somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্য থ্রিলারঃ ছায়া

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতের আঙুলের গোঁড়ার কাছ থেকে উঠে যাওয়া চামড়া দাঁত দিয়ে তুলতে তুলতেই চারপাশে দেখল, পরিবেশটা ঠিক গা ছমছমে বলা যায় না। বরং বলা যায় বেশ গোছালো রকম। শীতকালে পকেটে হাত ঢুকালেই কয়েকবার, আঙুলের কাছ থেকে চামড়া ওঠা শুরু করে দেয়। সে উঠে যাওয়া চামড়া বড় যন্ত্রণা দেয়। তবে চারপাশে দেখতে কোন যন্ত্রণা বোধ হচ্ছে না। এ বাড়িটার পাশের গলি দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করতে হয়। তাই যাবার সময় একবার করে, একটু ফাঁকা হয়ে থাকা মেইন গেটের ফোঁকর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে কায়েস। চারপাশে যা দেখল, বাড়িটাকে ভয়ের কিছু নেই। তবুও সন্ধ্যা বেলা আড্ডায় বসলে, ঘুরে ফিরে এই বাড়িটার কথা উঠে আসে। দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করা বাড়িটায় থাকে, দুই বোন। সবাই বলে। জানে না কেউ ঠিক। সাহস করে যায় ও না ভিতরে কেউ। এই বাড়ি নিয়ে নানা কথা বলে নানা জনে। কায়েসের তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না। সারি করে গাছ লাগানো, আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, পেয়ারা গাছ। একটা ফুলের বাগানও আছে। সে বাগানে কয়েকটা গোলাপও ফুটে আছে। মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছিল, দুপুর থেকেই। এতো চিন্তায় থাকা যায় নাকি? ছোট বোনটার বিয়ে হয়েছে। চলে গেল অনেক গুলো টাকা। বাবার রেখে যাওয়া টাকা। বাবা মারা গেছেন বছর খানেক হয়ে গেছে, সংসার চালাতে হবে কায়েসেরই। সংসার বলতে মা আর কায়েস। বাজারে একটা ভাল কাজ পাবার কথা, কয়েকদিন ধরে ঘুরাচ্ছে। কাজ খুব একটা বেশী না। চালের আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। যারা চাল কিনবে তাদের ডেকে ডেকে নিয়ে আসবে, চালের বস্তা নিয়ে যাবার জন্য ভ্যান ঠিক করে দিবে। এইটুকুই। বিশাল চালের আড়ত। বেতনও ভাল দেবার কথা। ভাল বেতন বলেই ঘুরাচ্ছে হয়ত কাজ নিয়ে। নানা চিন্তায় মাথা যখন ভর্তি, কিভাবে যেন পাশের গলি দিয়ে যাবার বদলে ঢুকে গেল এই বাড়িটায়। কোন চিন্তায়, কি ভেবে ঢুকেছে জানে না কায়েস। ঢুকে বরং খারাপ লাগছে না, যে বাড়িটাকে নিয়ে নানা জনের মাঝে নানা গুঁজব, সে বাড়িটার ভিতরে নির্ভয়ে হাঁটছে। বিকেলের আলো গাছের পাতার পাশ দিয়ে এসে পড়ছে চোখে। চারপাশে তাকাল কায়েস, এতো বড় বাড়ি কেউ নেই। সবাই বলে, যে দুই বোন থাকে এ বাড়িতে দুজনেই খুব সুন্দরী। একবার সুন্দরী দুজনকে দেখতে পেলেও হত। কেমন সুন্দরী।
বাড়ি বলা ঠিক না এটাকে, বলা যায় বাংলো বাড়ি। বিশাল জায়গা নিয়ে। ভিতরে ইট বিছানো রাস্তা। সে রাস্তা ধরে হাঁটছে আর চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে কায়েস। একটু দূরে বাঁধানো ঘাট, পুকুরও আছে একটা। সে পুকুর পাড় থেকে কারও সাঁতরানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। চারপাশ নীরব, তাই শব্দটা বড় স্পষ্ট। একটু কাছে যেতেই ঘাটের উপর, মেয়েদের শুকনো পোশাক দেখতে পেল কায়েস। পোশাকের সাথে একটা তোয়ালে। তার মানে দুই বোনের কেউ গোসল করছে পুকুরটায়। কায়েসের হৃদস্পন্দন দ্রুত বাড়ছে। ধীর পায়ে যেন শব্দ না হয় এক বিন্দুও সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে পুকুর পাড়টার দিকে। পাড়েই একটা মোটাসোটা জলপাই গাছ, সে গাছের আড়ালে দাঁড়ালে পুকুর পাড় থেকে কেউ কিছু বুঝতে পারবে না। সেখানে দাঁড়িয়েই দেখবে গোসল করা। এতো চিন্তার মাঝেও এই কু চিন্তা মনে কি করে আসছে জানে না কায়েস। হোক কু কাজ, সব সময় ভাল কাজ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। কায়েস জলপাই গাছটার পিছনে দাঁড়িয়ে মাথাটা বের করতে যাবে ঠিক তখনি পিছন থেকে কেউ একজন বলল, এই যে কি করেন এখানে?
চমকে উঠল কায়েস, বেশ ভয়ও পেয়েছে। পিছন ফিরে তাকাতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেল। ভয়ের মাত্রা কাঁটাতে না পেরে। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কায়েসের সামনে। কখন এসে দাঁড়াল টেরও পেল না। কালো গায়ের রঙের সাথে কালো শাড়ি পরা মেয়েটা। পায়ে পরা লাল রঙের চিকন ফিতার জুতা। দেখতে খারাপ লাগছে না। বরং মনে হচ্ছে কালো রঙটার জন্যই সুন্দর লাগছে বেশী। কায়েস পিছনের প্যান্টের ময়লা মুছতে মুছতে বলল, না কিছু না। এমনি একটু ঘুরছিলাম।
- এটা কি ঘোরার জায়গা? আর আপনি উঁকি মেরে পুকুরে কি দেখছিলেন?

