somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘শুভ জন্মদিন ননসেন্স্ রাইমার!’ !:#P !:#P

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না)
হয়ে গেল "হাঁসজারু" কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে - "বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।"


শুনতে অদ্ভুত লাগা হাঁসজারু, বকচ্ছপ কিংবা হাতিমি - প্রাণীগুলো কিন্তু একা না, বরং এরা একসাথে দুই প্রাণীর সংকর! কি অদ্ভুত আবিষ্কার! পৃথিবীর বুকে কেউ কখনো এমন প্রাণীর অস্তিত্ব ভাবতে পেরেছিল কি? :-B বড়দের কাছে হয়তো এর কোনো গুরুত্ব নেই, কিন্তু ছোটদের কাছে? তার উপর যখন এসব অদ্ভুতাকার প্রাণীর স্কেচ ফুঠে উঠে ‘উহ্যনাম পণ্ডিত’ এর ড্রইয়েং! কোন বঙ্গমানবের সাধ্যি আছে একে ‘হ য ব র ল’ বলার? :|



কি চিনতে পারলেন তো ‘উহ্যনাম পণ্ডিত’ কে? যারা ছড়া পড়েই চিনে ফেলেছেন তাঁরা মুখ টিপে হাসতে থাকুন, ;) আর যারা এখনো চিনতে পারেননি তাদেরকে বলা – এ হল কালজয়ী শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের ছদ্মনাম! সেই সুকুমার রায় - যার ছড়া ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ কিংবা ‘ভয় পেয়ো না’ পড়ার পর, আজো যেন ছোট্ট বেলার আনন্দ মনের জানালা দিয়ে ঢুকে একটুখানি পরশ বুলিয়ে যায়। :)



এমনিভাবে শতাব্দী ধরে ছোটদের (নাহ শুধু ছোট বললে ভুল হবে, বরং বলা দরকার বয়সে বড় কিন্তু মনটা আজো কচি টাইপের ছোটদেরও) নির্মল আনন্দের রেশ বিলিয়ে যাচ্ছে সুকুমার রায়ের রচনাসমগ্র। আর ১৮৮৭ সালের আজকের দিনেই অর্থাৎ ৩০শে অক্টোবর জন্ম নেন এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক সুকুমার রায়। শুভ জন্মদিন সুকুমার রায়! !:#P !:#P



ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের লেখা পড়তে গিয়ে যা ঘটতো, একবারে নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়ে এক দমে পড়ে তারপর ওঠা। B:-/ ছোটদেরও যে একটা আলাদা কল্পনা জগত আছে, যেখানে তারা ড্রাগনের ডানায় চড়ে সাত সমুদ্দুর তের নদী পাড়ি দেয়, যেখানে তারা প্রজাপতির মতই মুক্ত, স্বাধীন – এই বিষয়টি যারা বুঝতে পারেন, তাঁদের কাছেই তো হাঁসজারু বকচ্ছপরা মূল্য পায়। কিংবা বড় হয়েও যারা ছোটো, মানে শিশুদের মতই সরল মনের, তারাও নিশ্চয়ই হাততালি দিয়ে উঠেন এমন আজব আজব সব ছড়া শুনে! আর যে সাপের চোখ নেই, শিং নেই, নোখ নেই, এমন সাপকে যিনি দুধ ভাত খাইয়ে পুষতে চান, তার মতো সরল মানুষ আর কে আছে এই পৃথিবীতে? :D

আমি যখন ছোটকালে মা, ঠাকুরমার কাছ থেকে রুপকথার মজার মজার গল্পগুলো শুনতাম তখন অবাক হয়ে ভাবতাম, এসব গল্প তাঁরা বানান কিভাবে? :-& পরে যখন কিছু বুদ্ধি হল তখন জানতে পারলাম - এসব গল্প উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী’র লেখা। হ্যা আর সুকুমার ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের সেই উজ্বল রত্ন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে।

