দেশের স্কুলের ব্যবস্থাপনা দেখে আবেদ আলী বড়ই মুগ্ধ।
ঘোষণা করা হয়েছেযে কোন স্কুলই সেরা নয়। সব স্কুলই সমান ভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে। সরকারের এই ব্যাপারটি তার কাছে খুবই ভালো লাগছে। সব স্কুল একই রকম ভালো বলে কোন প্রকার টেনশন করতে হচ্ছে না। সরকার আরো বলে দিয়েছে- এলাকার বাসিন্দাদের সন্তান এলাকার স্কুলেই পড়বে। মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অন্য এলাকার স্কুলে গিয়ে পড়তে হবে না। কোন স্কুলেই সুযোগ সুবিধার কমতি নেই।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেন মহামানব। তারা ক্লাসেই সব পড়াশোনা শিখিয়ে দিচ্ছেন। পড়াশোনার মান বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে পড়ছে। শিক্ষকরা তাদের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করছেন। কেউ পড়া না পারলে তাকে বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছে।
তার ছোট ছেলেটি এলাকার একটি স্কুলে পড়ে। সন্ধ্যার পর সে টিভিতে একটি প্রোগ্রাম দেখতে চাইলে সে অনেকটা কড়া ভাষায় বললো- যা পড়াশোনা কর। বাসায় পড়াশোনা নাই।
- না বাবা, টিচার স্কুলেই সব বুঝিয়ে দেয়। আমার কোন অসুবিধা হয় না। আমি খুব ভালো পড়াশোনা করি।
- কোচিং করবি না এবার?
- কোন কোচিং সেন্টার নেই তো বাবা।
- তাহলে পাস করবি কি করে?
- আমাদের সব শিক্ষকই খুব ভালো । তারা ক্লাসেই সব পড়া বুঝিয়ে দেন। বাসায় সামান্য পড়লেই চলে।
- কোচিং সেন্টার না থাকলে শিক্ষকরা বাঁচবে কি করে?
- শিক্ষকরা তো বেতন পান , বাবা। স্কুলে তারা কো ফাউ পড়ান না। যে টাকা তারা পান দেশের অনেক অভিভাবক সেই পরিমাণ আয় করতে পারেন না। তারা অনায়াসেই চলতে পারেন।
আবেদ আলী বিছানায় ঘুমাতে গেলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন। দেশটার হলো কি। সবাই ভালো হয়ে গেল। আগে তো অনেক অনেক নামকরা স্কুল ছিল। এখন আর কোন নাম করা স্কুল নেই। সব স্কুলেই একই মানের পড়াশোনা হয়। নাম করা স্কুলে ভর্তির নামে ডোনেশনের নামে ঘুষ দেয়া উঠে গেছে সেই কবে!
শিক্ষকরা এতো সুন্দর ব্যবহার করেন । তার কেবলই ইচ্ছে হয় আবার শিশু হয়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে যেতে। তার বাল্যকালে স্কুলের একটা বিরাট অংশ গেছে কানে ধরে দাড়িযে থেকে আর শিক্ষকের বেতের আঘাত হজম করে। তিনি পড়া বুঝতেন না। তার বুদ্ধি কম ছিল। এই কারণে শিক্ষকরা গরুর মতো পেটাতেন। কিন্তু তাদের শিক্ষকরা যে শেখাতে ব্যর্থ এটা তারা স্বীকার করতেন না। এখনকার শিক্ষকরা উল্টা লজ্জা পান। ছাত্ররা পড়া বুঝতে না পারলে সেটা শিক্ষকদের ব্যর্থতা মনে করেন।
শিক্ষা ব্যবস্থা এতো ভালো হলো কি করে। কাল একবার স্থানীয় স্কুলে গিয়ে একবার দেখে আসতে হবে। তার ছেলে পড়ে। কয়েক জন মাস্টার তাকে চেনেন। এক বার কথা বলে আসা দরকার। নিয়মিত শিক্ষকদের সাথে কথা বলা অভিভাবকের দায়িত্ব।
সকালে কাজে যাবার পথে স্কুলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৭