somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'রবার্ট ওপেনহেইমার' - বিস্ময়কর এক প্রতিভার অপমৃত্যু!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়ে যাদের বিজ্ঞানরাজ্যে আগমন ঘটেছিল জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার তাদের মধ্যে অন্যতম। কথাটির প্রমাণ মিলে প্রখ্যাত (প্রয়াত) ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক সি. পি. স্নো এর ‘দি ফিজিসিস্ট’ বইতে। তিনি বলেন – “ওপেনহেইমারের সমসাময়িক বিজ্ঞানী যারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, তারা সবাই ছিলেন ওপেনহেইমারের প্রতিভার এক-দশমাংশের অধিকারী”



১৯০৪ সালে ২২ এপ্রিল নিউইয়র্কে ওপেনহেইমারের জন্ম। জাতিতে ইহুদী পিতা জুলিয়াস ওপেনহেইমারের দেশ ছিল জার্মানি। ব্যবসায়িক কারণে তিনি নিউইয়র্কে আসেন। মাতা ইলাফ্রেইড ম্যান জার্মান বংশোদ্ভূত নিউইয়র্কের নাগরিক। একমাত্র ভাই ছিলেন ফ্রাঙ্ক ফ্রেডে ওপেনহেইমার। ওপেনহেইমারের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে শিশুকাল থেকেই। পিতামহের উৎসাহে খনিজের ওপর ঝুঁকে পড়েন এবং বারো বছর বয়সের মধ্যেই এত অধিক পরিমাণ খনিজ তার সংগ্রহশালায় জমা হয় যে, নিউইয়র্কের ‘নিউইয়র্ক মিনারোলজিক ক্লাব’ তাঁকে সদস্য হওয়ার আহ্বান জানায়। বলাবাহুল্য, তিনিই ছিলেন ক্লাবের সর্বকনিষ্ঠতম সদস্য।
স্কুলে পাঠরত অবস্থাতেই সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ সময়ে তিনি বেশ কয়েকটি কবিতাও লিখেন। বিজ্ঞান শিক্ষক মি. অগাস্টাস ক্লক ওপেনহেইমারের মধ্যে প্রতিভার সুপ্ত আগ্নেয়গিরি লক্ষ্য করেন এবং বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করেন। ফলে রসায়ন এবং পদার্থের প্রতি তার প্রচন্ড ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। ১৯২১ সালে কৃতিত্বের সাথে স্কুলজীবন সমাপ্ত করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এসময়ে তিনি গ্রিক, ল্যাটিনসহ আরো কয়েকটি ভাষা শিখে ফেলেন।



হার্ভার্ডে পদার্থবিদ্যা পড়াতেন খ্যাতনামা অধ্যাপক পার্সি ব্রিজম্যান। তিনি থার্মোডিনামিক্স পড়াতেন। সে সময়ই ওপেনহেইমার পদার্থবিদ্যার প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হন। চার বছরের কোর্স তিনি তিন বছরেই শেষ করেন ৯৫% এরও অধিক নম্বর পেয়ে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্লভ সম্মান ‘SOMMA CUM LAUDE’ সনদ পান। এরপর বিভিন্ন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণা কর্ম শুরু করেন। এসব বিজ্ঞানীদের মধ্যে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড এবং জে. জে. থমসন উল্লেখযোগ্য। এসময়ে কোয়ান্টামতত্ত্বের ওপর ওপেনহেইমারের দুটি মৌলিক প্রবন্ধ ‘জার্নাল অব দ্যা ক্যামব্রিজ ফিলোসোফিক্যাল সোসাইটিতে’ প্রকাশিত হয়। যা তাঁকে বিজ্ঞানরাজ্যে স্থায়ী অতিথি হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এসময় অনেকে তাঁকে ‘বিস্ময় বালক’ নামে ডাকতেন।



ওপেনহেইমার ১৯২৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সে বছরেই তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে চাকুরির আমন্ত্রণ পান। তিনি ক্যার্লিফোনিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে যোগ দেন ১৯২৮ সালে। এর পরের বছরেই কনিষ্ঠতম প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৩১ সালে মায়ের মৃত্যুতে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন ওপেনহেইমার। তার প্রিয় বন্ধু হাবার্ট স্মিথ সান্ত্বনা দিতে গেলে ওপেনহেইমার বলেন, এখন আমি হচ্ছি পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম ব্যক্তি।