শিক্ষিত এই পরিবারের সন্তান সুকুমার রায়ও কিন্তু কম শিক্ষিত নন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এসসি.(অনার্স) করেন তিনি। তারপর ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য বিলেত যান। অথচ মজার ব্যাপার হল প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়বার সময় তিনি ‘ননসেন্স ক্লাব’ নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপাত্র ছিল ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’ নামের একটি পত্রিকা। কি ভাজা হতো ওখানে? পাঁপড় নাকি সাহিত্য! =p~ =p~



বিলেত থেকে ফিরে সুকুমার রায় গড়েছিলেন আরও একটি ক্লাব, নাম ‘মানডে ক্লাব’ ইংরেজীতে Monday Club! ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা ‘জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ’ পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। এখানে লেখা পাঠ ও আলোচনার সঙ্গে থাকতো ভূরিভোজের আয়োজনও। তাই রসিকতা করে অনেকেই একে ‘মন্ডা ক্লাব’ বলতো। :P এই নামটির মতোই সুকুমার রায়ের বিচিত্র সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে পাওয়া যায় ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ ও কৌতুকরস। মন্ডার মতোই উপাদেয় সেইসব লেখা!

সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠির এক তরুণ নেতা। ছোটদের জন্য পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত ‘অতীতের কথা’ নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে।



এখনকার সময়ে অনেকেই ছোটদের জন্য লিখেন, কিন্তু কোন কোন সময় তাঁদের লেখাগুলোও হয়ে যায় বড়দের লেখা। ছোটরা তা আপন করে নিতে পারে না। কিন্তু সুকুমার রায়ের লেখায় ছিল সরলতার এক জাদু! :-B ছোট কি বড় সবাই তাঁর ননসেন্স লেখাগুলো পড়ে সমানে হাসে। এই যেমন –

রামগরুড়ের ছানা; হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে, "হাস্‌ব না-না না-না"।

কিংবা
ঠাস্‌ ঠাস্‌ দ্রুম্‌ দ্রাম্‌, শুনে লাগে খট্‌কা-
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পট্‌কা!


এই সব পড়ে কার না হাসতে ইচ্ছে হয়! B-)) আবোল-তাবোলে অবশ্য বলেছেন – “যাহা আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব, তাহদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার।”

মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি প্রথম লিখেছিলেন ‘নদী’ নামক সুদীর্ঘ এক কবিতা। তারপর তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি নানাদিকে শাখা বিস্তার করে। তাঁর লেখা আজো অনেক কিশোরের নেশা। আর ছবি আঁকার কথা কি আর বলবো! পৃথিবীর অনেক নামকরা শিল্পীর ছবির চেয়েও সেরা সেইসব ছবি। ‘সন্দেশ’ এ ছাপা হয়েছিল এমন সব ছবি। অনেকে হয়তো শুনেছেন ‘সন্দেশ’ এর নাম। তবে ইহা খাওয়ার সন্দেশ নহে, :-P এটি ছিল ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা। পিতা উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সুকুমার রায় এ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।



কলেজে পড়ার সময় ছোটদের জন্য লিখেছেন হাসির নাটক, তাতে নিজেও অভিনয় করেছেন। লিখেছেন গান। তা আবার নিজেই সুর করে গেয়েছেনও। আর কী বাকি থাকলো? একটা বিষয়! এমন কিছুই তিনি লিখেননি, যা বুঝবে না ছোটরা। সুকুমার রায়ের লেখা পড়ে যতো আনন্দ পাওয়া যায়, সম্ভবত অন্য কোনো দেশের কালজয়ী রূপকথার ভেতরেও এতো রস নেই। সত্যিকার অর্থেই বাংলা ভাষার রূপকথার রূপকার যদি বলা হয় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে; সুকুমার রায় যেন সেই রূপকথারই প্রতিষ্ঠাতা। :)

আর আপনাদের জন্য সুকুমার রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে রইলো একগাদা ছড়া সমগ্র। পড়ে পড়ে মন ভালো করে নিন। !:#P !:#P

তথ্যসূত্রঃ
১) চিরকালের প্রিয় সুকুমার রায় - ফয়েজ রেজা
২) বাংলা উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৪
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×