somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংসদীয় বিতর্কের নীতিমালাঃ ৪র্থ পর্ব

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এই পর্বে ছয়টি পরিচ্ছেদের ৩য় পরিচ্ছেদ উল্লেখ করা হবে।

৩য় পরিচ্ছেদঃ বিতর্কের বিষয়বস্তু (সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা), বিশ্লেষণ কৌশলপত্র




৩.১: বিল সংক্রান্ত ধারা-

ক) সেই সব বিষয়বস্তু বিল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে যেগুলো সরকারি দল সংসদে আইন হিসেবে পাশ করতে চায় ( যেমনটি সত্যিকার সংসদে হয়)।
খ) বিলের দ্বান্দ্বিক আবেদন থেকে বাস্তবধর্মী প্রায়োগিক আবেদনটিই মুখ্য।
গ) সে বিষয়গুলোই বিলের মর্যাদা পেতে পারে যেগুলো ‘হোক’ বা ‘উচিত’ শব্দমালা দিয়ে শেষ হয়।
ঘ) উদাহরণ-
- শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান রহিত করা হোক।
- অর্থনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের অবিলম্বে গ্যাস রপ্তানি করা উচিত।

৩.২ : কোন বিতর্কের বিষয়কে একবার বিল হিসেবে উত্থাপিত করলে-

ক) পুরো বিতর্কে বিষয়বস্তুকে বিল হিসেবে উচ্চারন করতে হবে। পুনরায় একে প্রস্তাব হিসেবে উল্লেখ করা অবকাশ নেই। তা না হলে এটি Point of Order এর আওতায় আসবে।
খ) বিল এর মূল বিশ্লেষণ হবে নির্দিষ্ট (Specified and Identified) কি কারণে বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে এবং এটি পাস করে তার প্রভাব কি কি হবে এগুলো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করতে হবে।
গ) বিল উত্থাপন করলে এর সাথে অনেকগুলো ধারা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যকীয় নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ধারা প্রয়োগ ভালো ফলাফল বয়ে আনে। যেমন- থ্রী হুইলার নিষিদ্ধ করা উচিত। এই বিলের উপর বিতর্কে কিছু ধারা আসতে পারে-
- থ্রী হুইলারের বিকল্পে সিএনজি চালু করা হবে।
- নতুন সিএনজি জ্বালানী হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হবে যার যথেষ্ট মজুদ আমাদের আছে (এবং এর সাথে কিছু তথ্য)
- ক্ষতিগ্রস্ত চালকদের পুনর্বাসন করা হবে (কিভাবে করা হবে তার ব্যাখ্যা)।
ঘ) ধারা সংযোজন করা যায় তখনই যখন সেগুলো ‘বিল’ এর উদ্দেশ্য ও প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।

৩.৩ : প্রস্তাবের সংজ্ঞাঃ যেগুলো সংসদীয় বিতর্কে ‘বিল’ হবার মত অবস্থায় থাকছে না সেগুলো সবই প্রস্তাব হিসেবে পরিগণিত। সব ধরণের বিষয়ই প্রস্তাবের মর্যাদা পাবে। অন্যভাবে বললে সকল ধরণের বিল প্রস্তাবও বটে কিন্তু সকল প্রস্তাব বিল নয়।

৩.৪ : প্রস্তাবের ধরণ ও বিশ্লেষণ-
ক) তুলনামুলক অনুষঙ্গঃ

সংজ্ঞা ও উদাহরণঃ এ ধরনের বিষয়বস্তুতে দুটো মূল চলক (Variable) এর মধ্যে একটিকে অপরটির চাইতে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করা হয়। যেমনঃ
- দারিদ্র বিমোচন নয়, তথ্য প্রযুক্তির উত্তরণই একবিংশ শতকের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
- কৃষি নয়, শিক্ষায় হবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান।
খ) প্রধান/মূল বিতর্ক-
সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যাঃ এ ধরনের বিতর্কের বিষয়ে ‘ই’ প্রত্যয় কিংবা ‘মূল’ বা ‘প্রধান’ জাতীয় শব্দ থাকে। কিন্তু এরা কখনোই একমাত্র বোঝায় না। যেমনঃ
- শিক্ষার অভাবই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান বাধা।
- যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় চরিত্রহীনতাই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের প্রধান কারণ।
উভয় বিষয়ে ‘ই’ (প্রথমটিতে) এবং ‘প্রধান’ (দ্বিতীয়টিতে) কখনোই একমাত্র বোঝায় না। ‘ই’ প্রত্যয় ব্যবহার করা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর উপর Emphasis করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ‘প্রধান’ ও ‘মূল’ শব্দদ্বয়ের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তবে-
বিশ্লেষণের ধারাঃ এ ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্ক হলে সরকারি দলকে অবশ্যই ‘মূল’ বা
‘প্রধান’ কারণটি নিয়ে বিতর্ক করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের সুবিধাটি হল যে, তারা অন্য
যে কোন কারণকেই মূল কারণ থেকে উৎসারিত হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করতে পারে।
তাদের আরেকটি সুবিধা হল – তারা বিরোধী দলের কাছে অন্যকোন ‘প্রধান’ বা ‘মূল’ অনুষঙ্গের নাম চাইতে পারে। একবার সরকারি দল প্রস্তাবটি এইভাবে উত্থাপন করলে বিরোধী দলকে অবশ্যই আরেকটি ‘মূল’ বা ‘প্রধান’ কারণ চিহ্নিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিতর্কটি আবার ‘Head to Head’ বিতর্কে পরিণত হবে।
গ) একটি নির্দিষ্ট বক্তব্য (Statement): যেমন-
- জাতিসংঘ একটি অচল সংস্থা।
- বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত।
লক্ষ্য করে দেখতে হবে এ ধরনের বিষয়বস্তুতে আগের দু’ধরনের মত কোন বাঁধাধরা Grammatical নিয়ম নেই। এখানে দুপক্ষের কোন পক্ষই নির্দিষ্ট কোন বিন্দুতে আটকা থাকতে বাধ্য নন। ‘মূল বা প্রধান কারণ’ অথবা শুধুমাত্র দুটো অনুষঙ্গতেই বাঁধা হয়ে থাকতে হচ্ছেনা কাউকে। এ ধরনের একটু কঠিন। কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে বিতার্কিকের জ্ঞানের প্রয়োজন। যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকলে বিষয়কে যে কোন দিকে ‘মোড় ঘোরানো’ বা ‘Twist’ করানো সম্ভব। এধরনের প্রস্তাবে সরকারি দলের সুবিধাটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তুকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বিরোধী দলকেও সেভাবেই বিতর্ক করতে হবে। যেমনঃ ‘বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিচ্যুত’- এই প্রস্তাবের উপর বিতর্ক করতে গেলে সরকারি দল যদি ‘বর্তমান প্রজন্ম’ বলতে ৯০ ‘এর দশকের পরবর্তী প্রজন্ম বোঝায় তবে বিরোধী দলকেও তা মেনে নিতে হবে। তাদের তখন বর্তমান প্রজন্মের Time Limit পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই কোন সমান্তরাল বিতর্ক শুরু করা যাবে না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×