সকাল থেকে সন্ধ্য একটা লোক ঘর থেকে বের হয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে বিভিন্ন কাজে কর্মে বা শখের বসে। কিন্তু বিপাকটা তখনই দেখা দেয় যখন তার পেটটা বলে উঠে, " পুরনো খাবারগুলোতে পেটে অনেকক্ষন রাখলাম, এবার একটু রিলোড করুন স্যার "।
সমস্যাটা এখানেই, রিলোড করতে হলে প্রথমেতো বেচারাকে আনলোড করতে হবে, কিন্তু কোথায় সে সুযোগ?
গত ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭ বিডিনিউজ-এ একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে এক লোক টয়লেট বিড়ম্বনায় পরে ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ডে যেতে হয়েছিল কারণ সে ফ্রান্সে টয়লেট করার কোন সুযোগ পাচ্ছিল না। তার এ ঘটনা পড়তে না পড়তেই আমারও জরুরী কাজ করার দরকার হয়ে পড়ল আর এই কঠিন অভিঙ্গতার সম্মুখীন হলাম আমি।
আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দা।সঙ্গত কারণে দিদার মার্কেট (আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে মাত্র ৩০০গজ দুরে) এসে পৌছাই ৬:০৯ মিনিটে আর এর ঠিক ২৬ মিনিট পর তথা ০৬:৩৫ মিনিটে পেটখানা এক অদ্ভুত আওয়াজ শুরু করে আর বলে তার আকুতির কথা। তার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে গিয়েই তার ডাকে সাড়া দিয়ে এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম স্যার, এখানে কোন পাবলিক টয়লেট আছে? অবাক করে দিয়ে বলল নাই!
এ শহরের এত শতশত মানুষ কোথায় সারে তাদের এই অতিপ্রয়োজনীয় কর্মখানা তা নিয়ে আমার এখন খুব বড় একটা প্রশ্ন। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করার পর এক ভদ্রলোক বলল, "এই বিল্ডিংয়ের দো-তলায় একটা টয়লেট আছে আপনি চাইলে যেতে পারেন "। ওহ এর আগে আরেকজন বলেছিল "ঠিক সোজা যাবেন, এরপর বা দিকে গিয়ে আবার একটু ডানথেকে মোড় দিয়ে সোজা দুইকদম হাটলেই একটা টয়লেট পাবেন "। প্রথমজনের কথামত হাটতে হাটতে গিয়ে দেখলাম গুটিকয়েক লোক সেখানে আনন্দেরসহিত জ্বালা যন্ত্রনা দূরীকরণ করিতেছেন। আমার মনও হঠাৎ খুশি হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তা বেশীক্ষণ স্হায়ী করতে দেয়নি সেই বহুল আকাঙ্খিত টয়লেট। ঢুকতেই চোখে পরল পা রাখার জায়গা অবধি পায়খানার বিশাল স্তুপ এক এক করে প্রতিটা ছোট ঘরেই ঠু মেরে দেখলাম যদি একটু জায়গা মিলে আমার উচ্ছিষ্ঠগুলো রাখার জন্য। তঃপর সে সুযোগ আর হয়ে উঠল না মন পেট দুইটাই বলে উঠল,"লাগবেনা স্যার, তারচেয়ে বরং আরো একটু কষ্ট করি "।অতঃপর দুইনাম্বার লোকের দেখানো পথে হাটতে গিয়েও আরেক বিপত্তিতে আমি বিশাল বড় বিল্ডিংয়ের (দিদার মার্কেট) এ পাশ থেকে ওপাশ ঘুরে বেড়াচ্ছি একটু ঠাই পাওয়ার আশায়। প্রায় বিশমিনিট হাটার পর পেলাম খুজে সেই কাঙ্খিত পরিত্যাগ ঘর কিন্তু তাও কি আর ব্যবহারযোগ্য? ঢুকতেই বমি আসে যেন। অতঃপর পেটের জ্বালা পেটে রেখেই ছাড়তে হল প্রিয় মার্কেট "দিদার মার্কেট "কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত ও অতি প্রয়োজনীয় কর্মখানা আর সাড়া হইল না এ যাত্রায়। অতঃপর টিউসান শেষ করে ০৮:৪৫ মিনিটে রুম থেকে বের হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে বাসে চড়লাম তারও দুইঘন্টা পর হলে ফিরে শান্ত করার সুযোগ পেয়েছি হাতের চেয়েও প্রিয় পেটকে।
এমন গুরুত্ববহ একটা ব্যাপারে দেখি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের যথেষ্ঠ অসহযোগিতা বা অমনোযোগীতা রয়েছে যা সাধারণ মানুষদের নিত্য ভোগান্তির কারণ। আমার এ লেখা হয়ত কোন বড় মাপের মানুষ পড়বেন না সিসিসি র কোন কর্মকর্তাতো দুরের কথা। যদি ভাগ্যক্রমে কেউ পড়েই থাকে তবে যেন এ ব্যাপারে একটা তড়িৎ ব্যাবস্হা গ্রহন করে সে আহবানেই আমার এ লেখা।
সায়েম মাহামুদ,
ছাত্র,
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫০