২০১১ সালে হোসনে মোবারকের পতনের পর থেকে মিশর দিন দিন অধ:পতনের দিকেই যাচ্ছে। মাত্র একজন পুলিশ হত্যার দায়ে গত সোমবার ৫২৯ জন ইসলামপন্থিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে এটা দেখিয়ে দেয়া হয়েছে যে মিশরের বিচারব্যবস্থা কোন স্তরে নেমে এসেছে।''
একজন পাগলেও একে সুস্থ কাণ্ড ভাবতে পারবেনা !! আমরাও এ থেকে শিক্ষা নিতে পারি যে, আমাদের বিচারকরাও তো মানুষ এবং তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক নিয়োগ হয়ে থাকে।
)
আপিলের মাধ্যমে এ রায়টা হয়তো পাল্টানো যেতে পারে। তবে এটা এই ভয়ানক অবস্থাকেই তুলে ধরছে-যেখানে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন মুসলিম ব্রাদারহুড ও মুরসির রাজনৈতিক মিত্র অন্যান্য ইসলামপন্থিদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ রকম পদক্ষেপ নেয়ার ফলে ঐ গোষ্ঠির সদস্যরা আরও চরমপন্থা গ্রহন করতে বাধ্য হবে। এর ফলে আরব বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
এটা যে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় এটা বোঝা খুব কঠিন নয়। সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বকে যারাই প্রশ্ন করার চেষ্টা করবে বা মুরসি ও ব্রাদারহুডের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করবে তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্যই এটা করা হয়েছে।
গত গ্রীষ্মে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মুরসি ছিলেন মিশরের নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে আধুনিক মিশরের ইতিহাসে এটাই হচ্ছে এক সাথে সবচেয়ে বেশি মানুষকে দণ্ড দেয়ার উদাহরণ। এ রায় দেয়া হয়েছে এমন একটি বিচার প্রকিয়া অনুসরণ করে যেখানে মাত্র দুদিন সময় নেয়া হয়েছে। যেখানে একজন মানুষকে দণ্ড দেয়ার জন্যই দুদিন অনেক অল্প সময় সেখানে ৫২৯ জনকে একসাথে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া এক ভয়াবহ বিচারহীনতারই নজির।
মুরসির অপসারণের পর সংগঠিত দাঙ্গায় মাত্র একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার অভিযোগে এতজনকে একসাথে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এতজনকে একসাথে দণ্ড দেয়া একেবারেই অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তার উপরে মাত্র ১২৩ জন আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা হয় জামিনে অথবা পলাতক আছেন।
মুরসিকে অপসারণের পর দেশে মুরসি বিরোধী যে সেন্টিমেন্ট তৈরি করেছে সেনা কর্মকর্তারা, এরই একটা পদক্ষেপ হচ্ছে এ ভীতিকর রায়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে তাড়াহুড়ো করে রায় দেয়ার মধ্যে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে মুরসি সমর্থকদের ক্ষেত্রে মানবাধিকার চুড়ান্তভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে।
এ রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১ হাজারেরও বেশি মিশরীয়কে গুলি করে হত্যা করা। তারা এ সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নেমেছিল। আরও হাজার হাজার মিসরীয় জেলে আটক পড়ে আছেন।
সরকারের অবশ্যই অধিকার আছে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু এ বিচারটা একটা প্রতিশোধমূলক বিচার। এখানে ন্যায়বিচার দূরের কথা সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়াও মানা হয়নি।
এ রায়টা আটক অন্যান্য মিশরীয়দেরকে নিয়েও প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে যে তারা কি ন্যায়বিচার পাবেন সামরিক বাহিনী প্রভাবিত এ বিচারালয়ে? আল জাজিরার সাংবাদিকসহ এরকম আরও ৬৮৩ জনের বিচার শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। তাদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা একটা পাশবিক বিচার প্রক্রিয়া যা মানুষের বিবেককে হিম করে দিতে পারে।
পরিহাসের ব্যাপার হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন দুটি পৃথক বিবৃতি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। তারা এমন মৃত্যুদণ্ডে ‘গভীরভাবে চিন্তিত’ এতটুকু জানিয়ে দিয়েছে। তাদের এই বার্তা যে মিশরের অভিজাত, সামরিক শাসকগোষ্ঠির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না এটা পরিস্কার।
(নিউইয়র্ক টাইমসে Egypt’s Miscarriage of Justice শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র ভাষান্তর)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:১৯