এজি অফিসে পেনশন তুলতে গিয়ে আবেদ আলী অবাক হয়ে গেল। তার অবাক হবার মতো অনেকগুলো কারণ ও আছে।
হঠাৎ করেই দেশের সব মানুষ ভালো হয়ে গেলে। কোন খারাপ নেই। আশ্চর্য তো।
আবেদ আলী অবসরপ্রাপ্ত এক সামান্য কর্মচারী। তাকে এজি অফিসে যেতে হয় পেনশনের টাকা তুলতে। আজ গিয়ে অবাক হলো।
ফিটফাট অফিসে। টাই পরে স্মার্ট সব লোক জন বসে আছে।
আবেদ আলী অফিসে প্রবেশ করতেই হাসিমুখে এক তরুণী তাকে সালাম দিল।
স্যার কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
আবেদ আলী লজ্জা পেল । সে স্যার নয়। সে ছিল উচ্চমান সহকারী। সারা জীবন যে বসদের স্যার স্যার করে ডেকেছে। তাকে যে কেউ স্যার ডাকতে পারে তার জানা ছিল না।
আমি আমার পেনশনের টাকা তুলতে এসেছি।
মেয়েটি একটি যন্ত্রের বোতাম টিপে একটি মুদ্রিত কাগজ বের করে তার হাতে দিল।
স্যার এই নিন আপনার কুপন। বসে অপেক্ষা করুন। আপনাকে ডাকা হবে। ডিসপ্লেতে আপনার নম্বর উঠবে।
আবেদ আলী কুপনটির দিকে তাকালো। বড় অক্ষরে সিরিয়াল নম্বর লেখা। ০৯। লেখা অপেক্ষা করুন। আপনাকে সেবা প্রদান করতে পেরে আমরা ধন্য।
কিউ মেশিনের কাজ হলো মানুষের লাইন ধরে ঠেলাঠেলি থেকে রেহাই দেয়া। লাইন ধরার দরকার নেই। কুপন নিয়ে আরাম করে বসে থাকা যায়। পরে সিরিয়াল ধরে নাম ডাকলেই সেবা পাওয়া যাবে। কি যে সুন্দর ব্যবস্থা। আগে তো এই সব ছিল না।
আবেদ আলীর মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে। এটা কি সেগুন বাগিচার এজি অফিস! আশ্চর্য তো।
হঠাৎ মাইকে এক তরুণীর কণ্ঠে সিরিয়াল নম্বর ৯ আপনি কাউন্টার ২ এ যান ঘোষণা করল। আবেদ আলী দেৌড়ে চলে গেল। সেই কাউন্টারের কর্মচারীটি হাসিমুখে তাকে সালাম দিল। বলল- এই নিন আপনার ডিসেম্বর মাসের পেনশনের চেক!
আশ্চর্য বিষয় হলো সে একটি টাকাও ঘুষ চাইলো না। চেক দেবার পর বললো- স্যার দয়া করে চেকটি যাচাই করে নিন। কোন ভুল থাকলে জানান। আপনি চাইলে এখন থেকে আপনার পেনশনের টাকা সরাসরি আপনার ব্যাংকের হিসাবে চলে যাবে। আপনি সহায়তা টেবিলে কথা বলুন।
অফিস থেকে আবেদ আলী বের হলো কাঁদতে কাঁদতে। ৩৩ বছর কেরানী গিরি করেছেন। প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব বিবরণী পাবার জন্যও তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে। পেনশনের চেক পাবার পর কর্মচারীটি বলতো- এইবার আমার পাওনাটি দেন তাড়াতাড়ি। নামাজ পড়তে যেতে হবে।
আবেদ আলীর মনটি খুশীতে ভরে উঠলো। তার কাছে মনে হলো- হঠাৎ করেই তার বয়স অনেক কমে গেছে। দ্রুত বেগে সে প্রেসক্লাবের সামনের বাস স্টপেজে এসে দাড়ালো। সেখানে দাড়িয়ে সে একটি কিউ কুপন নিল। বাস আসবে ১২ঃ৫০ মিনিটে। এখনো ১০ মিনিট বাকি আছে। সে দাড়িয়ে ঢাকার আকাশ দেখতে লাগলো।
আকাশে কোন মেঘ নেই। নীল আকাশে নানা জাতের পাখি উড়ে যাচ্ছে। পেৌষ মাসে দুপুর। চারি দিক ঝলমল করছে। সোনালী রোদ অথচ একটু গরম লাগছে না। আবেদ আলীর মনটা খুশীতে আবারো ভরে উঠলো।
পাদটীকাঃ
অসাধারণ স্বপ্নের মতো সুন্দর একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। কোন এক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবো- বদলে গেছে বাংলাদেশ। বদলে গেছি আমরা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩২