গানের শব্দে সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙল রুদ্রর। আজ পহেলা বৈশাখ। গলির মুখে একের পর এক গান বাজছে। ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘মেলায় যাইরে’...। এলাকার ছেলেদের আয়োজন। ঈদ, পূজা, বিজয় দিবস- যে কোনো উৎসবে এমন আয়োজন তাদের থাকেই।
গত ১৫ দিন বেশ ধকল গেছে রুদ্রর। দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার ক্রিয়েটিভ চিফ সে। অল্প বয়সেই বড় দায়িত্ব। বৈশাখ উপলক্ষে খুব চাপ ছিল কাজের। এ ক’দিন নাওয়া-খাওয়া, ঘুম, নীরাকে সময় দেওয়া- কোনোদিকেই তেমন নজর দেওয়া হয়নি।
নীরার কথা ভাবতেই মোবাইল ফোন হাতে নেয় রুদ্র। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ৩৭ বার ফোন করেছে নীরা। মোবাইল সাইলেন্ট মোডে থাকায় টের পায়নি সে। প্রচণ্ড ক্লান্তি নিয়ে কাল রাতে ঘরে ফিরেছিল। এসেই ঘুম।
-হ্যালো।
-এতো কাণ্ডজ্ঞানহীন কেন তুমি?
গত চার বছরে নীরার মুখে এ কথা অনেকবার শুনেছে রুদ্র। ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’।
-আমি তো বরাবরই ওরকম।
-আচ্ছা কবে তুমি বুঝবে বলো তো? আর কতবার বললে তোমার মাথায় ঢুকবে?
-সব কি বলে শেখানো যায়?
-তোমার আর শেখা লাগবে না। থাক তুমি তোমার মতো।
অভিমান করে ফোন কেটে দেয় নীরা।
আজ নীরার জন্মদিন। বাংলা ১৪০১ সালের ১ বৈশাখ পৃথিবীতে এসেছিল সে। আজ ১৪২৩ বঙ্গাব্দের সেই দিন। ২৩ বছরে পা রাখল নীরা। গত চার বছরে বিশেষ এই দিনটি কখনো ভোলেনি রুদ্র। রাতে নীরাকে ফোনে উইশ করেছে। প্রতিবারই দু’জনের কথা হয়েছে অনেকক্ষণ। বৈশাখের দিন ঠিক বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসের সেই ‘বিশেষ’ জায়গায় দেখা করা। সন্ধ্যায় একসঙ্গে বাইরে খাওয়া। রাত ৯টার আগেই নীরাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পৌঁছে দেওয়া। আর আজ এখনও উইশ-ই করা হলো না।
নীরাকে আবার ফোন করে রুদ্র। ওপাশ থেকে সাড়া মেলে না। আরও বেশ কয়েকবার ফোন করে। মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে নীরা। নাহ, বড় অন্যায় হয়ে গেছে। রুদ্র জানে, এই মেয়েটা তাকে প্রচণ্ডরকম ভালোবাসে। তার ছন্নছাড়া জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছে নীরা। ধীরে ধীরে তাকে ‘সামাজিক’ বানিয়েছে। বন্ধুদের কাছে ‘পাগলাটে’ রুদ্র এখন অনেকখানিই ‘মানুষ’। এ সবই নীরার জন্য। রুদ্র বোঝে, যত ঝামেলাই থাকুক, তার মোটেও উচিত হয়নি নীরাকে কষ্ট দেওয়া।
বিকেল পৌনে ৪টা। রুদ্রর হাতে ২৩টা সাদা গোলাপ। ক্যাম্পাসের জারুলতলায় নীরার অপেক্ষায় সে। এখানেই এই দিনে ভালোবাসার ভাব বিনিময় হয়েছিল তাদের। কিন্তু এখনও ফোন বন্ধ নীরার। তার রুমমেটকে ফোন করে রুদ্র জেনেছে, বেলা ৩টায় রুম থেকে বেরিয়েছে নীরা।
ঠিক বিকেল ৪টা বাজতেই কাঁধে আলতো স্পর্শ পায় রুদ্র। লাল শাড়িতে হাসিমুখে নীরা। তার হাতেও ২৩টা গোলাপ। লাল রঙের। রুদ্র তার আনা গোলাপগুলো দেওয়ার আগেই তার দিকে লাল গোলাপগুলো বাড়িয়ে দেয় নীরা।
এই মেয়েটা এতো ভাল কেন- ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে রুদ্রর।