কায়েস একটু ঠোক গিলে বলল, পুকুরে কি দেখব? পুকুরে আবার দেখার কি আছে?
- দেখছিলেন তো উঁকি দিয়ে। দেখে তো মনে হয় ভাল মানুষ, এখানে চোরের মত ঘুর ঘুর করছেন কেন?
কথাটা গায়ে লাগল কায়েসের।
- গেট খুলে রেখেছেন কেউ আসতেই পারে। এসব বলার কিছু হয় নি। চলে যাচ্ছি আমি।

চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই আবার চমকে উঠল। পিছনে কখন যেন আর একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এই মেয়ের গায়ের রঙ ফর্সা। ফর্সা মানে সাদা না, হলুদ হলুদ। দুধের উপর সরের রঙ যেমন হয় তেমন। কখন এসে দাঁড়াল পিছনে, এটা যেমন চমকে যাবার মত কিছু, তার চেয়েও চমকে যাবার মত কিছু মেয়েটা গায়ে পরে আছে যে কমলা, সবুজের মিশেলের সালোয়ার কামিজ, সে সালোয়ার কামিজটাই পড়ে ছিল পুকুর ঘাটটায়, তোয়ালের সাথে। কায়েস পুকুর পাড়ে তাকাল, একদম ফাঁকা। চোখটা হাত দিয়ে মুছে আবার তাকাল সামনে। এতো দ্রুত কি করে কাপড় পাল্টে এই মেয়ে এখানে চলে আসলো। দুজনেই নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে আছে কায়েসের দিকে। যে মেয়েটা এসেছিল প্রথমে, সে মেয়েটাই বলল, আপনি না চলে যান। এখানে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
- হ্যাঁ যাব।
- হ্যাঁ যান।

কায়েস হাঁটতে লাগল। মেয়ে দুজন দাঁড়িয়ে রইল, ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। কায়েস একটু দূর গিয়ে, আবার ফিরে আসলো।
- কি চাই?
- আপনাদের যে এলাকার সবাই ভয় পায় জানেন? নানা জনে নানা কথা বলে।
- জানি। আপনিও ভয় পান, কেউ মানা করেনি। এদিকে আর আসবেন না।
- আমার ভয় লাগছে না। আর চেষ্টা করব না আসার।

কায়েস এবার আর থামল না, হন হন করে বেরিয়ে গেল। বেড়িয়ে যাবার সময় আর একবার তাকাল, গেটের ফোঁকর দিয়ে। মেয়ে দুইটা কি যেন বলছে নিজেদের মধ্যে। এতদূর থেকে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। বুঝতে পারার কথাও না। মাথা ঘুরাতে আবার চমকে উঠল কায়েস, গেটের ঠিক বাহিরে এক বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, কায়েসের ঠিক সামনে। হাতে একটা বাজারের ব্যাগ। মহিলা চোখ ছোট ছোট করে দেখছেন কায়েসকে। যে লাঠিতে ভর দিয়ে চলেন, সে লাঠিটা দিয়ে কায়েসের পায়ে আস্তে করে একটা বাড়ি দিয়ে বললেন, ঐ পোলা এই জায়গায় কি করস? মরতে আসছিস? মরতে? জানিস না এই জায়গায় পোলারা আসে মরতে, মরতে আসে। তুই আসছিস কেন?

মহিলার কথা শেষ না হতেই পিছন থেকে কেউ একজন বলল, খালা তোমাকে আমি যার তার সাথে কথা বলতে মানা করেছি আগেও।

কায়েস পিছন ফিরে তাকিয়ে আবার চমকে গেল, চমকে যাওয়া যেন থামছে না। একসাথে এতবার চমকে যাওয়া সহ্য করতেও সময় লাগে। পিছনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলছিল, সেই কালো পোশাকের মেয়েটা। চোখে মুখে রাগ ফুটানো। আর দূরে ঠিক পুকুর পাড়টায় অন্য মেয়েটা দাঁড়িয়ে।
মহিলাটা হাতের বাজারের ব্যাগটা মেয়েটার হাতে দিয়ে বললেন, আমার খালি দোষ। সব কিছুতেই আমার দোষ। বলবই না কিছু আর। মুখে তালা লাগিয়ে বসে থাকব। তালা লাগিয়েই তো থাকি সারাদিন।
- খালা ভিতরে যান। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, রান্না বান্না করেন।
- নিহা কই?
- নিহা আছে, আপনি ভিতরে যান। এভাবে বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন কেন?

মহিলা ভিতরে ঢুকলেন। কায়েস এখনও তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়েটা ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে, স্পষ্ট রাগে বলল, আপনি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কেন? মানুষ এতো বেহায়া হয় কি করে? যত্তসব।

বলেই মেয়েটা গেট লাগিয়ে দিল ভিতর থেকে। কায়েস খানিক সময় দাঁড়িয়ে রইল বাহিরে। এই মেয়েটার নাম জানে না কায়েস, জানে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার। নিহা। কিন্তু জানতে ইচ্ছা করছে রেগে থাকা মেয়েটার নাম। আরও কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে রইল, গেটের সামনে। মেয়েটার নাম না জেনে ভাল লাগছে না। গেটে দুই তিনটা টোকা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একটু বিরতিতে আবার দু তিন বার টোকা দিল। ভেতর থেকে কোন সাড়া আসল না। তবে কায়েসের মনে হল, গেটের কাছে কেউ এসেছে। এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কায়েসের কেন যেন মনে হচ্ছে সেই কালো রঙের মেয়েটাই দাঁড়িয়েছে এসে। কায়েস বাহির থেকে বলল, না মানে আপনার নামটা জানতে চাচ্ছিলাম।

ভিতর থেকে কোন সাড়া নেই। কায়েস আবার বলল, নামটা জেনেই চলে যাব।
ভিতর থেকে জবাব আসল, বেশ মিষ্টি একটা কণ্ঠে, নিহা।
কায়েস বলল, ও।
তার মানে নিহা এসেছে, ঐ মেয়েটা আসে নি। কায়েস আবার একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করল, আপনার বোনের নামটা?
ভিতর থেকে আবারও সে মিষ্টি সুরের জবাব, আমার কোন বোন নেই।

কায়েস কি বলবে ভেবে পায় না। কিছু বলা যায় না। কায়েস গেটের কাছে মুখটা এনে বলল, আচ্ছা আসি তাহলে।
ভিতর থেকে কোন জবাব নেই। কায়েসের মনে হল, গেটের কাছে এখন আর কেউ নেই। সরে গেছে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখান থেকে। কায়েসও সরে আসল গেটের কাছ থেকে। এখানে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না। যে গলি দিয়ে বাসায় যায় সে গলিটা ধরেই হাঁটতে লাগল। বাসায় যাবে। কিন্তু মাথা থেকে এই বাড়িটার চিন্তা, ঐ মেয়েটার চিন্তা যাচ্ছে না। নিহা না, কালো মেয়েটার চিন্তা কিছুতেই তাড়াতে পারছে না। ঘুরে ফিরে মাথার মধ্যে জট পেকে যাচ্ছে। কি নিয়ে জট পাকছে জানে না। তবে কিছু একটা নিয়ে। সে কিছু একটার নাম জানা নেই।

