somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মাহমুদ দরবেশ , ফিলিস্তিনি কবি

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সূচিকর্মটি আরবি হরফে ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দরবেশ এর কবিতার উচ্চারন । খুব চমৎকার একটি বিষয় । ছবির সাথে আমন্ত্রন মাহমুদ সম্পর্কে জানতে । যা জানলাম তা তুলে দিলাম এখানে -

মাহমুদ দরবেশ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালে, ফিলিস্তিনের এক অখ্যাত গ্রাম 'আল-বোরোতে'। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলী সেনাদের ফিলিস্তিন দখলের সময়, এক ভয়াবহ রাতে আক্রান্ত হয় দরবেশের এই ছোট্ট গ্রামটিও। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় দরবেশের পরিবার। ইসরায়েলী সৈন্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা প্রায় ছত্রিশ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন ক্ষেতের মাঝে। পরে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেন লেবাননে। এক বছর পর, সাত বছর বয়সে, দারবিশ লেবাননের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেন ফিলিস্তিনে, তার হারানো জন্মভূমিতে। কিন্তু শিশু দরবেশ দেখলেন ইসরায়েলী গোলার আগুনে পুরে গেছে তার বাড়ি-গ্রাম্ত ফিলিস্তিনের মানচিত্র। দারবিশ লিখেছেন :

“ এক রাতে আমার চাচা এবং একজন পথপ্রদর্শকের সাথে লেবাননের সীমান্ত দিয়ে আমি প্রবেশ করলাম ফিলিস্তিনে। সকালে উঠে দেখি আমি একটি ইস্পাতের দেয়ালের মুখোমুখি : আমি ফিলিস্তিনে। কিন্তু কোথায় আমার ফিলিস্তিন? আমি কখনো আমার বাড়িতে ফিরে যেতে পারিনি। প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে আমি দেখতে পেলাম আমার গ্রাম বিধ্বস্ত-ভস্ম।

ফিলিস্তিনের সন্তান মাহমুদ দরবেশ ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হয়ে। ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলী কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা জো হাদারেক-এ এক সাক্ষাৎকারে দারবিশ বলেছেন :

“ সেই একটি রাত সবাইকে শরনার্থী বানিয়ে দেয়, লেবনানে আমি শরনার্থী ছিলাম। ফিলিস্তিনেও আমি শরনার্থী হয়ে আছি। ”
এটা কোন কাব্যিক দীর্ঘশ্বাস ছিল না। ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রথম আদমশুমারিতে যে সব ফিলিস্তিনী অন্তর্ভুক্ত হয়নি, নতুন ইসরায়েল সরকার তাদেরকে পরিচয় পত্র দেয়নি। তাদের চিহ্নিত করে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। ফলে দরবেশের মত অজস্র ফিলিস্তিনী নিজ জন্মভূমিতে হয়ে থাকে অবৈধ অভিবাসী।

লেবানন থেকে ফিরে আসার পর তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় 'দয়র-উল-আছাদ'-এ, আত্মপরিচয় গোপন করে। কারণ ইসরায়েলী সরকারের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অবৈধ অভিবাসী। তিনি জানতেন ধরা পড়লে তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তার মাধ্যমিক শিক্ষা 'কফর ইয়াসিফ' গ্রামে। মাধ্যমিক শিক্ষার পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা তৎপরতায়। তার জীবন হয়ে উঠে শুধু কবিতা লেখা এবং কবিতার মাধ্যমে লড়াই করা।

দারবিশ তখন এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়ায়ের পথ খুঁজছিলেন। এই সময় তিনি ইসরাইলী সাম্যবাদী দলে যোগ দেন এবং দলের পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সেই ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামের একটি শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে ওঠেছিল কবিতা। 'আমছিয়া' বা সান্ধ্য কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানগুলোতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে দরবেশ কবিতা পাঠ করতেন, যা ফিলিস্তিনীদের দারুণ প্রভাবিত করেছিল। ইসরাইলী সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং তার আমছিয়াগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। সেই সময় ইসরাইলী সৈন্যরা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত দারবিশকে গৃহবন্দী করে রাখত।

