বাজারে জিনিসপত্র কেনার সময় দামাদামি করা বিরাট ঝামেলার কাজ। এই কাজে আমি ঠকতে বড়ই পটু। বিগত দুই বছর যাবৎ ঢাকা শহরে আছি। কখনো আনন্দ নিয়ে বলতে পারবো না যে, আজকে এই জিনিসটা কিনে জিতেছি। নাই বা জিতলাম, সঠিক দামে কিনতে পেরেছি এই আত্নতৃপ্তিটুকু পাবার মতো কোন ব্যাপারও আজতক ঘটেনি।
সে যাই হোক। বাজারে গিয়ে মুরগী দরদাম করার কঠিন পার্ট দিয়েছি। একটা মুরগীর দোকান খুঁজে বের করেছি । লোকটাকে আমার ভালো লেগেছে। হয়তো সেও ঠকায়। তবে তার অমায়িক আচরণের কারণে আমি ধরেই নিয়েছি – সে আমাকে অন্ততঃ খুব বেশী ঠকাবে না।
মোঃপুর থানার পাশ দিয়ে নজরুল ইসলাম রোড ধরে হেঁটে গেলে আসাদ এভিনিউতে যুক্ত হবার সামান্য আগে ডানপাশে দোকানটি। দোকানের কোন নাম নেই। দোকানীর নাম মোঃ গোলাপ মিয়া। তাঁর দোকানে মুরগী কাটাকাটি করার জন্য এক জন হেলপার থাকে। তবে বেশী দিন থাকে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে দেখি নতুন হেল্পার। হেল্পারদের বয়স হয় আনুমানিক ৭/৮ বছরের খুব বেশী বলে মনে হয়নি। তবে তারা দুর্দান্ত চালু। খুব দ্রুত মুরগী কেটে ধুয়ে প্যাকেট করে দেয়। দিন শেষে বেতন মাত্র ১০০ টাকা। সাথে সকালে নাস্তার রুটি ভাজি ও দুপুরে ডালভাত ।
সে যাই হোক। কয়েক দিন আগে বাসায় মুরগী নেই। ছুটলাম মোঃ গোলাপ মিয়ার দোকানে। যথারীতি ২খানা মুরগীর ওজন দিয়ে বাকি কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাকিয়ে দেখি দোকানে যেখানে গোলাপ মিয়া বসেন সেখানে এক ভদ্রলোক বসে আনমনে বিড়ি ফুঁকছেন। আমাকে সামনে পেয়ে সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করলেন। উনার হাতে গাড়ীর চাবি দেখে বুঝলাম সুখেই আছেন। ঢাকার বুকে যিনি গাড়ী হাকাতে পারেন তিনি তো দিন এনে দিন খাওয়া পাবলিক নন।
সেই যা হোক । দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে উনি আলোচনার সূত্রপাত করলেন। উনি যেই উচ্চমার্গের আলোচনা করছিলেন তাতে আমার চুপ করে থাকা ছাড়া অংশ করার তেমন সুযোগ পেলাম না। তারপরও উনার কোন এক বক্তব্যের রেশ ধরে আমি বললামঃ দেশের জনসংখ্যা মনে হয় একটু বেশী হয়ে গেছে।
উনি আমার মন্তব্যের গলা চেপে ধরলেন। বললেন- আরে না আপনি জানেন না। জনসংখ্যা এখন দেশে সম্পদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিদেশ থেকে দেশে কি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে আপনার ধারণাই নাই।
আসলেই রেমিট্যান্স নিয়ে আমার কোন ধারণা নাই। তবে আমার যে ধারণা আছে সেই ধারণা উনার মতো আরো কয়েক কোটি বাংলাদেশীর নাই।
উনি হয়তো জানেন না যে বিদেশ মানেই টাকার খনি না। ঘরবাড়ি সহায় সম্বল বিক্রি করে যারা মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য আর ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে ইতালি যায় তারাই জানে রেমিট্যান্স কি জিনিস। প্রবাসে আধাপেটা , পোয়া পেটা খেয়ে না খেয়ে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জানের উপর খেটে মাসের বেতনের টাকা জমিয়ে ধার দেনা করে দেশে টাকা পাঠায় তারা জানে রেমিট্যান্স কি জিনিস।
ভাইরে, আপনারা রেমিট্যান্স দেখেন মানুষের কাঁন্না দেখেন না? ব্যাংকের হিসাব খাতা দেখেন মানুষের আর্তনাদ দেখেন না!