সন্ধ্যার পর প্রতিদিন আড্ডা বসে বন্ধুদের, মাঠের কোণায় যে অর্ধেক বাউন্ডারি করা ইট দিয়ে সেখানটায়। সে আড্ডায় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এলাকার কোন মেয়ে দেখতে কেমন, কার সাথে কার ভালবাসা, কার দিকে কোন মেয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল, কে কোন মেয়ের সাথে কি করল। সব আলোচনাই মেয়ে কেন্দ্রিক। সেই আলোচনায় আসে উঠে সে বাড়িটার কথাও। সবাই ভয় পাওয়া বাড়িটার কথাও উঠে আসে, সে বাড়িতে দুইটা মেয়ে থাকে বলেই হয়ত। আজ একটু দেরী করেই আসল কায়েস আড্ডায়। এসেই জট পাকানো মাথা নিয়েই একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগল, আরে কাহিনী তো হয়ে গেছে রে।
- কি কাহিনী?
- গেলাম তো আজকে।
- কই গেছিলি? খারাপ মেয়েদের পাড়ায়?
- ধুর ব্যাটা। ওসব তোদের কাজ, আমার না। আজকে তো বাড়িতে ঢুকেছিলাম।
- কোন বাড়িতে? সুমাইয়াদের বাড়িতে?
- আরে ধুর, না। নিহাদের বাড়িতে।
- নিহা কে?
- ঐ যে গলির পাশের বাড়িটা। তোরা বলিস, ঐ বাড়িতে ঢুকলে কেউ আর বের হয় না। মরে যায়। হ্যান ত্যান। ঐ বাড়ি ভূতুড়ে, কত কি।

সবাই চুপ হয়ে গেল, একটা অবিশ্বাসের চোখে তাকাল কায়েসের দিকে। কায়েসের চাপা মারার স্বভাব বহু দিনের পুরনো। এই কথাও বিশ্বাস করার মত কিছু হয় নি। যায় না বিশ্বাস করা। অনিচ্ছা নিয়ে সবাই শুনতে লাগল কায়েসের কথা।
- আসলে তোরা হুদাই ভয় পাস বাড়িটাকে। ভিতরে কিছুই নাই ভয়ের। ফলের গাছে ভরা। ফলের সিজনে গিয়ে ফল টল চুরি করে খাওয়া যাবে। ফুলের বাগান আছে। ওখান থেকে ফুল এনে সুমাইয়াদের বারান্দায় ফুল ছুড়েও দেয়া যাবে।

কায়েসরা মাঠের যে কোণায় বসে আড্ডা দেয়, তার ঠিক পাশেই একটা তিন তলা বাড়ি। সে বাড়ির দোতলায় একটা মেয়ে আছে। কলেজে পড়ে, দ্বিতীয় বর্ষে। সে মেয়ের নামই সুমাইয়া। এখানে আড্ডা দেবার আর একটা কারণ সুমাইয়াও। মাঝে মাঝে সুমাইয়া বই হাতে পড়তে পড়তে বারান্দায় আসে, আড় চোখে তাকায় কায়েসদের দিকে। সুমাইয়া দেখতে সুন্দরী। সুন্দরী না ঠিক, অতি সুন্দরী। এখানে আড্ডা দেয়া সবাই মনে মনে সুমাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছে, চোখে দেখা প্রেম। এরা যেমন মিস করে না কখনও এখানে আড্ডা দেয়া। ঠিক তেমনি সুমাইয়াও কখনও মিস করে না বারান্দায় আসা। গত মাস চারেক ধরে তাই হয়ে আসছে।

কায়েসে বলে যায়, ঐ বাড়ির দুই মেয়েকেই দেখলাম। মনে হয় না, বোন দুজন। একজনের নাম নিহা, অন্য জনের নাম জানি না। দুজনেই সুন্দরী। একজন ফর্সা, ফর্সাটার নাম নিহা। আর একজন কালো, কালোটার নাম নাম জানি না। তবে জানিস, কালো মেয়েটাই সুন্দর বেশী। সুমাইয়ার থেকেও সুন্দরী। ঐ বাড়িতে এক বুড়িও থাকে। রান্না বান্না করে, বাজার করে। আবার সেই বুড়ি নাও থাকতে পারে, এমন হতে পারে, রান্না করে চলে যায়।

কায়েসের কথা কেউ মন দিয়ে শুনছে না। অবিশ্বাস করবে এটা আগে থেকে ভেবে নেয়াতে আগ্রহ ফুরিয়ে গেছে আরও আগেই। এদের মনোযোগ এখন সুমাইয়াদের বারান্দার দিকে। সুমাইয়া এসে দাঁড়িয়েছে বারান্দায়। আজ সাথে বই নেই। গত কয়েকদিন অনেক পড়েছে। টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। আজ শেষ মনে হয়। তাই বারান্দায় একটা চেয়ার এনে বসেছে সুমাইয়া। কানে লাগানো এয়ার ফোন। মোবাইলের আলো মুখে পড়াতে আরও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সুমাইয়ার মুখটা। সুমাইয়া মোবাইলে কি যেন দেখছে, আর একটু পর পর এদিকে তাকাচ্ছে। কায়েস হতাশ হল, বড় হতাশ। কায়েসের কথা কেউ শুনল না মন দিয়ে। হতাশ হয়ে উঠে দাঁড়াল কায়েস।
- আমি যাই।

কেউ কায়েসের সে কথাও শুনল না, সব মনোযোগ সুমাইয়ার দিকে। কায়েস উঠে চলে গেল। কায়েস চলে যাবার সাথে সাথে বারান্দা থেকে উঠে গেল সুমাইয়াও। আড্ডাও থেমে গেল সেখানে।
----- ------ ------
হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাসায় যাবার সময় কায়েস একবার থামল সে বাড়িটার সামনে। গেটটা খোলা। একবার উঁকি দিল সেখান দিয়ে। উঁকি দিয়েও আবার চমকে গেল, নিহা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। মিষ্টির প্যাকেট আর একটু হলেই পড়ে যাচ্ছিল হাত থেকে।
- কি চাই?
ভিতর থেকে বলল নিহা।
কায়েস গলা ঝেরে বলল, ভিতরে আসি একটু?
একটু সময় নিহা কি যেন ভাবল। এরপর আস্তে করে গেটটা পুরোটা খুলে দিল। কায়েস ভিতরে ঢুকে হাতে মিষ্টির প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, আমার নতুন চাকরি হয়েছে। তাই আপনাদের মিষ্টি দিতে আসলাম।
নিহা থেমে রইল কিছুক্ষণ। কায়েসের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের কেন মিষ্টি দিবেন?
- আসলাম, এমনি মনে হল। কাল কথা হল আপনাদের সাথে। নিন তো।

নিহার হাতে ধরিয়ে দিল মিষ্টির প্যাকেট।
-আপনার ভয় করে না এ বাড়িতে আসতে?

