somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেশা- ৩

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জব্বার মিয়া কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছে তার বউয়ের দিকে পাশের বাড়ির নূরুলের ফটকা ভাই ফারুক কুনজরে তাকায়। কুনজরের সংজ্ঞা অনুযায়ী তার পর্যবেক্ষণ সঠিক। এই নিয়ে জব্বার মিয়া কয়েকবার তার বউকে না করেছে যেন বাইরে কম বের হয়,কল থেকে পানি নেয়ার সময় যাতে গায়ের কাপড়-চোপড় ঠিক থাকে,বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় যাতে দরজা জানালা বন্ধ করে নেয়। বেশকিছুদিন পরের ঘটনা, জব্বার মিয়া বাড়ি ফিরেছে সারাদিন পর রিকশা চালিয়ে। অন্যান্য দিনের মতো ঐ দিন দুপুরে সে বাড়ি ফিরেনি ভাত খেতে। ঘরে ঢুকে সে দেখে বউয়ের হাত ভর্তি চুরি আর কপালে তার চোখে জ্বালা ধরছে এমন একটা টিপ। জব্বার মিয়া সাজগোজের উপলক্ষ জিজ্ঞেস করতেই তার বউয়ের তৈরী জবাব-নূরুল ভাইয়ের বউ আমার লাইগা কিন্যা আনছে।
-কেন কেন,তোর লাইগ্যা হঠাৎ তার এতো দরদ উথলায়া পরলো কেন? নূরুল মিয়ার এমনিতেই তার বউয়ের সাজগোজ পছন্দ না। তার কথা হল-রিকশায়ালার বউ তুই কেন নবাবের বেটির মতো সাজবি। সেদিনও ঐ রকমই একটা কথা বলায় তার বউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল-আমারে দুই ট্যাকা দিয়া চুলের ফিতা কিনন দেয়ার মুরোদ নাই আবার হের জ্বলতাছে! হেডম দেহায়া একটা ফিতাই কিন্যা দাও না। জব্বার মিয়ার হাত নিশপিশ করছিল এতক্ষণ, সুযোগে ছিল কখন মারা যায়। সে তার বউকে এহেন দাম্ভিক কথার জবাবে চড় মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে ক্ষান্ত হল না কোমরে কয়েকটা লাথিও মেরে বসল। বলল- মাগির দেমাগ দেহ,আমার খায়া আমার পইড়া আবার তক্ক করে,এক্কেরে মাইরা লামু। বলেই তার বউয়ের গগণবিদারী চিৎকার যেন না শোনা লাগে সে জন্য ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। গলির মুখের চায়ের দোকানে গিয়ে সে বনরুটি ছিড়ে খেতে খেতে দোকানদারকে চা দিতে বলল। পাশেই একদল যুবক তার ভাষায় ‘চ্যাংরা পোলাপাইন’ চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিল। এখন এই নির্বাচনের সময় বস্তির ছেলেগুলোর একটাই কাজ হল যে যখন বলবে মিছিলে যেতে তারা যাবে,বিনিময়ে কিছু মৌসুমী আয় হয় আর কী। জব্বার মিয়ার শরীরে নাঁচন উঠে এদের মিছিল দেখে। সেও মাঝে মধ্যে যেত তবে একবার পুলিশের বাড়ি খাওয়ার পর সে আর কোন মিছিলেই যায় না। অবশ্য নির্বাচনের মিছিলগুলায় পুলিশের আক্রমণ না হলেও অনেক সময় বিরোধী পক্ষের আক্রমনের আশঙ্কা থাকে। সে ভাবে এর চেয়ে তার রিকশা চালানো অনেক ভাল,টাকাটা হালাল হয়। পাশের বাড়ির নূরুলের ভাই ফারুকও এখন মিছিলে যায়,মারামারির দরকার হলেও তার ডাক পড়ে। একবার সে ফারুকের হাতে ইয়া লম্বা এক রামদাও দেখছে। যখন যে সরকার সেই নেতাদের হয়েই কাজ করে সে। বস্তির সবাই ফারুককে ভয় পায়। জব্বারের মনে হচ্ছে ফারুকই তার বউকে লুকিয়ে চুরি দিয়েছে। কিভাবে ব্যাপারটা ধরা যায় তা চিন্তা করতে করতেই জব্বারের পাশে নূরুল এসে বসে। নূরুলকে দেখে জব্বার সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলে আসলেই তার বউকে নূরুলের বউ চুরি দিয়েছে কিনা। জবাবে নূরুল বলে-হেইডা বেডিগো ব্যাপার,হেরাই ভালা কইতে পারব।আমি ইতান জানিনা। নূরুল এরপর স্ব উদ্যোগে বলা শুরু করে-আমার খাডনিডা একটু কমছে ফারুক মানুষ হওয়ায়। হের কামাই অহন ভালই। নূরুল আরো জানায় ফারুক এখন দিনে হাজার পনেরশ টাকা কামাই করে। নির্বাচনের জন্য বস্তির সব ছেলেরই আয় ভাল। মিছিলে গেলেই পাঁচশ টাকা নগদ আর মিছিল শেষে এক প্যাকেট বিরিয়ানি বা তেহারি তো আছেই। এটাই এখন পেশা অনেকের। চা-নাস্তা খেয়ে জব্বার ঘরে যেতে যেতে ভাবে -ফারুকরে কিছুই কওন যাইব না,হের ম্যালা পাওয়ার।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×