যে গ্রামে আমার জন্ম সে গ্রামের নাম বটিয়া। বটিয়া নামটির অর্থ আমি জানি না। তবে আমার ধারণা, সারা পৃথিবীতে বটিয়ার মতো সুন্দর জায়গা আর দ্বিতীয়টি নেই। অনেক খুঁজে খুঁজে দেখেছি। কিন্তু পাইনি।
ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত এ গ্রামটি। দোহার থানার সামনের চৌরাস্তার মোড় থেকে ৫ টাকা (২০০৭ সালে আমি যখন চলে আসি তখন ৫ টাকাই ভাড়া ছিল। এখন কত হয়েছে আমি জানি না।) রিক্সা ভাড়া দিলেই এ গ্রামে নিয়ে যাবে। এখন তো আর আগের মতো রিক্সা নেই। অটোরিক্সা আর ইজি বাইকই এখন নাকি সবার ভরসা।
বটিয়া গ্রামটিতে ঘরবাড়ি ছাড়া বলতে গেলে তেমন কিছুই নাই। খালি মানুষ আর মানুষ। সরকারী একটি প্রতিষ্ঠান আছে তার নাম বটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। আমার ভাবতে ভাল লাগে যে, আমি আমার গ্রামের স্কুলে আমার প্রথম পাঠ নিয়েছিলাম। আমি আমার মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করি জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। এসএসসি পাস করার পর যত আড্ডা দিয়েছি তার বেশীর ভাগই এই স্কুলের মাঠে বসে। সেটাও আমার এক অতি প্রিয় স্থান।
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এখন আর আগের মতো গ্রামে থাকা হয়না। যাওয়া হয় না খুব একটা । তবে এখনও আমি প্রচন্ড মিস করি আমার গ্রামকে। আমার কৈশরের প্রথম পাঠ লাভ করি যেখানে সেই বিদ্যালয়কে। নিজের অজান্তেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়।
ইস্ আবার যদি আমি সেই বাল্যকালে ফিরে যেতে পারতাম! সেই বর্ষাকাল । বর্ষার বাদল দিনে কত কষ্ট করে নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলায় চেপে খাল পার হয়ে স্কুলে যাওয়া। কাঁচা রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে পিছলে পড়ে যাবার যোগাড়। পরনের লুঙ্গি পেচিয়ে হাতে বই চেপে ধরে কত কষ্টেই না স্কুলে যেতাম। উদ্দেশ্য একটাই ১০০% উপস্থিতির পুরস্কারটা পাওয়া। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিবৃতে ভিজে নবম শ্রেণীতে ১০০ % উপস্থিতি ছিল আমার ক্লাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর কোন কাজে লাগেনি। এটা বড়ই দুঃ খের কথা
দুর্ভাগ্য সে বছর বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী উৎসবে সেরা উপস্থিতির পুরস্কার নামে কোন পুরস্কারই রাখা হয়নি।
আমি এখন মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, পুরস্কার অবশ্যই থাকা উচিত। সেটা সামান্য একটা কলম হতে পারে। সুন্দর একটা বই হতে পারে সেরা পুরস্কার। এই বোধ আমাদের জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন।
পুরস্কার না পেয়ে কি যে খারাপ লেগেছিল সেদিন!
আফসোস!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৮