নিহার প্রশ্নের জবাব দিল কায়েস, একদম না। ভয়ের কি আছে? বরং ভালই লাগছে।
- ভয়ের অনেক কিছুই আছে। আপনিই তো বলেছেন, এলাকার সবাই ভয় পায় আমাদের।
- আমি তো পাই না। আর দূর থেকে তো মানুষ কত কিছুই ভাবে। কাছে গেলে দেখা যায় ভাবা জিনিসটা ভুল।
- আচ্ছা, আচ্ছা।

নিহা মিষ্টি একটা হাসি দিল। হাসি দিয়ে নিজের চুল গুলোতে নিজেই হাত বুলিয়ে একটু ঠিক করে নিল। কায়েসের ভয়টা কেটে গেছে অনেক আগেই। ভয়ের জায়গায় একটা ভাল লাগা স্থান করে নিয়েছে। কায়েস একটু আমতা আমতা করে বলল, না মানে আমরা পুকুর পাড়ে বসতে পারি, তাই না?
- পুকুরে তো কেউ গোসল করছে না এখন। হিহি।

কায়েস বেশ লজ্জা পেল, মাথাটা নিচু করে ফেলল। নিহা আবারও হেসে বলল, এতো লজ্জা পাবার হয় নি কিছু। চলেন।

পুকুরটা বেশ বড়। সাথে ঘাটটাও। সিঁড়ির একদম উপর দিকে দু পাশে বসবার জন্য বেঞ্চ বানানো। সে বেঞ্চের একটায় বসে আছে কায়েস, অন্যটায় নিহা।
- উনি কি আপনার বোন না?
- না, বান্ধবী হয়।
- বান্ধবী? তাহলে এখানে থাকেন যে আপনি?
- থাকতে পারি না?
- হ্যাঁ পারেন, কিন্তু বাবা মা?
- বাবা মা নেই। মারা গেছেন।
-ওওও।
- আচ্ছা আমি যে ওখানে গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছি আপনি বুঝলেন কি করে?
- আমার বান্ধবীই বলল, আপনি আসবেন একটু পর। তাই আমাকে ওখানে যেতে বলল।
- মানে? আপনার বান্ধবী বুঝল কি করে?
- জানি না, ও অনেক কিছুই বুঝতে পারে।
- আচ্ছা ওনার নাম?

"আমার নাম দিয়ে কি দরকার আপনার?"
কথাটা বলল পাশ থেকে সেই কালো মেয়েটাই। আবার চমকে গেল কায়েস। এদের বিড়াল স্বভাব আছে মনে হয়। নিঃশব্দে এসে যেখানে সেখানে হুট করে দাঁড়াতে পারে।
- আরে আপনি? আপনার বান্ধবীর সাথে গল্প করছিলাম। আমার নতুন চাকরি হয়েছে। তাই আপনাদের জন্য মিষ্টি এনেছি।
- আমাদের জন্য মিষ্টি আনবেন কেন? আমরা আপনার কি হয়? একদম ভাব জমাতে আসবেন না। লাথি দিয়ে পুকুরে ফেলে দেব।

এ কথাটাও গায়ে লাগল কায়েসের। সোয়েটারের হাতা দিয়ে মুখ মুছে একটু স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। কায়েসের আজ মন ভাল। ভাল বেতনে চাকরি পেয়ছে। তাই রাগ করল না। ব্যাপারটা রসিকতার দিকে নিয়ে বলল, আপনি লাথি মারলে আমি পুকুরে পড়ব না। আপনি একটা মেয়ে, গায়ে এতো শক্তি নেই।
বলে হাসতে লাগল কায়েস। মেয়েটা বোধহয় রসিকতা পছন্দ করে না। রেগে গেল আরও। কায়েসের দিকে মিষ্টির প্যাকেটটা ছুড়ে দিয়ে বলল, আর কিছু না জানলেও এটা তো ভাল করে জানিস, মেয়েদের গায়ে শক্তি কম। বের হ বাড়ি থেকে, বের হ, তুই এখন।

কায়েস অবাক হওয়া চোখে তাকিয়ে রইল। কায়েস এতো মারাত্মক কিছু বলে নি এভাবে আচরণ করতে হবে। নিহা মেয়েটার হাত ধরে বলল, থাম না মিমি। চল ঘরে চল।
কায়েসের দিকে তাকিয়ে বলল নিহা, আপনি যান এখন।

কায়েস একটু হাসি দিয়ে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে।
যেন কিছুই হয় নি, এমন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে বেড়িয়ে এলো বাড়িটা থেকে। মেয়েটার নাম জেনে গেছে, মিমি। মিষ্টি একটা নাম। বের হয়ে যাবার সময় আবার সেই বয়স্ক মহিলার সাথে দেখা হল।
- তুই আবার মরতে আসছিস এখানে? কেন আসিস? ঐ পোলা মরতে চাস তুই?

কায়েস কিছু বলে না। কায়েসের মন বড় ভাল।
- খালা আজকে কি রান্না করবেন?
- মানুষের মগজ রাঁধব। এরা মগজ খায়। যা তুই যা।
- হাহা।

কায়েস হাসতে হাসতে চলে আসে। বাড়িটার সামনে থেকে চলে আসে। মনটা বড় ভাল। চাকরি পাওয়াটা এক কারণ, আর অন্য কারণ মিমির নাম জানাটা। নাম না জানা কাউকে নিয়ে ভাবা যায় না বেশী। কাউকে নিয়ে ভাবার জন্য নাম জানাটা বড় জরুরী। এখন নিশ্চিন্তে ভাবতে পারবে মিমিকে নিয়ে। মিমি, কি সুন্দর নাম। উল্টালেও মিমি, ঠিক ভাবেও মিমি। কায়েসের নাম উল্টালে সয়েকা, কি অদ্ভুত লাগে শুনতে। মনে হয় আফ্রিকান কোন মহিলার নাম। মিমির নামে তেমন ঝামেলা নেই। আজ আড্ডায় গেল না কায়েস সন্ধ্যার পর। আড্ডায় না গিয়ে মিমি নিহার বাড়ির আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে লাগল। নিহার জন্য না, মিমির জন্য। জানে মিমি আসবে না বাহিরে। তবুও। মানুষ অকারণে অনেক কিছু করে। কায়েসও করছে। কায়েস জানে, মিমি নেই আশেপাশে। তবুও কেন যেন মন বলছে মিমি ঠিক গেটের পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কায়েসকে সঙ্গ দিচ্ছে। কায়েস যে পাগলামি করছে জানে কায়েস। তবুও করছে। কায়েসের সাথে মিমি খুব সুন্দর আচরণ করেছে তা না। বরং বারবারই অপমান করেছে। মিষ্টি আচরণ করেছে নিহা। তবুও কায়েসের কেন যেন মনে হচ্ছে, সত্যি মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে না ঠিক, সত্যিই মিমিকে ভাললেগে গেছে। হয়ত ভালবেসেও ফেলেছে। ঘণ্টা খানেক বাড়িটার সামনে ঘুর ঘুর করে, চলে যাবার আগে গেটের কাছে মুখটা এনে বলল, মিমি আসি। ভাল থেকো তুমি অনেক।
- আমি ভাল থাকি সবসময়।

কায়েস লাফ দিয়ে পিছনে সরে গেল। ভারসাম্য না রাখতে পেরে রাস্তার উপর পড়ে গেল। না এটা সম্ভব না। একদম না। গেটের ওপাশ থেকে স্পষ্ট কণ্ঠে মিমি কথা বলেছে। মিমি কি করে কথা বলবে? মিমি ওখানে নেই। থাকার কথা না।
কায়েস উঠে কোনমতে স্বাভাবিক হয়ে গলিটা ধরে চলে গেল। ব্যাপারটা মানতে পারছে না। কায়েস জানে গেটের ওপাশে মিমি ছিল না। মনকে বলছে সত্যি ছিল না। কায়েস গেটের ওপাশ থেকে মিমির উত্তর চাচ্ছিল, তাই অবচেতন মন একটা উত্তর শুনিয়ে দিয়েছে।