স্বাভাবিক কারণেই ইসরাইলে দরবেশের এই রাজনৈতিক তৎপরতা নির্বিঘ্ন হয় নি। ১৯৬১, ১৯৬৫, ১৯৬৭ তে তিনি তিনবার জেলে গিয়েছিলেন। সত্তরের দশকের শুরুতে তিনি বৈরুত চলে যান। ততদিনে কবি হিসেবে দরবেশ বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠেছেন। ১৯৭৭ সালে বের হয় তার বিখ্যাত জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ আবিরুনা ফি কালামিন আবিরীন, যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এই সময় দারবিশ আল্লাজনাতুত্তানফিযা লি মুনাজ্জামাতিত তাহরীরির ফিলিস্তিনী-তে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘদিন আরাফাতের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে কাজ করেছিলেন। ফিলিস্তিনী সরকার গঠন কালে আরাফাত তাকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। দারবিশ তা গ্রহণ করেন নি। দারবিশ বলেছিলেন, আমার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা বারুদের ধোঁয়া মুক্ত ফিলিস্তিনে বসে কবিতা লেখা। কিন্তু ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর দারবিশ এই দল থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি আরাফাতের সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখেন নি। তিনি প্রতিবাদ করে বলেছিলেন : এই চুক্তিতে ইনসাফ নেই, এই চুক্তিতে ফিলিস্তিনী পরিচয়ের ন্যুনতম অনুভূতি এবং তার ভৌগোলিক অবস্থানের প্রতি কোনো ল্য রাখা হয় নি। এই চুক্তি ফিলিস্তিনীদের একটি যাযাবর জাতিতে পরিণত করবে। তারপরও দারবিশ আরাফাতকে ভালবাসতেন। আরাফাতের মৃত্যুর পর এক সাক্ষাতকারে দরবেশ বলেছিলেন : পৃথিবীর কানে যারা 'ফিলিস্তিন' শব্দটি তুলেছেন আরাফাত তাদের অন্যতম। আরাফাত তার জীবনকে এর জন্য উৎসর্গ করে দিয়ে ছিলেন। আরাফাত কখনো নিজের জন্য বাঁচেন নি্ত আমি চাই আমার স্মৃতিতে আরাফাতের এই চিত্রটি জেগে থাক । আরাফাতকে আমরা খুব মিস করি কিন্তু আমরা আর কোনো আরাফাত চাইনা।

নানান দেশ ঘুরে ১৯৯৪ সালে দারবিশ ফিলিস্তিনের রমল্লায় ফিরে আসেন এবং ইসরায়েলী সৈন্যরা তাকে গৃহাবোরোধ করে রাখে। অবরোধ কালে দরবেশ নিরন্তর লিখেছেন, ইসরায়েলী সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়েছেন ভাষা-কবিতা দিয়ে। ২০০২ এর মার্চে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের একটি দল গৃহবন্দী দরবেশের সাথে সাক্ষাত করতে রমল্লায় গিয়েছিলেন।

সাহিত্যকর্ম

দরবেশ ফিলিস্তিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মাঠে ছিলেন। তবে তিনি লড়েছেন ভাষা কবিতা দিয়ে। এই সময় দরবেশের কবিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বদল ঘটে। তিনি, তার এর পূর্বেকার কবিতায় যে কাব্যিক জটিলতা ছিল তা থেকে ফিরে আসেন। তিনি দেখতে পান তার এই ধরনের কবিতাগুলো সাধারণ মানুষ-যোদ্ধারা বুঝতে পারে না। দারবিশ কবিতা লিখতে শুরু করলেন সরল ভাষায়, সহজ করে, যা বুঝতে পারে সাধারণ মানুষ, উদ্দীপ্ত করে সাধারণ মুক্তিসংগ্রামীদের। এই সংকলনের চোদ্দটি কবিতার তেরোটিই এই সময়, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অবস্থান কালে, লেখা।

দরবেশ কবিতাকে গ্রহণ করেছিলেন শিশুকালেই। স্কুল জীবনে তিনি কাসিক আরবী কবিতার সবটুকু পড়ে ফেলেছিলেন। দারবিশ জীবনে প্রথম কবিতা পাঠ করেন নতুন ইসরায়েলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে। দারবিশ তখন স্কুলের ছাত্র। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে দারবিশ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছিলেন। তিনি বলেন 'সেখানেই জীবনের প্রথম বারের মত আমি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা পাঠ করি। কবিতাটি ছিল এক ইহুদী বালকের প্রতি এক ফিলিস্তিনী বালকের আর্তনাদপূর্ণ আহ্বান।



লেনিন সাহিত্য পুরষ্কারসহ দরবেশ তার কাব্যকীর্তির জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরস্কার তার প্রতি ফিলিস্তিনীদের ভালবাসা। বিখ্যাত উক্তিসমূহ
Why are we always told that we cannot solve our problem without solving the existential anxiety of the Israelis and their supporters who have ignored our very existence for decades in our own homeland?[৭]

We have triumphed over the plan to expel us from history.[৮]

"I thought poetry could change everything, could change history and could humanize, and I think that the illusion is very necessary to push poets to be involved and to believe, but now I think that poetry changes only the poet.

"We should not justify suicide bombers. We are against the suicide bombers, but we must understand what drives these young people to such actions. They want to liberate themselves from such a dark life. It is not ideological, it is despair."

"We have to understand - not justify - what gives rise to this tragedy. It's not because they're looking for beautiful virgins in heaven, as Orientalists portray it. Palestinian people are in love with life. If we give them hope - a political solution - they'll stop killing themselves."

“Sarcasm helps me overcome the harshness of the reality we live, eases the pain of scars and makes people smile. The sarcasm is not only related to today’s reality but also to history. History laughs at both the victim and the aggressor.”

"I will continue to humanise even the enemy... The first teacher who taught me Hebrew was a Jew. The first love affair in my life was with a Jewish girl. The first judge who sent me to prison was a Jewish woman. So from the beginning, I didn't see Jews as devils or angels but as human beings." Several poems are to Jewish lovers. "These poems take the side of love not war,"

মৃত্যু
২০০৮ সালের ৬ই আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে তার হৃৎপিন্ডে একটি অস্ত্রপচার করা হয়। তার ৩দিন পর ৯ই আগস্ট তিনি মারা যান।






উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৯
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×