আমার জীবনের এই সত্যকাহিনীটি আমি লেখা শুরু করেছিলাম কয়েকবছর আগে।কিন্তু অনিয়মিত আর ব্যাস্ততার কারনে আর শেষ করা হয়ে উঠেনি।এবার ঠিক করেছি শেষ করবোই। আপনাদের দোয়াপ্রার্থী।
প্রথম পর্বটি পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব - ১)
পরদিন বাবার কাছে হ্যাংলা-পাতলা করে একলোক আসলো।উনি এসে বাবার সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলা শুরু করল। বাবার জায়গা জমির কি অবস্থা, বাসায় কে কে আছে। কতো টাকা দেয়া যাবে সব ব্যাপারে আলোচনা করছিলো।বাবা সোজাসুজি বলে দিয়েছিল যে, তার কাছে এইসব ব্যাপার হ্যান্ডল করার মতো কেউ নাই।বাবা কে যদি ছেড়ে দেয়া হয় বাবা মুক্ত হয়ে উনাদের মুক্তিপন শোধ করে দিবেন।বাবা চেয়েছিল উনি আগে কোনোভাবে মুক্ত হতে পারলে বাকিটা উনি ম্যানেজ করবেন।কিন্তু তারা রাজি হলনা এবং ফোন নং নিয়ে চলে গেল।
এদিকে আমাদের বাসায় তখন সমস্ত আত্মীয়-স্বজন আসা শুরু করে দিয়েছে। সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাই, আর তাই আমাদেরও একই কথা বারবার বলতে হচ্ছে।আমরা সবাই অপেক্ষা করছি শুধু একটি ফোনের জন্য।যেহেতু কোনও একটা লোকের সাথে গেছে তাই এক্সিডেন্ট বা অন্য কিছু সন্দেহে কম আসছে।যদিও বিভিন্ন হাসপাতাল আর এরকম অন্যান্য জায়গায় খোঁজ নেয়া চলছে।
অবশেষে এল আমাদের সেই কাঙ্খিত ফোন।একজন লোক ফোন করে আমার বড় আপার সাথে কথা বলতে চাইলেন।যদিও আমি বড় ছেলে কিন্তু বয়সে ছোট ছিলাম।বড় আপার সাথে লোকটি খুব সুন্দর করে কথা বললেন এবং বললেন যে,বাবা উনাদের সাথে আছেন আর উনারা বাবাকে নিয়ে ঢাকা চলে গেছেন। বাবার সাথে উনার কিছু ব্যাবসায়িক লেনদেন ছিল।উনারা কিছু টাকা পায় বাবার কাছে, ওগুলো দিয়ে দিলেই বাবাকে তারা ছেড়ে দিবে।এবং এও বলে দিলেন যে পুলিশের কাছে গেলে তারা বাবাকে মেরে ফেলবে।টাকার অংকটা তারা আবার ফোন করে জানাবে।
মোটামুটি বড় মামা সহ মুরুব্বী টাইপের কিছু মানুষের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হল।তারা অনেক মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে আপাতত পুলিশের কাছে যাওয়া যাবে না।আমরা নিজেরাই চেষ্টা করে দেখি আর সব চেয়ে ভালো হয় মুক্তিপনের টাকা কমিয়ে এনে কিছু করা যায় নাকি।
দেখতে দেখতে ঐ দিনটাও চলে গেল। আর আমরা অপেক্ষা করছি আবার ফোনের জন্য।
পরদিন সকালে আমাদের পরিচিত ও বাবার একবন্ধু খবর পেয়ে আমাদের বাসায় আসলেন।এবং খুব গুরত্তপূর্ণ একটা খবর দিলেন।উনি বললেন যে ওইদিন বাবার সাথে তার দেখা হয়েছে।বাবা ট্যাক্সি নিয়ে একলোকের সাথে যাচ্ছিলেন।পথিমধ্যে উনার সাথে দেখা হওয়াতে ট্যাক্সি থামিয়ে কথা বলেছিল। সব চেয়ে দরকারি কথা হল ঐ ট্যাক্সিওয়ালা ছিল আমাদের পরিচিত।আমরা দলবলে ট্যাক্সিওয়ালার খোঁজ লাগালাম এবং পেয়েও গেলাম।
সন্ধ্যা নাগাদ আবার তাদের ফোন এল এবং তারা বলল যে, মুক্তিপন বাবদ ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আমরা বড় আপুকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম যাতে বলে বাবার কোনও সমস্যা যেন না হয় আর উনাকে যাতে নিয়মিত ওষুধ দেয়া হয়।যেহেতু উনি হার্টের রোগী ছিলেন তাই এ ব্যাপারে আমরা সজাগ ছিলাম।আর আমাদের পক্ষে এতো টাকা দেয়া সম্ভব না,তাই যাতে আরও কিছু টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়।
ওদিকে তৃতীয় দিন থেকে বাবাকে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়া হয় আর পর্যাপ্ত ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রি ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে লাগলো।বাবা তাদের সাথে বিভিন্ন ভাবে নেগসিয়েট করতে চেষ্টা করছিলো কিন্তু তাদের পক্ষ হতে কোনও প্রতিউত্তর পাচ্ছিলো না।বাবাকে নিয়ে তাদের সাথে আমাদের কি কথা হচ্ছিল তাও বাবা জানতে পারছিলেন না।এগুলো ছাড়া বাবার করার আর কিছুই ছিলোনা শুধু অপেক্ষা ছাড়া।
এদিকে সেই ট্যাক্সিওয়ালা কে বাসাই নিয়ে আসা হল।ট্যাক্সিওয়ালার যথেষ্ট সাহায্যের মনোভাব ছিল।উনি বললেন বাবাদের কথোপকথন তিনি কিছু শুনেননি তবে তারা যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে যাননি। যাত্রাপথের মধ্যেখানে তারা নাজিরপাড়া নামক স্থানে যেতে বললেন এবং ট্যাক্সি কে ১৫ মিনিটের জন্য দাড় করিয়ে ভিতরে গেলেন।এর প্রায় ৪০ মিনিট পর একলোক এসে ট্যাক্সিওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বলে দিলেন যে তারা আর যাবে না। ট্যাক্সিওয়ালাও টাকা নিয়ে চলে গেলেন।
এবার আমরা ট্যাক্সিওয়ালাকে নিয়ে গেলাম সেই জায়গায়।আমাদের কে দেখেই সেই জায়গার অনেকে একটু ইতস্তত করছিলো।ট্যাক্সিওয়ালাকে যে জায়গা হতে বিদায় করা হয়েছিল সেই জায়গা থেকে আমরা শুরু করলাম।আশেপাশে সমস্ত জায়গায় খুঁজা হল।কিন্তু কারো কাছ থেকে বিন্দুমাত্র সাহায্য বা ইনফরমেশন পেলাম না।উল্টা আমরা কিছুটা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছিলাম।ফলে আমরা চলে এলাম।
আমরা বাসায় এসে সিধান্ত নিতে পারছিলাম না যে কি করব। আমরা একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে বাবাকে তারা ঢাকা বা অন্য কোথাও নেয়নি।উনি ঐ জায়গার আশেপাশেই কোথাও আছেন।তবে পুলিস ছাড়া আমাদের দ্বারা উনাকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।তাছাড়া পুলিশের ব্যাপারটা অপহরণকারীরা জানতে পারলে অন্য দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।আর পুলিশকেও পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না।................. ( চলবে )।
অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১