমাদের দ্বিতীয় দিন। সকালে বিচ থেকে ফিরে সোজা বিছানাতে। মরার মত ঘুমালাম কয়েক ঘন্টা। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১১টা বেজে গেল। ঘুম থেকে উঠে সোজা সাগরে। বীচে তখন একজন কাকড়া ভাজতাছিলো। আমরা কাকড়া খাইলাম। স্বাদতো দেখি মুরগীর মাংসের মত। একটু বালি বালি। যে ভাজতেছিলো তার নাম আব্দুল খালেক। আদি নিবাস ওপারে মানে বার্মা। সেন্ট মার্টিনে এদের দেখলেই চেনা যায়। চায়ের দোকানে বার্মিজ লোকদের আনাগোনাই বেশি। আসলে এখান থেকে টেকনাফ যতদুর তার চেয়ে বার্মা কাছে। তবে এখানকার স্থানীয় জনগন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ পছন্দ করে না তা তাদের আচরনে খুব বুঝা যায়।

সেন্ট মার্টিনে আসার পর থেকে সাগরের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সে কারনেই হয়তো দিনের বেশির ভাগ সময় আমাদের সাগরের লোনা জলে হাবুডুবু খেয়েই কেটেছে। দ্বিতীয় দিন আমাদের সাথে পরিচয় সেন্ট মার্টিন আ'লীগের যুগ্ম সম্পাদকের সাথে, মাঝ সাগরে জাল ফেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত। এখানে বলে রাখি, আমাদের ইচ্ছা ছিলো যে আমরা সেন্ট মার্টিনে
একটা ডেন্টাল ক্যাম্প করে আসবো। পরের পর্বে তার বিস্তারিত বলবো। কিন্তু ক্যাম্প টা আমরা করেছিলাম। যা হোক, সে আমাদের জাল দিয়ে মাছ ধরা শিখালেন। লম্বায় প্রায় ২০-৩০ ফুট জালগুলো টেনে ধরে রাখতে হয় এক প্রান্ত ধরে। আরেক প্রান্ত থাকে মাঝ সাগরে। ঢেও ও স্রোতের প্রবল টানের মধ্যে আপনাকে ব্যালান্স ঠিক রাখতে হবে না হলে এই জালেই আপনি পেচিয়ে যেতে পারেন কিংবা এই জাল আপনাকে টেনে মাঝ সাগরের নিয়ে যেতে পারে। আমরা সাতার জানার পরেও বেশি দুর যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না কিন্তু বাচ্চা বাচ্চা পুলাপানগুলো কোমরে বয়া বেধে সাতরে গভীর সাগরে চলে যাচ্ছে অনাসয়ে।

সেন্ট মার্টিনের সাগর পাড়ে আমি কোন চোরাবালি দেখি নাই। এমন কি এমন কোন আইউইটনেসও পাইনাই যে বলতে পারে যে সেন্ট মার্টিনে কখনো চোরাবালিতে আটকে মানুষ মারা গেছে। কিছু সাতার না জানা মাতবর টাইপ লোক অন্যের মজা সহ্য করতে না পেরে এসব কথা রটায়। আমি পুরো সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চার পাশের সাগর সৈকতে পায়ে হেটে চক্কর দিয়েছি। গ্রামের সব বাচ্চাকাচ্চারা যে যেখানে ইচ্ছা যাচ্ছে, কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে হা ভাটার সময় একটু সতর্ক থাকা ভাল। এরকম আরেকটা ভুয়া কথা হলো এখানে নাকি শুধু বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। সত্যটি হলো এখানে যে কোন নেটওয়ার্কই ক্লিয়ার পাওয়া যায়। টাকা শেষ হলে বিকাশ করা যাবে দ্বীপের যে কোন প্রান্তে। সো নো চিন্তা ডু ফুর্তি ম্যান।

আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন বাকি সব বের হয় মাছ কিনতে। প্রথম দিন ধরা খাওয়ার পর ঠেকে আমরা হোটেল থেকে আর কিনে মাছ খাই নাই, ঘাট থেকে মাছ কিনে ভেজে খেয়েছি। এতে অনেক খরচ বেচে গেছিলো আমাদের। যা হোক, ওরা সবাই ঘাটে যেয়ে দেখে একটা সামুদ্রিক সাপ!! প্রথমে ওরা ভেবেছিলো সাপটি মরা কিন্তু মরা সাপের ফটোসেশনের সময় যখন সাপটি তার আসল চেহারা দেখালো তখন সবাই ভয় পেয়েছিলো। কোন রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই ওরা সাপের ফটেসেশন শেষ করে।

ওরা মাছ কিনে ভাজতে দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে উঠালো। "নাঈম ভাই, অনেক কিছু মিস করলেন ভাই।" মানে সাপ দেখছে আর আমি ঘুমাইছি আর কি, এখন আমারে খোচাইতাছে ... যা হোক, ঘুম থেকে উঠে আমরা সোজা সাগরে চলে গেলাম। সেরাম দাপাদাপি করলাম টানা ৩ ঘন্টা। এই দিন সুমন তার শখের রোদচশমাটি সাগরকে দান করে আসলো। ঢেওয়ের ঝাপটায় সেই রোদ চশমা যে কোথায় হারালো তা আর ফিরে পাওয়া গেল না। সাগরের মাঝখানে দাড়িয়ে আমরা একটা ১০-১২ বছরের বাচ্চার কাছ থেকে প্রায় এক হাত লম্বা একটি ছুরি মাছ কিনলাম মাএ ১০০ টাকা দিয়ে। সাগর পাড়ে দাড়িয়ে ভেজা কাপড়ে খেলাম কাকড়া ভাজা। সেদিন অনেক গুলা কাকড়া খেয়েছি। দাম কত নিয়েছিলো সে ব্যপারে সিরিয়াসলি আমার কোন আইডিয়া নাই।

