somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরআন নয় বরং হাদিসের মাধ্যমে যা ফরজ, ওয়াজিব বা হারাম করা হয়েছে

১৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সহি বুখারি শরীফের হাদিসকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে একজনে একটা পোস্ট দিয়েছেন কয়েকদিন আগে।ইমাম বুখারি কি বললেন আর গবেষণায় কি প্রমান হোল ওখানে আমি কিছু মন্তব্য করেছিলাম। আরও কয়েকজন ব্লগার আমাকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি মন্তব্য করেছেন। তাদের প্রশ্নের জবাব কিছু দিয়েছি ঐ পোস্টে। বাকিটা দেয়ার জন্য একটা পোস্ট প্রয়োজন। একারনেই এই পোস্ট। শুরুতেই আমাদের মহানবীর (সা) অনুসরণ সংক্রান্ত একটা হাদিস দিয়ে শুরু করছি।

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে ব্যক্তি নয়, যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! কে অস্বীকার করেছে? তিনি বলেন, যে আমার আনুগত্য করে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানি করে, সে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে।’ (বুখারি : ৭২৮০ )

প্রশ্ন এসেছে কোরআনে না থাকলে কিভাবে ওয়াজিব বা ফরয হয়। তার উত্তরে বলছি -

নীচে কিছু ইসলামী রীতিনীতির উদাহরণ দেয়া হোল যেগুলির ব্যাপারে কোরআনে স্পষ্ট কিছু বলা নাই কিন্তু এগুলি ফরজ, ওয়াজিব বা হারাম করা হয়েছে রসূলের (সা) নির্দেশনার মাধ্যমে।

১। দাড়ি রাখা- দাড়ি রাখাকে ফরজ বা ওয়াজিব বলা হয়। দাড়ি রাখার ব্যাপারে কোরআনে কোন নির্দেশনা নেই। কিন্তু রসুল (সা) এর নির্দেশনার ( হাদিস) মাধ্যমে দাড়ি রাখাকে ফরজ বা ওয়াজিব করা হয়েছে। অনেক আলেম এটাকে ফরজ বলেছেন আবার অনেকে এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। দাড়ি না রাখলেও চলবে একথা কোন আলেম বলেনি।

২। নামাজের কয়েকটি ফরজ -
নামাজের আদেশ কোরআনে থাকলেও নিয়ত করা, শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা, সুরা ফাতেহা পড়া, তাশাহুদ পড়া, সালাম ফেরানো ইত্যাদি ফরজগুলি আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি। শুধু কোরআন পরে কিভাবে তাহলে নামাজ আদায় করা যাবে।

তোমরা সেইভাবে সালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০০৮
কোরআনে সালাতের ব্যাপারে সব বলা থাকলে রসুল (সা) এভাবে তাকে অনুসরণ করতে বলতেন না।

৩। হজের কয়েকটি ফরজ –
হজ্জের আদেশ কোরআনে আছে। ইহরাম বাঁধা, আরাফায় অবস্থান করা, সাফা মারওয়া সাই করা, মিনায় অবস্থান করা, মুজদালিফায় রাত কাটানো, জামারাতে পাথর নিক্ষেপ, চুল কাটা, বিদায়ি তওয়াফ ইত্যাদি কাজকে হাদিসের মাধ্যমে ফরজ করা হয়েছে। কোরআনে এই বাপারগুলির উপর কিছু বর্ণনা পাওয়া গেলেও এই আমল গুলি ফরজ কি না তা জানতে হলে আমাদের হাদিস পড়তে হবে। শুধু কোরআন পরে কিভাবে তাহলে হজ্জ আদায় করা যাবে।

তোমরা (আমার কাছ থেকে) হজ্বের নিয়ম-কানুন শিখে নাও। কারণ আমি জানি না, এই হজ্বের পর আমি আর হজ্ব করতে পারব কি না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২৭৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৯৭০

৪। সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। ( আল বুখারি – ১২৪০)
৫। অসুস্থ লোককে দেখতে যাওয়া ফরজে কিফায়া (অন্তত একজন আত্মীয়,পড়শি বা পরিচিত মানুষ অবশ্যই দেখতে যাবে। তা না হলে সবার গুনাহ হবে ) – মুসলিম শরীফ, ২১৬২। বেশী অসুস্থদের জন্যই এভাবে বলা হয়েছে।
৬। জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া (সমাজের অন্তত একজনকে পড়তে হবে। তা না হলে সবার গুনাহ হবে) – বুখারি – ২৪৪৫, মুসলিম -২০৬৬
৭। ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব বা ফরজ। আল বুখারি ৩২৪
৮। আজান দেয়া ফরজে কিফায়া। বুখারি – ৬০২
৯। ঈদের ফিতরা ফরজ বা ওয়াজিব। বুখারি – ১৪৩৭

