১৯৭২ সালে পল বার্গ প্রথম রিকম্বিন্টে ডি.এন.এ প্রস্তুত করলে ১৯৮০ দশকে রিকম্বিনেন্ট ডি.এন.এ নিয়ে রিসার্চ শুরু হয় এবং বায়োটেকনোলোজির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে শুরু করে। নতুন ধরনের জিন প্রবেশের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈশিষ্ঠ্য সম্বলিত জীবের সৃষ্টি সম্ভব হয়, এই সমস্ত জীবকে জি.এম.ও (জেনিটিক্যালি মডিফাইড ওরগানিজম) বলে। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন (WHO) গনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দ্যেশে GMO এর নিন্মোক্ত সংগা দিয়েছে, “যে সমস্ত জীবের জিন পরিবর্তন করা হয় যা প্রাকৃতিকভাবে ঐ জীবের জিনোমের অংশ নয়, তাকে GMO বলে। এটা করা হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে একটি জীবের কোন নির্দিষ্ট জিন অন্য কোন জীবের মধ্যে প্রবেশ ও প্রকাশের মাধ্যমে। GMO এর সর্বজন স্বীকৃত সংগা হচ্ছে, “Genetically Modified Organisms is produced from plant, animal or microbes, that have had their genetic code modified by the selective introduction of specific DNA segment (gene) through the use of rDNA technology; this process allow the organisms to acquire a desirable trait.” উপরোক্ত সংগা থেকে এটা স্পষ্ট যে GMO এর মাঝে কোন নতুন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটতে হবে। এখন কথা হচ্ছে কোন জীবে নতুন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটলে কি লাভ হবে, অর্থাৎ আমরা কেন GMO সৃষ্টি করব?
১. GMO হয় উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, কারন এতে সব সময় উৎপাদনকারী কিংবা ভোক্তার চাহিদার কথা চিন্তা করে নতুন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটানো হয়।
২. GMO এর মাধ্যমে উৎপাদন খরচ এবং উৎপাদন সময় কমিয়ে আনা সম্ভব।
৩. GM উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় উন্নত শস্ব্য উৎপাদন। এর জন্য সাধারণত পোকা-মাকড় ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে উদ্ভিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। একইভাবে শস্ব্যকে আগাছা প্রতিরোধক রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সহিঞ্চু করে গড়ে তোলা সম্ভব। সুতরাং জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধম্যে অধিক শস্ব্য উৎপাদন সম্ভব।
৪. উদ্ভিদের জিনোমে Bt জিন প্রবেশ করালে সেই উদ্ভিদ পাতা, ফুল ও ফল ভক্ষনকারী পোকা-মাকড় দমন করে। ফলে এই ধরনের উদ্ভিদের ক্ষেতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমানো সম্ভব যা পরিবেশ বান্ধব।
৫. জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধ্যমে শস্ব্যের মাঝে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের জিন প্রবেশ করানো সম্ভব যা অপুষ্টি দূর করতে সহায়ক হবে। একই ভাবে বিভিন্ন থেরাপিউটিক এজেন্ট শস্ব্যের মাঝে প্রবেশ করানো সম্ভব যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটাবে।
৬. GM অনুজীবের সাহায্যে নতুন নতুন ফার্মেন্টেড প্রডাক্ট (বিভিন্ন খাবার, থেরাপিউটিক এজেন্ট, বায়োকেমিক্যাল ইত্যাদি) উৎপাদন সম্ভব।
সুতরাং GMO এর মধ্যে খুব সহযেই সঠিক জিন প্রবেশ করার মাধ্যমে কাংক্ষিত বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটানো সম্ভব। কিন্তু শুধু কাংক্ষিত বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটলেই হবে না, সেই সাখে কিছু স্বাভাবিক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। সেই বিষয়গুলো ICGEB নিম্নোক্তভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যা GMO এর ছাড়পত্রে উল্ল্যেখ করতে হয়,
১. প্রাণী ও মানুষের স্বাস্খ্য ঝুকিঃ GMO বিষক্রিয়া (Toxicity) মুক্ত হবে, কোন প্রকার এলার্জি সৃষ্টিকারি উপাদান থাকলে তা নিদৃষ্ট করতে হয়। GMO এর কোয়ালিটি ফুড গ্রেড (মানুষের খাবার উপযোগী) অথবা ফিড গ্রেড (পশু খাদ্য) নিদৃষ্ট করতে হয়।
২. পরিবেশের ঝুকিঃ যদিও পরিবেশের ওপর GMO এর প্রভাব নির্ধারন করা কঠিন হয়ে পড়ে তবু কিছু কিছু বিষয় যথা সম্ভব নির্নয় করতে হয়। এই সমস্ত বিষয় নির্নয় সম্ভব হলে GMO এর ছাড়পত্র পেতে সুবিধা হয়। যেমন GMO এর মাঝে প্রবেশকৃত জিন বা ঐ জিনের প্রডাক্ট (কোন প্রোটিন) পরিবেশে উন্মুক্ত অবস্থায় কতদিন অবস্থান করতে পারে (Persistency of Gene or transgene or transgene product), GMO ব্যাতিত অন্য জীব ঐ ট্রান্সজিনের প্রতি কতটা সংবেদনশীল, অপ্রত্যাশিত জিনের প্রকাশ বা ট্রান্সজিনের স্থায়িত্বের অভাব ঘটছে কিনা তা নির্ধারন করতে হয়। এছাড়াও এই বিভাগে ট্রান্সজিনের প্রকাশের ফলে এ্যাবায়োটিক পরিবর্তন, বাস্তুসংস্থানে প্রভাব, মাটির উর্বরতার উপর প্রভাব, জৈবযৌগ এবং জীববৈচিত্রের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৩. চাষ ঝুকিঃ এই বিভাগে যে সমস্ত বিষয় খেয়াল রাখতে হয় তা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশে কাংক্ষিত জীবের টিকে থাকার সামর্থ, পরিবর্তনশীল চাষ খরচ(আগাছা বা পোকামাকড় দমন করার জন্য), পুষ্টি মানের পরিবর্তন, আগাছার প্রতি সংবেদনশীলতা। এই বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আগাছা (Weed) বা উৎকৃষ্ট-আগাছা (Super weed) সৃষ্টি করার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা। কারন কোন GM শস্ব্য যদি কোন super weed সৃষ্টি করে তবে তা অন্য ফসলের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হবে, একই কথা বলা যায় pest ও super pest এর ক্ষেত্রেও।
৪. অনান্য বিষয়ঃ উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যাতিত আরো যে সমস্ত বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয় তা হচ্ছে ইথিক্যাল ইস্যু, অনান্য ঝুকি নির্ধারন ও ঝুকি ব্যাবস্থাপনা, জীবনিরাপত্তা (Biosafty), জনমতবাদ, উন্নয়নশীল দেশের কৃষকের আর্থিক অবস্থা, IPR (Intellectual Property Rights) ইত্যাদি।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা স্বত্তেও GMO নিয়ে বিভিন্ন সময় র্দূঘটনা ঘটেছে। উদাহরন হিসাবে উল্ল্যেখ করা যায় ১৯৮৯ সালে জাপানের Showa Denko কোম্পানির কথা। ট্রিপটোফেন (L-tryptophen) ঔষধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ১৯৮৮-৮৯ সালে Showa Denko জেনিটিক্যালি মডিফাইড ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন শুরু করে। এর ফলে ট্রিপটোফেনের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেলেও এর থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ সেবনে ৩৭ জন আমেরিকান মারা যায় এবং প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ রক্তে প্রদাহ সৃষ্টিকারি রোগ Esoinophilia Myalgia Syndrome (EMS) এ দীর্ঘদিন ভোগে। এরপর থেকে বিভিন্ন গনমাধ্যম GMO এর বিপক্ষে প্রচারণা শুরু করে।
১৯৯৯ সালে বিজ্ঞানী ড. আরপ্যাড প্রমান করেন যে জেনিটিক্যালি মডিফাইড আলূতে ব্যবহৃত কলিফ্লাওয়ার মোজাইক ভাইরাসের প্রোমোটার স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তিনি আরো প্রমান করেন যে জেনেটিক্যালি মডিফাইড উদ্ভিদে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত Plant Toxin এর পরিমান বৃদ্ধি করে। এই গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা আরো সতর্ক হয়ে যান এবং পরবর্তিতে আরো কিছু GM শস্ব্যের মাঝে বিভিন্ন বিষাক্ত দ্রব্য (Toxic Substances) পাওয়া যায়। যেমনঃ কাঁচা আলুর মধ্যে গ্লাইকোএ্যালকালয়েড(glycoalkaloids), বাঁধাকপি এবং ফুলকপির মধ্যে গ্লুকোসিনোলেট (glucosinolates), এ্যালমন্ড বাদামের মধ্যে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসিডেজ (cyanogenic glycosides) পাওয়া যায়।
এই একই সময়ে অন্য একটি গবেষণাপত্রে ড. মার্ক ল্যাপে দাবি করেন কিছু GMO ফুড কোয়ালিটি এবং পুষ্টি নষ্ট করে। উদাহরন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে সমস্ত গরুকে rBGH (recombinant Bovine Growth Hormone) সঞ্চারিত (Inject) করা হয় তারা অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন করে ঠিক, কিন্তু সেই দুধে পুঁজ, ব্যাকটেরিয়া ও ফ্যাটের পরিমান বেশি থাকে। অথচ ১৯৯৪ সালে FDA মনসান্টো কোম্পানিকে rBGH বাজারজাত করার অনুমতি প্রদান করে!