কায়েসের ঘুম আসছে না। মা এসে একবার বললেন, খেতে আয়।
- ভাল লাগছে না, মা। তুমি খাও।
- কি হইছে তোর?
- আরে কিছু না। চিন্তা কইর না। নতুন চাকরি পেলাম, বন্ধুরা ধরে খাইয়ে দিল। তাই পেট ভরা।
- ভাজা পোড়া খেয়ে ঘুমাতে হয় না রাতে।
- কিচ্ছু হবে না মা। আচ্ছা মা, গলির পাশের বাড়িটা সবাই ভয় পায় কেন?
- কেন ভয় পায় জানি না। এই জায়গার মালিক তো আগে মাঝে মাঝে আসত গাড়ি নিয়া। একদিন থাইকা চইলা যাইত। হুট করে আসা বন্ধ তার। এরপর থেকে নাকি দুই বোন থাকে। মানুষ জন কম থাকে তাই লোকে নানা কথা বানাই রাখছে।
- ওরা বোন না তো। দুই বান্ধবী।
- তোরে কে কইল?

কায়েস একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মাকে বলাটা ঠিক হল না।
- না মানে শুনছি। কে জানি গেছিল ঐদিকে তাই।
- তাই বল। তুই আবার বন্ধু নিয়া ঐদিক যাইস না কিন্তু। তোর যে শয়তান সব বন্ধু।
- না মা। আমরা গিয়ে কি করব ওখানে।

মা চলে যাবার পর কায়েস একা একা বসে রইল অনেকটা সময়। ছোট বোনটা পড়ালেখা করত। কিন্তু কলেজে ভর্তি হতেই বিয়ে হয়ে গেল। ছোট বোনটার টেবিলের উপর পড়ে আছে, খাতা কলম। পড়াশুনা মোটামুটি করেছিল কায়েসও। এইচ এস সি দিয়েছিল। এক বিষয়ে ফেল। পরে আর পড়াশুনা করা হয় নি। ছোট বোনটার খাতা কলম নিয়ে লিখতে বসল, কায়েস। একটা চিঠি লিখবে। মিমিকে। ভালবাসার কথাটা বলবে। এ ভালবাসার কোন মানে নেই। তবুও ভালবাসার মানে থাকতেও নেই কোন। একটা করে কাগজে লিখে, আবার কেটে ফেলে। ঠিক কোন শব্দ গুলোতে সুন্দর করে বুঝানো যায় মনের ভাষা বুঝতে পারে না কায়েস। মাঝে মাঝেই ক্লাব ঘরে বসে হিন্দি সিনেমা দেখা হয়। সেখান থেকে কিছু লাইন, কাট ছাট করে একটা ছোট খাটো চিঠি লিখে ফেলল। মিমিকে দিবে। রাতটা পার হলেই সকালে একটু বাজারে যাবে। কিছুক্ষণ বসে থাকবে চালের আড়তে। কাজে লাগতে বলেছে আরও ৫ দিন পর। তবুও গিয়ে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া। এরপর বাজার করে বাসায় আসবে। মা রান্না করবে, খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিতেই বিকাল হয়ে যাবে। এখন বিকাল বড় দ্রুত হয়। শীতকাল বলে কথা। বিকালে চলে যাবে মিমির কাছে চিঠিটা দিতে। পাগলামি হচ্ছে হয়ত, এতো দ্রুত কাউকে ভালবাসার কিছু নেই। তবুও কায়েস পাগলামিই করবে।
----- ----- -------
গেটে টোকা দেবার আগেই নিহা গেট খুলে দিল। আবারও অবাক হয়ে গেল কায়েস, সোয়েটারের হাতা দিয়ে মুছল মুখটা আবার। নিহা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, মিমি বলল আপনি আসবেন। তাই দরজা খুললাম। মিমি আপনার উপর খুব রেগে আছে।
- না মানে, আমি এতো রাগ করার মত কি বলেছিলাম জানি না।

নিহা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ছেড়ে বলল, চলেন পুকুর পাড়ে বসি।
- আচ্ছা।

ঠিক গতদিনের মতই দুজন বসে আছে দু বেঞ্চে। নিহা কায়েসের দিকে না তাকিয়ে, পানির দিকে তাকিয়ে রইল। ঘাটের কাছের আমলকী গাছে অনেক আমলকী ধরেছে। সে আমলকীর অনেক গুলো পড়ে আছে ঘাটের উপর। নিহা আমলকী হাতে নিয়ে পানিতে ছুড়ে ফেলে, পানির মধ্যে তরঙ্গের ছড়িয়ে যাওয়া দেখতে লাগল। সেদিকে তাকিয়েই বলল, মিমি ছেলেদের বড় ঘৃণা করে। বড় অবিশ্বাস করে।
- কেন?
- আপনাকে বলাটা ঠিক হবে কিনা জানি না। কিন্তু মিমি যেমন সব ছেলেকে অবিশ্বাস করে। আমার তেমন কেন যেন আপনাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে। বলতে ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে আপনাকে বললে আপনি কাউকে বলবেন না।

কায়েস নিহার দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে বলতে পারেন।

নিহা হাতে আর একটা আমলকী নিয়ে পানিতে ছুড়ে ফেলে বলতে লাগল, মিমির অনেক কাছের একটা বন্ধু ছিল। সুজন নাম। তখন আমি আর মিমি দুজনেই শহরের দিকে থাকতাম। আমার বাবা নেই আর মিমির মা। আমাদের দু পরিবারের ভাল সম্পর্ক। ভাল সম্পর্ক আমাদের দুজনেরও। মিমি মাঝে মাঝেই আমাকে বলত সুজনের কথা। সুজন ছেলেটা অনেক ভাল। অন্য সব ছেলের মত না। বন্ধুত্ব বলতে কি বোঝায় বুঝে। ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলেই দু দিন পরেই ভালবাসার কথা বলে, সুজন তেমন না। আমার সুজনকে ভাল লাগত না। আমরা তিনজন যখন কোথাও বের হতাম, সুজন ঘুরে ফিরে আমার সাথে ভাব জমাতে চাইত। ফাজলামির ছলে হাত ধরতে চাইত। মিমি সেসব দেখত, কিছু বলত না। মিমি বলত, সুজন নাকি দুনিয়ার সব মেয়ের সাথে ভাব জমাতে চায়, আলাদা শুধু মিমি। মিমির ব্যাপার পুরোপুরি আলাদা। আমি একটা সময় ওদের সাথে কোথাও যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আমার ভাল লাগত না। তবুও সারাক্ষণ মিমি বলে যেত সুজনের কথা। মিমিদের আর আমাদের ব্যবসা ছিল একসাথে। আমার মা আর মিমির বাবা প্রায়ই বাহিরে ব্যবসার কাজে যেতেন। তখন আমি আর মিমি একসাথে থাকতাম। একবার এমন আমার বাবা আর মা কোথাও গেলেন, ব্যবসার কাজে। আমার শরীর বেশী একটা ভাল ছিল না। মিমি বলল, আমার যেতে হবে না ওদের বাসায়। মিমিই আসবে। আমি অপেক্ষা করি, মিমি আসে না। মিমিকে ফোন দেই, মিমি বলে একটু দেরী হবে। সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। মিমি আসে না। আমি মিমিকে কল করি কোন উত্তর আসে না। অসুস্থ শরীর নিয়ে আমিই চলে যাই, মিমিদের বাসায়। মিমিদের বাসায় গিয়ে দেখি একদম অন্ধকার সব ঘর। আমি ঘরে ঢুকে আলো জ্বালি। সব ঘরের আলো জ্বালার পর মিমিকে পাই মিমির ঘরে। মুখ, হাত, পা বাঁধা অবস্থায় ওর বিছানায়। শরীরে একটা কাপড়ও ছিল না। মুখ যখন খুলি মিমি কাঁদে, অঝোরে কাঁদে। আমি জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে? মিমি কাঁদতে কাঁদতে শুধু উত্তর দেয়, আমি সুজনকে বড় বিশ্বাস করতাম।