এর কিছুদিন পরে জিন টাটলক নামক কমিউনিস্ট মহিলার প্রেমে জড়িয়ে পড়েন ওপেনহেইমার এবং কমিউনিজমের সমর্থক হয়ে পড়েন। তিনি টাটলককে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন টাটলক তাতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৩৭ সালে ওপেনহেইমারের পিতার মৃত্যু হলে প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হন তিনি। নিজের সমস্ত সম্পত্তি তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উইল করেছেন, যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানে ব্যবহৃত হত। ওপেনেহেইমার নিজে এবং তার বন্ধু পারমাণবিক বিক্রিয়া-সংক্রান্ত তত্ত্বীয় গবেষণায় মনোনিবেশ করেন, যদিও তখন অনেক বিজ্ঞানী পারমাণবিক শক্তি অবমুক্তকরণ ব্যাপারে ছিল হতাশ। অন্ধকারে পথচলার মতোই ছিল তখনকার বিজ্ঞানীদের অবস্থা। সর্বপ্রথম অটোহান এবং ফ্রিস স্ট্রেসম্যান Atomic Fission বিক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেন।



১৯৩৯ সালে ১৬ মার্চ হিটলার অবৈধভাবে চেকোস্লাভাকিয়ার মোরাভিয়া এবং বোহেমিয়া দখল করলে বিশ্বযুদ্ধের গৌরচন্দ্রিকার অবসান ঘটে। তৎকালীন সময়ে যেসব বিজ্ঞানী পরমাণু গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে আইনস্টাইন মারফত একটি পত্র লিখেন, যাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পারমাণবিক বোমা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়। উল্লেখ্য, আইনস্টাইন প্রথমদিকে প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন। বিজ্ঞানীদের ইচ্ছে ছিল হিটলারের দৌরাত্ম্যের সমুচিত জবাব দেয়া। ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে ওপেনহেইমার কিটির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি ছিল কিটির তৃতীয়তম বিয়ে।



তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল লেসলি গ্রোভসকে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট নির্দেশ দেন – ‘পারমাণবিক বোমা’ বানানোর প্রজেক্টে বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পুরো ব্যাপারটি গোপন রাখার। গ্রোভস ওপেনহেইমারকে ‘প্রজেক্ট প্রধান’ হিসেবে নির্বাচিত করেন। কারণ তখনকার সময়ে সব বিজ্ঞানীদের চেয়ে ওপেনহেইমার সর্বাধিক এগিয়ে ছিলেন। আর প্রজেক্টটির নাম দেওয়া হয় ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট'। দায়িত্বভার নিয়ে ওপেনহেইমার লেগে পড়েন মেধাবী বিজ্ঞানীদের সংগ্রহ কার্যে। শুরু হলো গবেষণা পুরোদ্যমে। ওপেনহেইমার প্রথম দিকে বাধার সম্মুখীন হন, কারণ তিনি নিজে নোবেল বিজয়ী না হলেও তার অধীনে ততোধিক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী কর্মরত ছিল। পরে অবশ্য ওপেনহেইমারের হৃদ্যতা, কাজে গভীর আত্মনিমগ্নতা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে বিজ্ঞানীরা অসহযোগিতা করেননি।

কিন্তু এরপর কি এমন ঘটলো যাতে কিছু বিজ্ঞানী ও সরকারের শ্যেণ দৃষ্টির শিকার হন ওপেনহেইমার? কেন চরম দুর্ভোগ নেমে আসে তাঁর পারিবারিক জীবনে? দেশের প্রতি একান্ত অনুগত হয়েও কেন ‘দেশদ্রোহী’ অপবাদ তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয়েছিল আজীবন?

জানতে চোখ রাখুন আগামী পর্বে . . .

তথ্যসূত্রঃ
১) “প্রজেক্ট ম্যানহার্টন এবং ওপেনহেইমার” – আব্দুল্লাহ-আল-মামুন
২) “The inventor of Atomic bomb Robert Oppenheimer & his punishment”
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×