somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়লা ডাস্টবিনে ফেলিবেন না?

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যখন ঢাকায় থাকতাম তখন প্রতি দিন খুব সকালে কাজে যেতাম। তখন পথের দুই পাশে অসাধারণ সব দৃশ্য দেখতে পেতাম। তেমনই একটি দৃশ্য হচ্ছে- সকাল বেলায় দোকানীদের ঝাড়ু দেয়ার দৃশ্য।

ঘর ঝাঁড়ু দেয়া খুব ভালো কাজ। এতে করে বাড়িঘরের ময়লা দূর হয়। কিন্তু আমি এক দোকানীকে প্রায়ই পেতাম- তিনি ঘর ঝাড়ু দিয়ে দিয়ে ময়লাগুলো রাস্তায় ফেলছেন। আমি যে এক জন মানুষ নামের দুপেয়ে প্রাণী এটা তিনি গ্রাহ্যই করলেন না। আমার গায়ের উপরই ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ফেলতে লাগলেন। আমি দ্রুত পায়ে সরে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলাম। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
জাতি হিসাবে আমরা মনে হয় আমরা খুব বেশী পরিস্কার নই। এর মানে এই যে, আমরা ময়লা যথাস্থানে ফেলতে অভ্যস্থ নই। আমাদের আশেপাশে তাই ময়লা ফেলার জন্য কোন ডাস্টবিনও নেই। আর ডাস্টবিন থাকলেও তাতে কেউ ময়লা ফেলবে না। আর ডাস্টবিনটিও খুব বেশী দিন অক্ষত থাকবে না। কোন এক সদয়বান চোর সে সেটাকে নিয়ে যাবে। আমরা খুবই সভ্য জাতি।

বাংলাদেশের পথে ঘাটে প্রচুর ময়লা ফেলা হয়। রাস্তার ধুলোবালি সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুতে ফেলা ভালো কাজ হতে পারত। কিন্তু এটা কেউ করবে না। বরং ঘরবাড়ির যত ময়লা রাস্তায় এনে ফেলবে। অন্ততঃ আমি যত দিন ঢাকায় ছিলাম এটাই প্রত্যক্ষ করেছি। সড়কের মাঝ খানের বিভাজক ( যাকে ডিভাইডার বলে) এর উপরে আশেপাশের বাসার সবাই ময়লা আবর্জনা এনে জড়ো করছে। সেই ময়লা থেকে প্রচন্ড বমির উদ্রেককারী সব গন্ধ এসে পড়ছে। মাছি ভন ভন করছে।

রাস্তার ময়লার দুইটি প্রতিক্রিয়া আছে। একটি শুকনোর সময়। আরেকটি ভেজার সময় মানে বৃষ্টি হলে। শুকনোর সময় ধুলোবালি উড়ে চোখ মুখ কানা করে ফেলে। এই সময় অনেক দোকানী নিজেকে বাঁচানোর জন্য পানি ছিটায়। সে ভুলে যায় এই ময়লার কিছু অংশ সেও রাস্তায় ফেলেছে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। পুরো রাস্তা কাদাময় হয়ে যাবে।

কুয়ালালামপুরের রাস্তায় রাস্তায় প্রতিদিন ভোরে দেখা যায় লাল গেঞ্জি পরিহিত ( যাদের বেশীর ভাগই বাংলাদেশী) কর্মীরা রাস্তা পরিস্কার করছেন। রাস্তা থেকে ধুলো সংগ্রহ করে পলিথিন ব্যাগে ভরে রাখছেন। ধুলোর এই ব্যাগগুলো পরে বড় ট্রাক এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এই ভাবে শহরের রাস্তাঘাচ পরিচ্ছন্ন থাকছে। আলম ফ্লোরা নামের এই পরিছন্নতা কোম্পানীর প্রায় সব কর্মীই আমি দেখেছি বাংলাদেশের। তাদের নিজ দেশের রাস্তা কেউ পরিস্কার রাখে না। রাস্তার ধুলো কেউ সংগ্রহ করে অপসারণ করে না। আফসোস!

আমার এক বন্ধু যে কিনা আমেরিকায় থাকে ( এবং এই ব্লগে কবিতা ও লিখে) । একবার দেশে এসে কোথাও গেছে। সেখানে কোন চাপানি খাবার পর তার কাছে কিছু ময়লা জমে। সে ময়লাগুলো ফেলার জন্য ডাস্টবিন খুঁজে। তার আচরণে সবাই বিস্মিত হয়। আশ্চর্য। ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন খুঁজতে হবে কেন? কয় দিন বিদেশে থেকে ফুটানি দেখ! ময়লা পথে ফেললেই তো হলো। কয় দিনের বৈরাগী। ভাতেরে কয় অন্ন! অথচ আমাদের অনেক মানুষই বিদেশে ময়লা ফেলার কোন ডাস্ট বিন সময় মতো খুজেঁ না পেলে প্যান্টের পকেটে ময়লা নিয়ে ঘুরেন এমন উদাহরণও আছে। পরে বাসায় এসে তারা ময়লা ডাস্ট বিনে ফেলেন।

আমি যেই উপজেলার নাগরিক সেখানে একটি পৌরসভা আছে। এর নাম দোহার পৌরসভা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। অথচ মজার ব্যাপার হলো- এই পৌর শহরে নেই কোন ময়লা ফেলার ডাস্টবিন। সবাই পথে ঘাটে ময়লা ফেলছে। হিসু করছে।
হিসু করার জন্য সব চেয়ে নিরাপদ আর উত্তম জায়গা সম্ভবত ঢাকা মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম। আমি যখন ঢাকায় থাকতাম তখন দেখতাম অসংখ্য পথচারী সেখানে প্রাকৃতিক সেচ কার্য পরিচালনা করছেন। জায়গাটি প্রচন্ড দুর্গন্ধ হওয়ার কারণে পথ চলতে খুবই কষ্ট হতো।

তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি যেটা বলতে চাই সেটা হলো-
১। নিজের ঘর পরিস্কার করে সেই ময়লা রাস্তায় না ফেলে বাসায় বা দোকানেই ছোট ডাস্টবিনে রাখতে হবে।
২। রাস্তার ময়লা ও ধুলো পরিস্কার করে রাস্তা ঝকঝকে রাখতে হবে। রাস্তায় ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে।
৩। পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবলিক টয়োলেট স্থাপন করতে হবে।

এই গ্রাম আমাদের। এই শহর আমাদের । এই দেশে আমাদের। এটাকে পরিস্কার রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এতে অবহেলা করা বা লজ্জা পাবার কিছু নেই। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানেরই অংশ। আমাদের ইমানের জোর বাড়ানো খুবই জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×