somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তথ্য অধিকারবিষয়ক আমার অভিনীত প্রথম নাটিকা ”তথ্য পেলেন কাশেম চাচা”

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তথ্য অধিকার আইন জারী হয় বা কার্যকর করা হয় ২০০৯ সালের পয়লা জুলাই। এমনকি একই দিনে গঠন করা হয় তিনসদস্যবিশিষ্ট তথ্য কমিশন। একজন প্রধান তথ্য কমিশনার এবং সচিব মর্যাদার দু’জন তথ্য কমিশনার এর মধ্যে একজন নারী কমিশনার নিয়ে মূলতঃ তথ্য কমিশন। এই আইনে বলা আছে, প্রতি স্বতন্ত্র অফিস এই আইন জারীর ৬০ দিনের মধ্যেই তাদের অফিসের একজন অফিসারকে তথ্য প্রদানকারী হিসেবে ”দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা” নামে নিয়োগ দেবে। নতুন সৃষ্ট অফিসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম! তারা আবেদনকারীকে প্রার্থিত তথ্য ২০/৩০ কার্যদিবসে বা ক্ষেত্রমতে মৃত্যু বা কারাগারে আটকসংক্রান্ত বিষয় হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই লিখিতভাবে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবেন

”দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা” তথ্য দিতে আইনত বাধ্য না থাকলে ১০ দিনের মধ্যেই লিখিতভাবে প্রার্থীকে জানাতেও বাধ্য বা অহেতুক তথ্য না দিলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা অফিস প্রধানের কাছে আপীল করতে পারবেন সেই প্রার্থী। আপীল কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে হয় তথ্য দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন বা আপীল খারীজ করতে পারবেন।
এতে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী তাদের বিরুদ্ধে তথ্য না দেয়ার অভিযোগে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করতে পারবেন এবং কমিশন তা আমলে নিলে উভয়পক্ষকে সমন দেবেন নির্দিষ্ট দিনে তথ্য কমিশন আদালতে হাজির হতে।

এরপর শুনানীশেষে তথ্য কমিশন প্রার্থীকে তথ্য দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন বা আইনতঃ তিনি সংশ্লিষ্ট তথ্য পাবার অধিকারী না হলে তার অভিযোগ খারীজ করে দেবেন। আর তথ্য দিতে গড়িমসি বা ইচ্ছেকৃত অবহেলা থাকলে অপরাধীকে তথ্য দিতে বিলম্বের দরুণ প্রতিদিনের জন্য ৫০টাকা হারে সরবোচ্চ ৫০০০/=টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন। প্রয়োজনে বিভাগীয় মামলা চালুর জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারবেন। তিরস্কারও করতে পারে তথ্য কমিশন। একজন সরকারি চাকরিজীবীর জন্য এধরণের শাস্তি কতোটা ক্ষতিকর, তা সহজেই অনুমেয়!

এখানে বলাবাহুল্য যে, তথ্য দেয়া বা না দেয়ার জন্য সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই প্রধানতঃ দায়ী এবং শাস্তি হলে সাধারনতঃ তারই হয়ে থাকে। অনেকে ভাবেন– তথ্য কেউ চাইলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চাইব এবং তিনি না দিলে বা দিতে বারণ করলে প্রার্থীকে তথ্য দেবোনা। এতে আমার কী? এটা মারাত্মক ভুলধারণা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তথ্য গচ্ছিত থাকলে তা অবশ্যই লিখিতভাবে বা ফাইলের মাধ্যমেই তাকে চাইতে হবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সে তথ্য সরবরাহ না করলে বা তা না পেলেই শুধু তিনি শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবেন, অন্যথায় নয়। কারণ তথ্য দিতে তিনিই মূলতঃ বাধ্য, সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়।

যদিও তথ্যপ্রার্থীকে তথ্যবঞ্চিত কিংবা হয়রানীকরণের ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আপীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নিতেই পারে; ক্ষেত্রবিশেষে আইনের ধারা ২৪(৪) অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অনুরূপ শাস্তি আরোপ করতে পারবেন।

আবার আইনে ”তৃতীয় পক্ষ” বলে একটা বিষয় আছে তথ্যপ্রার্থীর প্রার্থিত তথ্যযোগাড়ের ক্ষেত্রে মানে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আপীল কর্মকর্তার ফিসে কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য অফিসে সেই তথ্য থাকলে সেখানে লিখিতভাবে তা চাইতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেই এবং তথ্যপ্রাপ্তি কর্তৃক অনুরোধপ্রাপ্তির ৫ কার্যদিবসের মধ্যেই তাকে লিখিত বা মৌখিক নোটিশের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষকে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ তথ্যসরবরাহ বা মতামত প্রদান না করলেই দায়িত্বনির্ধারণের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য হবেন এবং তিনিও সমান দায়ী হবেন। ফলে মুল দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রমাণসাপেক্ষে শাস্তি থেকে তথ্য কমিশনের আদালতে হাজির হয়ে তবেই তিনি প্রমানসাপেক্ষে বাঁচতে পারবেন মাত্র।

এ হলো সংক্ষেপ কথা–তবে যারা এখনো আইনানুযায়ী ৬০দিনের মধ্যে তাদের অফিসে ডিও/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেননি, তারা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে বসে আছেন! কমিশন যেকোনো মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে করার কিছু থাকবেনা।

উল্লেখ্য যে, এই আইনে আরো বলা হয়েছে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ কার্যত ১৯২৩ সালের গোপনীয় বা সেক্রেসী আইনের ওপরে প্রাধান্য পাবে। তাই যারা তথ্য দিতে চান না তারা কতবড় বিপদে আছেন–ভাবুন তো?

ইতোমধ্যে দু’জন সরকারী অফিসারের ১০০০/= ও ৫০০/= টাকা জরিমানা হয়েছে তথ্য না দেয়ার অপরাধে। এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার একজন ডাক্তারের রীট করেও লাভ হয়নি। রীটের রায় কমিশনের অনুকুলে যাওয়ায় তিনি হেরে গিয়েছেন। আর এটা কতবড় অপমান এবং সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে কী ঝুঁকিপূর্ণ তাকি ভেবে দেখেছেন? এমনকি আইনে এও আছে যে, তথ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে রীট ছাড়া কোনো আদালতে মামলা, আপীল বা রিভিউ পর্যন্ত করা যাবেনা। তথ্য কমিশনের রায়ই সংশ্লিষ্ট সবার জন্য চূড়ান্ত।

এখানে সেই ঘটনার ভিত্তিতে আমার রচিত ও অভিনীত তথ্য কমিশনের তথ্য অধিকারবিষয়ক প্রথম নাটিকা ”তথ্য পেলেন কাশেম চাচা” সম্প্রতি নির্মিত এবং তথ্য কমিশনের অডিটোরিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে।

সরকারের জারিকৃত তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ওপর ভিত্তি করে রচিত নাটিকাটির ভিডিও লিঙ্কটি ইউটিউব থেকে আপনাদের জন্য এখানে দিয়ে দিলাম; দেখুন–তথ্য পেলেন কাশেম চাচা

উল্লেখ্য যে, আগামী ২৬ ও ২৭ আগস্ট যথাক্রমে ৮ ও ৭টি করে মোট ১৫ মামলার বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হবে তথ্য মিশন ট্রাইব্যুনালে। আপনারা আমন্ত্রিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×