সময়ের সাথে সাথে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করে থাকে। তাদের দাবী নিয়ে তারা আন্দোলন ও সংগ্রাম করে। আর এই সংগ্রাম আর আন্দোলনে যোগ দেয় তাদের দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী কর্মীরা। কিন্তু ইদানিং দলীয় কর্মী হিসেবে সেই আন্দোলনের মিছিলে প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরকেও দেখা যাচ্ছে। রাজনীতির জ্ঞান কিংবা দেশের ভালো মন্দের সঠিক বিচার বুদ্ধির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো বয়স তাদের অনেকেরই নেই। তবুও এই সব শিশুদের দেখা যাচ্ছে তাদের উচ্চতা থেকেও বড় বড় সাইজের প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলের সামনে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাকর ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকারী ভাবে অনুমোদন না থাকলেও ১৮ বছরের বা তার নিচের অনেক শিশু রাজনৈতিক মিছিল মিটিং সভা সমাবেশে অংশ নিয়ে থাকে। যে বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে তারা রাজনৈতিক মিছিলে অংশগ্রহন করে নিজেদের জীবনের পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যতকেও অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। এর জন্য দায়ী আমরাই। আমাদের সচেতনতার অভাব আর উদাসীনতাই এই সব কোমল শিশুদের রাজনীতিতে নিয়ে আসার জন্য দায়ী।
ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর সৌজন্যে
জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিশুর লালন পালন ও বিকাশের জন্য পিতামাতার উভয়ের দায়িত্বকে সক্রিয় করে তুলতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র উদ্যোগী হবে। আমাদের রাষ্ট্রের রাজনেতিক দলগুলোর এ উদ্যেগ নেয়াটা হয়তো এই ভিন্ন ধারায়। অনুচ্ছেদ ২৭ এ শিশুর উন্নয়নের ব্যাপারে বলা হয়েছে প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য উন্নত জীবন মানের ব্যবস্থার প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে। অনুচ্ছেদ ২৮ এ দেয়া হয়েছে শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার। রাজনীতিবিদদের কথা ছিল জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩২ টি অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করবে। অথচ তারাই নিয়ে আসছে শিশুদের ঝূকিপূর্ণ রাজনীতি প্রাঙ্গনে। যার প্রভাব পড়ছে শিশুর কোমলমতি মনে আর এর ফলে শিশুর সামাজিকিকরণ হচ্ছে ভিন্নভাবে। সূত্র : Click This Link
শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত হয় বাংলাদেশ শিশু আইন ১৯৭৪ যা যুগোপযোগীকরণের মাধ্যমে শিশু আইন ২০১১ রূপে প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন, পর্যায়ক্রমে শিশু শ্রম নিরসন, শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার বন্ধ করা ও তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে শিক্ষা ও মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্য এবং জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ এর ৬.৭.৪. অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছ” শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না”। সূত্র http://www.mowca.gov.bd/?page_id=36
শিশুদের ভোট দেয়ার অধিকার নেই। আর থাকার কথাও না। কিন্তু একটি দেশের সরকার গঠন করতে হলে ভোট দরকার। আর তাই ভোটের রাজনীতিতে শিশুরা গুরুত্বহীন বলেই ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু মিটিং কিংবা মিছিলের সময় শিশুরা রাজনীতিতে বেশ ভালো কাজে আসে। ওদের দিয়ে বোমা-অস্ত্র বহন করানো যায়। আড় এতে কেউ সন্দেহ করেনা। হরতালে স্কুল, পরীক্ষা বন্ধ থাকলে কারো কিছু যায় আসে না। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। শিশুরা সত্যিই জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।কিন্তু যারা আইন রক্ষার দায়িত্তে আছেন তারাই যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে তাদের থেকে আমরা কি আশা করতে পারি। রাজনীতি এক মহান ব্রত নিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু এই কোমলমতি শিশুদের রাজনীতিতে অংশগ্রহনের মাধ্যমে এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী প্রমান করতে চায় ?
“"ফজরের নামাজ পড়ে চার-পাঁচ বড় ভাইয়ের সঙ্গে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে যাই। গিয়ে দেখি আরো অনেকেই আছে। একসঙ্গে সবাই মিলে মিছিল শুরু করি। পরে আল্লাহ করিম মসজিদ এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করি। এর মধ্যে পুলিশ এসে দাবড়ানি দেয় আমাদের। পাশের গলিতে ঢুকে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে পালিয়ে আবার মাদ্রাসায় চলে আসি”। নারীনীতি বাতিলের দাবিতে ফজলুল হক আমিনীর ডাকা হরতালে পিকেটিং করার ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার 'নাহুমির' (তৃতীয় শ্রেণী) ছাত্র মামুনুর রশীদ"। সূত্র Click This Link
"“শিশু সিয়ামের হাতে কাঠের ফ্রেমের প্ল্যাকার্ডের উচ্চতাও প্রায় তারই সমান। সামনে দাঁড়ানো বন্ধু রাজনকে বলল, ‘সানডে-মানডে কোলজ কইরা দিমু’। বেলা ৩টায় এ শিশুর কি আসলেই কথা ছিল খালেদা জিয়াকে মগবাজারে স্বাগত জানাতে রমনা থানা বিএনপি’র মিছিলের অগ্রভাগে অবস্থান নেওয়ার। সিয়ামের হাতের প্ল্যাকার্ডে রয়েছে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি। শহীদ জিয়াকে লাল সালাম জানানো হয়েছে সেখানে। এ লাল সালাম কী আমাদের রাজনীতির লাল লজ্জা নয়?বিএনপি’র গনমিছিলে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা ছিল আর অনেকে। এদিকে বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতেও ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের গনসমাবেশে গিয়েও দেখা মেলে ১১ বছরের রায়হান, অয়ন, ১২ বছরের শিবু, আপেলসহ অনেকের।আইনপ্রতিমন্ত্রী যখন মঞ্চে বিরোধী দলের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আর দেশের জঞ্জাল পরিস্কারের কথা বলছিলেন, তখন তার সামনেই স্লোগান দিচ্ছিল রায়হানরা। ভঙ্গ হচ্ছিল শিশুনীতি ২০১০ এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ”"। সূত্র Click This Link
পত্রিকা খুলে ধরলেই শিশুদের রাজণৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের অনেক খবর আমাদের চোখে পড়ে। যা আমাদের সমগ্র জাতির জন্য কল্যানকর নয়। যে সব শিশুরা দেশের আগামী দিনের দেশের পরিচালক তাদের বর্তমানকে আমরা ধ্বংস করে দিতে পারি না। তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠতে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা আমাদের নিজদের দায়িত্ব। তাই নিজেদের বিবেকবোধকে জাগ্রত করি, দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২৪