রসূলের ( সা) নির্দেশে যা হারাম করা হয়েছে ( কিছু উদাহরণ)
১। প্রাণীর ছবি আঁকা ( সহি বুখারি – ২৮৪)
২। গৃহপালিত গাধার মাংস খাওয়া হারাম এবং বন্য গাধার মাংস হালাল। ( সহি বুখারি ৫৫২০)
৩। কোন মুসলমান কাফিরের ওয়ারিশ হতে পারে না এবং কোন কাফির কোন মুসলমানের ওয়ারিশ হতে পারে না। ৪২৮৩ – সহি বুখারি
৪। হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশ হতে পারবে না। যেখানে নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর আত্মীয়। (আহমদ, হাদীস নম্বর ৩৪৬, ইবনু মাজাহ্, হাদীস নম্বর ২৬৪৫)
৫। একই সাথে স্ত্রী ও স্ত্রীর খালাকে/ ফুফুকে বিয়ে করা হারাম। বুখারি ৫১০৯
৬। দুধ বোনের মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। বুখারি ২৬৪৫
৭। পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম কাপড় হারাম করা হয়েছে। (সুনানে তিরমিযী, হা- ১৩/১৭৩৭)
৮। ড্রাগ হারাম। মুসলিম – ২০০৩
৯। দাঁত দ্বারা শিকার করে এরকম সকল হিংস্র পশু হারাম। আর থাবা দিয়ে শিকার করে এমন প্রত্যেক পাখি হারাম। মুসলিম - ১৯৩৪

যে সব নির্দেশনা কোরআনে নেই কিন্তু রসূলের (সা) নির্ধারণ করে দিয়েছেন-
১। কাবা তওয়াফের ও সাফা মারওয়া সাই করার সংখ্যা ও পদ্ধতি।
২। যাকাতের পরিমান কিভাবে নির্ধারণ করতে হবে। কে কাকে জাকাত দিবে।
৩। হজের বিস্তারিত নিয়ম কানুন
৪। রোজার নিয়ম কানুন।
৫। ফরজ সালাতের রাকাত, ওয়াক্ত কখন শুরু কখন শেষ এবং সালাতের কিছু ফরজ, ওয়াজিব সমুহ।
শুধু কোরআন প’ড়ে উপরের এবাদত গুলা করা সম্ভব না।

I have been given the Quran and something like it, yet a time will come when a man will say: “ We only need the Quran.” ( Sunan Abu Dawood No. 4587 – Sahih by Albani)

Something like it হোল রসূলের নির্দেশনা যা তিনি জিব্রাইলের (আ) মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছেন। কোরআনে যাকে হেকমত বলা হয়েছে কয়েক জায়গায় (লেখার পরবর্তী অংশে উল্লেখ আছে) । রসূলের কথা ও কর্ম জানতে হলে হাদিস থেকে জানতে হবে। কোরআনে তার বিস্তারিত বর্ণনা নাই।

অনেকে শুধু কোরানকে গুরুত্ব দেন কিন্তু জাল বা বিকৃত হবার কারণে হাদিসকে অগ্রহণযোগ্য মনে করে। তারা মনে করে কোরআনই যথেষ্ট। মনে হয় যেন রাসূলের দায়িত্ব ছিল কেবল কুরআন পৌঁছে দেওয়া। তিনি পৌঁছে দিয়েছেন; ব্যস, তাঁর কাজ শেষ। এখন কুরআন বোঝা, তদনুযায়ী কুরআনী ও ঈমানী জীবনের রূপরেখা তৈরি করা, তা থেকে আল্লাহর নির্দেশনাবলি ও বিধানাবলি উদ্ঘাটন করা, তাতে ফরযকৃত ইবাদতসমূহ আদায়ের পদ্ধতি নির্ধারণ করা- এই সব কাজ আমাদের। কিন্তু কোরআনেই বহু আয়াতে রসুলের (সা) অনুসরণ ও আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। রসুলকে (সা) অনুসরণ ও আনুগত্য করতে হলে হাদিসের মাধ্যমে ওনার আদেশ নিষেধ সমুহ জানতে হবে।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে; রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। -সূরা হাশর (৫৯) : ০৭

