সম্ভবত ব্রিটিশ আমল থেকেই "স্যার" শব্দটির প্রতি এ দেশের কতিপয় মানুষের কিঞ্চিৎ দুর্বলতা ছিল এবং এখনো উহা রয়েছে। বরং ক্ষেত্র বিশেষে আগের চেয়ে বেড়েছে।
বড় বড় পদে যারা আসীন থাকেন তারা স্যার শব্দটি শুনতে বেশ আরাম বোধ করেন। তাই বোধ হয়, ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন দেশের গুণীজনকে স্যার উপাধি দিয়ে খুশী করে থাকেন।
বাংলাদেশে এক মাত্র এক জনই স্যার উপাধি পেয়েছিলেন । তিনি হচ্ছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
স্যার এর বাংলা প্রতিশব্দ সম্ভবত জনাব হবে। কিন্তু কিছু আবেদনপত্র ছাড়া বাংলাদেশে বাস্তব ক্ষেত্রে জনাব শব্দটি খুব একটা ব্যবহার করা হয় না বলেই প্রতীয়মান হয়। কাগজে-কলমে যদিও জনাব লেখার প্রচলন রয়েছে কিন্তু মুখে মুখে কেউ সচরাচর জনাব বলে কাউকে সম্বোধন করেন না।
কিন্তু গুলিস্তান-ফার্মগেটের ক্যানভাসারদের মুখে 'তবে জনাব--" ইত্যাদি অনেক বার শুনেছি। তারা খুবই আগ্রহ নিয়ে জনাব বলেন।
স্যার বলে জনাব বললে অসুবিধা কি খুব বেশী? সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের কয়েক জন কর্মকর্তাকে 'স্যার' না বলে আপা বা দিদি বলাতে বেশ কয়েক জন লোক নিগৃহীত হয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আচ্ছা, স্যার না বলে জনাব বললে অসুবিধাটা কোথায়?
মনে হয় যারা বেশী বেশী স্যার শুনতে চান তারা স্যার মানে জনাব মনে করেন না। হয় তো প্রভু বা জমিদার জাতীয় কিছু একটা মনে করে থাকেন।
তবে হ্যাঁ, স্যার এর মানে যদি জনাব হয় তাহলে কোথায় ভিক্ষুককে ও আমরা স্যার বলতে পারি। এটা কোন সমস্যা নয়। কিন্তু স্যার মানে যদি প্রভু, জমিদার বা এই জাতীয় কিছু হয় তাহলে কোন হোমরা-চোমরাকেও স্যার বলা সঠিক হবে না। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অহমিকা বৃদ্ধি পাবে।
আমরা শিক্ষকদেরকে স্যার বলে ডেকে থাকি । শিক্ষকদের কি স্যার ডাকা উচিত । তাদেরকে তো গুরুজী, ওস্তাদ জী জাতীয় শব্দ দিয়ে ডাকা যেতে পারতো।
আমি নিজে অপরিচিত কোন ব্যক্তিকে সচরাচর স্যার সম্বোধন করে থাকি। মালয়েশিয়াতে যারা Grab Taxi চালান তাঁরা সাধারণত প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সদস্য হয়ে থাকেন। অনেকেই অবসর সময়টা নষ্ট না করে গ্রাব চালিয়ে থাকবে। যারা গ্রাব ব্যাবহার করেন তারা দেখবেন গ্রাব বুক করলে অনেক সময় মার্সিডিস কিংবা বিএমডব্লিউ গাড়ি চলে আসে। এই সব গাড়িচালকদের কে স্যার সম্বোধন করাটা খারাপ না। আমি এই জাতীয় লোকজন, গ্রাব চালক, সুপার স্টোরের সেলসম্যান , পুলিশ এমনকি ভবনের নিরাপত্তা বিভাগের লোকজনদের কে ও স্যার সম্বোধন করে থাকি।
স্যার এর আরেকটি বাংলা শব্দ হতে পারে মহাশয়। একে আরো সহজ করে বলা যায় মশাই। তবে এই শব্দগুলো সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের কোন মানুষ গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। এই শব্দ দুটিকে অনেকেই হিন্দুয়ানী শব্দ বলবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ সকাল ৭:৩১