আত্মশুদ্ধির আশায় একবার এক মুর্শিদের আস্তানায় গিয়েছিলাম। মুর্শিদের চরণে হাত রেখে যখন আত্মনিমগ্ন হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তখন মুর্শিদের অমীয় বানী কানে ভেসে এল। যে বানী কিতাবের বানীর সাথে সাংঘর্ষিক। সবিনয়ে জানিতে চাহিলাম, মুর্শিদ ধন হে, আপনার অমীয় বানী তো ভূল? ভূল বানীতে কেন সবাইকে করছেন মশগুল? চেঙ্গিস খানের মত ব্রজকন্ঠে মুর্শিদ আমার উপর অভিশাপ্ত বানী বর্ষণ করিলেন,- খামোশ, নালায়েক, নাবালক দুর হয়ে যা আমার সামন থেকে, তুই ধ্বংস হয়ে যাবি। শিরদন্ড সোজা করিয়া জানিতে চাহিলাম, জনাব আপনেই তো বলিলেন, আমার সৃষ্টিই হয়নি, আপনার কুদরতি কেরামতি দিয়ে আমাকে আবার সৃষ্টি করা হবে। তাহলে আমার যেহেতু সৃষ্টিই হয়নি, আমি ধ্বংস হব কিভাবে? মুর্শিদ আমার সম্মুহ বিপদ তার অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখিতে পারিলেন। আমাকে সর্তক করিলেন, যদি আমি তাহার অবাধ্য হই, তাহা হইলে আমার মনোবাসনা কোনো কালেই পুরণ হইবে না উপরোন্ত আস্তানা ছাড়িয়া গৃহে ফিরিবার পূর্বেই আমি ধ্বংস হইয়া যাইব।
ঐ সময়ে আমার দুটি জিনিষের খুব প্রয়োজন ছিল। হয় আমার আত্মশুদ্ধি না হয় আমার ধ্বংস। যেহেতু আমি বুঝিতে পারিলাম কোন কালেও আমার আত্মশুদ্ধি হইবে না। তাই আমি ধ্বংষটাকেই বাচিয়া লইলাম। আবার মুর্শিদের চরণে হাত রাখিয়া কহিলাম, আমি চললাম আমার গৃহে। গৃহে ফিরিয়া যদি আমি সুখ নিদ্রায় না যাইতে পারি তা হইলে আমি আবার আপনার আস্তানায় ফিরিয়া আসিব। আপনার চরণে মাথা রাখিয়া কহিব- আপনেই আমার পথ প্রদর্শক, আপনার পদধুলি কৃপা কর মুর্শিদ ধন হে। আর যদি আমি সুখ নিদ্রায় বাঁচিয়া থাকার স্বপ্ন দেখি, তাহলে আমি আর কোনো দিনও মুর্শিদমুখী হব না।
আমাকে আর কোনোদিন কোনো মুর্শিদের আস্তানা খুঁজিতে হয় নাই। সেদিন রাতে আমি এক স্বপ্নময় সুখ নিদ্রায় গিয়েছিলাম। বেঁচে থাকার কি আনন্দ উপলব্দি করতে পেরেছিলাম। কোনো এক অভিশপ্ত পরিশ্রান্ত আত্মা আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে বলেছিল, কোনো কিছুর জন্যই তুমি নিজেকে নিজে শেষ করে দিওনা, নিজেকে নিজে ধ্বংস করো না। বেঁচে থাকো, সময়টাকে উপভোগ করো। আজকের দিনটাকে মনে করো তোমার জীবনের সেরা দিন এবং আগামীকাল আরো সুন্দর হবে সেই আশায় বাঁচো। কখনো হতাশাকে সঙ্গী করো না। এই যে আমাকে দেখছো, আমি তো এক সময় ভেবেছিলাম, যেহেতু সব হারিয়ে ফেলেছি, তাহলে আর বেঁচে থেকে লাভ কি? নিজেকে শেষ করে দেই, ধ্বংস করে দেই, তাহলেই সব অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যাব। আমি বেঁচে থাকার আনন্দটাকে উপলব্দি করতে পারিনি, তাই নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কোনো কিছু থেকেই মুক্তি পাইনি। বরং আমি অভিশপ্ত হলাম। যেসকল অপ্রাপ্তির জন্য আমি নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলাম, একে একে সবই আজ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত, আমি ফেরার জন্য চেষ্টা করছি অথচ আমি ফিরতে পারছি না। আমি এক পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত অভিশপ্ত আত্মা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৪