GM শস্ব্য সৃষ্টির অন্যতম মূল উদ্দ্যেশ হচ্ছে খাদ্য শ্বশ্যে এলার্জেনের পরিমান কমান, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঠিক এর উল্টো ঘটনা ঘটছে। GM শস্ব্যের মাঝে বিভিন্ন এলার্জেনের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং সবচেয়ে বড় সমস্য হচ্ছে GM শস্ব্যে এলার্জেনের পরিমান নির্ণয় কিংবা নির্ধারণ করার জন্য কোন toxicological পরীক্ষা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাইবলে কিন্তু বিজ্ঞানিরা থেমে নেই, বিভিন্ন প্রাণীকে মডেল হিসাবে ব্যবহার করে তাদের উপর GM ফুডের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করছেন। এখন পর্যন্ন প্রাপ্ত বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলগুলোকে নিম্নোক্তভাবে সারসংক্ষেপ করা যায়:
১. GM আলু খেলে ইদুর মারা যায়
২. GM টমেটো খেয়ে ইদুরের পাকস্থলিতে রক্তক্ষরন হয়, কিছু ইদুর মারা যায়।
৩. GM শস্ব্য যাতে Bt জিন ব্যাবহার করা হয়েছে তা খেয়ে ইদুরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৪. Bt তুলার মাঠে কর্মরত কৃষকদের এলার্জি সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৫. Bt ভুট্টার পোলেন এলার্জি সৃষ্টি করে, এই ভুট্টা থেকে উৎপাদিত গোখাদ্য খেয়ে জার্মানিতে গরুর মৃত্যু হয়েছে।
৬. GM সয়াবিন খেয়ে ইদুরের যকৃত ও প্লিহায় সমস্যা সৃষ্টি হয়; এসমস্ত ইদুরের পরবর্তী প্রজন্ম তিন সপ্তাহর মাঝে মারা যায়। খরগোসের ক্ষেত্রে GM সয়াবিন পাকস্থলিতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
GMO নিয়ে গবেষণায় প্রাপ্ত উপরোক্ত ফলাফলগুলো GM ফুডের গ্রহনযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা GM ফুডের বিপক্ষে প্রচারনা শুরু করে। ঠিক এমন সময় সর্ব প্রথম নিরাপদ GM ফুড হিসেবে FLAVR SAVR টমেটোকে উপস্থাপন করা হয়। এই টমেটো উৎপাদনের জন্য এন্টিসেন্স টেকনোলোজি ব্যাবহার করা হয়। FDA বিভিন্ন পরীক্ষা করে দাবি করে, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত টমেটো এবং FLAVR SAVR টমেটোর মধ্যে মোট আমিষ (প্রোটিন), ভিটামিন, মিনারেল এবং বিষাক্ত গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের পরিমানে কোন গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নেয়। আরেকটি পরীক্ষায় ইদুরকে মডেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়, এই পরীক্ষায় দুটি দলের ইদুরকে প্রাকৃতিক টমেটো এবং GM টমেটো খাওয়ানো হয়। এই দুই দলের ইদুরের মধ্যে মোট ওজন, বিভিন্ন অঙ্গের ওজন কিংবা ক্লিনিক্যাল কেমিস্ট্রিতে (রক্ত পরীক্ষা সহ বিভিন্ন ধরনের জৈবরাসায়নিক পরীক্ষা) কোন ধরনের পার্থক্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই পরীক্ষা করার দুই সপ্তাহের মধ্যে কোন অজ্ঞাত কারনে GM টমেটো খাওয়ানো ৪০টি ইদুরের মাঝে ৭টি ইদুর মারা যায়!