কায়েস খেয়াল করল, নিহার চোখের কোণেও পানি জমে আছে। কায়েস শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকে নিহার দিকে। মিমি এসেও দাঁড়িয়েছে পিছনে আবার নিঃশব্দে। মিমির মুখের দিকে তাকায় কায়েস। বড় মায়াময় একটা মুখ। বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠে। মিমি আবার রাগ ফুটিয়ে বলে মুখে, তুই আবার আসছিস কেন এখানে?
কায়েস আলতো হাসি ফুটিয়ে মুখে, পকেট থেকে কাগজটা বের করল। এই কাগজটার মূল্য ফুরিয়ে যায় নি। সত্যি ফুরিয়ে যায় নি। নিহার মুখে শোনা একটা ঘটনায় কাগজটার মূল্য ফুরিয়ে যেতে পারে না। মিমির হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, আপনাকে এটা দিতে এসেছি।
বলে আবার একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে গেল। যাবার সময় মিমি বলল, রাতের বেলা বাড়ির সামনে ঘুর ঘুর করবি না। আর আসবি না কখনও যা।

কায়েস পিছন ফিরে তাকায় না। চলে যায় বের হয়ে।
মিমি কাগজটা নিহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হেঁটে যায়। নিহা পিছন থেকে বলে, ছেলেটা তোর প্রেমে পড়েছে।
- পড়ুক না গিয়ে মরুক।
- তুইও পড়েছিস, তাই না?
- আমি কেন পড়ব?
- তাহলে জানিস যে আসবে প্রতিদিন, আমাকে কেন বলিস গেট খুলে দিতে।
- সে তোর সাথে গল্প করতে আসে।
- না তোকে দেখতে আসে।

মিমি উত্তর দেয় না। ঘরে ঢুকে যায়। চিঠিটার দিকে তাকিয়ে নিহার বড় খারাপ লাগে। কেন খারাপ লাগে জানে না। সব খারাপ লাগার কারণ থাকে না। ছেলেটা ঠিক করছে না, সত্যি ঠিক করছে না। একদম ঠিক না।

পরদিনও আসে কায়েস এ বাড়িটায়। এ বাড়িটার সামনে দিয়ে সচরাচর কেউ চলাচল করে না। নয়ত এতো দিনে মায়ের কানে খবর পৌঁছে যেত, আপনার ছেলে প্রতিদিন ঐ বাড়িটায় যায়। আজও নিহা খুলে দিল গেট। খুলেই বলল, আপনি কাজটা ঠিক করছেন না।
- কোন কাজ?
- মিমিকে কাল চিঠিতে যা লিখেছেন সে কাজ।
- কেন?
- কেন জানি না। তবে ঠিক না এটা। আপনি আপনার ভুল বুঝবেন, অতি দ্রুতই বুঝবেন।
- বুঝবার কিছু নেই, আমি সব জেনেও বাসি ভাল মিমিকে।
- আপনি বুঝতে পারছেন না। সত্যি পারছেন না।
- কি বুঝতে বলছেন আপনি?

নিহা আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়টায় গিয়ে বসল। পিছনে পিছনে আসল কায়েস।
- আমরা এখানে কিভাবে থাকি, কেন থাকি জানেন?
- না।
- সেই ঘটনার পর মিমি অনেক বদলে গেল। ঠিক কারও সাথে ভাল করে কথা বলতে চায় না। কাছের মানুষ গুলোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। ওর বাবার সাথে আমার মায়ের সাথে। শুধু আমার সাথে দেখতাম ভাল আচরণ করছে। মিমি একদিন বলল, কোথায় যেন যাবে। কোন মহিলার কাছে। সে মহিলার নাকি অনেক ক্ষমতা। অনেক কিছু করতে পারে। ও সুজনের ক্ষতি করতে চায়। চরম ক্ষতি। একদিন যায় ও একা সেখানে। ফিরে আসার পর ওর মধ্যে আমূল পরিবর্তন। আমি ঠিক চিনতে পারি না মিমিকে। মনে হয় এ মিমি না, অন্য কেউ। মিমি একদিন রাতে আমার সাথে শুয়ে, চোখ বড় করে করে তাকিয়ে থাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। মিমি বলে, নিহা তুই আমাকে ঘৃণা কর। অনেক ঘৃণা কর। ভালবাসা মিথ্যা জিনিস। খুব মিথ্যা। আমাকে যারা ভালবেসেছিল সবাই মিথ্যুক। আমি বলেছিলাম, কি সব বলিস এসব? মিমি বলেছিল, সুজন মিথ্যুক, আমার বাবা মিথ্যুক, তোর মা মিথ্যুক। জানিস তুই তোর মা আর আমার বাবার খারাপ সম্পর্ক আছে? কয়েকদিন পরে পরেই এরা আমাদের বাংলো বাড়িটায় যায়। আমি চমকে যাওয়া চোখে, বলেছিলাম, কে বলেছে তোকে? মিমি বলে, আমি জানি, অনেক কিছু জানি। এর পরদিন কি হল জানি না। আমার মা আর মিমির বাবা এক সাথে দুজনেই মারা গেলেন। কিভাবে মারা গেলেন, জানি না আমি। দ্রুত লাশ সরিয়ে ফেলা হল, পুলিশের লোক এনে। কোন পোস্ট মর্টেম হল না। এর ঠিক দু দিন পরে এসে মিমি আমাকে বলে, জানিস সুজনের বাবা মা দুজনেই গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে মারা গেছে? বলে মিমি হাসে। যেন অনেক সুখের কোন ঘটনা এটা। আমি আমার মায়ের শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই, মিমি আমাকে নিয়ে এখানে চলে আসে। এই সেই বাংলো বাড়িটা যেখানে নাকি, আমার মা আর মিমির বাবা আসত। আমি আর মিমি তখন থেকেই এখানে। মিমি এখনও আমাকে বলে, তুই আমাকে ভালবাসিস না। ঘৃণা কর প্লিজ। আমি জানি না মিমিকে আমি কি করি। তবে আমার কেন যেন মনে হয়, জানি না জিনিসটা সত্যি কিনা, তবুও। মিমিই আমার মা আর ওর বাবাকে খুন করেছে।

