ছড়াগল্প
আহমাদ স্বাধীন
ছন্দ নামের একটি ছেলে,
পাখির মত পাখনা মেলে
নীল আকাশে উড়তে চায়
সবুজ মাঠে হলুদ রংয়ের লাটিম হয়ে ঘুরতে চায়
রংধনু আর মেঘের সাথে সেই ছেলেটির মিতালী
সেই ছেলেটির ছুটে চলা গানের মত গীতালি ।
সেই ছেলেটির মন বসেনা পড়ায়
তার গল্পই বলব এবার ছড়ায় ।
সব্ইা যখন ঘুমিয়ে থাকে ছন্দ তখন জাগে
চাঁদের আলো তারার মেলা গভীর অনূরাগে ,
দেখে এবং ভাবে !
আকাশ পারের জোসনা ছুতে কেমন করে যাবে ।
ছন্দ খুবই অল্প ঘুমায় ভোরের বেলা ওঠে
পুব আকাশের সুর্যের আলোয় ফুলের মত ফোটে !
ছন্দ যখন ইশকুলে যায় ডেকে বলেন বাবা-
ভাল করে ডানে বামে দেখে শুনে যাবা
ছন্দ তখন ধিরে হাটে আর দেখে দ্ইু পাশ
নাম না জানা ফুল পাতা ফল, হলুদ-সবুজ ঘাস
এমনি করে ক্লাশের সময় অর্ধেক হয় পার
শিক্ষক খুব রেগে বলেন - এসব কি কারবার ?
ছন্দ বলে বাবার কথায় দেখে ডান আর বাম
ধিরে ধিরে আসতে হলো তাই দেরি করলাম
ইশকুলে যেই ছুটির ঘন্টা ডং ডং ডং বাজে
খুশির জোয়ার উথলে ওঠে ছন্দ সোনার মাঝে
২
বাড়ি এসেই ছন্দ ঝাপায় রৈাদ্র নদীর জলে
গাঙচিল আর পান কৌড়ি, সব ছন্দের দলে
উল্লাসে খুব মাতে,
ডাক দিলে কেউ ছন্দ বলে সময় যে নেই হাতে !
ব্যস্ত আছি মাছের সাথে এবং বালি হাঁসের সাথে
লুকোচুরি খেলায়
তোমার কথা শুনবো না হয় অন্য দুপুর বেলায়
মা ডেকে কন ছন্দ রে তোর খাবার সময় যায়
ছন্দ বলে- যারা বোকা তারাই কেবল খায় !
খেতে খেতে খেতে খেতে পেট যদি হয় ঢোল
দেখবে তখন বাঁধবে ভিষন রকম গন্ডগোল
ঢোলকরা সব পেট বাজাবে তাক ডুমা ডুম ডুম
সেই আওয়াজে দেখবে সবার বন্ধ হবে ঘুম !
মা বলে থাম বাঁদর ছেলে
এবার হাতের সামনে পেলে
দেবো এমন মার -
ছন্দ তখন নদীর জলে মিশেই একাকার ।
দুপুর শেষে হালকা রোদের শান্ত বিকেল বেলায়
ওর বয়েসি সবাই যখন নানান রকম খেলায়
- হৈ হুল্লোর করে
ছন্দ তখন নিজের মত একাই থাকে ঘরে
চাচ্চু ডাকেন ,
- ছন্দ
তোর সাথে কি কারো কোন রাগ অভিমান - দন্দ ?
ছন্দ বলে এমন কথা বলছ কেন কাকা ?
চাচ্চু বলেন -
এই বিকেলে ঘরের মধ্যো থাকা ,
তোর কি তবে সাজে !
তোর তো উচিৎ খেলতে যাওয়া অন্য সবার মাঝে ।
ছন্দ বলে - লাভ কি কাকা এসব খেলা-ধুলায়
এমন খেলায় অন্য সবার হয়তো বা মন ভুলায়
কিন্তু আমার ভাবনা অন্য খানে
তাইতো খেলায় মন টানেনা অন্য দিকে টানে
৩
আমার ঘরে যখন আমি একা একা থাকি
তখন মনে হয় যে অনেক কিছুই জানার বাকি
সেই অজানার লিষ্টি বানাই অনেক ভেবে ভেবে
এবার বলো আমায় কিছু কথার জবাব দেবে ?