ফলে জিন বিজ্ঞানিদের আবারো মুখোমুখি হতে হয় সেই প্রশ্নের, ‘আসলেই কি GM ফুড মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত?’ এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই GM ফুড মানুষ সহ অনান্য প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বলেছেন। যা মোটেও ঠিক নয়, কারন বিভিন্ন GM জীবের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ধরনের জিনের প্রবেশ ঘটানো হয়। সুতরাং প্রতিটি GM ফুডের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে বিস্তারিত গবেষণা করে ঝুকি নির্ধারণ করতে হবে।
যেমন Papaya Ring Spot Virus (PRSV) ভাইরাসের প্রোটিন কোট ব্যবহার করে অধ্যাপক ডেনিস গনসালভিস পেঁপের রিংস্পট ভাইরাস প্রতিরোধক জাত উদ্ভাবন করেন। কিন্তু পরবর্তিতে এই জাত কতটা নিরাপদ প্রশ্ন উঠলে, বাংলাদেশের বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার ৮৪ জন সহকর্মী পেঁপের জিনোম আবিষ্কার ও বিশ্লেষনের মাধ্যমে প্রমান করেন যে, পেঁপের মধ্যে উক্ত ভাইরাসের প্রোটিন তিন খন্ডে বিভক্ত হয়ে থাকে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
তবে শুধুমাত্র ফুড হিসেবে GMO এর ব্যবহার এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করলে GMO এর প্রতি অবিচার করা হয়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে GMO এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা সময় শুধুমাত্র গল্পের মধ্যেই নীল পদ্ম সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি Florigene এবং জাপানের কোম্পানি Suntory জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধ্যমে নীল গোলাপ উৎপাদন করে। এই ক্ষেত্রে RNAi টেকনোলোজি ব্যবহার করা হয়। সুতরাং নীলপদ্ম যে আর বেশীদিন গল্পের বইয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না তা অনুমান করা যায়। একইভাবে লাল, সবুজ ও কমলা রংএর ফ্লুরোসেন্ট গ্লোফিস্ মূলত জেনেটিক্যালি মডিফাইড জেব্রাফিস।
ইসরাইলের কোম্পানি Protalixa GM গাজর ও তামাকের কোষে থেরাপিউটিক এজেন্ট উৎপাদন করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করে। ২০১২ সালে FDA এই থেরাপিউটিক এজেন্ট থেকে Gaucher’s রোগের ঔষধ Elelyso উৎপাদন ও বাজারজাত করার অনুমোদন প্রদান করে।
জেনেটিক্যালি মডিফাইড এ্যালগী, জাট্রোফা, ভুট্টা ও পপলার থেকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জৈবজ্বালানী উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
IRRI থেকে উৎপাদিত সোনালী ধান (Golden Rice) একটি GM ফুড যা ভিটামিন-এ ঘাটতি মেটাতে সহায়ক। একইভাবে দক্ষিন আফ্রিকার একটি সাদা ভুট্টার প্রজাতি Camelina sativa এর মধ্যে জিন মডিফিকেশনের মাধ্যমে ভিটামিনের পরিমান বৃদ্ধি করা হয়েছে, ফলে এই ভুট্টা থেকে উৎপাদিত তেল মাছের তেলের মতই উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারি।
GM প্রাণী বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে মডেল অর্গানিজম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সম্ভাব্যতা, নতুন ঔষধের প্রভাব, টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং সহ বিভিন্ন রোগের গবেষনায় এই সব প্রাণী ব্যবহৃত হচ্ছে। HIV ও Feline immunodeficiency virus (FIV) সহ বিভিন্ন ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এই সব GM প্রাণী। অস্ত্রচিকিৎসা ও বাচ্চা প্রসবের সময় রক্ত জমাট বাঁধতে বাধাদানকারী ঔষধ ATryn ২০০৯ সালে FDA বাজারজাতের অনুমোদন প্রদান করে যা একটি GM পণ্য। এটা প্রস্তুত করা হয় GM ছাগলের দুধের মধ্যে প্রকাশকৃত জিনের প্রোটিন থেকে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে পুরুষ মশার মধ্যে একপ্রকার মরণজিন (লীথাল জিন) প্রবেশ করা হয়েছে, যাদের মিলনের ফলে প্রাপ্ত ডিমথেকে মশা জন্ম নেয় না; ফলে মশাবাহিত রোগের বিস্তার বন্ধকরা সম্ভব। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীগন রেডিয়েসান টেকনোলোজির মাধ্যমে বন্ধা মাছির জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশের সোনাদীয়া দ্বীপে মাছির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে যা স্বাস্থ্য সম্মতভাবে শুটকি উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে।
জিনের গঠন সরল হওয়ায় সবচেয়ে বেশী জেনেটিক মডিফিকেসন ঘটানো হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে। GMO এর স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে বিতর্ক করার সময় আমরা অনেকেই ভুলে যাই ইনসুলিনের কথা। অথচ ইনসুলিন জেনেটিক্যালি মডিফাইড ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়।
সুতরাং এটা বুঝতে নিশ্চয় বাকি থাকেনা যে স্বাস্থ্য সহ অনান্য সমস্য শুধুমাত্র কিছু কিছু GMO এরত্ক্ষেত্রে ঘটে। তবে শুধুমাত্র বর্তমান সাস্থ্য সমস্যা বিবেচনা না করে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এই জন্য কোডেক্স প্রিন্সিপাল মেনে চলা জরুরি।
লিখাটি লাইফ সায়েন্স পত্রিকা "বায়োজেনি''তে পূর্বে প্রকাশিত। বিস্তারিত জানতে ফেসবুক ভিজিট করুন।
আলোচিত ব্লগ
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)
ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন