somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোকাই বচন

১৪ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টোকাই একটি চলিত শব্দ, সাধারণ শব্দ, শ্লেষাত্নক শব্দও বলা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে টোকাই শব্দটা সচেতন তরুণ সমাজের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। টোকাই বলতে আমরা আসলে বুঝি; যে পথে ঘাটে ও রাস্তায় কিছু টোকায়। পথের ছিন্নমূল শিশুরা অভাবের তাড়নায় পথের পরিত্যাক্ত কাগজ,বোতল,শিশিসহ অনেক কিছু টুকিয়ে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে। এতে প্রতিদিন গড় হিসেবে ৫০-১০০ টাকা কামাই হয়। এসব ছেলে-মেয়ে বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্যই মূলত এ জীবিকা বেছে নেয়। তাদের কিন্তু বয়সটা পড়া-লেখা করে হাসিতে খুশিতে কাটানোর। সময়টা তারা পার করবে পরিবারের সাথে বিনা ঝঞ্ঝাটে, নিশ্চিন্তে। অথচ তাদের সংসার ও নিজের খরচ চালানোর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেটে মরতে হয়।

তো টোকাই শব্দটা হঠাৎ করে এত হিট খেল কিভাবে? এর একক কৃতিত্বের দাবিদার আমাদের বন ও পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (নামের আগে ড. লাগান, তাকে ইদানিং আদর করে বন ও পাউরুটি মন্ত্রীও ডাকা হচ্ছে)। তো হাছান মাহমুদের কী এত ঠেকা বা দরকার পড়ল টোকাইদের ইয়াদ করতে? হাছান মাহমুদ আসলে একজন বুড়া টোকাইয়ের ওপর খুব ত্যাক্ত ও বিরক্ত । তিনি হলেন ‘টোকাইদের’ মুকুটহীন সম্রাট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ । তো অর্থনীতির সঙ্গে বন ও ‘পাউরুটির’ কী সম্পর্ক? সম্পর্ক তেমন কিছুনা, খালি ঐ একটু কমিশনে ব্যাঘাত ঘটছে। বন ও পরিবেশের আওতায় থাকার কারণে আমাদের পাউরুটি মন্ত্রী দেখতাছেন উঁনারে গ্যাসের চুক্তির মধ্যে তেমন পাত্তা দেয়া হচ্ছে না। উঁনি ভাবলেন আমি মিনিস্টার(আবার আধা-একটা পিএইচডিও আছে) কিন্তু দাম বা মিডিয়া কাভারেজ তো পাইতাছি না। উঁনি সংসদের বিদ্যুত খরচ কইরা আনু মুহাম্মদকে একটা টাইটেল দিলেন-টোকাই ! সাবটাইটেলও দিছেন ‘মনু মুহাম্মদ’। এতে আমরা জারপরানাই খুশি। খুশি হবনা ! আনু মুহাম্মদরে তো মন্ত্রী মহোদয় প্রলেতারিয়েত অধ্যাপক বানায় দিলেন। তবে কেউ কেউ খুশি হইতে পারলেন না। তারা লেইখা বা টক শোতে কফি খাইতে খাইতে এর তীব্র নিন্দা জানাইলেন ও বক্তব্যটির প্রতিবাদ করলেন । মাঝখান দিয়া টকশোর প্রিয় অথবা সস্তামুখ আওয়ামী এমপি , আমার ভাই , তোমার ভাই, গোলাম মাওলা রনি ভাই কিছু এ্যাড করলেন বা যোগ করলেন। বললেন –‘ ঠিকই তো ! উনি তো টোকাই-ই, উনার গায়ের জামা তো টোকাইদের মতই !” আমি কিন্তু আবারও খুশি হইলাম, যাক সস্তা জামা পড়লে এমপি আর মন্ত্রীদের কন্সান্ট্রেশন পাওয়া যায়। আমি কোনদিন টকশোতে টকাইতে গেলে সেন্ডু গ্যাঞ্জি পইড়া যামু।

আমার আফসুস লাগে এরশাদ চাচ্চুর জন্য। এরশাদ চাচ্চু ক্ষমতায় থাকতে বলছিলেন- ওদের টোকাই বলবেন না, ওরা হল পথকলি, ওদের পথকলি বলবেন। তো এরশাদ চাচ্চুর জোটের ম্যাম্বার হইয়া হাছান ভাই তো দারুন একখান কাজ করলেন। হাছান ভাইকে অভিনন্দন! আমি রোদে ঘুইরা বাসায় ঝিম কালা হয়া ফিরলে আমার বলে- তোরে তো টোকাইদের মত লাগতাছে। আমি মাইন্ড খাইতাম। এখন কিন্তু আর খাই না। আরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যদি টোকাই হয় , তাইলে আমি তো ছাত্রই, মাইন্ড খাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

আনু মুহাম্মদ টোকাই হইলেন তাইলে কোন প্রসঙ্গে? কারণ উঁনি তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-বন্দর-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব। আসলে সেইটাও কারণ না। যদি উঁনি সম্প্রতি কনকো-ফিলিপ্সের সাথে করা চুক্তিকে সমর্থন করতেন। তা তো হইল নাই, বরঞ্চ প্রতিবাদ কইরা বসলেন ! কী বোকা মানুষ ! আরে মিয়া ‘আমাগো’ মত কমিশন খায়া চুপ কইরা হেহে কইরা হাসেন। দেখেন না মাল মিয়া কেম্নে হাসে ! হেহেহে ! আনু মুহাম্মদ আবার জাতীয় কিমিটির আহবানে হরতালও ডাকলেন । কী সাহস! প্রফেসর হইবা আরেফিনের লাহান । সাদা-সিদা, আমাগো দেখলে সালামই দিব; না স্যালুটই দিব; বুইঝা সারা পারে না । তার উপর আবার ভিসি, কত সম্মান আর তেল মারে। আর তুমি তেল – গ্যাস বাঁচাও ! আরে তেল নাই দিলা চুপ কইরা থাক । হরতাল করে ! তেল-গ্যাস কি তোমার বাপের ! হরতাল হইল, তার আগে সমাবেশে একই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক রেহনুমা ম্যাডামেরও মাথা ফাটল। আনু মুহাম্মদেরও ফাটছিল ! হরতালে যা হয় আরকি- পুলিশের সামনে গলা ফাটাইলেই বাড়ি। বাইড়াইয়া ছাত্র নেতা মোনাকাতরে নর্দমায় ফালায় রাখল। আরেক খালেদ মোশাররফও নাকি জেলে। কত মোনাকাত মাইর খাইল। যেই মাইয়া বাপের ঝারিও খায় নাই সে পুলিশের ডান্ডা ডলা খাইল, বুটের নরম ছোঁয়াও বাকি রইল না। যাই হোক বাঙালি বীরের জাতি (দুই একটা কাপুরুষ যে নাই , তা না)। হের উপরে আবার টোকাই কয়া আত্মা বড় কইরা দিছে। সামনে আরো কর্মসূচী আছে, ঢাকা ঘেরাও, লং মার্চ, রোড মার্চ তো আছেই। যাই হোক একজন টোকাই হওয়ার দরুন আমি আবারও বন ও পাউরুটি মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদরে রেড স্যালুট জানাই , গোলাম মাওলা রনিকেও রেড স্যালুট , উনি টক শোতে আরো টকান , বেশি কইরা চাঞ্চ পান এই শুভকামনায় বিদায়।

উৎসর্গঃ মাঠ ও ঘাটের সকল টোকাইকে :-)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×