somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: পলায়ন

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মতিনের বউয়ের সতিন নিয়ে সমস্যা। আনিসের বউ চিন্তায় কানিজ নামে এক মেয়ের সাথে আনিসের সম্পর্ক নিয়ে। মতিনের বউ কিংবা আনিসের বউয়ের কোনো যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ আছে মতিন এবং আনিসের। দুজন একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স। দুজনের সম্পর্ক বেশ দারুণ। পাশ করে বেকার জীবন কাটাবার দিন গুলোতে দুজন মিলে কত কী ভেবেছিল, চাকরিতে ঢুকে দুজন যখন বিয়ে করবে, মাঝে মাঝেই দু পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দিবে। মতিন থাকবে, আনিস থাকবে, থাকবে দুজনের বউ। সারারাত গল্প করবে, চারজন মিলে সিগারেট টানবে। হুটহাট এখানে ওখানে ঘুরতে চলে যাবে। সেসবের কিছুই বাস্তব হয় নি। ব্যস্ততা গলে দুজন মাঝে মাঝেই দেখা করে, সুখ দুঃখের আলাপ করে ল্যাম্প পোস্টের হলুদ আলোর নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে। সাথে কখনও দুজনের বউ থাকে না।

আনিস সরকারি চাকরি পেল, মতিন বেসরকারি। আনিস ওর বউ নিয়ে সুখী না, অসুন্দরী বলে যখন তখন। মতিন নিজের সুন্দরী বউ রেখে আরেকখানা বিয়ে করেছে। আগের বউ ছেড়ে চলে গেলেও, বর্তমান বউয়ের ধারণা আগের বউয়ের সাথে মতিন মাঝে মাঝেই দেখা করতে যায়, সময় কাটায়, টাকা পয়সা পাঠায়।

আনিসের ব্যাপার কিন্তু আরও গুরুতর, আনিসের বউ একবার আনিসের অফিসে এসে দেখেছিল, কানিজ নামের এক কম বয়সী মেয়ের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে। হাতেনাতে ধরা। তাই নিয়ে সন্দেহ। আরে বাবা, কলিগের সাথে কি তাই সবসময় মুখ গম্ভীর করে থাকা যায়? মেয়ে মানুষের মন, ভেবে নিয়েছে অনেক কিছু, যার কিছুই সত্যি না।

সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আনিস বলে, "মতিন আগে বড় ভালো ছিলাম রে!"
মতিন তাল মিলায় ছোট নিঃশ্বাস ফেলে, "কেন যে বিয়ে করলাম? তাও আবার দুই খানা।"
আনিস বলে যায়,"শালার এমন এক জীবন বানাইলাম, সিগারেট খাইয়াও শান্তি পাই না। বাসায় গেলে বউ মুখ, নাক, প্যান্ট সব শুঁকে শুঁকে চেক করে, আমি নাকি অন্য মেয়ের সাথে থাকি। অন্য মেয়ের বডি স্প্রের গন্ধ খুঁজতে গিয়ে পায় সিগারেটের গন্ধ। আমার দিকে চোখ বড় কইরা তাকাইয়া বলে, বিড়ি খাইছ? আমি যতই বলি, খাই নাই। ততই সে অবিশ্বাস করে। আরে আমি কি বিড়ি খাই? আমি খাই সিগারেট।"
মতিন সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসে মিলাতে মিলাতে বলে, "তোর তাও ঝামেলা কম। আমার তো দিনে মানিব্যাগ দুইবার করে চেক হয়। অফিসে যাওয়ার আগে একবার, বাড়িতে ফিরে একবার। মানিব্যাগে দুইশ টাকা কম। জবাব দিতে হবে, কই কই খরচ করেছি। দুইশ টাকার হিসাব দেবার মাঝেও দশবার জিজ্ঞেস করবে, আগের বউকে টাকা দিয়েছি কি-না? আমি কি ফকির? নিজে সারাদিন খরচ পাতির পর, আগের বউরে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে আসব? কে বুঝায় কারে?"
"কত ভাবছিলাম বিয়ার পর, দুই বন্ধু বউ নিয়া ঘুরতে যাব। কোথায় কী? সারাদিন শালার ঝগড়া। অফিসে যতক্ষণ থাকি ভালো থাকি। বাসায় আসলেই ঝামেলা। এই কথা কইলেও বলে, ও এখন তো বাসায় ভালো লাগবেই না। অফিসে ভালো লাগবে। অফিসে কচি মেয়েটা আছে না? বুঝ একবার অবস্থা, 'কচি মেয়ে' কী ধরনের কথা বার্তা!"
"আমারও একই অবস্থা। যখন বলি, বাসায় আসতেই ইচ্ছা করে না। তখন শাড়ি কোমরে পেঁচিয়ে এসে বলে, তা লাগবে কেন? আগেরটার সাথে থেকে আসো। ভালো লাগবে। কিছুতেই বুঝে না, আগেরটারে এতোই ভালো লাগলে তো আর এইটাকে বিয়ে করতাম না।"
"আমার বউ কিন্তু দেখতে সুন্দর না। কিন্তু তারে তা বলা যাবে না। আমারে এতো কিছু বলে, আমি কখনও রাগ করি? মুখ বুইজা শুইনা যাই। তারে কিছু কইলেই আগুন। সে আগুনে সবার আগে পুড়ে ছাই হয়, আমার বাসার কাচের প্লেট, গ্লাস। ধরাম ধরাম করে ভাইঙ্গা ফেলায়। কোন দয়া মায়া নাই। যেন টাকা হইল ছাগলের ল্যাদা, পুচুৎ পুচুৎ কইরা বাইর হয়, আর আমি নিয়া তা কুড়াইয়া আসি। সেই টাকায় প্লেট গ্লাস কিনে আনি, তার ভাঙ্গাভাঙ্গির জন্য।"
মতিন বলে, "আমার বউ তো সত্যিই আগুন ধরায়। যখন বলি, তোমার সাথে থাকাটা আমার জন্য অসহ্যকর। সে রাগে গিয়ে বের করে তাকে কিনে দেয়া শাড়ি, ব্লাউজ, বাকী সব জিনিসপাতি। একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বলে, তোমার সাথে আমি থাকবই না। তোমার দেয়া সব কিছু পুড়িয়ে ফেলে এ বাসা থেকে চলে যাব। পুড়িয়ে দিবে কারণ, ওগুলা থাকলে আমি তা আমার আগের বউকে দিয়ে দিব। কেমন একটা অবস্থা! আগুন দেখে আমার ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে ইচ্ছা করে। আফসোস, কিছুই পারি না। আমিও ছাগলের মত দাঁড়িয়ে, আমার ল্যাদা পুড়তে দেখি।"
"মাঝে মাঝে মনে চায় বুঝলি, বালের ঝামেলা কইরা লাভ কী? একটু ভাল সময় কাটাই দুজনে। আদর করে কথা বললেও বিপদ। কয় কি-না, আমি না-কি কী অকাম কইরা আসছি, তাই এমন ম্যান্দাগিরি করতেছি। যাতে তার কাছে ধরা না খাই। আরে তার কাছে ধরা খাইলেই বা কী? তারে আমি ডরাই নাকি?"
"আমি যখন ভালো আচরণ করতে যাই, আমাকে বলে আগেরটার সাথে না-কি ঝগড়া করছি। আমাকে সাথে থাকতে দেয় নাই। তাই ওর কাছে আসছি। মাথা ঠিক থাকে এই কথা শুনলে বল?"
"মতিন?"
"বল।"
"চল আমরা বিদেশ চইলা যাই। দুই বন্ধু ভিসা পাসপোর্ট কইরা চইলা গেলাম। জানাইলামও না, ঐগুলারে। যাইয়া দুই জন মিইলা নিশ্চিন্তে আমোদ ফুর্তি করলাম, ঘুইরা বেরাইলাম।"
"আমি বলি কী, আগে আমরা দেশের ভিতর ঘুরে বেরাই। বিদেশ যাওয়া তো অনেক টাকার ব্যাপার। আমরা টাকা পয়সা নিয়ে, একটা ছোট দেখে গ্রামে চলে গেলাম। দুজন মিলে খেতখামারে কাজ করলাম। এই প্যারার থেকে খেতখামারে কাজ করাও ভালো।"
"তাইলে বল, কই যাবি?"
"তুই বল।"
"চল চাঁদপুর যাই, খেতখামারে কাজও করলাম। মাঝে মাঝে পদ্মায় যাইয়া দু চাইরটা ইলিশ ধইরা ভাজি কইরা খাইয়াও ফেললাম।
"ভালো বুদ্ধি। এটাই করতে হবে। তুই তাহলে সব গুছিয়ে ফেল। এই সংসারে আর থাকব না। গ্রামে গিয়ে খেতখামারে কাজ আর ইলিশ ধরে খাওয়া। কবে যাবি তাহলে?"
"আজকে তো মাসের ২০ তারিখ। ৫ তারিখ আমি বেতন পাইলে ৬ তারিখ।"
"আমার তো বেতন দেয় দেরীতে। ১০ তারিখ। তাহলে ১১ তারিখ চল।"
"ঠিক আছে, তাইলে যা ১১ তারিখ। আমরা এই সংসার ছাইড়া চইলা যাব।"

দুজনের প্রায় একই সাথে ফোন আসল। উপর মহলের তলব। ওপাশে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, এ পাশে দেখে তা বুঝবার উপায় নেই। ওপাশের একদিক থেকে বলা হচ্ছে, আনিস কানিজকে নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে কিনা? অন্যদিক থেকে জেরা হচ্ছে, আগের বউকে নিয়ে কোথায় ঘুরছে মতিন।

মোবাইল কানে লাগিয়ে দুই বন্ধু হেঁটে চলল। ১১ তারিখ অনেক দেরী। এর আগে সামাল দিতে হবে ঘরের অবস্থা। এমন ১১ তারিখ দুই বন্ধুর জীবনে আগেও বহুবার এসেছে। কোনো ১১ তারিখই দুজন বাসা থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি। আটকে গিয়েছে। আটকে গিয়েছে ঘরের মাঝের যন্ত্রণা আর কোলাহলে, তা সামাল দেয়ার ব্যস্ততায়। আবার অনেক কথা জমবে, আবার কখনও দুই বন্ধু সিগারেট টানতে টানতে ল্যাম্প পোস্টের আলোতে বসবে। কথার পিঠে কথা হবে। জীবনের জটিলতাগুলোর একটা সহজ সমাধান আসবে। আবার দিন শেষে অফিস করে হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরে যাবে।

এ জীবনের জটিলতা আসে, ঝড় ঝঞ্ঝা, বিরহ, ব্যথা হানা দেয়। মলিনতা, কোমলতার জীবনে কঠোরতা দেখা দেয়। তবুও কিছু সময় রাখা উচিৎ সে জটিলতা পিছনে ফেলার। কিছু বন্ধু থাকা উচিৎ, তাকে দেখে সান্ত্বনা পাবার। কেউ একজন পাশে রাখা উচিৎ সব কথা শুনবার, জটিল বিষয়ে এক সহজ সমাধান এনে একসাথে হেঁটে আবার বাড়ি ফেরবার। জীবনের গল্পে বাঁক আসবে না জেনেও, পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না জেনেও, কল্পনায় কিছু হিসাব কষার।

১৯-০২-২০১৮

রিয়াদুল রিয়াদ

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×