কায়েস কথা গুলো শুনছে আর পথের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে হুট করে মিমি চলে আসবে। এসে শুনে ফেলবে নিহার কথা গুলো। আজ মিমি আসে না। নিহা বলে, আপনি প্লিজ এই ভুল করবেন না। আমি চাই না, আপনি মিমিকে ভালবাসেন। আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আপনার প্রতি আমার কোন দাবী নেই, তবুও কেন যেন আপনার জন্য মনে হচ্ছে, আপনার কোন ক্ষতি না হোক।
- আমার কোন ক্ষতি হচ্ছে না। হবে না। আমি মিমিকে ঠিক করে নিব একদম।
- মিমি ঠিক হবে না, প্লিজ। আপনি একটু বুঝতে চেষ্টা করুন।

কায়েস দেখল, মিমি বের হয়েছে ঘর থেকে। কায়েস উঠে দাঁড়াল। নিহার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি ভালবাসি মিমিকে।
বলে চলে গেল। মিমির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মিমি কায়েসের চোখের দিকে তাকাল। একটা অদ্ভুত রকম হাসি দিয়ে বলল, ভালবাস আমাকে তুমি?
কায়েস আস্তে করে মাথা নাড়ল। মিমি আবার হাসল। কিছু বলল না। খানিক সময় চুপ করে থেকে বলল, কাল আসো, আজ আমার একটা কাজ আছে। জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ একটা।
- তুমি ভালবাস আমাকে?
- কাল বলি?
- আচ্ছা।

হুট করে আপনি থেকে সম্পর্কটা তুমিতে চলে গেল। বেশ একটা ভাল লাগা কাজ করছে। একটু দূরেই অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে নিহা। মনে হচ্ছে ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। প্রবল কষ্টের একটা ঝড়। সে ঝড় সামাল দেবার কাজ কায়েসের নয়। কায়েস বের হয়ে চলে গেল। কায়েস বের হতেই শুনল, ভিতর থেকে নিহা বলছে, তুই সত্যি এটা করবি।
মিমি ফিসফিসিয়ে কিছু বলল। সে শব্দ কায়েসের কান পর্যন্ত আসল না।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। রাত শুরু হয়েছে। আড্ডায় বসা সবাই আড্ডা সাঙ্গ করে চলে যাচ্ছে। আজ সুমাইয়া আসে নি বারান্দায়। কায়েসের সে দিকে কোন খেয়াল নেই। সুমাইয়ার ব্যাপারে ওভাবে কখনও আগ্রহও আসে নি। সবাই চলে যাবার পরও কায়েস সেখানে বসে রইল। ভাঙা দেয়ালটার উপর। নেমে যাবে যখন তখন কেন যেন তাকাল সুমাইয়াদের বাড়িটার দিকে। কায়েস তাকানোর সাথে সাথে কেউ একজন বারান্দার পর্দা টেনে দিল। সেই একজনকে খুব পরিচিত লাগছে কায়েসের। আবছা ভাবে শুধু দেখছে হাতটা আর শাড়ির রঙটা। শাড়ির রঙটা কালো, মিমির মত কালো। হাতটা দেখতেও মিমির মত। কায়েসের মাথার ভিতর চক্কর দিয়ে উঠল। মিমি কিভাবে এখানে আসবে। সত্যি কি মিমি ওটা? নাকি সুমাইয়া কালো শাড়ি পরাতে মিমির মত লাগছে। বা এমন হতে পারে, মাথার মধ্যে মিমির চিন্তায় সব জায়গায় মিমিকে দেখছে।
কায়েস চলে আসল সেখান থেকে। আসবার আগে আর একবার তাকাল সে দিকটায়। কিছু ছায়ার চলাচল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মাথাটা বড় ধরেছে। কেন যেন মিমির কথা বড় মনে পড়ছে। মিমিদের বাড়ির দিকে যাওয়া যায়। দরজায় টোকা দিয়ে দেখা যায়, মিমির সাথে একবার দেখা হলেও হতে পারে।
মিমিদের বাসার গেটের কাছে যেতেই নিহা দরজা খুলে দিল। নিহার শরীর ঘামে ভেজা, এই ঠাণ্ডার মধ্যেও ঘামছে। বড় অস্থির লাগছে দেখতে।
কায়েস বলল, কি হয়েছে আপনার?
নিহা হাপাতে হাপাতে বলল, আমি জানতাম আপনি আসবেন। আপনার সাথে জরুরী কথা আছে, পুকুর পাড়টায় আসেন।

কায়েস হতভম্বের মত, নিহার সাথে অন্ধকারের মধ্যে পুকুর পাড়টায় গেল। আকাশে বেশ গোলগাল একটা চাঁদ। সে চাঁদের আলোয় পুকুর পাড়টা আলোকিত। নিহা সেখানে দাঁড়িয়ে বলল, আপনাকে বলেছিলাম না, মিমির মধ্যে অনেক অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করি আমি ঐ মহিলার কাছ থেকে আসার পর থেকে। সত্যি অনেক কিছু অস্বাভাবিক ছিল। মিমি আগে থেকেই বুঝতে পারে ওর আশেপাশে কে আসে। ব্যাপারটা কিভাবে সম্ভব হয় জানি না। আপনি যে কটা দিন এসেছিলেন সে কটা দিন আমাকে মিমি বলেছিল, ঐ ছেলেটা এসেছে। দরজা খুলে দিয়ে আয়। আমি কখনও ওর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও ও বলত, নিহা ঘরে আয়। আমি প্রথম প্রথম চমকে যেতাম। পরে আর যাই নি। মিমির এখানে আসার পিছনেও কারণ আছে। মিমির রাগ আমার উপর না, না ওর বাবার উপর, না ছিল আমার মায়ের উপর। ওর সব রাগটাই ছিল সুজনের উপর। সেই রাগ থেকে আর ঐ মহিলার কাছ থেকে আসার পর থেকে ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ও ওর বাবাকে মেরেছে, মেরেছে আমার মাকে। সুজনের বাবা মার গাড়ি এক্সিডেন্ট ঘটেছে, তাও নাকি নির্ধারিত ছিল। আমাদের বাবা মা নেই আমরা আসলাম এখানে। আর সুজনের বাবা মা নেই, তাই সুজনও নাকি এসেছে এই এলাকাতেই। বাসা ভাড়া নিয়েছে এখানে। সব নাকি ঐ মহিলার কথা মতই হয়েছে। মিমি যেন সুজনকে খুঁজে পায় তাই হয়েছে। আজ বিকালে মিমি আমাকে বলছিল, ও সুজনের ঠিকানা পেয়েছে। এই এলাকায় থাকে। আমাকে বলছিল, তোকে বলেছিলাম না, সুজন ঠিক আমার হাতে ধরা পড়বে। আমি ঠিক সুযোগ পাব, সুজনকে শেষ করার। দেলি মার কথা ভুল হতেই পারে না। মিমি যে মহিলার কাছে গিয়েছিল সে মহিলার নাম দেলি মা। মিমিকে সুজনের বাসার খোঁজ এনে দিয়েছেন, আমাদের রান্না করে দিয়ে যান যে মহিলা সে মহিলা। আমার কেন যেন মনে হয়, এই মহিলাই দেলি মা। রান্নার জন্য মিমি প্রতি মাসে একে অনেক টাকা দেয়। এতো টাকা দেবার কথা না। মিমি সন্ধ্যার পর গিয়েছে সুজনের বাসায়। সুজনের ছোট বোনটাকে নাকি, ঘুমের ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে রেখেছে আমাদের ঐ কাজের মহিলা। মিমি গিয়ে এখন খুন করবে সুজনকে।

