somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেশা-২

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ট্যারা মজনুকে ক্রসফায়ারে মারারর পর প্রেস কনফারেন্স করলাম একটা। প্রেস কনফারেন্সে ট্যারা মজনুর প্রতি সাংবাদিকদের সহানুভূতি দেখে রাগে মাথা গরম হয়ে গেছে। বাসায় ফিরে আমার স্ত্রীকে বললাম জলদি মাথায় পানি ঢালো। শালার মজনু নাকি নিরাপরাধ। আরে এর নামে থানায় কেস আছে থানায় চার-পাঁচটা । আরো কত শত ইনভিসিবল কেস তার স্টেশন আছে নাকি! আমার সাথে বিটলামি! ঢালো মাথায় পানি ঢালো। রাতে ঘুমানোর আগে তিন পেগ ‘লাল পানি’ খায়া তবেই ঘুমালাম। পরদিন সকালে ডাইরেক্ট আইজি স্যারের ফোন-“তুমি তো কাজটা ঠিক করলে না শফিক। ট্যারা মজনুকে মারতে গিয়ে মেরে ফেলেছ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে।” শুনে তো আমার গলা শুকিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার সংস্থা আর সাংবাদিকগুলা স্যারকেও উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে দিল। স্যারকে এখন ক্যামনে বুঝাই যে ঐ পোলা আসলেই মজনু ছিল। বুঝলাম এখন বেশী কথা বললেই বিপদ। দেখি একটা স্ট্র্যাটেজ নিয়া। বললাম- আসলে স্যার ব্যাপারটা হয়েছে কী আমি স্যার মিস ইনফর্মড হয়েছি। আমার সারা শরীর দিয়ে দরদরিয়ে ঘাম পড়ছে। এইরকম নার্ভাস শুধু ছিলাম জীবনের প্রথম ক্রসফায়ারে। আমার বস কাজটার পর বললেন এখন একটু ড্রিঙ্ক কর শফিক সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই থেকে আমার টুকটাক ড্রিঙ্ক করার অভ্যাস। ওপাশ থেকে অপেক্ষা করছি আইজি স্যার কী বলেন তার জন্য। স্যার কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন, তারপর বললেন-“তুমি এভাবে কাজ করলে তো তোমাকে ট্রান্সফার করতে হবে। তোমাকে ক্লোজ করার জন্য চাপ আসছে নানা জায়গা থেকে। আমার ছোটভাইয়ের বন্ধু না হলে তোমাকে আমি সত্যিই ট্রান্সফার করে দিতাম। ব্যাপারটা একটু সিরিয়াসলি দেখো, রাখলাম।” আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক ভালো,স্যার ট্রান্সফার করবেন না,ক্লোজ করলে করুক। ঐটারে সামাল দেয়া যাবে পরে। সহজভাবে এই থানায় আসি নাই আমি,আমারে ট্রান্সফার করা এতোই সহজ! পুরা ক্যাশ বিশ লাখ টাকা দিয়া তবেই ঢাকার বাইরে থেকে এই থানায় জয়েন করছি। আইজি স্যারের ছোটভাই আমার ক্লোজ ফ্রেণ্ড তাতেই না একটু কমায় রাখলেন উঁনারা। আমি বুঝলাম না একটা সন্ত্রাসীকে মেরে ফেলার জন্য মানুষ এত হাউকাউ করে ক্যান। তুই ব্যাটা ক্যামনে বুঝস ঐ পোলা মজনু না লায়লা। ভাল মানুষের ছল ধইরা কত পাবলিক আকাম-কুকাম করে। কাজটা কিভাবে সামাল দেয়া যায় ভাবতে ভাবতেই এক সাংবাদিকের ফোন-“শুনলাম আপনাকে নাকি সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে? আপনি কি আপনার অপরাধ স্বীকার করছেন? আপনার প্রতিক্রিয়া?” রাগে মোবাইল বন্ধই করে দিলাম। বাইনচোতটার সাহস কতো বড়, আমার সাথে ত্যাদড়ামি! অফিসে গিয়েই অর্ডার দিলাম- নো সাংবাদিক,কাউরে এলাউ করবা না। আমার মিরপুর এলাকায় ইনফর্মার আছে পাঁচটা। সবগুলাই বিটলা। ফোন লাগাইলাম মানিকরে, ‘ডাইলের’ বিজনেস করে সে। আমি তার কাছ থেকে কোন বখরা নেই না। রেগুলার খালি ইনফর্মেশন জানতে চাই। কোন সপ্তাহে ইনফর্মেশন না দিলে শাস্তি,বখরার রেট ডাবল কইরা উশুল। ফোন দিয়া তারে আসতে বললাম। আসলে দিলাম টাইট দিয়া- “ঐ ব্যাটা তুই ট্যারা মজনুর কাছ থিক্যা আরো তিরিশ লাখ আইন্যা দিবি, ভাবছিলাম তো কেউ জানব না। ব্যাটা কবি না যে ঐ পোলা ইনভার্সিটিতে পড়ে। কইছিলাম তরে ছোট-খাট এলাকার মাস্তান একটারে মাইরা ফালাই,তোর উপর ভরসা কইরা করছি ভুল। শোন, কেস হইলে সাক্ষী দিবি ওই পোলা তোর কাছ থিকা ডাইল খাইত,রেগুলার কাস্টমার আছিল।তোর কাছে চান্দাও চাইছে। নিজেরে পরিচয় দিছে ট্যারা মজনু কয়া। তুই তো চিনস আমারে, এখন পর্যন্ত ক্রসফায়ার করছি সাতাইশটা। মানিক আমার থ্রেট খায়া ভাগল। এইবার ফোন লাগাইলাম মানিকের এলাকার রিপনরে। বললাম মানিকের উপর নজর রাখতে,উনিশ-বিশ হইলে যেন আমাকে জানায়। চা এক কাপ খায়া এইবার ফোন দিলাম লিঙ্কন ওরফে মৃত ট্যারা মজনুর বাসায়। আসল মজনু তো থাকে ইন্ডিয়ায়। বেনামে একটা থ্রেট দিয়া রাইখা দিলাম। মনে একটু শান্তি পাইলাম। এইবার দেখি আমারে কে ট্রান্সফার করে আর কে ক্লোজ করে। তবে তার আগে ‘মিষ্টি’ নিয়া যাব মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে।

[উপরের গল্পটির সাথে কেউ নিজের মিল পেলে তা নেহাতই কাকতাল মাত্র। উপরের সকল চরিত্র কাল্পনিক এবং কল্পনাপ্রসূত]

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×