সাগর থেকে সোজা হোটেল। বালু ও লবন মুক্ত হতে গোসলের বিকল্প নাই। তাই চলে শরীর ডলে গোসল। সাগরের লোনা পানিতে না, হোটেলের নরমাল পানিতে। একটু কষ্ট তো ভোগ করতেই হবে(এই লাইনের মহত্ব গেলেই বুঝবেন তাই আর বললাম না ... হি হি হি)। যা হোক গোসল শেষ করে সবাই মিলে গেলাম হোটেল আল বাহারে দুপুরের খাবার খেতে। আজ বেশ অনেক পদের মাছ আর হোটেল আল বাহার স্পেশাল সবজি (অস্বাধারন টেস্ট, মাস্ট ট্রাই) দিয়ে খাবার খেলাম অনেকের সাথে। আসলে আজ অনেক টুরিষ্ট এসেছিলো। তারা সেন্ট মার্টিনে এসে যখন মুরগি অডার করলো তখন সিরিয়াসলি আমি মনে মনে বললেম "হতভাগা, আসছে টুরিষ্ট হইতে''। তাও এদের বেশির ভাগই আজই চলে যাবে। মাএ ৩ ঘন্টায় সেন্ট মার্টিন দেখবে তারা !!! এর জন্য তারা প্যাকেজ কম্পানীকে দেয় ১৫০০-১৮০০ টাকা। শুনে আমাদের মাথা নষ্ট হবার মত অবস্থা। যাওয়া-আসা কেয়ারি সিন্দাবাদে ৫৫০ টাকা+দুপুরে লান্চ ৩০০ টাকা মোট ৮৫০ টাকা বাকি টাকার পুরোটাই কম্পানীর লাভ!!! এক একটা গ্রুপে যদি ১৫ জন থাকে লাভের হিসাবটা দিনে কত আসে!!! আমরা সবাই আফসোস করতে লাগলাম। কথা দিলাম নেক্সট টাইম আমরা গাইড হিসাবে কাজ করবো। আর আমি বুঝি না মাএ ৩ ঘন্টায় ৩ কিমি লম্বা একটা দ্বীপের কি-ই বা দেখা যায় ???

যা হোক, খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা গেলাম সাইকেল ভাড়া করতে। আমাদের টার্গেট ছিলো সাইকেলে করে পুরো দ্বীপ চক্কর লাগানো কিন্তু শহুরে ফাস্টফুড খাওয়া আরামের শরীরে সৈকতের বালুতে সাইকেল চালানোর মত এনার্জি ছিল না। বাজার থেকে সিটিবি পর্যন্ত আসতেই জিভ বের হয়ে গেল। :P তাই ভাব ধরে ছবি তুলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না। সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় মাএ ৪০ টাকা ঘন্টা হিসাবে।

এখানকার আর্থসামাজিক ব্যবস্থা অনেকটা "পদ্মা নদীর মাঝি" উপন্যাসের সাথে মিলে যায়। পুরো দ্বীপের আর্থিক গন্ডিটা কয়েকজন নিয়ন্ত্রন করে। সে সুত্রে আমাদের দেখা হয়েছিলো এখানকার বাজারের সবচেয়ে বড় অংশটির মালিকের। তার একটি হোটেলও আছে। তিনি আমাদের তার বাসায় দাওয়াতও দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা পরেরবার আসলে যাব বলে কথা দিয়ে এসেছি। সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন হবার পর একটা জিনিস পর্যটকদের জন্য লস হয়ে গেছে, আগে আপনি একটি মাঝারি বোট ভাড়া করতে পারতেন সারাদিনের জন্য মাএ ৫০০-৬০০ টাকা দিয়ে আর এখন সেখানে ৩-৪ ঘন্টায় লাগছে ১২০০ টাকা ফিক্সড এবং তা নির্ধারন করে দেয় ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের লোক জন। এমনিতে এখানকার মানুষ খুবই খুবই খুবই পরিশ্রমী এবং তাদের আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশি। তারা পরিশ্রম না করে আপনার কাছ থেকে একটা টাকাও নিবে না। তবে একটা কথা না বললেই নয় যে এখানকার বাচ্চাদের সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তারা ঘন্টার পর ঘন্টা আপনার দামি সামগ্রী পাহাড়া দিবে কিন্তু কোন কিছু সরাবে না।

সিটিবির বিচে ইজি চেয়ারে বসে আমরা সেদিনের সুর্যাস্ত দেখলাম। রাত ১১টার দিকে বৃষ্টি নেমে আসায় আমরা হোটেলে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। সবাই বসে আড্ডা দিলাম অনেক রাত পর্যন্ত। হোটেলবয়ের বদান্যতায় আমরা ঠান্ডা কোক পাইলাম যা সেন্টমার্টিনে পাওয়া যায় না। তার জন্য হোটেলের কর্মচারীদের আগেই বলে দিতে হবে। তারা কোকের বোতল মাছের আড়তে রেখে আসে ঠান্ডা করার জন্য। সকালের প্লান করে আমরা সবাই ঘুমতে গেলাম। এক ঘুমে রাত পার।

কাল যাব ছেড়াদ্বীপে। সে এক তুলনাহীন অভিজ্ঞতা ...

সরি ভাই ও বোনেরা নেটস্পিডের জন্য ছবি আপলোড দিতে পারছি না বলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃক্ষিত।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×