“All's fair in love and war”। ব্রিটিশ লেখক ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড স্মেডলি তার ১৮৫০ সালে লেখা নভেল ‘ফ্রাঙ্ক ফেয়ারলেই’ তে এই বাণীটি ব্যবহার করেন। এই বাণীর তাৎপর্য হোল প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধের ময়দানে সাফল্যের জন্য যে কোন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। সেই উপায় বা কর্ম-পদ্ধতি যতই অন্যায্য মনে হোক না কেন। তবে সঙ্গত কারণেই অনেকেই এই বাণীকে সমর্থন করবে না। তারপরও দেখা যায় প্রেম আর যুদ্ধে মানুষ নিয়ম মানতে চায় না।
বাংলাদেশের সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের মেয়ে খাদিজা এই যুগে আবার সেই বাণীর সত্যতা প্রমান করলো। বুকে ব্যথা হওয়ায় ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখ দুপুরে ১৮ বছর বয়সী খাদিজাকে স্থানীয় ‘মা হাসপাতালে’ নেয়া হয়। ডিউটিতে থাকা ডাক্তার মাহফুজ খাদিজাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে হৃদপিণ্ডের কয়েকটি পরীক্ষা করান। কিন্তু পরীক্ষায় সব কিছু স্বাভাবিক পাওয়া গেলে ডাক্তার মাহফুজ নিশ্চিত হন যে খাদিজার কোন রোগ নেই। খাদিজার আচরণে ডাক্তার মাহফুজের কিছুটা সন্দেহ হয়। তিনি বুঝতে পারেন যে খাদিজা কোন কারণে অসুস্থতার ভান করছে। ডাক্তার মাহফুজ তখন খাদিজার বাবা-মাকে তার চেম্বারের বাইরে যেতে বলেন এবং তারপর খাদিজার কাছে জানতে চান আসল কারণটা কি? খাদিজা জানায় যে সে ওয়ালিউল্লাহ নামের এক তরুণকে ভালোবাসে। কিন্তু তার বাবা-মা তার বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করে ফেলেছে। এই জন্য প্রেমিককে বিয়ে করতে সে এই অভিনয় করেছে।
তখন ডাক্তার মাহফুজ খাদিজার প্রেমিককে ফোন করে বলে যে খাদিজার অবস্থা খুব খারাপ সে যেন হাসপাতালে আসে। প্রেমিক ওয়ালিউল্লাহ আসতে রাজি হলে ডাক্তার মাহফুজ পুরো ঘটনা খাদিজার বাবাকে জানান। বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন যে সে তার মেয়েকে বাড়িতে উঠতে দেবে না। কিন্তু খাদিজাও তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
ডাক্তার মাহফুজ খাদিজার বাবাকে অনেক বুঝানোর পর অবশেষে বাবা রাজি হন। অবশেষে প্রেমিক আর প্রেমিকার মধ্যে বিয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ছেলের পক্ষ থেকে ছেলের দুলাভাই আর খালা উপস্থিত হন। পরবর্তীতে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের সহযোগিতায় পরের দিন বৃহস্পতিবার সুন্দরভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বর আর কনে দুইজনেই গার্মেন্টসে চাকরী করে।
একেই বলে প্রেমের জয়। খাদিজা তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা আর কৌশল প্রয়োগ করে তার ভালোবাসার মানুষকে জয় করে নিয়েছে ন্যায় বা অন্যায়ের কথা চিন্তা না করে। কারণ প্রেম আর যুদ্ধ করতে গেলে অনেক সময় ন্যায় আর অন্যায় মানা যায় না।
খাদিজা এই কৌশল অবলম্বন না করলে প্রেমিক ওয়ালিউল্লাহকে গাইতে হত 'সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, হয়ে কারও ঘরণী'।
ডাক্তার মাহফুজকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ তার মানবিক ডাক্তারির জন্য। ডাক্তারকে শুধু শরীরের রোগ না অনেক সময় মনের রোগও বুঝতে হয়।
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট
বিশ্বাস হৃদয়ে
হবেই হবে দেখা
দেখা হবে বিজয়ে
জয় মানবতার, জয় ভালোবাসার।
সুত্র ও ছবি - ktvprotidin.com
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৭