চাচ্চু বলেন কাজ আছে রে তোর মত তুই ভাব
ছন্দ টাকে সবাই এড়ায় দেয়না কেউ জবাব ।
কত প্রশ্নের জবাব পায়না
ছন্দের মনে জমা হয়
লেখার মাঝে সামনে পেছনে
কেন ড্যাস দারি কমা হয়
ফুল ফোটে কেন রাতের আধাঁরে
দিনে কেন ফুল ফোটে না
সুর্যের আলো দিনে তাকে শুধু
রাত্রে কেন সে ওঠেনা
ফল কোথা থেকে গাছে আসে আর
কিভাবে মাটিতে গাছ হয়
নদীতে সাগরে চাষ ছাড়া কেন
এত বড় বড় মাছ হয়
মৈাচাকে শুধু মধু থাকে
কেন ভ্রোমরের চাকে থাকেনা
বড়রা এমন দায় ছাড়া কেন
কিছুর খবরই রাখেনা
মেঘেরা কি করে ভেষে রয় আকাশে
বৃষ্টিরা কেন ঝরে যায়
বাতাসের তোড়ে গাছ পালা আর
ঘর - বাড়ি কেন পরে যায়
কোথা থেকে পেল জোনাকি পোকার
ঝিলমিল করা আলোটা
আজকের আকাশে যেই রং দেখি
কই চলে যায় কাল ওটা
৪
এমন হাজার প্রশ্ন নিয়ে ছন্দের মাথা জট
দাদা বলে এটা কেমন ছেলেরে কেবলই ফটর ফট
করতে করতে ঘামায় মাথা
থাম নারে ভাই লাভ কি !
ছন্দ বলে-
থামবো দাদা বলে দাও এর জবাব কি
প্রশ্ন করে মামা চাচা আর প্রশ্ন করে খালাকে
খালা বলে আরে সামলাও কেউ এই ছেলেটার জ্বালাকে !
এইভাবে ছন্দের যায় রাত দিন
ছন্দের প্রশ্নরা এতই স্বাধীন !
যাকে পায় তাকে বলে উত্তর চাই
সকলের এক কথা ঠিক জানা নাই !
ছেলের এমন কান্ডে বাবা
বলেন এবার ,
ছন্দ -
দিনের বেলায় সুর্য রাতে হাসনা হেনার গন্ধ
আমার কাছে তুই !
কিনবা গোলাপ টগর বেলি রক্তজবা জুই
তুই যে আমার আকাশ জুড়ে জোস্ৎনা ঢালা চাঁদ
তোকে ঘিরেই আমার অনেক স্বপ্ন অনেক সাধ
কেন রে চলিস এমন খেয়াল খুশি মত
তোর কি কিছুর অভাব আছে ?
বল তা কোথায়, কত ?
ছন্দ বলে - বাবা আমার অভাব কোথাও নাই
একটা শুধু চাওয়া আমার, জানতে আমি চাই
এই দুনিয়ায় এত্ত কিছুর এই যে মিলন মেলা
কিন্তু কেন তোমরা সবাই করছো অবহেলা
কোন কিছুর খোজ রাখনা ,
জানতে চাইলে চুপ্
আমার মনে হাজার হাজার প্রশ্নরা নিশ্চুপ -
তখন হবে যখন আমি জানবো বুঝবো সব
তার আগে নেই আমার কোন আনন্দ উৎসব
৫
বাবা বলেন আয়রে মানিক আমার
কাছে আয়
আজ বুঝেছি তোর ঠিকানা নেই এ পাড়া গাঁয়
আমরা যেসব না জানি তুই জানবি সে ’সব কিছু
ছুটবি ভোরের আলো হয়ে রাম ধনুটার পিছু
কিন্তু তোকে চলতে হবে সে পথ ধরে রোজ
যেই পথে সব অজানাদের খুজলে পাবি খোজ
সবার আগে পড়তে হবে শিখতে হবে পড়া
অজানা সব জ্ঞানের আলোয় শিক্ষাঙ্গন গড়া
বইয়ের মাঝেই সব পাবি তুই
তোর যা চাওয়ার আছে
মিছেই কেন ঘুরবি রে তুই না জানাদের কাছে
পড়তে পড়তে তোর কাছে
সব আলো হবে জড়
একদিন তুই ঐ আকাশের মতই হবি বড়
ছন্দ নামের সেই যে ছেলে
আগের সময় পেছন ফেলে
বাবার কথায় বদলে যায় !
ওর মত নেই একজনও আর
এখন ওদের পাঁড়া গাঁয়
ছন্দ এখন ইশকুলে যায় আর
সারাক্ষন পড়ে
ছন্দ রে তোর মত ছেলে চাই প্রতিটি ঘরে
এমন কথাই সবাই বলে
ছন্দ শুনে হাসে
ছন্দরে তোর জীবন কাটুক আনন্দ উচ্ছাসে !