somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প গল্প: অস্তিত্ব .....

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি বসে আছি একটি চেয়ারের মত যায়গায়। চেয়ারে গদিটদি কিছু নেই, তবে বসতে খুবই আরাম। আমি যেভাবে কাত হই,চেয়ারটা সেইভাবে কাত হয়। একবার পা তুলে বসলাম- অদ্ভুত কান্ড চেয়ারের বসার যায়গাটা বড় হয়ে গেল। ঠিক আমার পায়ের মাপে মাপ। যেন জিনিসটা পা রাখার জন্যই তৈরি করা হয়েছ। পা নামিয়ে নিলাম বসার যায়গাটা আবার ছোট হয়ে গেল।
আমি যে ঘরে বসে আছি সে ঘরটা সম্ভবত আমার, কারন আর কাউকে ঘরে দেখছি না। ঘর না বলে বলা উচিত গোলক। দেয়ালে কয়েকটা মনিটর, সবকটা মনিটরে কিছু না কিছু লেখা উঠছে। আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। বুদ্ধিমান মানুষেরা এইসব মনিটর দেখে অনেক কিছু বুঝে ফেলবেন। আমি বুদ্ধিমান না। একটা মনিটরে ক্রমাগত কিছু নাম্বার উঠছে। মাঝে মাঝে নাম্বারগুলি পড়তে চেষ্টা করি----
৫৪৬৬৮২
৫৪৬৬৮০
৫৪৬৬৮৩
অর্থহীণ ব্যপার। কিংবা কে যানে অর্থ নিশ্চই আছে আমি জানি না। ঘরের মধ্যে খাবারের যায়গা। খাবারের ঘরে ছোট্ট একটা ঠেবিল আর চেয়ার। আমার যে কোন প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য একটি রোবট আছে। রোবটার গলা খুব মিষ্টি। ষোল সতের বছরের তরুনীর মত ঝরমলে গলা। রোবটের ভয়েস-সিনথেসাইজার নিশ্চই কোন চমৎকার মেয়ের গলার স্বর কপি করে তৈরি করা। রোবটার স্বর শুনতে আমার ভাল লাগে, যদিও আমি তাকে ব্যপারটা জানতে দেইনি।

প্রথম দিনে আমি রোবটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি?
রোবট মিষ্টি করে বলল, আমি খুব সাধারন রোবট, আমার কোন নাম নেই, তবে আপনি আপনার সুবিধার জন্য আমাকে যে কোন নামে ডাকতে পারেন।
আচ্ছা শোন যা খাচ্ছি সবই কি আসল খাবার না নকল খাবার ?
অবশ্যই আসল খাবার, তবে প্রকৃতিক উৎস থেকে নয়, ল্যাবোরেটোরিতে তৈরি। পৃথিবীর যাবতীয় খাবারের মাত্র ছ’টা গুন থাকে। টক,ঝাল,মিষ্টি,নোনতা,তিতা এবং গন্ধ। এই ছ’টা জিনসের হেরফের করে আপনার জন্য খাবার তৈরি করে দেওয়া হয় ।
আচ্ছা ঠিক আছে। আজ থেকে তোমাকে আমি রিনি বলে ড্কব ।

আমি চুপচাপ বসে আছি। রিনি আমার সামনে মগভর্তি কফি রেখে গেছে। তাকে আমি কফি দিতে বলি নি। এই কাজটি যে সে করল, তার পেছনে কি কোন মমতা কাজ করছে? দূর এসব আমি কি ভাবছি । নিজের উপর বিরক্তি বোধ করছি। মমতা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি কেন? মমতার জন্য আমার এই ব্যকূলতা কেন? একজন খনি শ্রমিকের জীবনে মমতার কোন স্থান নেই।
আমার মাথায় অস্পষ্টভাবে কিছু একটা খেলা করছে। আমি স্বস্তিবোধ করছি না। আমি সামন্য খনি শ্রমিক, কফি নামক এই মহার্ঘ পানীয়ের সাথে আমার পরিচয় থাকার কথা না। কিন্তু এই পানীয় আমার এত পরিচিত লাগছে কেন? কেন যেন মনে হচ্ছে আমি সমুদ্রের একটা যায়গায় কারও সাথে কফির মগ হাতে বসে থাকতাম। দু’জনে বসে সমুদ্র দেখতাম।