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আল্লাহর লানত ঐসমস্ত নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে ও নিজ শরীরে উল্কি অংকন করায় এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারী। তাঁর এ কথা আসাদ গোত্রের উম্মে ইয়াকুব নাম্নী এক মহিলার কাছে পৌঁছল। সে এসে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লানত করেন। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, আমি কেন এমন লোকদের প্রতি লানত করব না, যাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন এবং যাদের কথা আল্লাহর কিতাবে আছে? মহিলাটি বলল, আমি তো দুই ফলকের মাঝে যা আছে (অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন) পড়েছি; কিন্তু আপনি যা বলছেন সেটা তো পাইনি। তিনি বললেন, তুমি যদি (ভালোভাবে বুঝে-শুনে) পড়তে তবে অবশ্যই পেতে। তুমি কি পড়নি-

রাসূল যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর আর যা বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।

মহিলাটি বলল, হাঁ। তিনিই তো নিষেধ করেছেন এ থেকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৫

যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে ‘কুরআনে নেই’ বলে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য এই ঘটনায় শিক্ষা রয়েছে। রসূলের (সা) আদেশ, নিষেধ মানার কথা এভাবেই কোরআনে বলা আছে। রসূলের (সা) আদেশ, নিষেধ জানার উৎস হোল হাদিস।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে - (হে নবী!) আমি আপনার প্রতি ‘আযযিকর’ নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে সেইসব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। -সূরা নাহল, আয়াত – ৪৪

উপরের আয়াতে রসুলকে (সা) নাজিলকৃত বিষয়ের ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রসূলের (সা) ব্যাখ্যা এসেছে তার কথা ও কাজের মাধ্যমে যা হাদিস হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে; কিতাবীদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না এবং পরকালেও নয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তাকে হারাম মনে করে না এবং সত্য দ্বীনকে নিজের দ্বীন বলে স্বীকার করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না তারা হেয় হয়ে নিজ হাতে জিযিয়া আদায় করে। -সূরা তাওবা (৯) : ২৯

এই আয়াতে বলা হয়েছে যে কোন কিছু হারাম করার এখতিয়ার আল্লাহ ও তার রসূলের (সা)।

রসুল (সা) বলেছেন - শুনে রাখ! শীঘ্রই এমন ব্যক্তির উদ্ভব হবে যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে; তখন তার কাছে আমার কোনো হাদীস পৌঁছলে সে বলে উঠবে, আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাবই আছে। এতে আমরা যা হালাল হিসেবে পাব তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করব আর যা হারাম হিসেবে পাব তা হারাম মনে করব। অথচ (প্রকৃত অবস্থা হল এই যে,) রাসূলুল্লাহ যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতই হারাম। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৬৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১২

আমি প্রত্যেক রাসূলকে কেবল এ লক্ষ্যেই পাঠিয়েছি, আল্লাহর হুকুমে তাঁর আনুগত্য করা হবে। -সূরা নিসা (৪) : ৬৪

রসুলকে ( সা) আনুগত্য করতে হবে। হাদিস অনুসরণের মাধ্যমে আমরা রসূলের (সা) আনুগত্য করি। কোরআন ও দ্বীনের বিধি বিধানের ব্যাখ্যা রসুল (সা) করেছেন যা হাদিস গ্রন্থ সমুহে উল্লেখ আছে।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ; (হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

রসুলকে (সা) অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। রসুলকে (সা) অনুসরণ করতে হলে জানতে হবে উনি কি বলেছেন ও করেছেন। হাদিসের মাধ্যমে আমরা তা জানতে পারি।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে; বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ- এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ২১

যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যারা (তাঁর আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি (হে নবী!) আপনাকে তাদের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে পাঠাইনি (যে, তাদের কাজের দায়-দায়িত্ব আপনার উপর বর্তাবে।) -সূরা নিসা (৪) : ৮০

যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কত উত্তম সঙ্গী তাঁরা! এটা কেবলই আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব। আর (মানুষের অবস্থাদি সম্পর্কে) ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। -সূরা নিসা (৪) : ৬৯-৭০

‘তাঁকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী প্রজ্ঞাবান—সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৫-৬)

এখানে শক্তিশালী প্রজ্ঞাবান বলতে জিব্রাইলকে (আ) বুঝানো হয়েছে। জিব্রাইল (আ) আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ীই রসুলকে (সা) শিক্ষা দিয়েছেন। রসুল (সা) সেই প্রজ্ঞাময় শিক্ষা তার উম্মতকে শিখিয়েছেন তার কথা ও কাজের মাধ্যমে। তার (সা) কথা ও কাজ জানতে হাদিস পড়তে হবে।

‘আপনি তো কেবল সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৫২)
‘নিশ্চয়ই আপনি মহান আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ’ (সুরা : কলাম, আয়াত : ৪)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত ২১)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে।’ (আহজাব, আয়াত : ৭১)

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে; যেমন আমরা তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি (১) যিনি তোমাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। আর তা শিক্ষা দেন যা তোমরা জানতে না। সুরা বাকারা, আয়াত ১৫১