কায়েস কি বলবে ভেবে পায় না। কায়েস সত্যি দেখেছে তাহলে? ঐ ঘরটাই কি সুজনের ঘর? সুজনের বোন সুমাইয়া। সে কালো শাড়ি মিমির। সে হাতটাও মিমির। সে হাতেই খুন করবে সুজনকে।
নিহা ধীর পায়ে এগিয়ে আসে কায়েসের দিকে। এসে বলে, আপনি প্লিজ এই ভুলটা করবেন না। মিমি অসুস্থ একটা মেয়ে। ও ওর ভালবাসার মানুষ গুলোকে মেরে ফেলে। আপনাকেও মেরে ফেলবে, একসময় আমাকেও। প্লিজ, আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলেন। আপনার পাশে রাখবেন আমাকে?

নিহা কায়েসের হাত ধরে আলতো করে। অন্ধকারে চাঁদের আলোয় মেয়েটাকে অন্য রকম লাগছে। সত্যি অন্য রকম। কায়েস হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। বলে, না সম্ভব না। আমি ঐ অসুস্থ মেয়েটাকেই ভালবাসি। প্রচণ্ড ভালবাসি।
নিহা মাথা নিচু করে বলল, আমি আপনাকে ভালবাসি। কখন থেকে বাসি জানি না। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলেন প্লিজ। আমি মরে যেতে চাই না।

কায়েস চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কিছুটা সময়। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বড় মায়া হচ্ছে। তবুও মাঝে মাঝে বড় স্বার্থপর হতেই হয়। কায়েস আবার বলল, আমি অসুস্থ মেয়েটাকেই ভালবাসি। ঐ অসুস্থ মেয়েটা সুস্থ হবে আমি জানি। সত্যি সুস্থ হবে।

নিহা কাঁদতে লাগল। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। কায়েস সেদিকে তাকাল না। চুপচাপ হেঁটে হেঁটে চলে আসল। একবার শুধু পিছন ফিরে বলল, নিহা তুমি অনেক ভাল একটা মেয়ে। দেখো, তোমার বান্ধবীটাও তোমার মত ভাল হয়ে যাবে।

এরপর বেড়িয়ে আসল কায়েস। পাশে রেখে গোলাপ গাছের ফুল গুলো, অভিশপ্ত ঘর গুলো, জ্যোৎস্না মাখা পুকুর ঘাটটা। বেড়িয়ে চলে গেল বাসায়। নিজের বাসায়।
রাতের বেলা মায়ের কোলে মাথা রেখে বলল, মা আমি যদি অনেক বড় কোন ভুল করি তুমি কি আমাকে মাফ করবে?
- কি কস? কি করছিস তুই?
- ধর কোনদিন বিয়ে করে নিয়ে আসলাম কাউকে?
- তুই কাউরে পছন্দ করস?
- না ধর নিয়ে আসলাম।
- তুই বড় হইছস আনলে আর আমি কি কবো?

কায়েস আর কিছু বলে না। আজকের রাতটা মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে। বড় শান্তির জায়গা এটা। রাতের বেলা স্বপ্নে দেখল কায়েস। বড় অদ্ভুত এক স্বপ্ন। সে স্বপ্নে একপাশে মিমি, অন্যপাশে নিহা। মিমি বলছে, আমি খুব অসুস্থ আমাকে সুস্থ করবে না তুমি? অন্য পাশ থেকে নিহা বলছে, মিমি আমাকে মেরে ফেলবে। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচাবে না? আমি বাঁচতে চাই। সত্যি বাঁচতে চাই।

কায়েস সকাল বেলা চলে যায় সে বাড়িটায়। জানে না কি করবে? মাথার ভিতর নানা চিন্তায় বড় বেসামাল। জানে না সত্যি কায়েস। গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল বেশ কিছুটা সময়। দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে বড়। ভিতরে ঢুকেই নিতে হবে একটা সিদ্ধান্ত। হয় মানসিক অসুস্থ খুনি একটা মেয়েকে ঠিক করবার দায়িত্ব, যাকে কায়েস ভালবাসে। কিংবা একটা খুনির কাছ থেকে একটা মেয়েকে বাঁচানো, যে মেয়েটা ভালবাসে কায়েসকে। আবার কোনটাই না হতে পারে, ফিরে যেতে পারে এখান থেকে। সুমাইয়া মেয়েটার ভাই খুন হয়েছে। সে মেয়েটাও বড় একা। সে মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। জানে না কায়েস। সত্যি জানে না। মাথার ভিতর সব এলোমেলো লাগছে, বড্ড এলোমেলো। মাথাটা বড় ঘুরছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে এখনি মাটিতে। চোখটা লেগে আসছে, সেখানে অস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছে একটা বয়স্ক মহিলা লাঠি হাতে নিয়ে বলছেন, এখানে আসছিস কেন তুই? মরতে আসছিস? মরতে?

আলো গুলোর ছায়া থাকে, থাকবেই। জীবনের আলো গুলোরও খুব কালো কুচকুচে একটা ছায়া থাকে। সে ছায়ার দিকে তাকালেই জীবনটা বড় দুর্বিষহ লাগে, লাগে বড় বিচ্ছিরি। সে ছায়ায় নজর কেউ দেয়, কারও পড়ে যায়, কেউ এড়িয়ে যায়। সবার জীবনের ছায়া গুলোর কালো সরাতে আর একটা আলো লাগে। সে আলোটার দেখা কেউ পায়, কেউ পায় না, কেউ খুঁজে যায়, কেউ খুঁজেও না। দূর থেকে ছায়ার কালোয় কি ঘটছে কেউ জানে না। তবুও ছায়া গুলোর আলো হয়ে কেউ একজন ঠিকই আসে। সত্যি আসে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×