রিনি, তুমি কি আছ?
আমি আছি ।
তোমার গলার স্বর এমন বিষন্ন শোনাচ্ছে কেন ?
আমার গলার স্বর আগের মতনই আছে, কোন কারনে তুমি বিষন্ন হয়ে আছো তাই আমার গলার স্বর তোমার কাছে বিষন্ন শোনাচ্ছে।
আমি আসলে কে?
তুমি যান তুমি কে, কিন্তু তুমি তা গ্রহন করতে প্রস্তুত নও। প্রস্তুত নও বলেই, তোমার মস্তিস্কের একটা অংশ ব্যপারটা জানে না। তোমার মস্তিস্কের সেই অংশটি ধরে নিয়েছে জানলে তোমার প্রচুর ক্ষতি হবে। সে ক্ষতি হতে দেবে না। কাজেই সে তোমাকে রক্ষা করার চেষ্টা শুরু করেছে। সে ঠিক করেছে কোনদিনই তোমাকে কিছু জানাবে না। বুঝতে পারছ? তোমার স্মৃতি বেশির-ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। খুব সামান্যই আছে ।
স্মৃতি কে নষ্ট করেছে, তুমি?
হ্যাঁ আমি। তোমার নাম রাহাত। রাহাতের স্মৃতি নষ্ট করে সেখানে একজন খনি শ্রমিকের স্মৃতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। মস্তিস্কের অনেক নিউরন নষ্ট হয়। যে পদ্ধতিতে এটা করা হয় তার নাম----ইন্টারফেরেন্স রি এন্ট্রি । তুমি একটি প্রজেক্টের স্পেসিমেন। তোমার ডিএনএ প্রেফাইলের বিশেষত্বের কারনে অনেক আগে থেকেই তোমার উপর নজর রাখা হচ্ছিল।
তোমাকে যে নামটা দিয়েছি-, এই রিনি নামটা আমার অনেক পরিচিত মনে হয়। মনে হয় সমুদ্রের ধারে আমি আর রিনি একসাথে বসে কফি খেতাম। রিনি কি আমাকে এখানে আনার ব্যপারে কোন ভূমিকা পালন করেছে ।
হ্যাঁ, তোমাকে এখানে আনার ব্যপারে বিজ্ঞান পরিষদ থেকে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়, এবং সে তা খুব ভালভাবেই পালন করেছে ।
আমার মনে হয়েছে তুমি আমার প্রতি মমতা অনুভব কর।
ঠিক মমতা নয় তোমাকে দিয়ে ‘ক্লোন-সম্প্রদায়’ সৃষ্টি করা হবে । এই ক্লোন দ্বারা সৃষ্টি হবে অসাধারন বুদ্ধিমান প্রানী। কিন্তু আমার লজিক বলছে মানবগোষ্ঠির বিকাশ ক্লোনের মাধ্যমে হওয়া ঠিক হবে না। হয়তো আমার লজিক বোর্ড এলোমেলো হয়ে গেছে। এই যে তোমাকে সবকিছু খুলে বললাম, এটা আমার লজিকের বাইরে।

আমি লম্বা হয়ে শুয়ে আছি এবং এক বিষাক্ত বিষ আমি আমার শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। বিষ তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। শরীরের সবগুলো কোষ ধীরে ধরে নষ্ট করে দিচ্ছে। খুব ঠান্ডা লাগছে, বাহিরে কি বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হয় না, এই শৈত্যের জম্ন আমার শরীরের কোষের কেন্দ্রবিন্দুতে।
রিনি একবার বলেছিল ,আমরা ঝুমঝুম বৃষ্টিতে সারাদিন ভিজব। আমার মনে আছে, কিন্তু আমার মনে থাকা না থাকায় তো কিছু আসে যায় না। এই বিশ্বভ্রমান্ডের যিনি নিয়ন্ত্রক, তার কি মনে আছে? রিনির ভালবাসাটা ভালবাসা ছিল না। ভালবাসার অভিনয় ছিল। তাতে কি আমার ভালবাসায় তো কোন খাদ ছিল না।
মানুষের মনে স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিয়ে সৃষ্টির্কতা কি দূরে চলে যান। মনে হয় না, হয়তো খুব কাছেই থাকেন। স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় মানুষ যখন কষ্ট পায়, হয়তো তিনিও পান। কারন এইসব স্বপ্ন তো তিনিই তৈরি করেছেন। স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট অবশ্যই তাকে সইতে হবে ।


০১.০৪.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×