আসুন একটা উদাহরণ দিয়েই শুরু করি।
আপনি বিপদে পড়েছেন। কেউ একজন আসলো আপনাকে সাহায্য করতে। শর্ত হল বিপদ থেকে উদ্ধারের পর আপনাকে ইচ্ছামত ব্যবহার করা হবে (আসলে এই শর্ত সাহায্যকারী তার মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে, আপনাকে জানানো হয়নি)। যেহেতু আপনি জানেন না যে এমন কোন শর্ত আছে আর সে যেহেতু সাহায্য করতে চাচ্ছে যখন আপনার বিপদ তখন আপনি তার সাহায্য গ্রহণ করলেন। এমন অবস্থায় বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর আপনার প্রতি তার আচরণ কেমন হবে বুঝতেই পারছেন। আবার, যখন আপনি বিপদে পড়েছিলেন, তখন কেউ একজন আপনাকে সাহায্য করেনি। তবে আপনি বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর আপনাকে ইচ্ছামত ব্যবহার করেনি, বরং আপনাকে সাধ্যমত সাহায্য করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার কি মনে হবে? বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কিছু মনে হতে পারে তবে স্বাভাবিকভাবে যেটা মানুষের মনে আসে তা হল, যে সাহায্য করেছে হয় তার উদ্দেশ্য ভাল না অথবা কোন স্বার্থের কারনে সাহায্য করা হয়েছে। আর যে তখন সাহায্য করেনি ঠিকই কিন্তু সে আর যাই হোক আপনার ভাল চায়।
এবার আসুন বাস্তবে। উপরের উদাহরণের আপনি টি হল বাংলাদেশ, সাহায্যকারী হল ভারত এবং কথিত আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আপনার শুভাকাংখি হল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা। কিভাবে?
উত্তর সহজ। ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে তাদের স্বার্থ ছাড়া সাহায্য করেনি। এমনকি ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের স্বাক্ষরিত স্বারকটিও ভারতে সংরক্ষিত আছে যেখানে ভারত বনাম পাকিস্তানের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধে ভারতকে বিজয়ী লেখা আছে। ১৯৭৪ সালের আমাদের দেশের দুর্ভিক্ষ ভারতের দেয়া আমাদেরকে সেই সাহায্যের উপহার। বর্তমানেও তারা আমাদের দেশের ৩০০বিঘা জমি নিজেদের নামে নিয়ে নিয়েছে। আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, ট্রানজিট ইত্যাদির নামে এবং আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা আবমাননা এবং সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার মাধ্যমে তারা সবসময় আমাদেরকে সেই সাহায্যের প্রতিদান বুঝে নিচ্ছে। আমাদের দেশেও একটি শ্রেণী আছে যারা নিজেদের দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে। যদি তাই হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল? দেশপ্রেম আর স্বাধীনতাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাহলে তাদের মাধ্যমে কিভাবে আমাদের দেশের মাটি অন্য দেশে চলে যায়? কিভাবে মানুষ আজ স্বাধীনভাবে তার ভার প্রকাশ করতে পারেনা আর কিভাবে দেশের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে (শেয়ার মার্কেটের মাদ্ধ্যমেই হোক আর ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতির মাদ্ধ্যমেই হোক আর দেশের টাকা দিয়ে আরামে বিদেশ ভ্রমণ করেই হোক) তারা দেশপ্রেমিক সাজে?
পরিশেষে তৃতীয় ধরণের লোকদের কথা না বললেই নয়। এরা আজ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। অথচ, এদের স্বভাব প্রকৃতি কেমন তা চল্লিশ বছর ধরে আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এরা যদি যুদ্ধের সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়, তাহলে হঠাত এরা নিজেদের মধ্যে কি পরিবর্তন আনল যে উনচল্লিশটি বছর এদের নামে কোন অপরাধের অভিযোগ নাই। এমনকি, মন্ত্রী হবার পরও যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পর্যন্ত নাই (এতে করে দেশপ্রেম নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়)। এরা টেন্ডারবাজি করেনা, নিজেদের মধ্যে কোন্দল করেনা, দেশের সম্পদ অবৈধভাবে খায়না, তারপরও এই অভিযোগ কি যুক্তিতে স্বাভাবিক বলে মনে হয়? আপনারা যারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে থাকেন তারা মিডিয়া থেকে এসব তথ্য পেয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ কি কখনও চেষ্টা বা চিন্তা করেছেন যে ওনারা যে এলাকার লোক সেই এলাকার মুরুব্বীরা তাদের সম্মন্ধে কি বলেন? যারা তাদের সাথে মেশেন তারা কি বলেন? এটাতো আপনাদের চিন্তা হয় না কারন আপনারা তাদের কে অপরাধী ভাবতেই ভালবাসেন। যারা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে কুরআনের আওয়াজ পৌছায়ে দেন তাদের কে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এর পরিণাম কি ভাল হবে বলে আপনারা মনে করেন?
এখন তুলনা করার ভার আপনাদের উপরই থাকলো।
যারা যুক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে পারে তাদের ন্যুনতম বয়স ১৮ এর বেশি বিবেচনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৪