পলের সেই ডিভাইস ঐ একই ডিজাইনে এখনও উৎপাদন ও ব্যবহার হচ্ছে
নাম "লেস পল"। জন্ম ১৯১৫ সালের আজকের দিনে আমেরিকার মধ্য পশ্চিম এলাকার উইস্কনসিনে। বয়স যখন তেরো, একই সাথে কান্ট্রি গায়ক, গীটার বাদক ও হারমোনিকা বাদক হিসেবে পারফর্ম করেন স্থানীয় ক্লাবে। সতের বছর বয়সে একটি কান্ট্রি ব্যান্ডে যোগ দেন এবং পড়াশুনা ছেড়ে পুরোপুরি পারফর্মার হয়ে যান।
১৯৩৪ এ পল শিকাগো চলে আসেন এবং নিয়মিত রেডিওতে প্লে করেন। এর দু-বছর পর তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। এরপর শিকাগো ছেড়ে নিউইয়র্ক যান এবং সেখানেও নিয়মিত রেডিও অনুষ্ঠান করেন। তিনি তার এক্যুস্টিক-ইলেক্ট্রিক গীটারের সাউন্ডে সন্তুষ্ট ছিলেন না, আর তাই তার কুইন্সের এপার্টমেন্টে এ নিয়ে নিজের মত করে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেন। অবশেষে ১৯৪১ সালে সলিড বডির সাথে ফিঙ্গার বোর্ড যুক্ত করে আশানুরূপ ফল পান এবং পরে এর মডেল গীটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান "গিবসন" এ জমা দিয়ে এভাবে গীটার তৈরির প্রস্তাব করেন ।
কিন্তু গ্রহনযোগ্যতা পাবেনা ভেবে "গিবসন" এ মডেলের গীটার বানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ১৯৪৮ সালে অন্য একটি গীটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সলিড বডির গীটার তৈরি শুরু করলে তার দু-বছর পর "গিবসন"ও বানানো শুরু করে। খুব অল্প সময়েই "গিবসন লেস পল" গীটার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তিতে ভিন্ন আঙ্গীকে ভিন্ন ভিন্ন মডেলের গীটার এবং পরিবর্তিত/ পরিবর্ধিত হয়ে "লেস পল" সিরিজের আরো বেশ কয়েকটি ভিন্ন মডেলের গীটার বের হলেও আজ অবধি এটাই সবচে বেশি বিক্রি হওয়া ইলেক্ট্রিক গীটার।
লেস পল হাতে গাঞ্চেন রোজেসের স্ল্যাশ মামা!
মাল্টি-ট্র্যাক রেকর্ডিং নিঃসন্দেহে অডিও রেকর্ডিং প্রযুক্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম বড় আবিস্কার। এ উদ্ভাবন তাকে তখন বিশ্বব্যপি খ্যাতি এনে দেয়। এর পেছনের গল্পটা মুটামুটি এ রকম। পলের খুতখুতে স্বভাব সবকিছুতেই। ঐ সময়কার রেকর্ডিং প্রযুক্তি ছিল সিঙ্গেল ট্র্যাকের। শব্দের উচ্চতা সহ যাবতীয় কিছু আগেই ঠিক করে নিয়ে সব বাদ্যযন্ত্র আর ভোকাল একসাথে রেকর্ডিং করা হত । কোথাও ভুল হলে ঐটা বাদ দিয়ে সব করতে হত আবার শুরু থেকে । এসবে তার মন ভরেনা । রেকর্ডিং নিয়ে নানান আইডিয়া তার মাথায় খেলা করে।
নিজের স্টুডিওতে পল ও তার স্ত্রী মেরি ফোর্ড
কোন এক রেকর্ডেংয়ের প্রাক্কালে রেকর্ডিস্টের সাথে এ নিয়ে তার আলাপ চলে। রেকর্ডিস্ট তাকে স্টুডিও করতে পরামর্শ দেন। কালবিলম্ব না করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন স্টুডিও করার। স্টুডিও হল, এক্সপেরিমেন্ট করারও কোন বাধা রইল না। নানান রকম যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলল পুরোদমে। অবশেষে ১৯৪৮ সালে রিলিজ হল সেই রেকর্ড "Lover (When You're Near Me)" যাতে তিনি আটবার ভিন্ন আঙ্গিকে গীটার বাজিয়েছেন। রেকর্ডিং যন্ত্রপাতি বানায় এমন কোম্পানি গুলো এ প্রযুক্তি লুফে নিল। তখন রেকর্ডিং করা হত টেপ বা ফিতা'য়। তারা এমন এক রেকর্ডার যন্ত্র বানাল যার ট্র্যাক সংখ্যা দু'টি। ক্রমে সংখ্যা বেড়ে তিন এবং পরে চার হল। "বিটলস্"রা চার ট্র্যাকের দুটি রেকর্ডার জোড়া দিয়ে তাদের প্রথম এলবাম রেকর্ড করে। টেপে রেকর্ডের যুগ চলে গেছে বহুদিন হল। অন্য সব কাজের মতই রেকর্ডিংয়েও কম্পিউটার এসে টেবিল দখলে নিয়েছে। মাল্টিট্র্যাকের ট্র্যাক সংখ্যার সীমাবদ্ধতাও দূর হয়েছে সেই সঙ্গে। লেস পল কিন্তু এর সবই দেখে গেছেন। তিনি প্রয়াত হন ২০০৯ সালের ১২ আগষ্ট।
পলের জন্মদিনে গুগলের ড্যুডোল
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১৮