উপরে কিতাব হোল কোরআন আর হেকমত হোল রসূলের সুন্নাহ ও ইসলামী বিধি বিধান যা হাদিসের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা লাভ করি। রসুল ( সা) এই হেকমত পেয়েছেন আল্লাহর কাছ থেকে জিব্রাইলের (আ) মাধ্যমে।

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে; এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত ও কিতাব এবং হেকমত যা তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন, যা দ্বারা তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, তা স্মরণ কর। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। সুরা বাকারা, আয়াত ২৩১ ( শেষাংশ)

উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে কোরানের সাথে হেকমতও আল্লাহ নাজিল করেছেন। আর এই হেকমত হোল রসূলের সুন্নাহ ও ইসলামী বিধি বিধান যা হাদিসের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা লাভ করি।

উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দায়িত্ব কেবল আল্লাহর নাজিলকৃত কোরআন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং তাঁর মৌলিক দায়িত্ব চারটি : কোরআনের পাঠ শোনানো, মানবজাতির চরিত্র ও আমল পরিশুদ্ধ করা এবং তাদের কোরআনের ব্যাখ্যা ও হিকমাহ শিক্ষা দেওয়া। যে ব্যক্তি কথা ও কাজের মাধ্যমে আমল পরিশুদ্ধ করবে, ব্যাখ্যা ও হিকমাহ শিক্ষা দেবে, তাঁর সব কথা ও কাজ দলিলযোগ্য হতে হবে, নচেৎ তাঁর দায়িত্ব কিভাবে আদায় হবে? এ জন্যই কোরআনে কারিমের প্রায় অর্ধশত আয়াতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্যের নির্দেশ এবং তাঁর অবাধ্যতার প্রতি নিষেধ করা হয়েছে। অতএব যারা বলবে যে কোরআন মানি কিন্তু হাদিস মানি না, তারা কোরআনে কারিমের প্রায় অর্ধশত সুস্পষ্ট আয়াতের অস্বীকারকারী।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি বলে দিন, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩২)

একটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ১)

আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘বলে দিন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য করো, তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৫৪)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নাফরমানি করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে জ্বালাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক আজাব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত ১৪)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর তা খুবই মন্দ আবাস।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৫)

‘আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো কেবল ওহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩-৪)

উপরের আয়াতদ্বয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথাকে ওহি বলা হয়েছে। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) নবুয়তি জীবনে ধর্ম সংক্রান্ত দুই ধরনের কথা বলেছেন : এক. কোরআনের আয়াতসমূহ ( যা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর কথা কিন্তু রসুলের (সা) ঠোটের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে) , দুই. কোরআনের আয়াত ছাড়া অন্য নির্দেশনা। এখানে শুধু কোরআনের আয়াতসমূহকে ওহি বলা হয়নি, বরং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সব কথাকেই ওহি বলা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে ওহি দুই প্রকার : এক. কোরআনের আয়াতসমূহ, দুই. কোরআনের আয়াত ছাড়া রাসুলুল্লাহর (সা.) ধর্মীয় অন্য কথা। আর এই দ্বিতীয় প্রকারের ওহিকেই হাদিস, সুন্নাহ বা হেকমত বলা হয়েছে, যা আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনয়নকারী সবার জন্য বিনা দ্বিধায় অনুসরণ করা অপরিহার্য।

বস্তুত কুরআন কারীমের ব্যাখ্যা ও বাস্তব প্রয়োগই হাদীস বা সুন্নাত। কুরআনের পাশাপাশি অতিরিক্ত যে ওহীর জ্ঞান বা প্রজ্ঞা আল্লাহ রাসূলুল্লাহকে (সা) প্রদান করেছিলেন জিবরীল ফেরেশতার মাধ্যমে , তার ভিত্তিতে তিনি কুরআনের বিভিন্ন বক্তব্য ব্যাখ্যা করেছেন এবং বাস্তব জীবনের সকল ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করেছেন। কুরআন ও হাদীসই আমাদের সকল জ্ঞানের ও কর্মের মূল উৎস। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন :
রাসূলুল্লাহ বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন :

“আমি তোমাদের মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি তা যদি তোমরা আঁকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না, তা হলো আল্লাহর কিতাব ও
তাঁর নবীর সুন্নাত।” (হাকিম, আল-মুস্তাদরাক ১/১৭১, নং ৩১৮/৩১। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। আরো দেখুন: আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৯৩।)

তাই পূর্ণ মুসলমান হতে হলে কোরআন এবং হাদিস দুইটাকেই মানতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭
২৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×