কিছু বই কেনার দরকার ছিল। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে বাইরে বের হতে সাহস হয়না বলে এক মাস ধরে কিনি কিনি করেও বইগুলো কেনা হচ্ছিল না। শুক্রবার-শনিবার নানা কাজ থাকায় আয়োজন করে বই কিনতে যাওয়া হয়ে উঠে না। বেশীর ভাগ সময় শুক্র-শনিবার বাসার নানান টুকটাক কাজ, বাজার সদাই করা, কোচিং যাওয়া ইত্যকার নানান ঝামেলা করতে করতে বই কেনা আর হয়ে উঠে না।
অবশেষে শনিবার (২৫ শে নভেম্বর ২০২৩) ঠিকই সময় ম্যানেজ করে ফেললাম। ঠিক করলাম বাসা থেকে সিটি কলেজ কিংবা সায়েন্স ল্যাবের সামনে নামবো। সেখান থেকে এলিফ্যান্ট রোডের কিছু দোকান থেকে শুরু করে নীলক্ষেত গিয়ে নিউমার্কেট হয়ে বাসায় ফিরবো।
২টি রিক্সার চালককে জিজ্ঞেস করলাম তারা যাবে কিনা। তারা যাবে না। তারা না যাওয়াতে আমি বরং খুশী। রিক্সাকে আমার কাছে খুবই অমানবিক পরিবহন মনে হয়। রিক্সায় আমার সব চেয়ে বড় সমস্যা আমি হাল্কা মানব (ওজন মাত্র ৪৭ কিলো) হওয়াতে রিক্সার ঝাকুনীতে ছিটতে পরে যাই। তবে আজকাল আবার ব্যাটারী চালিত রিক্সা বের হয়েছে যা আরো মারাত্বক। তাতে না আছে ব্রেক, না আছে স্পিড কমানোর ব্যবস্থা।
সিএনজি নামক যে গাড়ীখানা আছে তা আরো অস্বাস্থ্যকর। প্রচুর ধূলাময় ভেতরটা। জ্যামে পড়লে সামনের সব গাড়ীর ধোঁয়া এসে ভরভর করে সিনএনজি পূর্ণ করে ফেলে। মনে হয় হাবিয়া দোজখে এসে পড়েছি। তারপরও ঢাকা শহরে সিএনজি আছে বলেই না এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারছি। কেননা, ঢাকা শহরে সপরিবারে চলাচল করার মতো কোন ভালো নেই। উবার নামক যা সার্ভিস যা আছে তা কেবলই বিরক্তির উদ্রেক করে। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত চলে এলাম।
দেড় দশকেরও বেশী সময় পরে এই এলাকার মার্কেটে এলাম। দোকানীদের ডাকাডাকি, হাক ডাক সবই আছে আগের মতো। কেবল জিনিসপত্রে দাম গেছে অনেক বেড়ে। এক জুতার দোকানে কন্যার জন্য কেডস কিনলাম। দোকানী বলল- আপনার একটা স্ক্র্যাচকার্ড আছে। তুলে নিন। তুলে নেয়ার পর দেখা গেল এক জোড়া চটি ফ্রি । খারাপ কি।
এর পর নানান দোকান দেখতে দেখতে আসল জায়গায় গেলাম। কিনবো বই। আগেই জেনে নিয়েছি কিভাবে কিনতে হয়। ঢাকা শহরের সব জায়গার মতো এখানেও প্রচুর দামাদামি করতে হয়। প্রথম দোকানে এক চাচা বসা ছিলেন। তাকে বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন- তিনি বেশী দামাদামি করবেন না। এক দাম ১০টা বই ৩০০ টাকা। নিলে আমার কাছে আসবেন। আমি মনে মনে ঠিক করলাম- কোথাও না পারলে এই চাচার কাছ থেকেই কিনবো।
পরের দোকানে গিয়ে দেখি দুই স্মার্ট বয় । আমাকে পেয়ে যেন তারা আবাল মক্কেল হাতে পেল। দুমদাম বই রেডি করে ফেলল। এবার দামের কথায় আসতেই বলেন- প্রতি পিস ২০০ টাকা করে বিক্রি করি। আপনি আমাদের কাছে স্পেশাল কাস্টমার। তাই আপনাকে প্রতি বইয়ে ২৫ টাকা ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। ১০ টা বইয়ের দাম হবে ১৭৫০ টাকা। সাথের বাকি ২টা বইয়ের দাম ১০০০ । আপনার জন্য মোট ২৭৫০ টাকা মাত্র।
আমি বললাম- আপনি যদি রাগ না করেন তাহলে আমি কি একটা দাম বলবো?
জ্বি, বলেন।
পরের ২ টা বই বাদ দিন। আমি ১০ টা বই নিব। আমি ২৫০ টাকা দিব। বাকিটা আপনার বিবেচনা।
দোকানী অবাক কিংবা হতবাক । মক্কেলকে সম্ভবত ঘায়েল করতে পারেনি বলে মন খারাপ। তাই জোরে জোরে বলতে লাগল- আপনে বই কিনতে পারবেন না। আপনার জন্য বিদেশ না। আপনি মায়ানমার যাবার বই কিনেন!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